কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন কত – খাদেম ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ

কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন কত

আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা। যেসব দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি কাজ করে তার মধ্যে আরব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশিরা সাধারণত সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান এই কয়টি দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিসা নিয়ে কাজ করতে চায়। ভালো বেতন ও চাকরির নিরাপত্তা আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার শ্রমিক এইসব দেশে কাজ করতে যায় কিন্তু ভিসা সম্বন্ধে ভালোভাবে আইডিয়া না থাকার কারণে অনেক সময় দালালদের চক্রে পড়তে হয়। অথচ দেশে থাকতে যদি ভিসা সম্পর্কে ভালোভাবে খবর নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সে দেশে গিয়ে আর কোনরকম ঝামেলা পোহাতে হয় না।

কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন
ছবি – কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন

আজকে আমরা  কুয়েত খাদেম ভিসার কি, কুয়েত খাদেম ভিসা আবেদনের নিয়ম, কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন কত ও কুয়েত খাদেম ভিসা আবেদনের খরচ নিয়ে পরিষ্কার ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো।। আশা করছি আজকের ব্লক ভালোভাবে পড়লে কুয়েতের ভিসা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন আপনার মনে থাকবেনা।

কুয়েত খাদেম  ভিসা কি?

কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন কত  তার আগে কুয়েত খাদেম ভিসার কি সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। খাদেম শব্দের অর্থ হচ্ছে সেবক। কুয়েতের স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের বাসার কাজ করার জন্য সরকারের কাছে বিশেষ ধরনের ভিসা আবেদন করতে পারেন। এই বিশেষ ধরনের ভিসা নাম হচ্ছে খাদেম ভিসা। খাদিম ভিসায় সাধারণত বাড়ির কাজ করার জন্য লোক নেয়া হয়। এক্ষেত্রে বাসার ধোয়া-মোছার কাজ করা, ছোট বাচ্চার খেয়াল রাখা, রোগীর সেবা যত্ন করা সহ যে কোন ধরনের কাজ করা লাগতে পারে।

সাধারণত খাদেম ভিসায় নারীদের কে প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে এই বিষয়ে পুরুষরাও যেতে পারেন। যেহেতু কুয়েতের মানুষের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি তাই প্রায় সব বাড়িতেই খাদেম ভিসার লোক নিয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে খাদেম বিষয়ে শ্রমিকরা যায়। তবে বাংলাদেশের বাইরে পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়া থেকেও প্রচুর পরিমাণ খাদেম ভিসার কাজ করতে চায়।

কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন কত

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না কুয়েতে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন একটি বেতনে ঠিক করে দেয়া আছে। কুয়েতে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন ৬০ কুয়েতি দিনার থেকে শুরু হয়। তাই আপনি কুয়েতে যেকোন ভিসায় যান না কেন আপনার ন্যূনতম বেতনের ৬০ কুয়েতি দিনার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৮০০ থেকে শুরু হবে। সাধারণত কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন  ৬০ দিনার থেকে ১১০ কুয়েতি দিনার এর মধ্যে হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় কুয়েত খাদেম ভিসার বেতন সাধারণত ১৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। 

তবে এটা হচ্ছে গড় বেতন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন কত ৫০ হাজার টাকার উপরে হয়ে থাকে। বেতন নির্ভর করবে আপনার কপিল বা বাড়িওয়ালার ওপর এবং আপনি কি ধরনের কাজ করছেন তার ওপর। তবে সাধারণত লম্বা সময় ধরে খাদেম ভিসায় কাজ করলে বেতন অনেক বেশি পাওয়া যায়।

কুয়েত খাদেম ভিসা খরচ

কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন নিয়ে উপরে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে কুয়েত কাতার ভিসা আবেদন করতে আপনার খরচ কত হবে। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত শ্রমিকরা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কুয়েত খাদেম ভিসার জন্য আবেদন করে এবং এই সুযোগে এজেন্সিগুলো ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় ভিসা প্রোসেসিং এর জন্য। অথচ কুয়েত খাদেম ভিসার আবেদন করার জন্য শ্রমিকের কোন খরচ করতে হয় না। আপনি যে কপিল বা বাড়িওয়ালার আন্ডারে কাজ করতে যাবেন ভিসা আবেদনের সময় ১১৬ দিনার বা ৪০ হাজার টাকার মত  কুয়েত সরকারকে দিতে হবে।

তবে এই ভিসা প্রোসেসিং খরচ সম্পূর্ণ আপনার কপিল  বহন করবে আপনাকে কোন খরচ দিতে হবে না। এমনকি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন করে রিনিউ করার জন্য খরচ হয় আপনার বাড়িওয়ালা দিবে। ভিসা হয়ে গেলে আপনাকে শুধু মেডিকেল টেস্টের খরচ এবং ভাড়া দিয়ে কুয়েতে যেতে হবে। তাই দালালদের চক্করে না পড়ে সবকিছু জেনে বুঝে কুয়েত খাদেম ভিসায় আবেদন করুন।

