পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

পাইলস বা অর্শ রোগ বর্তমানে অনেকেরই হতে লক্ষ্য করা যায়। পাইলস হলে কি ঔষধ খেতে হয় বা পাইলসের লক্ষণ চিকিৎসা সম্পর্কে অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান। আজকে আমরা পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম সহ পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

পাইলস কি?

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

পাইলস যেটাকে সাধারণ ভাষায় আমরা অর্শ রোগ বলে থাকি। বৃহদান্তের শেষের দিকে রেক্টামের ভেতরে এবং বাইরে থাকা কুশনের মত একটি রক্ত শিরার জালিকা থাকে যা প্রয়োজন সাপেক্ষে মাঝে মাঝে সংকোচিত এবং মাঝে মাঝে প্রসারিত হয়। সেটাকেই আমরা পাইলস নামেই চিনি।

যখন পায়ুপথে সব শিরা সংক্রমণ হয় এবং চাপ পড়ে তখন পাইলস বা হেমোরয়েডের প্রদাহ হয় একে সাধারণ ভাষায় অর্শ রোগ বলা হয়। এটি মলদ্বারের এক ধরনের জটিল রোগ। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কোন বয়সে মানুষের এই জটিল রোগ হতে পারে। পাইলসের সাধারণত রক্ত ক্ষরণ এবং চুলকানি হয়। মলদ্বারের নিচের অংশে গোলাকার ফুলে ওঠে এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক হয়।

পাইলসের প্রকারভেদ

সাধারণত পাইলস দুই ধরনের হয়।

১। অভ্যন্তরীণ পাইলস

২। এবং বাহ্যিক পাইলস

অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং বাহ্যিক পাইলস সাধারণত মল দ্বারের উপরে দুই থেকে চার সেন্টিমিটার এর মধ্যেই হয়ে থাকে। বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরে ছোট ছোট গোল আকারের দেখা যায়। চুলকানি দাগ এবং বেদনাদায়ক হয়।

পাইলস এর কারণ

পাইলসের প্রধান কারণ গুলো হচ্ছে-

  • দীর্ঘ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগা
  • পুরনো ডায়রিয়ার সমস্যা
  • মলত্যাগের দীর্ঘক্ষন টয়লেটে বসে থাকা
  • দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা
  • পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
  • আশ যুক্ত খাবার কম খাওয়া
  • স্থূলতা ব্যায়াম বা শারীরিক শ্রম না করা
  • ভারী মালপত্র বহন করা
  • গর্ভকালীন সময়
  • পায়ুপথে টিউমার
  • যকৃত রোগ বা লিভার সমস্যা

পাইলসের লক্ষণ

পাইলস রোগ হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হল-

  • পায়ুপথে ব্যথা
  • পায়ু পথে চুলকানো
  • বসলে ব্যথা করা
  • পায়খানার সঙ্গে টকটকে রক্ত দেখা যাওয়া
  • মলদ্বারে ব্যথা লাগা
  • পায়ুর চারপাশে বা এক পাশে অধিক ফোলা থাকা
  • পায়খানা করার সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা
  • পায়খানা করার সময় জ্বালা হওয়া
  • মলত্যাগের সময় ব্যথা লাগা
  • রক্তপাত হওয়া
  • বসার সময় অস্বস্তি হওয়া
  • মলদ্বারের কাছে মাংস ব্যাথা করা
  • মলদ্বারে রক্তক্ষরণ

পাইলসের চিকিৎসা

পায়ু পথের পাইলস এর কোন সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ এ ধরনের অসুখের অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার রোগ হতে পারে। প্রথমে দিকে পাইলসের চিকিৎসা করা অনেক সহজ হয়। পরবর্তীতে পাইলস রোগ আরো কঠিন আকার ধারণ করে।

প্রথম দিকে চিকিৎসকের কাছে গেলে রোগ নির্ণয় করে প্রত্যুষ কপির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। প্রথমদিকে মলম ইনজেকশন বা রাবার ব্যান্ড লাইগেশন এর সাহায্যে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। কিন্তু পাইলসের শেষ পর্যায়ে চলে গেলে অবশ্য শৌল চিকিৎসা ছাড়া বা অপারেশন ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না।

তবে এসব ক্ষেত্রে রোগটি বারবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। রিং লাইগেশন এবং লঙ্গ অপারেশন দ্বারা শতকরা প্রায় ১০০ ভাগে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

ঘরোয়াভাবে পাইলসের চিকিৎসা

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

ঘরোয়া ভাবে পাইলসের সমাধান হলো-

  • পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা হল নিয়মিত সকল শাকসবজি খেতে হবে
  • প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে
  • মল শক্ত হয় এমন খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে
  • অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে
  • প্রচুর পরিমাণে প্রতিদিন আর যুক্ত খাবার খাদ্য তালিকা রাখতে হবে
  • পাইলস হওয়ার পূর্ব থেকে এ সকল খাবার বেশি বেশি খেতে হবে
  • পাইলস প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ঘরোয়া ভাবে ঔষধ গ্রহণ করতে হবে
  • মলম দিলে জ্বালা এবং চুলকানি অনেকটাই কমে যায়
  • নিয়মিত বাথটাবে গরম পানি দিয়ে তাতে কয়েকবার বসুন
  • মলত্যাগের পর ২0 মিনিট করে স্পিচ বাথ নিন

১। বরফ প্যাক দেওয়া- মল্দার অঞ্চলে একটি বরফ প্যাক থাকলে ফোলা এবং ব্যথা কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। দিনে দুই থেকে তিনবার বরফের প্যাক দিতে পারেন।

২। পিঠে নরম কুসন ব্যবহার করা- শক্ত পিঠের নিচে বা কোমরের নিচে একটি নরম কুশন রাখলে অর্শের ফোলা কম করতে অনেক সাহায্য করে এবং হেমায়েত তৈরি হতেও বাধা দেয়।

৩। পা উঁচু করা- যখন হাই কমড ব্যবহার করবে তখন পা উঁচুতে যাতে থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন জল চৌকি পায়ের কাছে রাখতে পারেন।

৪। হলুদ- কাঁচা হলুদ পানিতে ভালোভাবে ফোটে এ পানি নিয়মিত খেতে পারেন। এতে করে পাইলসের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।

৫। ব্যায়াম- কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমাতে এবং শরীর রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। যদি খুব পরিশ্রম না করেন তাহলে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই সাঁতার কাটা সাইকেল চালানো বা হালকা ব্যায়াম প্রতিদিন করতে পারেন।

৬। আপেল সিডার ভিনেগার- একটি তুলোর বলে আপেল সিডার ভিনেগার লাগিয়ে ব্যথার স্থানে লাগানো শুরু থেকে জ্বালাপোড়া করলেও কিছুক্ষণ পরপরই জ্বালাপোড়া কমে যাবে। এই পদ্ধতিতে দিনে কয়েকবার করে ব্যবহার করলে স্বরূপ ভালো হয়। অর্শ রোগের জন্য একসাথে চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস জল মিশিয়ে দুবার খেতে পারেন। সাথে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

পাইলস প্রতিরোধী খাবার

বিভিন্নআশ যুক্ত খাবার খেলে পাইলস হয় না বা পাইলস থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। যেমন-

  • সবুজ শাকসবজি
  • মৌসুমী ফলমূল
  • লালা আটা
  • রুটি
  • ঢেকেছাটা চাল
  • সাবুদানা
  • বার্লি
  • প্রচুর পরিমাণে পানি

পাইলসের প্রতিকারে করনীয়

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পাইলসের ওষুধ সেবনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অভ্যাস বদলে ফেললে পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

  • গরুর মাংস বা রেডমিট কম পরিমাণে গ্রহণ করা
  • লাউ শাক
  • কুমড়ো শাক
  • মল শক্ত করে এমন সবজি কাঁচা কলা এসব খাবার এড়িয়ে চলা
  • ধূমপান মধ্য পান বন্ধ করা
  • বাইরের সংরক্ষিত খাবার এড়িয়ে চলা
  • নিয়মিত পানি পান করা
  • সঠিক খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলা
  • পাইলস ব্যাপারে সচেতনতা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

বাজারে পাইলসের বিভিন্ন ধরনের এলোপ্যাথিক ঔষধ পাওয়া যায়। ডাক্তার পরামর্শ ব্যতীত কোন পাইলসের ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে পাইলসের যেসব ঔষধ পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো-

  • pilospay
  • Pilotab
  • Pilokit
  • Constitab
  • Normanal tablet 50mg
  • Daflon 500 mg
  • E rain
  • Osmolax
  • Lignocaine gel

পাইলসের হোমিওপ্যাথি ঔষধের নাম

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম আমরা উপরে জেনেছি। এখন আমরা পাইলসের হোমিওপ্যাথি ওষুধের নাম সম্পর্কে জানব। নিচে পাইলসের হোমিওপ্যাথি ওষুধের নাম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-

  • Salfer
  • Naxvomika
  • Alps
  • Calcaria flurica
  • Arsenic albam

বাচ্চাদের পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পেতে করণীয়

চিকিৎসকের মতে বেশিরভাগ সময় বাচ্চাদের পাইলস রোগের কারণ হলো-

  • ঠিকমতো পায়খানা না করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য
  • অনিয়মিত মলত্যাগ করলে শিশুদের পাইলস হতে পারে
  • এতে করে শিশুরা কোষ্ঠকাঠি ভুগতে পারে
  • শিশুকে নিয়মিত টয়লেট করার ট্রেনিং দিতে হবে এবং পেট পরিষ্কার করে পায়খানা করার অভ্যাস করতে পারে
  • আশ যুক্ত খাবার খাওয়া এবং মলদার পরিষ্কার রাখা
  • নিয়মিত খেলাধুলা করা
  • পানি বেশি করে খাওয়ানো ইত্যাদি

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

আজকে আমরা পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি পাইলস এর এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট এ বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply