হাত পা ফর্সা করার উপায়
সাধারণত আমরা চেহারার যত্ন নিলেও হাত পায়ের যত্ন খুব কম নেয়া হয়। অযত্ন অবহেলায় শরীরের অন্যান্য অংশের মত হাত-পায়ে কালো দাগ পড়ে। এসব দাগ একবার পড়লে সহজে দূর করা যায় না। চেহারার যত্ন নিয়ে আমরা যতটা যত্নশীল হাত-পায়ে যত্ন নিয়ে আমরা খুব একটা যত্নশীল না। তবে চেহারার সঙ্গে যদি হাত পায়ের রং না মেলে তখন খুবই আনইজি লাগে।
আজকে আমরা হাত পা ফর্সা করার উপায় এবং ঘরোয়া ভাবে হাত পা ফর্সা করার উপায় সহ বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – মেয়েদের মুখের লোম দূর করার ক্রিম
হাত পা কালো হবার কারণ
- সাধারণত হাত-পায়ের যত্নের অভাবে হাত পা খুব সহজে কালো হয়ে যায়
- এছাড়াও ভিটামিনের অভাব
- বি কমপ্লেক্স এসবের অভাব
- বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগের কারণে ও স্কিন অনেক সময় পোড়া পোড়া ভাব হয়ে যায়
- লিভারের সমস্যা থাকলে
- হরমোনের পরিবর্তন ঘটলে
- এছাড়াও রোদে বেশিক্ষণ থাকলে
- অথবা জিনগত কারণে
- সূর্যের ক্ষতিকারক আলোকরশ্মির কারণেও অনেক সময় হাত-পা কালো হয়ে যায়
ঘরোয়া ভাবে হাত পা ফর্সা করার উপায়
হাত-পা ফর্সা করার বাজারে বিভিন্ন ধরনের লোশন সাবান সহ অনেক পণ্য পাওয়া গেলেও ঘরোয়া ভাবে ফর্সা করার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। নিচে ঘরোয়া ভাবে হাত পা ফর্সা করার উপায় গুলো সহজ ভাবে তুলে ধরা হলো-
এলোভেরা- হাত পা ফর্সা করার উপায় এর মধ্যে এই টোটকা অনেক উপকারি। বহুগুণ সম্পন্ন একটি উপাদান হলো অ্যালোভেরা। রূপচর্চার অনেক কাজেই এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য তক চুলের যত্নে অ্যালোভেরার রস খুবই উপকারী। এলোভেরার রস ত্বকের ভিতরের কোষগুলোকে পরিষ্কার করে ও দাগ দূর করে দেয়। প্রথমে এক টেবিল চামচ এলোভেরার রস নিয়ে তার সাথে তিন টেবিল চামচ শসার রস মিশিয়ে নিন।
মিশ্রণটি হাতে এবং পায়ে লাগিয়ে নিন। লাগানোর ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আবার চাইলে এই মিশ্রণটি মেখে ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এটি হাত পায়ের কালো দাগ ও রোদে পোড়া দাগ দূর করতে খুব বেশি উপকারী। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মিশ্রণটি হাত-পায়ে লাগিয়ে দেখতে পারেন। হাত পায়ের কালো দাগ সহজেই দূর হয়ে যাবে।
বেসন– ত্বককে পরিষ্কার করে লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে বেসনের কোন জুড়ি নেই। বেসন ব্যবহার করে আপনি পেতে পারেন সুন্দর হাত পা। এই মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রথমে দুই টেবিল চামচ বেসন এবং একটা চামচ হলুদের গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ এবং গোলাপজল তার সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করেনিন। এরপর হাতে এবং পায়ে লাগিয়ে হালকা মাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন থেকে চার বার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে হাত পায়ের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
টক দই- প্রতিদিন গোসল করার আগে হাত-পা টক দই দিয়ে মাসাজ করুন। ৫ থেকে ৭ মিনিট রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টানা একমাস এই মাসাজ করলে ধীরে ধীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ এবং রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে যাবে। ভালো ফলাফল পেতে টক দইয়ের সঙ্গে হালকা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
পাকা পেঁপে-হাত পায়ে কালো ভাব দূর করতে পাকা পেপের জুড়ি নাই। তাই হাত পা পরিষ্কার রাখতে পাকা পেপে কে ভালোভাবে চটকে নিয়ে এবার মিশ্রণটি হাতে এবং পায়ে ভালোভাবে ঘসে ঘসে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন পাকা পেঁপে হাত এবং পায়ে লাগাতে পারেন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনি ভালো ফল পাচ্ছেন।
কমলার খোসা- কমলার খোসা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। কমলার খোসা ত্বকের কাজ দূর করতে এবং ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করতে খুবই পরিচিত। প্রথমে কমলার খোসা গুলোকে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। খোসা শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে পাউডার করে সংরক্ষণ করতে পারেন। চার টেবিল চামচ কমলার খোসার গুড়ার সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খুব ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে নিন।
পায়ে লাগানোর ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি হাত এবং পা থেকে ময়লা দূর করে আপনাকে দেবে ফর্সা এবং উজ্জ্বল হাত পা। সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।
হলুদ- ত্বকের যত্নে হলুদের কোন বিকল্প নেই। বয়সের দাগ রোদে পোড়া দাগ ব্রণের দাগ দূর করতে হলুদ খুবই কার্যকরী। হলুদ গুঁড়া অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। হাত এবং পায়ে ভালো করে এই পেস্ট লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই পেস্ট্টি ব্যবহার করতে পারেন।
টমেটো- টমেটো রসে আছে প্রাকৃতিক ব্লিসিং পাউডার। টমেটো রস দুই চা চামচ দুধের সঙ্গে এবং সামান্য কিছু দুধের সর একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি তুলার সাহায্যে আলতো করে হাতে বা পায়ে লাগান। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই টোটকাটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
আলু- হাত পা ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে আলু অন্যতম। আলু ত্বকের পোড়া দাগ রোদে পোড়া দাগ কালো দাগ দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রথমে এক টেবিল চামচ আলু এবং লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। ১৫ মিনিটের জন্য এই মিশ্রণটি হাতে এবং পায়ে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে চার দিন ব্যবহার করে দেখুন।
এলোভেরা এবং মধুর স্ক্রাব- ত্বকের যত্নে এলোভেরার ব্যবহার বেশ পুরানো। এতে থাকে প্রচুর এনটিঅক্সিডেন্ট হলে। অ্যালোভেরার ব্যবহারে স্কিনে জমে থাকা মৃত কোষ দূর হয়। সেই সঙ্গে বয়সে ছাপ পড়ে না। দুই টেবিল চামচ এলোভেরা জেল এর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটি ছাড়া হাতে এবং পায়ে লাগিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নেবেন।
সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এভাবে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। হাত এবং পায়ের দাগ খুব সহজে চলে যাবে। হাত পা ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি বেশ উপকারি।
মধু ও টমেটো- ত্বকের যত্নে টমেটো কম উপকারী নয়। এতে থাকে এনজাইম তোকে খুব সহজেই এক্সলিউড করতে পারে। সেসঙ্গে দূর করে ব্ল্যাকহেডস কিংবা হোয়াইট হেডসের মত সমস্যা। টমেটো সঙ্গে বাদামি চিনি এবং মধুর স্ক্রাব তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। সেই জন্য প্রয়োজন হবে চার টেবিল চামচ টমেটো রস দুই টেবিল চামচ চিনি এবং এক টেবিল চামচ মধুর সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে হাতে এবং পায়ে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলেই অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
চায়ের লিকার- এক কাপ ঠান্ডা চার লিটারের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ ময়দা ও আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে হাত এবং পায়ে অনেকক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। প্রায় ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধোয়ার সময় একটু সার্কুলার মুভমেন্ট এ ঘসে ঘষে ধুয়ে নিতে হবে। তাহলে হাত এবং পায়ের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। হাত পা ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে এই উপায়টি সবচেয়ে অন্যতম।
গ্লিসারিন- গ্লিসারিন সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে একটি শিশিতে ভরে রাখুন। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার পর হাতে এবং পায়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। খুব সহজেই হাত এবং পায়ের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। হাত এবং পা হাত পা ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে এই উপায়টি সবচেয়ে কার্যকর এবং নিয়মিত ব্যবহার করা যায়।
হাত পা ফর্সা করার লোশন এর নাম
বাজারে বিভিন্ন ধরনের হাত-পা ফর্সা করা লোশন পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে সব লোশন ব্যবহারে তেমন কোন কাজ দেয় না। কেননা বাজারে বিভিন্ন ধরনের আসল এবং নকল মিশ্রিত লোশন থাকে। নিচে হাত-পা ফর্সা করার লোশন এর নাম গুলো দেওয়া হলো-
Olive whitening body lotion- হাত পা ফর্সা করার জন্য যারা ভালো লোশন খুজছেন তাদের জন্য এই লোশনটি অন্যতম। এই লোশন টি ব্যবহার করলে খুব সহজেই হাত-পা ফর্সা হয়ে যাবে। দিনে এবং রাতে যে কোন সময়ই এই লোশনটি চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্য লোশন কোন ধরনের ক্ষতি ছাড়াই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
Crystal white milky body lotion- স্থায়ীভাবে হাত-পা ফর্সা করার জন্য কোরিয়ান এই বডি লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বডি লোশন ব্যবহার করার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হাত-পা ফর্সা হয়ে উঠবে। তাছাড়া এই লোশন কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। বাজার থেকে লোশনটি ৯00 থেকে বারোশো টাকার মধ্যেই কিনতে পাওয়া যাবে।
Diamond special care body lotion- যারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে হাত-পা ফর্সা করতে চান তারাই জাপানি জাপানি বডি লোশন টি ব্যবহার করতে পারেন। জাপানি কোম্পানির এই বডি লোশন বাজারে ৩০০ মিলির বোতলে পাওয়া যায়। এটি যেকোনো ধরনের পোড়া দাগ কালো দাগ দূর করে আরো উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং কালো ত্বক ফর্সা করে তো তোলার জন্য এই বডি লোশনটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। হাত-পা ফর্সা করার উপায় গুলো জানার পাশাপাশি এই লোশনটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
Khazana lotion- লোকেশনটি ব্যবহারের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রেজাল্ট দেখা যাবে। ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি হাত পা ফর্সা হয়ে যায়। নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
Due special care body lotion- কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই দ্রুত সময়ের মধ্যে হাত-পা উজ্জ্বল করার জন্য এই লোশনটি অন্যতম। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে স্কিনের যেকোনো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। নিয়মিত ব্যবহার করার মাধ্যমে ভালো রেজাল্ট পেতে পারেন।
মন্তব্য
আজকে আমরা হাত পা ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
স্কিন কেয়ার সম্পর্কে আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়াও প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট টি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- চোখ উঠলে কোন ড্রপ ব্যবহার করবেন?
- হাতের চামড়া উঠার কারণ ও চিকিৎসা
- ইমোশনাল ইসলামিক স্ট্যাটাস, উক্তি, পোষ্ট, বানী