সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা। সৌদি হোটেল ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ

সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। বর্তমানে বাংলাদেশে ভালো চাকরি পাওয়া স্বপ্নের মত হয়ে গেছে। দেশে দূর্নীতি ও অধিক জনসংখ্যার কারনে বর্তমানে ভালো মানের চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম তাদের জন্য চাকরি পাওয়া শিক্ষিতদের চেয়ে তুলনামূলক আরো কঠিক। এইসব কিছু বিবেচনা করে বর্তমানে আমাদের দেশের তরুনদের বড় একটি অংশ বিদেশ চলে যাচ্ছে। আবার বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশ যাচ্ছে তার বড় একটি অংশ সৌদি আরব যায়।

সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা
ছবি – সৌদি আবাসিক হোটেল

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য সাধারনত সৌদি আরবে বেশি মানুষ যায় এর বেশ কয়েকটি কারন আছে। যেমন কাজের ভালো পরিবেশ, সৌদি আরবে বাংলাদেশের খুব বড় একটা কমিউনিটি আছে, ভালো বেতন, এবং সর্বশেষ সৌদি আরবের মালিকরা তাদের আন্ডারে যারা কাজ করে তাদের অনেক খেয়াল রাখেন। এছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানিতে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত খরচ, ইন্টারনেট খরচ ফ্রি। এই সবকিছুর বিবেচনায় সৌদি আরব কাজের জন্য বাংলাদেশীদের প্রথম পছন্দের পরিনত হয়েছে।

আজকে আমরা মূলত সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা নিয়ে আলোচনা করবো। সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা হচ্ছে খুবই আরামের ও কম কষ্টে টাকা ইনকাম করার একটি চাকরি। আপনি যদি সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যেতে চান তাহলে আজকের ব্লগটি আপনার জন্য। চলুন তাহলে মুল আলোচনা শুরু করা যাক।

সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা বিস্তারিত

সৌদি আরব যেসব ভিসা দিয়ে থাকে তারমধ্যে সবচেয়ে ভালো ভিসা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা। এই ভিসায় আপনাকে মূলত সৌদি আরবের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে চাকরির সুযোগ পাবেন। সৌদি আরবে মূলত থ্রি স্টার, ফাইভ স্টার, সেভেন স্টার এর মত আবাসিক হোটেলগুলতে রুম সার্ভিস, কিচেন স্টাফ, রিসিপশন বয়, সার্ভিস বয় এই ধরনের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে। সাধারনত আপনার থাকা খাওয়া, ও জামা কাপড় ধোয়া পর্যন্ত সব কিছু কোম্পানির। নিচে আমরা সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আপনি যদি সোদি আরবের আবাসিক হোটেল ভিসা পেয়ে যান তাহলে আমাদের সাজেশন থাকবে কোন কিছু চিন্তা না করে চলে যাওয়ার। কারন বর্তমানে এর চেয়ে আরামের চাকরি আর হতে পারে না। আপনি সারাদিন এসির নিচে থাকবেন,ভালো খাবেন এমনকি আপনার জামা কাপড় ও নিজে ধুতে হবে না। লড্রিতে দিয়ে দিলে পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে। আর আপনার যদি চেহারা ভালো হয় এবং ইংলিশে একটু দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি আরো দ্রুত উন্নতি করতে পারবেন। এছাড়া সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা সাধারনত ৮ ঘন্টার ৩ সিফটে ডিউটি হয় এবং আপনি চাইলে অতিরিক্ত ডিউটি করে অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করতে পারেন। এছাড়া হোটেলে যেহেতু বড়লোকরা আসে তাই খুব ভালো পরিমানে টিপস পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমন অনেকক্ষেত্রে হয় যে প্রায় বেতনের সমান টিপস পেয়ে যান অনেকে।

সৌদি আরব হোটেল ভিসা আবেদনের নিয়ম

  • আপনার বৈধ পাসপোর্টের থাকতে হবে। আপনি যদি বর্তমানে পাসপোর্ট করতে চান তাহলে আমদের সাজেশন থাকবে অনলাইনে স্মার্ট পাসপোর্ট করে নিন। এছাড়াও আপনার পাসপোর্টে কমপক্ষে দুইটা খালি পেইজ থাকতে হবে।
  • পূর্বে কোন আবাসিক রেস্টুরেন্টে কাজের অভজ্ঞতা থাকলে তা প্রমানের জন্য যথেষ্ট পরিমান কাগজপত্র দেখাতে হবে।
  • আপনার সদ্য তোলা ১০ কপি রঙিন ছবি লাগবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আবেদনের সময় মেডিকেল রিপোর্টের ফটোকপি শো করতে হবে এটা প্রমানের জন্য যে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। মেডিকেল রিপোর্ট নেয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই রিপোর্ট অবশ্যই ভালো ও স্বিকৃত মেডিকেল থেকে হতে হবে। অনলাইনে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার নিয়ম জানতে এই পোষ্টটি দেখুন।
  • জন্ম নিবদ্ধন ও ভোটাই আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ এর কপি লাগবে।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমানের সার্টিফিকেট। সর্বশেষ পাশ করা পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এর ফটোকপি।

সৌদি আবাসিক হোটেল ভিসার খরচ

সাধারনত সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা দুই বছর মেয়াদি হয়ে থাকে এবং আপনার আকামা, থাকা, খাওয়া ও যাতায়াত খরচ কোম্পানি বহন করবে। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা আবেদন করতে খরচ পড়বে ১ লক্ষ  ৭০ হাজার টাকার মত। তবে কোম্পানির ধরন, ভিসার ধরন ও চাকরির ধরন অনুযায়ী খরচ কিছুটা কম বেশি হতে পারে। তবে ভিসা আবেদনের সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যার মাধ্যমে ভিসা নিচ্ছেন তিনি কতটা বিশ্বস্থ। অনেক ক্ষেত্রে যিনি ভিসা বিক্রি করে সে বড় একটা লাভ রেখে দেয় আর তাই ভিসার দাম ও বেড়ে যায়।

তবে ভিসার দাম একটু কম বেশি যাই হোক আপনি একবার সৌদিতে যাওয়ার পর আপনার আর তেমন কোন খরচ নেই। কারন তখন আকামা, থাকা খাওয়ার খরচ সব কিছু কোম্পানি ই বহন করবে। আর আরেকটা বড় সুবিধা হচ্ছে বাইরে গেলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় খাবার নিয়ে। কাজের মধ্যে নিজে আবার রান্না করে খেতে হয় তবে সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা আপনাকে দুইবেলা কোম্পানি খাবার দিবে। তাই আপনার খাবার নিয়ে ও চিন্তা করতে হবে না। আর এই খাবারের কোয়ালিটি হবে খুবই ভালো মানের।

সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা বেতন

যেমনটা আমরা বলেছি সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা আপনি থ্রিস্টার, ফাইভ স্টার বা সেভেন স্টার হোটেলে চাকরি পেতে পারেন। আপনার চাকরি কি রকম হোটেলে হয়েছে তার উপর নির্ভর করবে আপনার বেতন কেমন হতে পারে। তবে সাধারনত মোটামুটি ভালো মানের হোটেল গুলোতে আপনার বেতন শুরু হবে ১০০০ সৌদি রিয়াল থেকে যা বাংলা টাকায় ২৫ হাজার টাকার মত। তবে আপনার চাকরির ধরন ও কাজের ধরন অনুযায়ী বেতন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা আপনি চাইলে ওভারটাইম করতে পারবেন। ওভারটাইম করলে বেতনের দেড়গুন ও ছুটির দিনে ডিউটি করলে বেতনের দুই গুন হারে অতিরিক্ত টাকা পাবেন। সাধারনত ডিউটি ৮ ঘন্টার হয় আপনি চাইলে ডিউটির পরে এক্সট্রা কোন কাজ করে অতিরিক্ত ইনকাম করতে পারেন। এছাড়া টিপস এর মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করার সুবিধা তো রয়েছেই। সব দিক বিবেচনায় কম পরিশ্রমে বেশি টাকা আয় করার জন্য সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা আপনার জন্য সেরা একটি পছন্দ হতে পারে।

সৌদি হোটেল ভিসা কাজের ধরন

অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা বাংলাদেশ থেকে যেসকল কর্মী যায় তারা মূলত কি ধরনের কাজ করে। সহজভাষায় বললে একটা আবাসিক হোটেল চালানোর জন্য যেসকল কাজ করা প্রয়োজন তার যেকোন একটি কাজ ই আপনার করা লাগতে পারে। নিচে আমরা কয়েকটি কাজের নাম দিচ্ছি এর মধ্যে যেকোন একটি কাজ আপনার করা লাগতে পারে।

  • ক্লিনার – বাংলাদেশ থেকে যেসকল কর্মী সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা নিয়ে যান তাদের বড় একটি অংশ আবাসিক হোটেলের ক্লিয়ার হিসেবে কাজ করতে হয়।
  • কিচেন কর্মী – আবাসিক হোটেলে রান্না সামলানোর দ্বায়ীত্ব পড়ে অনেকের উপর।
  • সার্ভিস বয় – এক্ষেত্রে আপনার দ্বায়ীত্ব হবে নতুন কাস্টমার আসলে তাদের রুম দেখিয়ে দেয়া এবং তাদের কিছু প্রয়োজন হলে সার্ভিস দেয়া।
  • লন্ড্রি – হোটেলে গেস্টদের জামা কাপড় ধোয়া ও স্ত্রি করার দ্বায়ীত্ব পড়তে পারে আপনার উপর। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে হাত দিয়ে ধুতে হবে না। মেশিনের মাধ্যমে সব হবে।
  • হোটেল রুম বয়

সৌদি হোটেল ভিসার সুবিধা

অনেকেই আমাদের কাছে সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা সুবিধা গুলো জানতে চান। সত্যি বলতে সৌদি আবাসিক হোটেল ভিসা হচ্ছে সবচেয়ে আরামের চাকরি গুলোর মধ্যে একটি এছাড়া বেতন ও অনেক ভালো। আরামের চাকরি বলছি এই কারনে আপনি খুব সুন্দর একটি পরিবেশের মধ্যে থাকবেন। সারাদিন এসির নিচে থাকবেন এবং দুইবেলা খুবই ভালো মানের খাবার হোটেলেই খাবেন। এমনকি আপনার নিজের জামা কাপড় নিজে ধুতে হবে না। লন্ড্রি করে দিবে। নিচে আমরা সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা সুবিধাগুলো লিস্ট আকারে দেয়ার চেষ্টা করছি

  • ভিসার মেয়াদ দুই বছর এবং মেয়াদ শেষে আকামা খরচ কোম্পানির
  • থাকা কোম্পানির
  • দুইবেলা খুব ভালো মানের খাবার দিবে কোম্পানি
  • ওভারটাইম করার সুযোগ
  • যাতায়াত খরচ ও ইন্টারনেট খরচ কোম্পানির
  • টিপস এর মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ
  • ভালো ইংরেজি বলার দক্ষতা থাকলে দ্রুত প্রোমশন

এছাড়াও আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে আবেদনের পূর্বে কার কাছ থেকে ভিসা নিচ্ছে তা অবশ্যই চেক করে নিবেন। কারন দালালের খপ্পরে পড়ে টাকা হারালে দোষ আপনার ই। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো এজেন্সি আছে যারা খুবই বিশ্বস্থ ও নিজেরা দ্বায়ীত্ব নিয়ে আপনাকে বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করবে। আপনি চাইলে এমন কোন একটি এজেন্সির সহযোগিতা নিতে পারেন।

মন্তব্য

উপরে আমরা চেষ্টা করেছি সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার। সৌদি আরব আবাসিক হোটেল ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ সম্পর্কে আশা করি পরিষ্কার একটি ধারনা হয়ে গেছে। এর পর ও কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের ফেসবুক পেইজে করতে পারেন। ব্লগটি ভালো লাগলে আপনার আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের অন্যান্য ব্লগগুলো পড়ার আমন্ত্রন রইলো। ধন্যবাদ

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply