১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করনীয়

১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করনীয়

বাচ্চা জন্মের পরবর্তী সময় থেকে নবজাতক শিশুর অনেক যত্ন নিতে হয়। নবজাতক শিশুর জন্মের পর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই এ ধরনের সমস্যা কম বেশি সব নবজাতকের এই দেখা দেয়। এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো শিশুর পায়খানা না হওয়া।

মূলত নবজাতকের শিশুর পায়খানা কখন স্বাভাবিক বা কখন না করাটা অস্বাভাবিক তা জানা প্রয়োজন। অনেকেই ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি নবজাতক মায়েদের জন্য আর্টিকেলটি অনেক কাজে লাগবে।

আরো পড়ুন – নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হলে করনীয়

নবজাতকের পায়খানা না হবার কারণ

  • পেটে ঠিকভাবে মালিশ না করা
  • ঠিকভাবে বুকের দুধ পান না করা
  • বাচ্চার পেটে গ্যাস জমা হওয়া
  • বুকের দুধ ঠিক ভাবে হজম না হওয়া
  • বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর ঠিকভাবে ঢেকুর না তোলানো
  • নবজাতকের পেটে তেল মালিশ না করানো
  • নবজাতকের মায়ের অস্বাস্থ্যকর খাবারের ডায়েট চার্ট
  • শরীরের বিভিন্ন রোগের কারণে নবজাতকের পায়খানা অনেক সময় হয় না

১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করনীয়

সাধারণত নবজাতকেরা এক সপ্তাহ পর্যন্ত পায়খানার না করাটা স্বাভাবিক। সেটা নির্ভর করে বাচ্চার গতিবিধির উপর বাচ্চা সুস্থ থাকলে কান্নাকাটি না করলে সমস্যা নেই। তবে ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে তবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নবজাতকের মায়ের খাবারের ডায়েট চার্ট। ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করনীয় কি তা নিচে বর্ণনা করা হলো –

আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া – নবজাতকের মায়ের উচিত ডেলিভারির পর দুই মাস আশ যুক্ত খাবার খাওয়া। তবে এ সময় শাক কম খাওয়া উচিত এতে নবজাতকের পেটে গ্যাস জমে। এ সময় বাচ্চা বুকের দুধ খায় বলে মাকে সব সময় নিজের খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। পেটে গ্যাস হয় এমন কোন খাবার ভাজাপোড়া খাবার বাইরের খাবার অথবা পচা বাঁশি খাবার খাওয়া যাবেনা। যার ফলে বাচ্চার পেটে গ্যাস জমে বাচ্চার ঠিক ভাবে পায়খানা হবে না তাই এ সময় মাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

বেশি করে পানি এবং তরল খাবার খাওয়া – যেহেতু এক মাসের বাচ্চা শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ পান করে তাই মা যা খাবে ভাত যা বুকের দুধের সাথে তা পাবে। সে জন্য মাকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন- ডাবের পানি, স্যালাইন, লেবুর শরবত ফলের রস ইত্যাদি। বেশি বেশি খেতে হবে এবং প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করতে হবে।

বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ পান করানো – অনেক সময় বাচ্চার জন্মের পর বাচ্চার যখন এক মাস বয়স হয় ততদিনে বাচ্চা বুকের দুধ অভ্যস্থ হয় না। তাই বুকের দুধ পেটে ঠিকভাবে হজম না হলেও বাচ্চাদের পায়খানা সঠিকভাবে হয় না। তাই ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করণীয় কি তার সঠিক উপায় হল বাচ্চাকে নিয়ম করে বুকে দুধ পান করানো।

বাচ্চাকে প্রতিদিন ব্যায়াম করানো – নবজাতককে শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদা ব্যায়াম রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন চাইল্ড স্পেশালিস্ট সেসব ব্যায়ামগুলো ইউটিউবে থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে দিয়ে থাকেন। এছাড়াও আপনি চাইলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে বাচ্চাকে কিভাবে ব্যায়াম করাতে হয় তা জেনে নিতে পারেন। এতে করে বাচ্চার পেটে গ্যাস জমে না এবং বাচ্চার সঠিকভাবে পায়খানা করতে পারে।

পেটে সরিষার তেল মালিশ – বাচ্চা জন্মের পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে প্রথম তিন মাস অবশ্যই প্রতিদিন সকালে হালকা গরম সরিষার তেল দুই হাতের তালুতে ঘষে পেটে মালিশ করতে হবে। এতে করে বাচ্চার পেটে গ্যাস জমে থাকলে গ্যাস বের হয়ে যায় এবং বাচ্চার হালকা অনুভব করে এবং ঠিকভাবে পায়খানা হয়।

গরম কাপড়ের শেক দেওয়া – বাচ্চাদের ঠিকভাবে পায়খানা না হলে অবশ্যই পেটে গরম শেক দিতে হবে। গরম শেক দিলে পেটের গ্যাস বের হয়ে যায় এবং বাচ্চা তখনই বা তার কিছুক্ষণ পরেই পায়খানা করে দেয়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে বাচ্চাকে গরম কাপড়ের শেক পেটে দিতে হবে।

আরো পড়ুন – ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার আজকের দাম কত

১ মাসের শিশুর পায়খানা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

বাচ্চার জন্মের একমাস প্রথম কয়েক দিনের পায়খানা কিছুটা আঠালো বা কাল বা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। পায়খানার এই অবস্থার নাম নিকনিয়াম এবং এটা খুবই স্বাভাবিক প্রায় ১০০ জনের ৯০ জনেরও বেশি নবজাতক জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথমবার পায়খানা করে থাকে। তাই শিশুর প্রথম মলত্যাগের জন্য অন্তত এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

এ সময়ে বুকের দুধ খাইয়ে যেতে হবে অন্য কিছু করার দরকার নেই। বাচ্চা খাওয়া শুরু করার পর মেকোনিয়াম ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে যায় এবং পায়খানার রং হলুদ হয়ে আসে। বাচ্চা ছয় মাস পর্যন্ত শিশু বুকের দুধ খাবে প্রথম এক থেকে দেড় মাস শিশু প্রতিবার খাওয়ার পর পরই পায়খানা করতে পারে এমনকি এর সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ বার হতে পারে।

এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই সাধারণত হলুদ এবং একটু পানি পানি হয়। গোটা গোটা সবুজ সবুজ বিভিন্ন ধরনের ও হতে পারে আবার বুকের দুধ খাওয়ানোর শিশু যদি পাঁচ থেকে সাত দিন পায়খানা না করে তবে চিন্তার কিছু নেই। এরা সাতদিন পর্যন্ত পায়খানা নাও করতে পারে খেয়াল করুন পেট ঠিক আছে কিনা এবং নবজাতক শিশু বুকের দুধ ঠিকমতো পাচ্ছে কিনা। যদি দিনে ২৪ ঘন্টায় ছয় থেকে আটবার প্রস্রাব করে তাহলে আর চিন্তার কিছু নেই।

শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস শিশুর পরিপাকতন্ত্র ধীরে ধীরে সুগঠিত হয় এবং তার পায়খানার অভ্যেস ও পরিবর্তন হতে থাকে। তবে যদি তার পেট শক্ত মনে হয় ফেঁপে বা ফুলে থাকে যুগে ঠিক সন্তুষ্ট বলে মনে হয় না অথবা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে খুব মুচরা মুচরি করে। পায়খানা শুকনো হয় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।

আবার নবজাতকের পায়খানা যদি অত্যধিক পাতলা হয় এবং পরিমাণে বেশি হয় তাহলেও দ্রুত ডাক্তারে পরামর্শ নিন। পায়খানা যদি আলকাতরার মত কালো অথবা রক্তযুক্ত দেখা যায় তবে দেরি না করে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

কখন চিকিৎসকের কাছে নেবেন

সাধারণত বাচ্চাদের কোন অসুখ হলে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা না করে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া উচিত। তিনি বলতে পারবেন ঠিক কি কারনে বাচ্চার এ সমস্যা হয়েছে এবং কোন ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। নবজাতক বাচ্চার যদি পেট শক্ত মনে হয় পাঁচ থেকে সাত দিন পায়খানা না করে পেট ফুলে বা ফেঁপে থাকে শিশুকে সুস্থ বলে মনে হয় না হয় অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে খুব মোচরা মুছরি করে পায়খানা অত্যাধিক শক্তও শুকনো হয় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।

অথবা পায়খানা যদি অত্যধিক পাতলা হয় এবং পরিমাণে বেশি হয় তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া অনেক নবজাতকের পায়খানা কালো অথবা রক্তযুক্ত দেখা যায় এতে মোটেও দেরি করা উচিত নয় তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

আরো পড়ুন – ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করনীয়

১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করণীয় কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

বাচ্চার জন্ম হয়ে গেছে অনেকক্ষণ হয়েছে এখনো পায়খানা করেনি কারন কি?

শারীরিক সব দিক দিয়ে সুস্থ নবজাতকের প্রথম পায়খানা ২৪ ঘন্টার মধ্যে করা উচিত। আর প্রস্রাবের জন্য ৪৮ ঘন্টা অপেক্ষা করা যেতে পারে তবে অনেক সুস্থ বাচ্চাও ২৪ ঘন্টার পরে মলত্যাগ করে। প্রথমত শিশুর পায়ুপথের কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখতে হবে। অথবা মল তার জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত হয়ে আছে কিনা সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এছাড়াও জীবনে প্রথম কালো পায়খানা দেরিতে করলে পরবর্তীতে হাইপোথাইরয়েড রোগ এর সম্ভাবনা থাকে। এতে শিশুর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা খুবই জরুরী।

বাচ্চা খুবই ঘনঘন পায়খানা করে এর কারণ কি অথবা চার পাঁচ দিন হয়ে যায় বাবু পায়খানা করে না এটা কি কোন সমস্যা?

স্বাভাবিক ওজনের সুস্থ বাচ্চা শুধুমাত্র বুকের দুধ খেয়ে দিনে ২০ থেকে ২৫ বার পর্যন্ত পায়খানা করাটা স্বাভাবিক। খেয়াল রাখতে হবে ওজন ঠিকমতো বাড়ছে কিনা এবং ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বার প্রস্রাব করছে কিনা এরকম যদি সুস্থ বাচ্চা ছাদ থেকে পাঁচ দিন পর পায়খানা করতে পারে। যারা বাচ্চাকে কৌটা দুধ খাওয়ান তারা দুধে পানি পরিমান ঠিকমতো দিচ্ছেন কিনা সে সম্পর্কেও খেয়াল রাখতে হবে।

বাচ্চা একেক দিন একেক রকম পায়খানা করে কোন রঙের পায়খানাটা স্বাভাবিক?

নবজাতক এর পায়খানা্র রঙের চার্ট পর্যন্ত থাকে। স্বাভাবিক ভাই পায়খানা অনেক রঙে হতে পারে তবে দুশ্চিন্তা না করে শুধু দুইটি রং খেয়াল করবেন একদম চুন এর মত সাদা পায়খানা যেটা নবজাতকের খুব জটিল রোগের হতে পারে। দুই লাল পায়খানা অর্থাত রক্ত যাচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে ছাড়া বাকি সব পায়খানায় স্বাভাবিক।

১ মাসের শিশুর পায়খানা

১ মাসের শিশুর পায়খানা

আজকে আমরা ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করছি। আশা করছি নবজাতক মায়েদের জন্য ১ মাসের শিশুর পায়খানা আর্টিকেলটি খুবই উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply