বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

বাচ্চাদের প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বাবা-মার উৎকণ্ঠার কোন শেষ নেই। কখনো শিশুর প্রস্রাব বেশি হয় আবার কখনো কম অনেক সময় শিশুর প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সাথেসাথে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা বাচ্চাদের বিভিন্ন সমস্যা শরীরের বিভিন্ন জটিল রোগের কারণে হয়ে থাকে।

আজকে আমরা বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন- কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে

শিশুর প্রস্রাবের সাধারন পরিমাণ

সাধারণত একটি শিশু তার প্রতি কেজি ওজনের অনুপাতে ১০০ মিলি কম প্রস্রাব করে থাকে। কিন্তু এর বেশি প্রস্রাব করলে তাকে পোলোরিয়া বা অতিরিক্ত প্রস্রাব বলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে বড় বাচ্চাদের বিছানায় প্রস্রাব করার সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ মূলত দু ধরনের রোগের কারনে হতে পারে।

১। প্রস্রাবে ইনফেকশন

২। কিডনির সমস্যা

ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ

  • শিশুর অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণ এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো-
  • ডাইবেটিস
  • দীর্ঘমেয়াদি বা জন্মগত কিডনি রোগ
  • মানসিক সমস্যা
  • সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট জটিলতা
  • কিডনির জন্মগত ত্রুটি
  • রক্তে পটাশিয়ামের অভাব
  • রক্তে ক্যালসিয়ামের আধিক্য
  • সুনির্দিষ্ট কিছু ঔষধের প্রভাব

আরো পড়ুন – বাচ্চাদের ঘামাচি পাউডার নাম

বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হলে করণীয়

উপরে আমরা বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে জেনেছি। এই পর্যায়ে আমরা করনীয় সম্পর্কে জানবো। শিশুর অতিরিক্ত প্রস্রাব করলে অভিভাবকদের আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। প্রথমে এর কারণ চিহ্নিত করতে হবে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে অনুমান করে ঠিক করতে হবে। বিষয়গুলো হল-

  • শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ আসলেই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কিনা
  • অতিরিক্ত হলে কতদিন ধরে অতিরিক্ত প্রস্রাব হচ্ছে
  • এর সঙ্গে শিশুর শরীরে অন্য কোন রোগের উপসর্গ আছে কিনা
  • শিশুর দৈনন্দিন পানি পানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করতে পারা যাচ্ছে কিনা
  • সুস্থ স্বাভাবিক শিশু সাময়িকভাবে কিছুদিন বেশি প্রস্রাব করলে কিংবা দুই একদিন বিছানায় প্রস্রাব করলে শিশুটিকে লজ্জা না দিয়ে লজ্জা কেটে ওঠার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • রাত আটটার পরে শিশুকে কম পানি খেতে নিরুতসাহিত করতে হবে

এসব করলে অনেক সময় বাচ্চাদের প্রস্রাবের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। যদি তা না হয়ে শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ দিন দিন বাড়তেই থাকে সেই সঙ্গে তার শারীরিক অথবা মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তাহলে সমস্যাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং এই পরিস্থিতিতে শিশুটির রোগ নির্ণয়ের জন্য একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

আরো পড়ুন – বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয়

বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায়

বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ চিহ্নিত করার পর চাইলে কিছু ঘরোয়া সহজ উপায় মেনে চললেই  প্রতিকার পাওয়া যায় –

  • রাতে ঘুমানোর আগে তরল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা
  • পানি বা পানি জাতীয় খাবার কম খাওয়া
  • মুত্রাশয় ইরিটেশন হয় এমন খাবার বা পানি এড়িয়ে চলা
  • এই খাবারগুলোকে মেডিকেলের ভাষায় দায়-ইউরেটিক্স বলা হয়। যেমন-
  1. কফি বা ক্যাফিনযুক্ত খাবার
  2. চা
  3. অ্যালকোহল
  4. সোডা
  5. টমেটো ভিত্তিক খাবার
  6. চকলেট
  7. কিছু মসলাযুক্ত খাবার
  • স্বল্প সময়ের জন্য ডায়াপার প্যাড পরিয়ে রাখা
  • ওজন কমানো। অতিরিক্ত ওজন মুত্রাশয়ের উপর চাপ ফেলে। গবেষণা দেখা গেছে যে যেসব স্থূলকারী রোগীরা তাদের ওজনের ১০ শতাংশ কমিয়েছে তাদের মূত্রশাইয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আগের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। অনেক বাচ্চা ওভার ওয়েট হওয়ার ফলেও এই সমস্যা দেখা যায়।

ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ হলে যেসব খাবার খেতে হবে

যেসব বাচ্চাদের ঘনঘন প্রস্রাবের সমস্যা রয়েছে তারা কিছু প্রাকৃতিক উপায় বিভিন্ন ধরনের ফল শাকসবজি ইত্যাদি খাবার তালিকা রেখে এ ধরনের সমস্যা থেকে নিজেদের বাচ্চাদের কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। যেমন-

  • ফল
  •  সবুজ শাকসবজি
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
  • সাপ্লিমেন্ট

বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ

বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ অনেকসময় কিডনি জনিত সমস্যা থেকে হয়ে থাকে। এ রোগটি শিশুদের দীর্ঘদিন ভুগতে হয় অনেক সময়টা কিডনি ইনফেকশনের রূপান্তরিত হয়।

  • জ্বর থাকবে
  • ঔষধ খাওয়ার পরেও জ্বর কমবে না
  • কিছুদিন পরপর জ্বর হবে
  • প্রস্রাব করার সময় বাচ্চা কান্না করবে
  • প্রস্রাবে প্রচুর গন্ধ হবে
  • বাচ্চা প্রস্রাব করতে চাইবে কিন্তু প্রস্রাব হবে না বা হলেও অল্প
  • প্রস্রাব দেখতে ঘোলাটে হবে
  • বাচ্চার অকারণে বমি দেখা দিবে
  • বাচ্চার খাওয়ার অরুচি থাকবে
  • ডায়রিয়া থাকবে
  • তলপেটে ব্যথা করতে পারে
  • বাচ্চারাতে ঘন ঘন প্রস্রাব করবে

বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার কারণ

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কিছু স্বাভাবিক শারীরিক কারণে ও প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে যায়। তবে বাচ্চাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হবার নির্দিষ্ট কিছু কারন রয়েছে। যেমন-

  • ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন
  • বাচ্চা বাথরুম করার পর যথাযথভাবে পরিষ্কার না করা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ইউরিনারি ট্রাক্টে এমনিতে কোন ব্যাকটেরিয়া সাধারণত থাকে না। কোন কারণে ব্যাকটেরিয়া ব্লাডারে ঢুকে গেলে ইউরিনারি ইনফেকশন হতে পারে। ব্লাডার ফুলে যায় এবং পেটে নিম্নাংশে যন্ত্রণা হতে পারে।
  • যদি ব্যাকটেরিয়া কোনভাবে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে কিডনিতেও ইনফেকশন হতে পারে। সাধারণত অনাস বা ভ্যাজাইনার আশেপাশে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। কোন কারণবশত যদি ইউরিনারি ট্র্যাক ঠিকমতো কাজ না করতে পারে তাহলে ব্যাকটেরিয়া ইউনিয়নারি ঢুকে যায় ফলে ইনফেকশন হতে পারে।
  • কিছু বাচ্চার মধ্যে জন্ম থেকেই বেসিকোইপুরের আর ইউরেটার রিফ্লাক্স বলে এক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যায় ইউরিন ব্লাডার থেকে বেরিয়ে ইউরেটার হয়ে আবার কিডনিতে পৌঁছে যায়।
  • লিঙ্গ সিল হাইড্রোসিলসের মতো ব্রেন বা নার্ভাস সিস্টেমের অসুখ থাকলে ব্লাডার পুরোপুরি খালি হতে পারেনা।
  • স্পাইনাল কর্ডে চোট লাগলেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর থেকেও ইউরিনারি রাখতে ইনফেকশন হয়ে থাকে

প্রস্রাবে ইনফেকশন থেকে বাঁচার উপায়

উপরে আমরা বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই পর্যায়ে আমরা প্রস্রাবে ইনফেকশন থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

  • বাচ্চাদের ভালোভাবে প্রস্রাব বা বাথরুম করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে
  • প্রস্রাব বা বাথরুম করার পর ভালোভাবে পরিষ্কার হওয়ার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলতে হবে
  • ছোট বাচ্চাদের ভালোভাবে পরিষ্কার করার দায়িত্ব মায়েদের নিতে হবে
  • দীর্ঘ সময় ডায়াপার পরিয়ে রাখা যাবে না
  • এছাড়া কাপড়ের নেংটি বা কাঁথা ব্যবহার করলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে
  • বাচ্চার লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে আদর করবেন না এবং খোলা রাখা যাবে না
  • বাচ্চাদের যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
  • অনেক সময় বাচ্চাদের কৃমির সমস্যার কারণেও প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়ে থাকে
  • বাচ্চাকে বেশি বাবল বাথ করতে দেওয়া যাবে না
  • ঢিলেঢালা অন্তর্বাসও জামা কাপড় পরানো ভালো
  • বাচ্চা যাতে প্রচুর পরিমাণে পানি খায় সেদিকে নজর দিতে হবে
  • বাচ্চাকে দিনে একাধিকবার বাথরুমে যাওয়া ট্রেনিং দিতে হবে
  • প্রস্রাবে কোন সমস্যা মনে হলে দেরি না করে বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে

প্রস্রাবে ইনফেকশনের রোগ নির্ণয় টেস্ট

১। ইউরিনার স্যাম্পল টেস্ট করা হয়।

২। কেন ইনফেকশন হয়েছে বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য কিডনির আলট্রাস্নান করা হয়।

৩। এছাড়া ইউরিনেশন এর সময় বিশেষ পদ্ধতি দ্বারা এক্সরে করা হয়।

৪। বাচ্চার মেডিকেল হিস্ট্রি নেয়া হয়। ডাক্তাররা জানতে চান বাচ্চার বয়স কত আগে কখনো ইনফেকশন হয়েছে কিনা, ইনফেকশন কতটা জটিল আকার ধারণ করেছে, বাচ্চার অন্য কোন অসুখ আছে কিনা, স্পাইনাল কর্ড বা ইউরিনারি কোন সমস্যা আছে কিনা। এর উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা কি হবে তার নির্ধারণ করেন।

বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

মন্তব্য

আজকে আমরা বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি অভিভাবকদের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক কাজে লাগবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply