পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ, মাসিক নিয়মিত হওয়ার ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়ষ্ক নারীর শরীরের সাধারন একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার কারনে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি ব্যহত হয় যা একজন নারীর জন্য খুবই বড় সমস্যা। পিরিয়ডের সময় সাধারনত কিছুটা ব্যথা অনুভব হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু এই ব্যথার মাত্রা যখন অতিরিক্ত হয় তখন একজন নারীর জন্য তা অনেক কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায়।

আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে পিরিয়ড ব্যথা কেনো হয় ও পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ। আমাদের আলোচিনা গুলো বিভিন্ন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের আলোচনার সারাংশ। তাই আপনি নিশ্চিন্তে আমাদের ব্লগে আলোচনা করা ইন্সট্রাকশন ফলো করতে পারেন। আশা করছি কোন ধরনের সমস্যা হবে না।

পিরিয়ডের ব্যথার ধরন

বিশেষজ্ঞরা পিরিয়ডের ব্যথার ধরনের উপর জটিলতার কথা মাথায় রেখে এটিকে প্রধানত দুইটি ভাগে বিভিক্ত করেছেন।

প্রাথমিক পর্যায়: এই ধরনের ব্যথা শুধুমাত্র মাসিক চলা কালীন জরায়ুর ভেতরের পর্দা খসার  কারনে হয়। এক্ষেত্রে অন্য কোন ঝটিল বা কঠিন কারন জড়িত নয়।

ঝটিল পর্যায়:  এই ধরনের ব্যথার কারন বিভিন্ন হতে পারে। সাধারত এই ধরনের ব্যথার কারনে যৌনি সব বুক পর্যন্ত ব্যথা হতে পারে। এমনকি রিক্তক্ষরব ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ
ছবি: পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়?

পিরিয়ডের ব্যথা সাধারনত তলপেটে হয় যা নরমাল পেট ব্যথার মত ই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথা কোমড় বা উরুতে ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে সবসময় এই ব্যথা মারাত্মক কঠিন আকার ধারন নাও করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নরমাল পেট ব্যথা বা কিছুটা অস্বস্থিবোধ হতে পারে।

আবার অনেক সময় মাসিকের বাইরেও কিছুটা পেট ব্যথা হতে পারে।

মাসিকের ব্যথা কতক্ষন স্থায়ী হয়?

সাধারনত পিরিয়ডের ব্যথা ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে একদম কিশোরী অবস্থায় যাদের নতুন নতুন মাসিক শুরু হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যথার তীব্রতা ও স্থায়ীত্ব বেশি হতে পারে যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে।

সাধারনত পিরিয়ডের বাইরে অতিরিক্ত কোন রোগ না থাকলে ৭২ ঘন্টার বেশি এই রোগ দেখা যায় না। যদি নিয়মিত ৭২ ঘন্টার বেশি সময় ব্যথা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

পিরিয়ডের ব্যাথার উপসর্গ

আমরা এতক্ষন পিরিয়ডের ব্যথার বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জানলাম। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের সঠিকভাবে জানতে হবে পিরিয়ডের ব্যথার উপসর্গ গুলো কি কি। কারন আপনি যদি উপসর্গ ই চিহ্নিত করতে না পারেন তাহলে সঠিকভাবে ঔষধ সেবন ও করতে পারবেন না। চলুন তাহলে উপসর্গ গুলো দেখে নেয়া যাক।

  • বমি বমি ভাব ও খাবারের রুচি কমে যাওয়া।
  • বমির সাথে সাথে মুখ তেতো হয়ে যাওয়া।
  • পায়ের উরু ব্যথা: উরু ব্যথা হচ্ছে প্রধান লক্ষন যা পরবর্তীতে পিঠ ও কোমড় পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
  • সারাদিন অসস্থি ও মেজাজ খিটখিটে অনুভব হওয়া।
  • বমির সাথে সাথে মাথা ঘোরার অনুভূতি হওয়া।

পিরিয়ডের ব্যথার প্রধান কারনসমূহ

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে একনজরে দেখে নেয়া যাক পিরিয়ডের ব্যথার প্রধান কারনসমূহ দেখে নেয়া যাক। আপনি কারন গুলো না জানলে এর প্রতিকার বের করতে পারবেন না।

এটা ঠিক পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে আরম্ভ হয়। ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পূর্বে, জরায়ু এর ভিতরের আবরণ খসানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার সময় জরায়ুর দ্বারা উৎপন্ন হরমোন জরায়ুর ভিতরের আবরণে জমা হতে শুরু করে। এই হরমোনগুলি জরায়ুগত মাংশল অংশ সংকোচন হয়। এই সংকোচনগুলি তীব্রতর হয় এবং শ্রোণী এলাকায় সংকুচিত মত অনুভূত হয়। যখন এন্ডোমিট্রিয়াম খসাতে শুরু করে, রক্তবাহী নালীগুলি সঙ্কুচিত হয় এবং ফলস্বরূপ, অক্সিজেন সরবরাহ অনেক কমে যায়।

এই প্রক্রিয়ার ফলে মাথায় একটা সিগনাল পাঠানো শুরু করে  এবং ব্যথার রিসেপ্টরগুলিকে উত্তেজিত করে। যার ফলে, পিরিয়ড-সংক্রান্ত চক্রের প্রথম দিনে ব্যথাটা আরও খারাপ হয়। যতদিন যায়, এন্ডোমিট্রিয়াম-এর পুরুত্ব কমতে থাকে যা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনগুলির মাত্রায়ও একটা পতন ঘটায়। সেজন্য, যত চক্র এগোয়, ব্যথা উপশম হয়। স্ফীতি বা পেট ফাঁপার কারণেও ব্যথা হতে পারে যা মাসিকের একটা অত্যন্ত পরিচিত লক্ষণ। এছাড়া আর অন্য আর কোনও অন্তর্নিহিত অসুখ নেই যা প্রাথমিক মাসিকের ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা শুরু হলেই সাথে সাথে মেডিসিন ব্যবহার করা আমরা সাজেশন দেই না। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেরা ঘরোয়া পরিবেশে কিছু ট্রিটমেন্ট করে দেখা যেতে পারে। যদি এতে ব্যথা কমে যায় তাহলে তা অনেক ভালো। কিন্তু যদি তারপর ও ব্যথা না কমে তাহলে আমাদের সাজেশন থাকবে প্রথমে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে তারপর ঔষধ নিতে পারেন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

ক্যামোমাইল টি: ক্যামোমাইল টি যুগ যুগ ধরে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। ভালো রেজাল্ট পাওয়ার জন্য ২ চা চামচ ক্যামোমাইল হালকা গরম পানিতে মেশান, ৫ মিনিট পর ছেকে শুধু চায়ের তরল অংশটা আলাদা করে নিন। তারপর সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। এতে করে আপনার পিরিয়ডের প্রদাহ অনেকটাই কমে যাবে।

তাপ থেরাপি বা গরমের শেক দেওয়া: এই পদ্ধতি অনেক পুরনো ও কার্যকরী পদ্ধতি। পরীক্ষায় দেখা গেছে তলপেটে গরম জলের শেক দিলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকাংশেই কমে যায়। একটি প্লাস্টিকের বোতল বা ওয়াটার ব্যাগে হালকা গরমা পানি ভরে তলপেটে শেক দিলে ব্যথা অনেকাংশেই কমে যায়। পিরিয়ডের ব্যথা না থাকলেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। কারন এই পদ্ধতি ব্যবহারে কিছুটা আরাম পাবন।

শান্ত মেঝাজে থাকা: এই সময় নারিদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে। তাই এই সময়ে সর্বদা নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। এতে করে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকাংশেই কম মনে হবে।

মৌরিদানা: মৌরিদানা এক বিশেষ ধরনের উপাদান যা আপনা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ হিসেবে কাজ করবে। এক চা-চামচ মৌরিদানা প্রথমে এক কাপ জলে মেশাতে হবে। এরপর সাথে  আদা এবং মধু মেশাতে হবে। এরপর ২ থেকে ৩ মিনিট ফোটানোর পর শুধু তরল অংশটুকু ছেকে খেয়ে নিবেন। আপনি চাইলে সাথে মধু ও মেশাতে পারেন। এতে করে কার্যকারীতা আরো বৃদ্ধি পাবে।

পেট ম্যাসাজ করুন: অতিতিক্ত ব্যথা হলে তলপেট ও এর আশেপাশে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। প্রয়োজনে হাতে সামান্য সরিষার তেল মেখে ম্যাসাজ করতে পারেন যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।

আদা সেবন করুন: ব্যথার পরিমান বেশি হলে মুখে কাচা আদা নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা আদার রস সেবন করতে পারেন। আদা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় ঔষধের নাম

সাধারনত পিরিয়ডের ব্যথা উপরে বর্নিত ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করলে কমে যাওয়ার কথা আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমেও যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঘরোয়া পদ্ধতি দিয়ে ব্যথা কমানো সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে চিকিতসকগন কিছু স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকে এখন আমরা সে ব্যাপারে আলোচনা করবো।

  • পেইনকিলার: পেইনকিলার হচ্ছে খুবই কমন একটা একটা সিস্টেম ব্যথা কমানোর। তবে আমরা এখানে কোন স্পেসেফিক পেইনকিলারের নাম দিচ্ছি না কারন বেশিরভাগ পেইন কিলার এন্টিভায়োটিক হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি শুধুমাত্র আমাদের ব্লগ পড়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পেইন কিলার খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার উপকারের পরিবর্তে বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই দয়া করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যথা না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেইন কিলার নিন।
  • আকুপাংচার: আকুপ্রেসার বা আকুপাংচার ও পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। আপনি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিতসা নিতে পারেন।
  • অস্ত্রপচার: অনেক ক্ষেত্রে মাসিকের ব্যথা হয় যৌনি পথের চামড়ার ক্ষত, কিং ক্ষতি হওয়ার কারনে। কিছু কিছু জটিল ক্ষেত্রে অপারেশন করা লাগতে পারে। তবে অপারেশন হচ্ছে সর্বশেষ অবস্থা। ডাক্তাররা প্রথমত বাইরে থেকে ঔষধ দিয়ে ওই চামড়াকে ঠিক করার চেষ্টা করেন কিন্তু কাজ না হলে অপারেশন করতে হয়।
  •  ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে ঘরোয়া উপায় অনুসরন করার পাশাপাশি প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। বিশেষ করে যেসব রোগীর বয়স ১২ বছরের বেশি তারা সকালে আর রাতে ভরা পেটে দুইটি প্যারাসিটামল সেবন করবেন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে মাসিক বা পিরিয়ড কে লজ্জার এবং গোপন বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করে আসা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে লজ্জার সাথে সাথে আমাদের সচেতন ও হতে হবে।  এটা যেহেতু প্রত্যেক নারীর স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া তাই আমাদের উচিত এই ব্যাপারে লজ্জা না পেয়ে সমস্যা হলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া। আর প্রাথমিক অবস্থায় উপরে উল্লেখ করা ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

আশা করছি পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ নিয়ে যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply