১ মাসের শিশুর ওজন ও খাবার তালিকা

১ মাসের শিশুর ওজন 

প্রত্যেক শিশুরই জন্মের সময় একটি আদর্শ ওজন থাকে। জন্মের সময় যদি শিশুর ওজন ২৫০০ গ্রামের কম হয় তাহলে তাকে আন্ডার ওয়েট এবং ৩৫০০ গ্রামের বেশি হয় তাহলে ওভার ওয়েট বলে। ১ মাসের শিশুর ওজন কত হওয়া উচিত বা জন্মের পর শিশুর ওজন কিভাবে বাড়ে সে সম্পর্কে অনেকেই গুগলে এ সার্চ করে থাকে।

আজকে আমরা তাদের জন্যই ১ মাসের শিশুর ওজন তালিকা এবং এক বছর পর্যন্ত শিশুদের ওজন কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – বাচ্চা পেটে আসার দোয়া

১ বছরের শিশুদের আদর্শ ওজন

১ মাসের শিশুর ওজন থেকে শুরু করে ১ বছরের বাচ্চার আদর্শ ওজন চার্ট নিচে দেওয়া হল-

জন্মের পর– ছেলে- ৩.৫ কেজি/মেয়ে ৩.৪ কেজি

একমাস- ছেলে ৪.৫ কেজি / মেয়ে ৪.২ কেজি

দুই মাস– ছেলে ৫.৬ কেজি/ মেয়ে ৫.১ কেজি

তিন মাস- ছেলে ৬.৪ কেজি /মেয়ে ৫.৮ কেজি

চার মাস- ছেলে ৭.০ কেজি/ মেয়ে ৬.৪ কেজি

বয়স পাঁচ মাস- ছেলে ৭.৫ কেজি/ মেয়ে ৬.৯ কেজি

ছয় মাস- ছেলে ৭। ৯ কেজি /মেয়ে ৭.৩ কেজি

সাত মাস- ছেলে ৮.৩ কেজি/ মেয়ে ৭.৬ কেজি

৮ মাস- ছেলে আট দশমিক ৬ কেজি /মেয়ে ৭.৯ কেজি

৯ মাস- ছেলে আট দশমিক ৯ কেজি/ মেয়ে ৮.২ কেজি

১০ মাস- ছেলে ৯.২ কেজি /মেয়ে ৮.৫ কেজি

১১ মাস- ছেলে ৯ দশমিক চার কেজি /মেয়ে ৮.৭ কেজি

১২ মাস- ছেলে ৯ দশমিক ছয় কেজি/ মেয়ে আট দশমিক ৯ কেজি

আরো পড়ুন – ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ

প্রথম বছরে নবজাতকের ওজন বৃদ্ধির গড় নিয়ম

১ মাসের শিশুর ওজন ৪.২ কেজি থেকে ৪.৫ কেজি হয়ে থাকে। জন্মের এক মাস পরে শিশুর ওজন বৃদ্ধি হওয়া শুরু হয়। কারণ তাদের একটি নিয়মিত খাদ্যের নিয়ম তৈরি হয়। তিন মাসের শিশুর ওজন ৪ মাসের শিশুর ওজন ৫ মাসের শিশুর ওজন এবং ৬ মাসের শিশুর ওজনের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। কম সময়ের মধ্যে এসময় শিশুর জন্মের হিসাব নির্দেশ করা হয়। এসময় শিশুর আরও বেশি দুধের প্রয়োজন হয় যা ক্লাসটার ফিটিং নামে পরিচিত।

শিশুর ওজন জন্মের ওজনের দ্বিগুণ হয়ে যায়। সাত মাসের শিশুর ওজন প্রায় শিশু জন্মের জীবনের বেশি হয় ক্লাসটার ফিডিং এর প্রক্রিয়াটির গতি কমে যায়। যার কারণে ৮ থেকে ৯ মাসের শিশুর ওজন প্রায় একই হয় এবং এ সময় মাত্র 0.৫ কেজি থেকে ১ কেজি গড়ে ওজন বৃদ্ধি হয়।

শিশুর ওজন আদর্শ ওজন অনুরূপ না হলে করণীয়

সাধারনত ১ মাসের শিশুর ওজন ৪.২ কেজি থেকে ৪.৫ কেজি হয়ে থাকে। যদি আপনার শিশু আদর্শ ওজনের সীমার কাছাকাছি না আসে তবে আপনার একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিশুটিকে পরীক্ষা করে তার বৃদ্ধির হার দেখে এবং নির্দিষ্ট পুষ্টি চিকিৎসার পরামর্শ দেন। যদি মায়ের বুকের দুধে শিশুর ওজন না বাড়ে তবে ডাক্তাররা প্রায় বেবি ওয়েট গেইন বিভিন্ন ধরনের ফুড দিয়ে থাকেন।

এছাড়া মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট বা ফর্মুলার দুধ দিয়ে থাকে। যদি আপনার শিশুর চুষার সমস্যা থাকে অথবা বুকের কোন সমস্যা থাকে তাহলে সবচেয়ে ভালো পরামর্শ পেতে একজন লেক্টি চান কনসালট্যান্ট এর সাথে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো হবে। ডাক্তাররা সাধারণত ছয় মাসের পর থেকে বাড়তি খাবার দেওয়ার কথা বলেন এর পূর্বে আপনি চাইলে বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা দুধ ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুন – বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

প্রিম্যাচিউর বাচ্চার ওজন চার্ট

সাধারণত প্রিম্যাচিউর বাচ্চা অন্যান্য বাচ্চার মত একই ধরনের হয় না। বাচ্চার ওজন অন্যান্য বাচ্চা চাইতে অনেক কম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হয়। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার হয়তো নরমাল ওজনের চার্ট ফলো করতে বলবেন না। কারণ এই ম্যাচেও শিশুরা স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়ার সময় বাচ্চাদের মতো একই হারে বাড়ে না।

যদি এই ওজন চার্ট ফলো করতে চান তবে প্রিম্যাচিউর বাচ্চার ক্ষেত্রে তার ডিউ ডেটটি কে তার জন্ম তারিখ হিসেবে ধরে নিতে হবে অর্থাৎ যেদিনই তার জন্ম হওয়ার কথা ছিল সেদিন থেকে তার জন্ম তারিখ হিসেবে করে চার্ট ফলো করতে হবে।

জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে করণীয়

অনেক সময় বাচ্চাদের জন্মের সময় ওজন অনেক কম হয় এ বিভিন্ন কারণ থাকে যেমন গর্ভবতী মায়েরা পুষ্টির অভাবেও সন্তান অনেক সময় কম ওজনের হয়ে থাকে। এছাড়া অনেক সময় বাচ্চা প্রিম্যাচুর জন্মগ্রহণ করে তাই শিশু ওজন সঠিকভাবে বাড়ানোর জন্য সন্তানকে প্রতি দুই থেকে তিন ঘন্টা অন্তর বুকের দুধ পান করাতে হবে।

এতে করে সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং ওজন দ্রুত বাড়ে। মায়ের স্তনের দুধ প্রতিটি সন্তানের পক্ষে খুবই ভালো এবং এতে সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদাও পুরন হয়। অনেকে মনে করেন মায়ের বুকের দুধে ছেড়ে ফর্মুলা দুধে পুষ্টিগুণ বেশি কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শিশু ওজন সঠিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সঠিকভাবে শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে হবে।

আরো পড়ুন- ১ মাসের শিশুর পায়খানা না হলে করনীয়

১ মাসের শিশুকে বুকের দুধ কয়বার খাওয়ানো উচিত

জন্মের পর শিশুর যখন এক থেকে ছয় মাস বয়স হয় তখন শুধুমাত্র শিশুকে মায়ের বুকের দুধেই খাওয়াতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে অনেকেই বুকের দুধ সঠিক ভাবে খাওয়াতে না পারলে বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা দুধ দিয়ে থাকে। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে শিশুকে কত পরিমান এবং দিনে কতবার বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।

আপনার শ্বশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুকের দুধ খাওয়ানোর সংখ্যার হ্রাস পাবে এবং বাচ্চারও দীর্ঘ সময় ঘুমাবে এবং অন্তর্ভুতি কম থাকবে। তবে এক মাসের বাচ্চা গড়ে প্রতিদিন প্রায় আট থেকে ১২ বার খাবে। যদি আপনার শিশুটি সুখী সক্রিয় এবং সঠিকভাবে ওজন বাড়তে থাকে ভালোভাবে বিকাশ হয় এবং প্রতিদিন পর্যাপ্ত সংখ্যক ডায়াপার নষ্ট করে তাহলে বুঝতে হবে শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাচ্ছে।

তবে যদি বাচ্চাই সময় বেশি ঘ্যান ঘ্যানরা প্রচুর চিৎকার কান্নাকাটি করে তাহলে বুঝতে হবে সঠিকভাবে বুকের দুধ পাচ্ছে না। বুকের দুধের পাশাপাশি থাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হবে। ১ মাসের শিশুর ওজন তাহলেই সঠিক ভাবে বাড়বে।

আরো পড়ুন – ১ মাসের শিশুর খাবার তালিকা

বাচ্চা কে কতটুকু ফর্মুলার দুধ দেওয়া উচিত

বাচ্চাকে কতটুকু ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হয় তা নির্দিষ্ট ভাবে বর্ণনা করা আসলে কঠিন। তবে কিছু বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে যেমন-

  • বাচ্চার বয়স
  • বাচ্চা ওজন
  • বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় কিনা
  • বাচ্চা শক্ত খাবার খায় কিনা ইত্যাদি

নবজাতককে দৈনিক কতটুকু ফর্মুলা দুধ দিতে হয়

বাচ্চা যদি এখনো শক্ত খাবার না খায় অর্থাৎ নবজাতক বাচ্চাদের জন্য প্রত্যেক বাচ্চার প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫০ মিলি লিটার থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত ফর্মুলা দূর দিতে পারেন। অর্থাৎ বাচ্চা যদি তিন কেজি হয় তাহলে বাচ্চাকে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলি লিটার যেতে পারে। ফর্মুলা দুধ দেওয়া যেতে পারে তবে সব পরিমাণ সব বাচ্চার জন্য সমান হবে না।

বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী এবং বাচ্চা কতটুকু সহ্য করতে পারে তার উপর নির্ভর করেই তাকে ফর্মুলা দূর দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে জন্মের প্রথম দিকে বাচ্চার পেট ছোট থাকে তাই স্বাভাবিকভাবে কম খেতে চাইবে। এছাড়াও বাচ্চাকে খাবারের ক্ষেত্রে জবরদস্তি করা উচিত না। জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহে বাচ্চাকে প্রতিবারে ৬0 থেকে ৭0 মিলি ফর্মুলা দিন। এর বেশি দিলে বাচ্চা হজম করতে পারবে না।

দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দুই মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে প্রতিবারে ৭৫ থেকে ১০৫ মিলি পর্যন্ত দিন। সম্ভবত প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৭৩৫ মিলিম পর্যন্ত খেতে পারবে। দ্বিতীয় মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চা প্রতিবার ১০৫ থেকে ২১০ মিলি লিটার পর্যন্ত প্রতিবারে খেতে পারবে এবং বাচ্চার ছয় মাস থেকে সে প্রতিবারে ২১0 থেকে ২৪০ মিলি পর্যন্ত খেতে পারবে।

প্রতিদিন সে হয়তো ৯০০ মিলে পর্যন্ত খেতে পারে। এ সময় বাচ্চাকে শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করার পর তার ফর্মুলা চাহিদা কমতে কমতে ৬00 মিলিতে নেমে আসতে পারে। ১ মাসের শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য সঠিক পরিমানে খাওয়াতে হবে।

১ মাসের বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো উচিত কিনা?

সাধারণত মায়ের দুধের বিকল্প কোন কিছুই নেই। মায়ের বুকের দুধে সব ভিটামিন মজুদ থাকে যেসব ভিটামিন বাচ্চার প্রয়োজন হয়। তবে ফর্মুলা দুধের চেয়ে বুকের দুধ হজম করা বাচ্চাদের জন্য সহজ হয়। কেননা অনেক সময় ফর্মুলা দুধ বাচ্চার পেটে হজম হয় না সুতরাং বারবার পেট খারাপ হতে পারে। ফরমুলা দুধ খেতে থাকা বাচ্চারা বুকের দুধ খাওয়ানোর চেয়ে কম ঘন ঘন খাওয়াতে হবে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাওয়ানোর সংখ্যা আরো কমিয়ে দিতে হবে। তবে শিশু কে অতিরিক্ত পরিমাণে ফর্মুলাতে দুধ ঘন ঘন না দেওয়াই উত্তম এ বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নজর রাখতে হবে। কারণ বাচ্চার পক্ষে স্তনের চেয়ে বোতলে পান করা সহজ। এছাড়াও মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে ফর্মুলা দুধের মধ্যে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই অনেকেই বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাইয়ে কেনা দুধ খাওয়াতে চায়।

১ মাসের শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য ফর্মুলা দেওয়া উচিত নয়। মূলত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত বাচ্চাকে ফর্মুলা উচিত না। কেননা অনেক বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ বাচ্চার ওজন বয়সের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়। তাই বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।

বাচ্চাকে কখন ফর্মুলা দেয়া বন্ধ করতে হয়

সাধারণত বাচ্চাকে ছয় মাসের সময় শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করতে হয়। এ সময় শুরুতে সে সব ধরনের খাবার খাবে না তাই সময় ফর্মুলা চালিয়ে যাওয়ার জরুরী। কারণ এতে সে প্রয়োজনে সব পুষ্টিগুণ পাবে। তবে বাচ্চার বয়স এক বছর হলে সে বিভিন্ন খাবারে কম বেশি অভ্যস্ত হয়ে যাবে তাই তখন ফর্মুলা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। এছাড়াও বাচ্চা ছয় মাসের সময় দৈনিক ফর্মুলা খেলে তাকে ডাক্তারের পরামর্শ ভিটামিন দেওয়া যেতে পারে।

১ মাসের শিশুর ওজন

১ মাসের শিশুর ওজন

আজকে আমরা ১ মাসের শিশুর ওজন ও খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ১ মাসের শিশুর ওজন আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply