বাচ্চা পেটে আসার দোয়া

বাচ্চা পেটে আসার দোয়া

বর্তমান সময়ে অনেক নারী গর্ভধারণ করতে অক্ষম হয়। বিভিন্ন শারীরিক কারণে সাধারণত নারীদের এসব সমস্যা দেখা দেয়। তবে সন্তান দেওয়া এবং নেওয়া বা পুত্র সন্তান হবে না কন্যা সন্তান হবে তা একমাত্র নির্ভর করে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর। তাই শারীরিক যে কোন সমস্যা থাকলেও নিরাশ হওয়া যাবে না। কেননা আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব ব্যক্তি আছে যাদের ২0 বছর কোন সন্তান হয়নি কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহর দোয়ায় এবং চিকিৎসায় সন্তান লাভ করেছে।

তাই বাচ্চা পেটে আসার দোয়া সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। আজকে আমরা বাচ্চা পেটে আসার দোয়া ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়

সন্তান লাভের দোয়া

সবার মনে রাখতে হবে সন্তান দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। আল্লাহ যাকে সন্তান দান করেন কোন অসুস্থতা কিংবা দুর্বলতা কিংবা যে কোন সমস্যা তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করলে সন্তান দান করেন যাকে ইচ্ছা পূত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-মেয়ে উভয় দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা বন্ধা করেন। (সূরা আশ শুরা আয়াত ৫০)

সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর নবী জাকারী আলাই সালাম এর দোয়া কুরানে রয়েছে।বৃদ্ধ বয়সে হয়ে যাওয়ার পরেও নিঃসন্তান ছিলেন তবুও তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়া প্রতিদিন পাঠ করতেন। বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ তায়ালা তাকে সন্তান দান করেছেন দোয়াটি হল-

“রাব্বি হাবলি মিল্লাদুঙ্কা জুররীয়াতান তাইয়ীবাহ ইন্নাকা সামিউড দুয়া”

অর্থ- হে আমার প্রতিপালক তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করবে। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী। (সূরা আল ইমরান আয়াত ৩৮)

এ ছাড়াও আল্লাহর রাব্বুল আলামিন নিঃসন্তান পিতা-মাতাকে আরেকটি দোয়া বেশি বেশি পড়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন তাহল-

“রাব্বি লা তাজারনি ফারদাও ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিছিন”

অর্থ- হে আমার রব আমাকে একা রেখো না তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী। (সূরা আম্বিয়া আয়াত ৮৯)

এছাড়াও আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম আল্লাহতালা নিকট দোয়া করেছিলেন পুত্র সন্তানের জন্য। আল্লাহতালা তার দোয়া কবুল করেন এবং তাকে পুত্র সন্তান দান করেন। তাই চাইলে এই দোয়াটি ও বারবার পড়া যেতে পারে।

“রাব্বি হাবলি মিনাস সালেহিন”

অর্থ- হে আমার প্রভু আমাকে এক সৎ পুত্র দান করুন। (সূরা সাফাত আয়াত ১০০)

এছাড়াও কুরআনে বর্ণিত নেককার স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সন্তান দিয়ে সুখী করবেন দোয়াটি হল-

রাব্বানা হাবলানা মিন আও ওয়াজিনা ওয়া যুর্ড়িয়াহ তিনা কুররাতা আইয়ুন ওয়া জা আলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা

অর্থ- হে আমার প্রতিপালক আমার জীবন সঙ্গের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদের কে আল্লাহ ভীরুদের জন্য আদর্শ স্বরূপ দান করুন। (সুরা ফুরকান আয়াত ৭৪)

আরো পড়ুন – আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ছেলে না মেয়ে বোঝার উপায়

সন্তান লাভের আমল

বেশি বেশি ইস্তেগফার করলে সন্তান এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। এর ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে “তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী নালা প্রবাহিত করবেন” (সূরা নূর আয়াত ১২)। এছাড়াও কোরানে আরো রয়েছে অধিক ইস্তেগফারের ফলাফল বলতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

“তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন” (সূরা হুদ) । রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দিবেন। সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দিবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। তাই সন্তান না হলে দুশ্চিন্তা না করে বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে হবে। এতে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম সন্তান দান করবেন।

সন্তান লাভের জন্য পিতামাতার আমল

সামি এবং স্ত্রীর সাথে একান্তে মিলিত হবার সময় দোয়া পড়া। আল্লাহ চাইলে সে সময় আপনার সন্তান লাভের মনোবাসনা পূরণ হতে পারে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন- “যখন তোমাদের কেউ নিজের স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন যেন এই দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয় কেননা এখান থেকে যদি তাদের কোন সন্তান জন্ম নেয় সে সন্তানকে শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।( বুখারী হাদিস নাম্বার ৬৩৮৮)। দোয়াটি হল-

“বিসমিল্লাহী আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শয়তানা মা রাজাক্তানা”

অর্থ- হে আল্লাহ আমি আপনার নামে শুরু করছি আপনার আপনি আমাদের নিকট থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যে সন্তান দান করবেন তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখুন।

সন্তান লাভের ছোট্ট আমল

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন আল্লাহতালা ৯৯ টি গুণবাচক নাম আছে। যে ব্যক্তি গুণবাচক নাম গুলোর জিকির করবে সে চিরস্থায়ী জান্নাতে যাবে। আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে আল আওয়ালু একটি গুণবাচক। এই গুনবাচক নামের এই ছোট্ট আমলে সন্তান লাভের মনোবাসনা পূর্ণ হয়।

যে ব্যক্তি ছেলে-মেয়ে নেই সে ব্যক্তি ৪0 দিন পর্যন্ত একাধারে ৪0 বার আল্লাহ তা’আলা এই পবিত্র গুণবাচক নাম আল আউয়ালু পাঠ করলে তার সন্তান লাভের মনোবাসনা পূর্ণ হবে। তবে অনেক আলেমদের মতানুসারে যদি কোন ব্যক্তির কোন কিছুর প্রয়োজন হয় সে ব্যক্তি ৪0 জন হাতে এক হাজার বার করে আল্লাহ তাআলার এই পবিত্র গুণবাচক নাম আল আউয়ালু পাঠ করলে তার সব প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যাবে।

পুত্র সন্তান লাভের দোয়া

আল্লাহতালা যাকে ইচ্ছা করেন কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। তবে অনেকেরই পুত্রসন্তানের সব থাকে তারা গর্ভাবস্থায় সবসময় আল্লাহর কাছে পুত্র সন্তানের জন্য দোয়া করতে পারেন। কারণ এই সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ গর্ভবতীদের মায়ের হাত খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। এছাড়াও কুরআনে পুত্র সন্তান লাভের জন্য বিভিন্ন দোয়া রয়েছে দোয়া গুলো হলো-

“রাব্বি হাবলি মিনাস সালেহিন”

অর্থ- হে আমার লালন পালনকারী আমাকে একটি সৎপত্র দান করুন।

দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার উপায়

দ্রুত সন্তান ধারণাকে করতে চাইলে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। সন্তান গর্ভধারণ একটি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত তবে পরিকল্পনার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে অবশ্যই যত গর্ভবতী হওয়া সম্ভব।

হেলদি লাইফ স্টাইল মেনে চলতে হবে- গর্ভধারণের জন্য সব সময় গর্ভধারণের সময় শরীর অনেক অনেক পরিবর্তন হয়। হরমোন জনিত সমস্যা হয়। তাই দ্রুত গর্ভধারার ইচ্ছা থাকলে নিয়ন্ত্রিত এবং হেলদি লাইফ স্টাইল এর রুটিন কে অনুসরণ করতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া- অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কেননা আপনার শারীরিক বা মানসিক কোন সমস্যা আছে কিনা তা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে একজন চিকিৎসাকে বলতে পারবেন। এমন কিছু যদি নিয়মিত কোন ওষুধ খেয়ে থাকেন তার গর্ভধারণের পক্ষে বাধা হবে কিনা তাও চিকিৎসক জানিয়ে দিবেন।

 শরীর চর্চা করুন- প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে শরীরটা চর্চাকরা উচিত। শরীরকে ফিট রাখা উচিত এতে করে শরীর অতিরিক্ত ওজন জমে না অতিরিক্ত ওজন থাকলে অনেক সময় গর্ভধারণ করা সম্ভব হয় না। তাই গর্ভধারণ করতে চাইলে ব্যায়াম শুরু করুন।

শারীরিক ওজন বজায় রাখা- শরীরের ওজন সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে। কেননা অতিরিক্ত ওজন হলে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা কমে যায় এবং জরায়ুতে চর্বি জমে গেলে বাচ্চা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। বিশেষ করে ওবিসিডি বা গর্ভধারণের পক্ষে একটি বড় শত্রু। অপেক্ষাকৃত কম শারীরিক ওজনের মানুষজন বাচ্চা ধারণ করতে পারে বেশি। এছাড়াও গর্ভধারণ করার পরিবর্তে সময়ও ওজন খুব মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে তাই গর্ভ ধারণ করতে চাইলে অবশ্যই ওজনকে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।

বাচ্চা পেটে আসার দোয়া

মন্তব্য

আজকে আমরা বাচ্চা পেটে আসার দোয়া সহ বাচ্চা লাভের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে আশা করছি। আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন সব আপডেট তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply