আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জব ভিসায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে চান তাদের জন্য আমাদের আজকের আয়োজন আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আজকে আমরা জানবো কিভাবে ২০২২ সালে এসে বাংলাদেশ থেকে আয়াল্যান্ডে সহজে যাবেন, আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কাজের বেতন কত, ভিসা প্রোসেসিং খরচ কত এইসকল ব্যাপার আলোচনা করার ট্রাই করবো ইনশা আল্লাহ। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
কেন আয়ারল্যান্ড যাবেন?
অনেকেই জানতে চাইতে পারেন বাংলাদেশ থেকে তো সাধারনত মধ্য প্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে যাওয়া হয়। তাহলে কেনো ২০২২ সালে এসে আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে যাবে। আসলে বর্তমানে জিডিপির দিকে আয়ারল্যান্ড বিশ্বের ৬ষ্ঠ এবং এবং পাসপোর্ট এর দিক থেকে বিশ্বের ৩য়। তাহলে বুঝতেই পারছেন আয়ারল্যান্ড অর্থনৈ্তিকভাবে কতটা উন্নত এবং ভালো অবস্থানে আছে।
তাছাড়া বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে কাজের বেতন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো এবং বাংলাদেশে ও ভারত থেকে আয়ারল্যান্ড জব ভিসা পাওয়া অনেকটাই সহজ। এই সব কিছু বিবেচনা করলে বর্তমানে আয়ারল্যান্ড জব ভিসা হতে পারে আপনার ভাগ্য পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় কাঠি।
আরো পড়ুন: আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা ২০২২
আয়াল্যান্ডে কোন কাজের চাহিদা বেশি
অন্যান্য দেশের মত আয়ারল্যান্ডেও সব কাজের ই চাহিদা ভালো। তবে কিছু নির্দিষ্ট কাজ আছে যেগুলোর চাহিদা বেশি সাথে বেতন ও খুব ভালো। তাই আপনি যদি আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনি নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন যাতে সেদেশে গিয়ে আপনি নিজের দক্ষতা দেখাতে পারেন।
আমরা এখন বেশি বেতনের কিছু প্রোফেশনের নাম উল্লেখ করবো আপনি চাইলে এর মধ্য থেকে যেকোন একটি চুজ করে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন।
- এসির কাজ
- ইলেকট্রিশিয়ান এর কাজ
- পাইপ ফিটিং এর কাজ
- কন্সট্রাকশন এর কাজ
- ড্রাইভিং
- হোটেল ম্যানেজম্যান্ট এর কাজ
- সাটারিং কার্পেটিং
- ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন সেক্টর
উপরের কাজগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রকম কাজ আছে যেমন রেস্টুরেন্টে রান্না, ক্লিনার, পার্সোনাল এসিস্টেন্ট তবে উপরের যেকোন একটি টেকনিকাল স্কিল থাকলে আপনার কাজ পাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা হবে তাছাড়া আপনার বেতন তুলনামূলক অনেক বেশি হবে। তাই আমাদের সাজেশন থাকবে শুধু আয়ারল্যান্ড নয় বাইরের যেকোন দেশে কাজের জন্য যেতে চাইলে যেকোন একটি টেকনিকাল স্কিল শিখে রাখা উচিত।
আরো পড়ুন: আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা ২০২২
আয়ারল্যান্ডে কাজের বেতন কত
ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কাজের ভেতন কত তা নির্দিষ্ট করে বলা কিছুটা কঠিন কারন বেতন নির্ভর করবে আপনার কাজের ধরন ও কত ঘন্টা কাজ করছেন তার উপর। তবে আয়ারল্যান্ডে সাধারনত ঘন্টা প্রতি নূন্যতম ১২ থেকে ১৫ ইউরো দেয়া হয়। সে হিসেবে আপনি যদি ফুল টাইম কাজ করেন বাংলাদেশী টাকায় মাসে ১ লাখ থেকে ১.৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার কর্মক্ষেত্রে অভারটাইম করে ও অতিরিক্ত টাকা আয় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী আপনার ওয়ার্কিং আওয়ার শেষে যত ঘন্টা অতিরিক্ত কাজ করবেন তারজন্য মাস শেষে অতিরিক্ত টাকা পাবেন।

আয়ারল্যান্ড ভিসা প্রসেসিং নিয়ম
এতক্ষন আমরা আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত জানলাম এবং আয়ারল্যান্ডে কোন কাজের চাহিদা বেশি সে সম্পর্কে ও বিস্তারিত জানলাম কিন্তু এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বাংলাদেশে তো আয়াল্যান্ড এর দূতাবাস নেই তাহলে কিভাবে বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা র জন্য আবেদন করবো।
হ্যা আপনার ধারনা ঠিক, বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ড এর কোন দূতাবাস নেই তাই আপনি সরাসরি আয়ারল্যান্ড ভিসা আবেদন বা ভিসা প্রোসেসিং করতে পারবেন না। ভিসা আবেদন করতে হবে ভারতে অবস্থিত আয়ারল্যান্ড এম্বাসির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আপনি নিজে নিজে ও ভিসা প্রোসেস করে ভারতে অবস্থিত আইরিশ এম্বাসির এই ঠিকানায় পাঠাতে পারেন। C-17 Malcha marg, Chanakyapuri, New Delhi – 110 021
অথবা আপনি চাইলে বাংলাদেশে অবস্থিত অনেক বিশ্বস্ত এজেন্সি আছে যারা আপনার সম্পূর্ন ভিসা প্রোসেস করে দিবে তাদের মাধ্যমে ভিসা প্রোসেস করতে পারেন। তবে এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রোসেসিং এ খরচ তুলনামূলক একটু বেশি পড়বে। এছাড়াও এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রোসেসিং এর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কেননা অনেক খারাপ চক্র আছে যারা ভিসা প্রোসেসিং এর কথা বলে আপনার টাকা খেয়ে নিবে। তাই দালাল হতে সাবধান।
ভারতে অবস্থিত আইরিশ দূতাবাস নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন: https://www.dfa.ie/passportonline/onlinefaqs/
আয়ারল্যান্ড ভিসা প্রসেসিং খরচ
উপরের আলোচনা ভালোভাবে পড়লে আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে ভালোভাবে আইডিয়া হয়ে যাওয়ার কথা। এছাড়াও আয়ারল্যান্ড ভিসা প্রোসেসিং সিস্টেম ও আয়ারল্যান্ড এ কাজের চাহিদা নিয়েও আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আমরা আরেকটা গুতুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রোসেসিং খরচ।
যেমনটা আমরা উপরে আলোচনা করেছি আপনি দুইভাবে আয়ারল্যান্ড এর ভিসা প্রোসেস করতে পারেন।
- নিজে আবেদন করে ভারতীয় এম্বাসির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডে পৌছানো।
- লোকাল এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন
করোনার পর থেকে বর্তমানে ভিসা প্রোসেসিং খরচ কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে নিজে নিজে আবেদন করলে আপনার খরচ পড়বে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ। ভিসার ধরন ও সময়ের সাথে এই খরচ কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
আর যদি আপনি লোকাল এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে চান তাহলে আপনার প্রায় ১ লক্ষ টাকা বেশি লাগবে। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৫ লক্ষ টাকার মত। তবে যেমন টা বলেছি ভিসার ধরন ও এজেন্সির ধরনের উপর ভিত্তি করে সময়ের সাথে এই খরচ কম বা বেশি হতে পারে।
আরো পড়ুন: সৌদি আরব কোম্পানি ভিসা ২০২২
ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
এতক্ষন আমরা আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করলাম এখন আমরা জানবো ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবে।
- আপনার বৈধ পাসপোর্ট লাগবে। তবে পারপোর্ট করার ক্ষেত্রে বর্তমানে অনলাইনে করা স্মার্ট পাসপোর্ট করার চেষ্টা করবেন।
- আপনার জাতীয়তা প্রমান করার জন্য এন আই ডি কার্ড, ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর সাথে সদ্য তোলা দুই কপি ছবি।
- পূর্বের কাজের কোন অভিজ্ঞতা থাকলে সেটা দেখানোর মত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমান করার জন্য কাগজপত্র ও সবশেষ পাশ করা সার্টিফিকেট এর কপি।
এছাড়াও সময়ের সাথে ও ভিসার ধরনের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় কাগজ আরো লাগতে পারে। তাই ভিসা আবেদনের নিশ্চিত হয়ে নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
আয়রল্যান্ড ফ্রি ভিসা
অন্যান্য দেশের মত আয়ারল্যান্ড ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দেয়ার পাশাপাশি ফ্রি ভিসা দিয়ে থাকে। যারা জানেন না ফ্রি ভিসা কি তাদের জন্য সংক্ষেপে বলছি। ফ্রি ভিসা হচ্ছে আপনি কোন কোম্পানির সাথে বিশেষ চুক্তির না করেই ভিসা নিয়ে বিদেশ যাওয়া। বিদেশ গিয়ে আপনি নিজের স্কিল অনুযায়ী কাজ করে টাকা অনকাম করতে পারবে।
তবে ফ্রি ভিসার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। যেমন আপনার কাজের কোন নির্দিষ্ট সিকিউরিটি থাকে না। তাই আপনার যদি অলরেডি কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে ফ্রি ভিসাইয় না যাওয়াটাই ভালো। চেষ্টা করবেন নরমাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার।
পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
যেমনটা আমরা উপরে বলেছিলাম বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন একটি টেকনিকাল স্কিল শিখে তারপর যাওয়া ভালো তবে অনেক ক্ষেত্রে শিখার সুযোগ হয়ে উঠে না। তাই অনেকে ই প্রশ্ন করেন পূর্বের কাজের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলে সেক্ষেত্রে করনীয় কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানি শুরু দিকে আপনাকে কঠিন কাজ দিবে না। অর্থাৎ আপনি চাইলে অভিজ্ঞতা ছাড়াই জয়েন করে তারপর সময়ের সাথে কাজ করতে করতে আস্তে আস্তে কাজ শিখে নিতে পারবেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে অন্য দেশে গিয়ে কাজ শেখাটা কষ্ট হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করবেন বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে দেশে থাকতেই কিছু কাজ শিখে নিতে। এতে অন্য দেশে গিয়ে আপনার কষ্ট কিছুটা কম হবে। আর আপনার বেতন ও অন্যদের তুলনায় দ্রুত বাড়বে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে গামকা মেডিকেল রিপোর্ট চেক
বাংলাদেশে থেকে কিভাবে আয়ারল্যান্ড যাবো
আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত জানা তো হলো এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ থেকে কিভাবে আয়ারল্যান্ড কাজের জন্য যাওয়া যাবে। যেহেতু বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ড এর দূতাবাস নেই আপনি সরাসরি দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করার সুযোগ নেই। আপনি অনলাইনে খুজলে ওনেক জব ওয়েবসাইট খুজে পাবেন যারা আয়ারল্যান্ড এর বভিন্ন কোম্পানির জন্য লোক চেয়ে বিজ্ঞতি দিয়ে থাকে। যদি সেই বিজ্ঞপ্তি আপনার স্কিলের সাথে মিলে যায় তাহলে আপনি সরাসরি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই আবেদন করতে পারবেন।
অথবা আপনি চাইলে কোন এসেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির সন্ধান করতে পারেন। যদিও সেক্ষেত্রে ওই এজেন্সি কিছুটা টাকা নিবে তবে আপনি এর মাধ্যমে ভালো ভিসার সন্ধান পাবেন। আর যখন আপনার মন মত ভিসা পেয়ে যাবেন আপনি সহজেই উপরের উল্লেখ করা নিয়মে ভিসার জন্য আবেদন করে আয়ারল্যান্ড চলে যেতে পারবেন।
008801793397042