সর্বজনীন পেনশন স্কিম
বর্তমান সরকার দেশের মানুষের সুযোগ সুবিধার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচি চালু করেছে। ১৯ আগস্ট ২০২৩ বৃহস্পতিবার সকালে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি শুভ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য ইউ পেনশন নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু করা হয়েছে।
অনেকেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার নিয়ম বা সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা তাদের জন্যই সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – [আপডেট] মহার্ঘ ভাতা সর্বশেষ খবর আজ ২০২৩
কাদের জন্য এই পেনশন স্কিম?
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে দেশের সর্বস্তরে জনগণকে সুবিধা দিতেই পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ফলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্যই পেনশন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল শ্রেণী পেশার বাংলাদেশী নাগরিক এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে।
এই স্কিমে অংশ নিতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা আবশ্যক। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে যারা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য যাদের পরিচয় পত্র নেই তারা চাইলে পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন কিন্তু সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে। যাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে তিনি পেনশনে টান টাকা পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর। ব্যক্তির বয়স ৬0 বছর হলে তিনি সরকার থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না কিন্তু কেউ যদি ৫৫ বয়সে এসে স্কিমে অংশ নেয় তাহলে ৬৫ বছর বয়স থেকে তিনি পেনশন পেতে শুরু করবেন।
সার্বজনীন পেনশন স্কিম নিবন্ধন করার নিয়ম
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য “ইউপেনশন” নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। আগ্রহীদের সর্বজনীন পেনশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://www.upension.gov.bd/ ওয়েবসাইটে গিয়ে বিবর্তন কার্যক্রমের জন্য আবেদন করতে হবে। ইউ পেনশন ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের সময় নিজের ধাপগুলো মেনে চলতে হবে।
১। প্রথমে ইউ পেনশন ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
২। এরপর পেনশনার রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর একটি প্রত্যয়ন পত্র বা প্রত্যয়ন পাতা আসবে সেখানে লেখা থাকবে “এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কর্মরত নই সর্বজনীন পেনশন কিংবা বহির্ভূত কোন ধরনের সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হতে পেনশন সুবিধা গ্রহণ করি না এবং আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আওতায় কোন ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না” এই প্রত্যয়ন পাতার নিচে আমি সম্মত আছি নামে একটি অপশন রাখা হয়েছে।
সেখানে ক্লিক করলে এই ধাপ শেষ হবে। অবশ্যই প্রত্যয়নে সাবধানে ক্লিক করতে হবে কারণ সেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না।
৩। এবার আরেকটি ওয়েব পেজ আসবে যেখানে লেখা থাকবে রেজিস্ট্রেশন করুন। এখানে আবেদনকারী কে প্রথমে প্যাকেজ বা স্কিম নির্বাচন করতে হবে। এরপর সেখানে পর্যায়ক্রমে ১০,১৩, বা ১৭ সংখ্যার এন আই ডি নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল দেওয়ার অপশন থাকবে এই পেইজের শেষ অংশ থাকবে ক্যাপচা প্রদান করুন।
৪। সঠিকভাবে ক্যাপচা দেওয়ার পর আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার ইমেইলে একটি ওটিপি আসবে ওটিপি ব্যবহার করে পরবর্তী পেইজে যেতে হবে।
৫। এরপর যে পেজ আসবে সেখানে সকল ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। আগের পেজে দেওয়া এনআইডি অনুযায়ী পেজের সক্রিয় ভাবে আবেদনকারী এনআইড নম্বর ছবি বাংলা ইংরেজি নাম পিতার নাম মাতার নাম বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা দেখাবে। এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয়ের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে এবং নিজের পেশা বিভাগ জেলা এবং উপজেলার নাম সিলেক্ট করে দিতে হবে।
৬। এই ধাপ শেষে স্কিম তথ্য আরেকটি পেজ আসবে। এখানে মাসিক চাঁদার পরিমাণ এবং চাঁদা পরিশোধের সময় নির্ধারণ করতে হবে। এখানে চাঁদা পরিশোধের জন্য মাসিক, তিন মাসিক এবং বার্সিক তিনটি অপশন থাকবে।
৭। এই তথ্য দেওয়ার পর এবার দিতে হবে ব্যাংক তথ্য অর্থাৎ এই পেজ আবেদনকারীকে ব্যাংক হিসেবে নাম, নাম্বার ও হিসেবে ধরণ অর্থাৎ সঞ্চয় বা চলতি হিসাব, ব্যাংকের নাম এবং শাখার নাম উল্লেখ করে দিতে হবে।
৮। এরপরে আবেদনকারী নমিনি তথ্য দিতে হবে সেখানে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার এবং জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে। চাইলে এই ক্ষেত্রে একাধিক নোমিনী ও যোগ করা যাবে। এই পেজে নমিনির মোবাইল নাম্বার, নোমিনির এর সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে দিতে হবে।
৯। উপর উল্লেখিত সকল ধাপগুলো শেষ হলে নিবন্ধনের শেষ ধাপ অর্থাৎ যে পেজটিতে সবার শেষে লেখা থাকবে সম্পূর্ণ ফরম এখানে আবেদনকারীকে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যাংক তথ্য নমিনি দেখানো হবে কোন ভুল চোখে পড়লে সম্পূর্ণ ফর্ম এ ক্লিক করার আগে তা সংশোধন করে নিতে হবে। আর ভুল না থাকলে সম্মতি দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে।
সর্বজন পেনশন স্কিম সম্পর্কে তথ্য
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন এই পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে চাঁদা দাতা মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী এই পেনশন পাবেন তবে এক্ষেত্রে চাঁদা দাতার ৭৫ বয়স পর্যন্ত হতে যত বছর বাকি থাকতো সে সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন উত্তোলন করতে পারবেন। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে এর মধ্যে-
- প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী স্কিম
- বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম
- আনুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ সহকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম
- আর নিম্ন মানুষদের জন্য থাকছে সমতা স্কিম
সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা
এই সর্বজনীন পেনশনের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন-
- অনেকের মনে প্রশ্ন থাকছে পেনশন স্কিমে টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত সেটি পাওয়া যাবে কিনা এটা নিয়ে কোন আশঙ্কার কারণে কারো সরকার নিজে এর গ্যারান্টি দিয়েছে। আর প্রত্যেক পেনশন আর একদিন ইউনিট নাম্বার দেয়া হবে এবং সেই নাম্বার দিয়ে সব সময় চেক করতে পারবে তার একাউন্টে কত টাকা রয়েছে।
- পেনশন আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে কেউ যদি ৭৫ বয়স পূরণ হবার আগেই মারা যান তাহলে তার নমিনি পেনশনালে বয়স ৭৫ হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাবেন।
- আর যদি পেনশন আর ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা যান। তাহলে তা জমা পেতে অর্থ মুনাফা সহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
- যদি কারো পেনশনে জমা পেতে অর্থাৎ এক পর্যায়ে উত্তোলনের দরকার হয় তাহলে তার সেই সুযোগও থাকবে। তার মোট জমার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ তিনি আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন।
- পেনশনের জন্য প্রতি মাসে জমা দেয়া চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হবে এবং সেই অর্থ কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে আর মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ হবে আয়কর মুক্ত।
সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
সরকার এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা কি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবে?
সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির আগে সরকারি ও সাহিত্য শাসিত প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা সরকারি পেনশন স্কিম অংশ নিতে পারবে না।
পেনশন স্কিমে মুনাফা সহ বছরে কত টাকা জমা হল তা কিভাবে জানা যাবে?
দাতার পেনশন আইডি দিয়ে ইউনিভার্সাল পেনশন সিস্টেমের প্রবেশ করে সহজেই বছর শেষে মুনাফা সহ জমা হওয়ার টাকার পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবে।
চাকরি পরিবর্তন করলে নতুন পেনশন নম্বর নিতে হবে কিনা?
না। চাকরি পরিবর্তন করলে নতুন পেনশন নম্বর গ্রহণ করতে হবে না। শুধু জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
শুধু অনলাইনে নিবন্ধন করলেই পেনশন স্কিমে অংশ নেয়া যাবে নাকি হার্ডকপি জমা দিতে হবে?
কোন হার্ড কপি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না শুধু অনলাইনে নিবন্ধন করে মাসিক টাকা জমা দিলেই হবে।
দাতা তার বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর তিনি কিভাবে পেনশন পাবেন?
বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর তার ব্যাংক হিসেবে অথবা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পেনশন দেওয়া হবে।
গৃহকর্মীরা বা গৃহিনীরা কি অংশ নিতে পারবে?
অবশ্যই গৃহিণীরা সব কর্ম নিয়োজিতের জন্য প্রযোজ্য সুরক্ষায় স্কিমে অংশ নিতে পারবে।
কোন ব্যক্তির কাছে মাসিক জানার টাকা নগদ দেওয়া যাবে কিনা?
না কোন ব্যক্তির কাছে টাকা নগদ জমা দেওয়া যাবেনা। ব্যাংক ডেবিট ব্রাক ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এর মাধ্যমে চাঁদার টাকা জমা দিতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম
আজকে আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং সর্বজনীন স্কিম চালু করার সুবিধা সহ সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটা আপনাদের কাজে লাগবে। ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- অনলাইনে ই নামজারি যাচাই ও ই নামজারি আবেদন নিয়ম
- অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ফরম আবেদন
- সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আবেদন শুরু ২০২৩