কুয়েত খাদেম ভিসা আবেদনের নিয়ম

  • আপনার বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্ট না থাকলে খুব বর্তমানে খুব সহজেই অনলাইনে পাসপোর্ট করতে পারবেন।
  • আপনার পাসপোর্ট বইয়ে কমপক্ষে ২ টি খালি পাতা থাকতে হবে।
  • পূর্বের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে তা প্রমানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে হবে।
  • আপনার সদ্য তোলা রঙ্গিন ৫ কপি রঙিন ছবি লাগবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আবেদনের সময় মেডিকেল রিপোর্ট দেখাতে হবে। মেডিকেল রিপোর্ট নেয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই রিপোর্ট অবশ্যই স্বিকৃত কোন মেডিকেল থেকে হতে হবে। অনলাইনে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার নিয়ম জানতে এই পোষ্টটি পড়ুন। 
  • জন্ম নিবদ্ধন ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দেখাতে হবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ দেখাতে হবে।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমানের সার্টিফিকেট। সর্বশেষ পাশ করা পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এর ফটোকপি দেখাতে হবে।

উপরের নিয়ম ফলো করে কুয়েত খাদেম ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। যেমনটা আমরা বলেছি কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন খুব ভালো এবং ভিসা প্রসেসিং এ শ্রমিকের কোন খরচ হয় না। আপনি যে কপিল-এর বাসায় কাজ করতে যাবেন তিনি সব খরচ বহন করবেন। ভিসা প্রসেসিং হয়ে গেলে টিকেট এবং মেডিকেল খরচ দিয়ে সহজেই কুয়েতে চলে যেতে পারবেন।

কুয়েত ফ্রি ভিসা নিয়ে সাবধানতা

কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন নিয়ে আলোচনা শেষে এখন আমরা কুয়েত ফ্রি ভিসা নিয়ে বিস্তারিত জানবো। অনেক সময়ে বিভিন্ন দালাল কুয়েত ফ্রি ভিসা দেবে বলে শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। বাস্তবে কুয়েতের ফ্রি ভিসা সিস্টেম নেই। অর্থাৎ কেউ যদি আপনাকে বলে ফ্রি ভিসা নিয়ে কুয়েতে পাঠাবে তাহলে বুঝে নিবেন সে আপনাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে।

সাধারণত ফ্রি ভিসার কথা বলে বাংলাদেশী অনেক দালাল কুয়েতের অনেক প্রভাবশালী লোকের সাথে চুক্তি করে শ্রমিক পাঠায়। তারপর অল্প বেতন দিয়ে তাদের অনেক কঠিন কাজ করায় এবং ব্যবসা করে। তাই কুয়েত ফ্রি ভিসা থেকে সাবধান থাকুন

আরো পড়ুন – অনলাইনে কাতার আইডি চেক করার নিয়ম – পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে কাতার আইডি চেকিং

কুয়েত খাদেম ভিসার সুবিধা অসুবিধা

উপরে আমরা খাদেম ভিসার কি, কুয়েত ভিসা বেতন কত, এবং কুয়েত ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কুয়েত খাদেম ভিসার সুবিধা অসুবিধা গুলো কি কি। সত্যি বলতে আপনি যদি সবকিছু জেনেশুনে কুয়েত খাদেম ভিসায় যেতে পারেন তাহলে অনেক কষ্টে ভাল বেতন পাবেন। যেহেতু ঘরের কাজ করতে যাবেন তাই আপনার তেমন কোনো ভারী কাজ করতে হবে না। ঘরের টুকটাক কাজ করবেন এবং বেশিরভাগ সময় এসির ভেতরে থাকবেন।

তবে অনেক ক্ষেত্রে দালালরা কুয়েত খাদেম ভিসার কথা বলে অন্য কাজের জন্য নিয়ে যায় এবং বেতন ঠিকভাবে দেয় না। তাই যাওয়ার আগে ভালোভাবে খবর নিয়ে দেখুন আপনি যে ভিসা নিয়ে যাচ্ছেন তা আসলেই ঠিক আছে কিনা। বর্তমানে ফেসবুকে কুয়েত প্রবাসীদের অনেক গ্রুপ আছে যারা আপনাকে ভিসার তথ্য দিতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুন – সৌদি ভিসার মেয়াদ শেষ হলে করণীয় – সৌদি আরবের ভিসার মেয়াদ চেক

কুয়েত খাদেম ভিসা বেতন কত

উপরে আমরা খাদেম ভিসার কি, কুয়েত ভিসা বেতন কত, এবং কুয়েত ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ব্লগটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমরা নিয়মিত ভিসা ও চাকরি রিলেটেড পোষ্ট করে থাকি। আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলো পড়তে পারেন। আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে করতে পারেন। ধন্যবাদ

আরো পড়ুন –

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

This Post Has 3 Comments

  1. Mehedi Hasan pappu

    Kwauit khadem visa I nee a job

    1. Admin

      আমরা শুধু ভিসা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে থাকি। ভিসা প্রোসেসিং করি না। দয়া করে ভালো কোন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করুন।

Leave a Reply