নবজাতকের পায়খানা পানির মত
শিশুর জন্মের পরবর্তী সময়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। নবজাতকের বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। নবজাতকের পায়খানা পানির মতো দেখলে বুঝতে হবে ডায়রিয়া হয়েছে। এছাড়াও নবজাতকের কোন রোগ হলে অবশ্যই বাড়িতে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নবজাতকের পায়খানা পানির মত হলে করণীয় কি এই সম্পর্কে অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন।
আজকে আমরা নবজাতকের পায়খানা পানির মত হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – বাচ্চা পেটে আসার দোয়া
নবজাতকের ডায়রিয়া বা পানির মত পায়খানা
নবজাতকের ডায়রিয়া হলে পায়খানা অনেক পাতলা হয়ে যায় এবং এতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। মলের রং হলুদ সবুজ বাদামী আরও বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে। অনেক সময় মৌলের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। ডায়রিয়া সাধারণত ইনফেকশনের বায়োলজি লক্ষণ হতে পারে। যদি অনেকদিন ধরে চলতে থাকে তবে বাচ্চার পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত বাচ্চার যদি তিন মাস বা তার চাইতে কম বয়স হয় তবে বাচ্চা দিনে দুই থেকে তিনবার পাতলা পায়খানা করলে বা পাতলা পায়খানা দুই থেকে তিন দিন থাকলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারকে দেখানো উচিত। যদি ডায়রিয়ার সাথে রক্ত বা মিউকাস দেখেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
আরো পড়ুন – ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
নবজাতকের ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
শিশুরা সাধারণত এক ধরনের ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়ার কারণেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে বাচ্চার দেখাশোনা করলে ডায়রিয়া রোগ ভালো করা সম্ভব হয়। নবজাতকের ডায়রিয়া হবার কারণ হলো-
- ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক বা ক্রিমি থাকলে
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব হলে
- বিশুদ্ধ খাবার পানি পান না করলে
- এছাড়া শিশুর খাদ্য সরঞ্জাম অর্থাৎ ফিডার, প্লেট, বোতল ঠিকভাবে পরিষ্কার না করা শিশুর ডায়রিয়া হওয়ার জন্য দায়ী
- এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনে প্রভাবেও সাধারণত ডায়রিয়া হতে পারে
- বাচ্চাদের অনেক সময় বিশেষ কোনো এলার্জি থাকে যার ফলে পেট ব্যথা ডায়রিয়া লক্ষণ দেখা দিতে পারে
- গরমকালে বাচ্চার ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ে
- ডিহাইড্রেশন এর সমস্যা দেখা দেয় ডায়রিয়া হতে পারে
আরো পড়ুন – বাচ্চাদের ঘামাচি পাউডার নাম
নবজাতকের ডায়রিয়া হবার লক্ষণ
- নবজাতক দিনে দুই থেকে পাঁচ বারবার তারও বেশি পানির মতো পায়খানা করবে
- পায়খানা হবে পাতলা এবং দুর্গন্ধযুক্ত হবে
- সঙ্গে অল্প রক্ত থাকতে পারে
- জ্বর
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- হাঁচি কাশি ইত্যাদি থাকতে পারে
- মলের রং হলুদ সবুজ বা বাদামি বর্ণের হতে পারে
- বারবার বমি হতে পারে
- খাবারের রুচি কমে যাবে
- শরীর দুর্বল হয়ে যাবে
- চোখ বসে যাবে
- প্রস্রাব কারো হলুদ হতে পারে
- ত্বক শুষ্ক ও ঢিলে দেখায়
- শিশু নিস্তেজ হয়ে গেলে বা
- তার প্রস্রাবে পরিমাণ কমে যায়
আরো পড়ুন- বাচ্চার নাভি শুকানোর পাউডার
নবজাতকের ডায়রিয়া হলে করণীয়
- নবজাতকের পায়খানা পানির মত হলে কোনভাবেই যেন পানি শূন্যতা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেজন্য প্রতিবা্র পাতলা পায়খানার পর শিশুকে বয়স অনুযায়ী এবং ওজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার স্যালাইন থেকে খাওয়াতে হবে।
- শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে শুধু বুকের দুধ এবং ৬ মাসের বেশি হলে বুকের দুধের সাথে বাসায় রান্না করার স্বাভাবিক খাবার খাবার খাওয়াতে হবে।
- বাচ্চাকে ধরার পূর্বে বা দুধ খাওয়ানোর পূর্বে বা বাচ্চার ডায়াপার পাল্টানোর পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে
- বাচ্চাকে বহিরাগত বা অসুস্থ লোক থেকে দূরে রাখতে হবে
- শিশুদের হাত-পায়ের নখ নিয়মিত কেটে দিতে হবে
- বাচ্চাদের আশপাশ খেলনা এবং ব্যবহারের জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- বাচ্চা যে রুমে থাকে দোলনা বালিশ কাথার মাঝেমধ্যে রোদে দিতে হবে
- শিশুর বয়স দুই বছরে কম হলে ১০ থেকে ২০ চামচ দুই বছরে বেশি হলে ২০ থেকে ৪০ চামচ স্যালাইন প্রতিবার মলত্যাগের পর দিতে হবে
- ছয় মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে বুকের দুধ কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না
- কোল্ড ডায়রিয়া থেকে বাঁচাতে শীতের সময় শিশুকে পর্যাপ্ত গরম পোশাকে ঢেকে রাখুন
- ডায়রিয়ার পাশাপাশি জ্বর থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় জ্বরের সিরাপ
- ঠান্ডার জন্য এন্টিহিস্টামিন সিরাপ দিতে পারেন
- জন্মের পর সময়মতো সবগুলা টিকা দিতে হবে
নবজাতকের ডায়রিয়া হলে কি কি করা যাবে না
- নবজাতকের পায়খানা পানির মত হলে অনেক সময় মায়েরা ভয়ে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন। এটা কোনভাবেই করা যাবে না।
- শিশুকে পানি বা স্যালাইন খাওয়ানো যাবে না
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাওয়ানো যাবে না
- এছাড়া বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবার শিশুকে দেওয়া যাবে না
- পেটে গরম শেক দেওয়া যাবে না
নবজাতকের পায়খানা পানির মত হলে সাবধানতা
ডায়রিয়ার পানিশূন্যতা খুবই মারাত্মক তাই বাচ্চার জন্য সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ বা পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারে সেদিকে মায়েদের লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা এতে করে বাচ্চা মৃত্যু হতে পারে। শিশুর ওজন কমে যাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার পায়খানার নরম হওয়া মানেই ডায়রিয়া নয়।
যদি সে বারবার পায়খানা করে এবং প্রতিবার তরল পানির মধ্যেই হয় তাহলে সেটাই ডায়রিয়া। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ১২ ঘন্টা থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত ডায়রিয়া লক্ষণ দেখা দেয়। তবে সাধারণত ডায়রিয়া ৩ থেকে সাত দিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়। তবে এর বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ২৫ হাজার শিশু ডায়রিয়ায় মারা যায়। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শীর্ষই দুই বছরের কম তাই শিশুদের ডায়রিয়া হলে বাসায় না রেখে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
নবজাতকের পায়খানা পানির মত কিছু তথ্য
বাচ্চার জন্মের একমাস প্রথম কয়েক দিনের পায়খানা কিছুটা আঠালো বা কাল বা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। পায়খানার এই অবস্থার নাম নিকনিয়াম এবং এটা খুবই স্বাভাবিক প্রায় ১০০ জনের ৯০ জনেরও বেশি নবজাতক জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথমবার পায়খানা করে থাকে। তাই শিশুর প্রথম মলত্যাগের জন্য অন্তত এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
এ সময়ে বুকের দুধ খাইয়ে যেতে হবে অন্য কিছু করার দরকার নেই। বাচ্চা খাওয়া শুরু করার পর মেকোনিয়াম ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে যায় এবং পায়খানার রং হলুদ হয়ে আসে। বাচ্চা ছয় মাস পর্যন্ত শিশু বুকের দুধ খাবে প্রথম এক থেকে দেড় মাস শিশু প্রতিবার খাওয়ার পর পরই পায়খানা করতে পারে এমনকি এর সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ বার হতে পারে।
এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই সাধারণত হলুদ এবং একটু পানি পানি হয়। গোটা গোটা সবুজ সবুজ বিভিন্ন ধরনের ও হতে পারে আবার বুকের দুধ খাওয়ানোর শিশু যদি পাঁচ থেকে সাত দিন পায়খানা না করে তবে চিন্তার কিছু নেই। এরা সাতদিন পর্যন্ত পায়খানা নাও করতে পারে খেয়াল করুন পেট ঠিক আছে কিনা এবং নবজাতক শিশু বুকের দুধ ঠিকমতো পাচ্ছে কিনা। যদি দিনে ২৪ ঘন্টায় ছয় থেকে আটবার প্রস্রাব করে তাহলে আর চিন্তার কিছু নেই।
শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস শিশুর পরিপাকতন্ত্র ধীরে ধীরে সুগঠিত হয় এবং তার পায়খানার অভ্যেস ও পরিবর্তন হতে থাকে। তবে যদি তার পেট শক্ত মনে হয় ফেঁপে বা ফুলে থাকে যুগে ঠিক সন্তুষ্ট বলে মনে হয় না অথবা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে খুব মুচরা মুচরি করে। পায়খানা শুকনো হয় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।
আবার নবজাতকের পায়খানা যদি অত্যধিক পাতলা হয় এবং পরিমাণে বেশি হয় তাহলেও দ্রুত ডাক্তারে পরামর্শ নিন। পায়খানা যদি আলকাতরার মত কালো অথবা রক্তযুক্ত দেখা যায় তবে দেরি না করে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।
নবজাতকের পায়খানা পানির মত হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
সাধারণত বাচ্চাদের কোন অসুখ হলে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা না করে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া উচিত। তিনি বলতে পারবেন ঠিক কি কারনে বাচ্চার এ সমস্যা হয়েছে এবং কোন ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। নবজাতক শিশু বারবার ডায়রিয়া হলে একদিনে দুই থেকে পাঁচ বারের বেশি হলে বাচ্চার পায়খানার সাথে রক্ত গেলে অথবা একদমই পানির মতো হলে বাচ্চা নিস্তেজ হয়ে গেলে ডায়রিয়ার সাথে বমি থাকলে শিশুকে সুস্থ বলে মনে হয় না হয় অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।
অথবা পায়খানা যদি অত্যধিক পাতলা হয় এবং পরিমাণে বেশি হয় তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া অনেক নবজাতকের পায়খানা কালো অথবা রক্তযুক্ত দেখা যায় এতে মোটেও দেরি করা উচিত নয় তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
নবজাতকের পায়খানা পানির মত
আজকে আমরা নবজাতকের পায়খানা পানির মত করনীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি নবজাতকের পায়খানা পানির মত আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়াও আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- অনলাইনে আয় করার সেরা উপায়
- অনলাইনে ভিডিও দেখে আয় করার অ্যাপ, ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম
- বাচ্চা পেটে আসার দোয়া
- বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার