ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
বর্তমান সময়ে বাচ্চাদের খাওয়া নিয়ে যুদ্ধ করতে হয় না এমন মা খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। ছোট বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে বাইরের খাবারে খুব বেশি ঝো্ক থাকে। যার ফলে ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার প্রতি রুচি থাকে না। এতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় বাবা-মাকে। বাচ্চাদের শরীর ও কয়েকদিন পর পর খারাপ হয়ে যায়।
আজকে আমরা ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচি কিভাবে ঘরোয়া ভাবে বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
বাচ্চাদের অরুচি হবার কারণ
ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ এর নাম জানার আগে বাচ্চাদের খাবারে অরুচি হবার কারন কি তা জানতে হবে।
বাচ্চাদের খাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন হলে- অর্থাৎ আপনার বাচ্চা কখন কি খায় সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। কৌশলে আকর্ষণীয়ভাবে আপনাকে সবসময় সময়মতো খাবার খাওয়াতে হবে। নতুবা বাচ্চা খাওয়ার প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করতে পারে।
জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলে- বাচ্চাকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলে বিপরীত হতে পারে। জোর করলে বাচ্চার খাওয়ার রুচি কমে যায়। পছন্দের খাবারও খেতে চায় না তাই বাচ্চাদের চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় সময় না দেওয়া- মানসিক বিকাশ বাধা গ্রস্ত হলে অনেক সময় বাচ্চার বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় কোয়ালিটি টাইম অবশ্যই দিতে হবে যার ফলে বাচ্চার খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
অসুস্থতার কারণে- বিভিন্ন ধরনের অসুখ থাকলে বাচ্চার খাওয়ার রুচি কমে যেতে পারে। যেমন জ্বর ঠান্ডা সর্দির এসব রোগের কারণে অনেক সময় খাবার রুচি এমনিতেই কমে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন কোন অসুস্থতায় ভুগলে রুচি কমে যেতে পারে।
বাচ্চাদের পেটে কৃমি সংক্রমণ হলে- অনেক সময় বাচ্চা শিশুর পেটে যদি কৃমি সংক্রমণ হয় তাহলে খাওয়ার রুচি কমে যেতে পারে। তাই আগে পেটে থেকে কৃমি দূর করতে হবে।
রক্তশূন্যতার কারণে- অনেক শুন্য বাচ্চাদের খাওয়ার রুচি কমে যায়। তাই রক্তস্বল্পতা যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ রক্তস্বল্পতার কারণে শারীরিক মানসিক বিকাশ বাথাগ্রস্থ হয় এবং বাচ্চার শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
মানসিক প্রেসার- অনেক সময় বাচ্চাদের মানসিক প্রেসারের কারণে বাচ্চাদের খাবারের অরুচি দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের ভয় দেখালে কিংবা পিতা-মাতা শিশুর কাছ থেকে দূরে থাকলে সঠিকভাবে খেতে চায় না।
আরো পড়ুন – বাচ্চাদের ঘামাচি পাউডার নাম
বাচ্চাদের খাওয়ার রুচি বৃদ্ধির উপায়
ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ খাওয়ানোর আগে বাচ্চাদের রুচি বাড়ানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
- রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমায় কিনা সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে
- সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে তুলতে হবে
- নিয়মিত সকাল সন্ধ্যায় ব্যায়াম করাতে হবে।
- বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের বেশি বেশি খেলতে দিতে হবে।
- প্রতিদিন সকালে কিসমিস খেতে হবে। কিসমিসকে রাতে পানি ভিজিতে রাখতে হবে
- প্রতিদিন সকালে ছোলা বুট খাওয়া যেতে পারে
- প্রতিদিন সঠিক সময় ঘুমান এবং সঠিক সময়ে জায়গার অভ্যাস করতে হবে
- বাচ্চাদের খাওয়া নিয়ে কোন মানসিক চাপ সৃষ্টি করা যাবে না
- খাওয়াকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে বাচ্চার সামনে দিতে হবে
- প্রতিদিন সকালে রাতে অথবা প্রতিবেলায় খাওয়ার পূর্বে কাঁচা আদা চিবিয়ে খাওয়াতে পারলে ভালো হয়
- বাচ্চাদের গ্যাস্ট্রিক বেড়েছে কিনা সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে
- বাচ্চার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় এমন খাবার বাচ্চাকে দেওয়া যাবে না
বাচ্চাদের খুদা বাড়ানোর ঘরোয়া উপায়
ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ খাওয়ানোর আগে ঘরোয়া ভাবে রুচি বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল-
বাধ্যতামূলক ব্রেকফাস্ট– এটা সবাই কমবেশি জানে যেদিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সকালের খাবার ব্রেকফাস্ট। পাচন ক্রিয়া বৃদ্ধি করে এবং দ্বীনের কাজের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে। সন্তানের ক্ষুধা বৃদ্ধির জন্য একটি সুন্দর এবং স্বাস্থকর ব্রেকফাস্ট নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিদিন দুই ঘন্টা নির্দিষ্ট সময় পর পর খাবার দেওয়া- ক্রমবর্ধমান বয়েসগুলোতে শিশুদের উচ্চ মাত্রার বিপাক থাকে। তাই একদিনে তিনবার খাবার তাদের ক্ষুধা অনুভব করতে তাদের পাচনতন্ত্রকে বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাদের প্রতি দুই ঘন্টা ছাড়া নিয়মিত খাবার দেওয়া উচিত এটা তাদের খুদার উন্নতি করে।
খাবার আধাঘন্টা আগে পানি পান করানো- বাচ্চার খাবারের সময় যদি মাঝে মাঝে পানি খাওয়ানো হয় তাহলে বাচ্চার পেট ভরে যায়। যার ফলে সে খাবার খেতে আগ্রহী হয় না। তাই বাচ্চাদের খাবার দেবার ৩০ মিনিট আগে পানি পান করাতে হবে। সেটি পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় করে তোলে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পরও এই একই অভ্যাস বজায় রাখতে হবে, এতে শিশুর ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খাবার হিসেবে দুধ খাওয়ানো যাবে না- যদিও বলা হয় যে দুধ একটু সম্পূর্ণ খাবার তবে একটি খাবার হিসেবে পরিবেশন করা উচিত নয়। দুধের অতিরিক্ত যখন হেব্বিটাইজার যখন এপিডাইসা হিসেবে খাওয়া হলে সেটি পরবর্তী খাবারের জন্য খুদা কমিয়ে দেয়। দুধের পরিবর্তে পনির বা দইয়ের মত অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
মাঝে মাঝে স্নাক্স দেওয়া- সন্তানের যদি ভালো খদা দেখতে চান তাহলে মাঝে মাঝে বেশ কিছুটা পরিমাণে ভারি স্নেক খাওয়ানো যেতে পারে। একটি ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ বা সবজি দিয়ে নুডুলস, চিকেন নুডুলস ইত্যাদি। এসব পুষ্টিতে ভরপুর খাবার দিতে পারেন। শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
মটর বা বাদাম খাওয়ান- মটর খাদ্য উৎসাহী বৈশিষ্ট্যের জন্য খুবই পরিচিত। এমনি মাখন না খাইয়ে পিনাট মাখন খাওয়ানো যেতে পারে। ভাজা মটর ও খাওয়াতে পারেন যদি বাচ্চার হজমে কোন সমস্যা না হয়। কেননা মটর এবং বাদাম বাচ্চাদের ক্ষুধা ভিত্তিতে সাহায্য করে।
খেলাধুলা এবং ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করতে হবে- খেলাধুলা এবং ব্যায়াম সুপরিচিত সত্য যে শারীরিক পরিশ্রম খুদা তৈরি করে। আরো খুদা বাড়াতে বেশি বেশি খেলতে হবে।শিশুকে যত বেশি খেলতে দিবেন তত বেশি তার এনার্জি লস হবে এবং সে খেতে আগ্রহী হবে।
জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে- উল্লেখিত যে জিংকের অভাবের কারণে ক্ষুধা ক্ষতির জন্য দায়ী। তাই জিংক সমৃদ্ধ বেশি বেশি খাবার খাওয়ানোর ফলো বাচ্চাদের ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। কাজুবাদাম গম কুমড়ায় জিংক সমৃদ্ধ খাবার। আরো বিস্তারিত খাবার এর জন্য আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
বাচ্চাকে তার প্রিয় খাবারটি দিন- বাচ্চা যে খাবারটি খেতে পছন্দ করে ঘুরে ফিরে এসে খাবারটি বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে পরিবেশন করুন। একটি সুস্থ ক্ষুদা তৈরি করার জন্য তাদের প্রিয় খাবার আইটেমগুলো রাখলে তারা খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং খেতে চাইবে। তাই অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বাচ্চার প্রিয় খাবারটি রাখুন।
আরো পড়ুন – কি খেলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে
ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
বাযারে বাচ্চাদের রুচি বাড়ানোর বিভিন্ন ঔষধ পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন মেডিসিন খাওয়ানোর উচিত নয়। তবে ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ তেমন একটা ক্ষতিকর নয়। নিচে বাচ্চাদের ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ এর নাম উল্লেখ করা হলো-
- জিংক বি সিরাপ
- বিকোজিন সিরাপ
- পোগো সিরাপ
- seas plus syrup
- Bextram syrup
- Filwel kids syrup
- wellkid syrup
- Dorakid syrup
- Mixavit syrup
শিশুর রুচি বাড়াতে বিশেষ খাবারের নাম
কুমড়ার বীজ- কুমড়ার বীজ ফেলে না দিয়ে তা শুকিয়ে সসপ্যানে ভেজে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এ বীজ কোন কিছু খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা তৈরি করতে পারে। বীজ হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে থাকে।
গাজর-গাজরের উপকারিতা অনেক। এটি খুদা বাড়ানোর জন্য অনেক পরিচিত একটি খাবার। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা অনেক পুরনো কৌশল যা খাবারের প্রয়োজন বাড়ায়। ক্ষুধার জন্য প্রায় ৩০ মিনিট আগে বাচ্চাকে গাজর খেতে দিন।
তেতুল- অনেকেই তেঁতুলকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন। তবে তেতুল শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর করে খুদা বাড়িয়ে দেয়। তাই শিশুর ডায়েটে প্রতিদিন তেতুলের চাটনি বা তেতুল দিয়ে তৈরি কোন খাবার রাখতে পারেন।
আমলকি- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে। প্রতিদিন খালি পেটে আমলকি খেলে খিদা বাড়ে বলে বিশেষভাবে প্রমাণিত। তাই বাচ্চা খেতে না চাইলে বাচ্চাকে কিছুদিন পরপর আমলকি খেতে দিতে পারেন। এতে খিদে বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
দারচিনি- রান্নার কাজে ব্যবহৃত হলে ও এই মসলা শিশুদের খিদা বাড়িয়ে তুলতে অনেক উপকারী। দারুচিনি গুড়ো করে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বাচ্চাকে পান করতে দিলে দুধের সাদও বাড়বে এবং শিশুর খিদে ও বাড়বে।
সতর্কতা
বিশেষজ্ঞ রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত বাচ্চাদের কোন ধরনের ঔষধি সেবন করানো উচিত নয়। কারণ অনেক সময় সর্বশেষ সব বাচ্চার জন্য সহনীয় হয় না। এতে করে বাচ্চার হজমের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়াও শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যে কোন ভিটামিন বা খিদে বর্ধনকারী সিরাপ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই একজন শিশু ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে খাওয়াতে হবে।
মন্তব্য
আজকে আমরা ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রতিদিনের নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
- বাচ্চার নাভি শুকানোর পাউডার
- ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার আজকের দাম কত