হিজামা কি?
হিজামা কি, হিজামা কিভাবে করতে করতে হয় এবং হিজামার উপকারিতা অপকারিতা নিয়ে আজকের ব্লগে বিস্তারিত জানবো ইনশা আল্লাহ। শুরু করা যাক হিজামার পরিচয় দিয়ে। হিজামা কি? হিজামা আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ শোষন বা চুষে নেয়া। অর্থাৎ শরীরে কাপ বা শীঙ্গার মাধ্যমে ধুষিত কক্ত শোষন করে বের করে আনা চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হিজামা। হিজামা বহু প্রাচীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ইসলামের স্বর্নযুগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিজামা পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন বলে হাদিসে প্রমান পাওয়া যায়। তিনি শুধু ব্যবহার ই করেন নি বরং তার সাহাবি ও সাথীদের ব্যবহারে উৎসাহিত করেছিলেন।
হযরত আবু হোরায়রা রাঃ হতে বর্নিত, রাসূল সল্লেল্লাহু আলাইহে অসাল্লাম বলেছেন ” তোমরা যা দিয়ে চিকিৎসা গ্রহন করো তার কোনটির মধ্যে উপকারিতা থাকলে তা রক্ত মোক্ষণের মধ্যে আছে ” আল হাদিস।
হিজামার উপকারিতা কি হিজামার সুবিধা অসুবিধা বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ
হিজামা কিভাবে করে?
অনেকের ই ধারনা হিজামা শুধু কোন সমস্যা হলেই করা যায়। কিন্তু হিজামা এমন এক বিশেষ ধরনের চিকিৎসা যার মাধ্যমে বিভিন কঠিন ও জটিল অসুখ যেমন ভালো হয় ঠিক তেমনি সুস্থ মানুষ নিয়মিত হিজামা করালে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হিজামা কিভাবে করে বা হিজামা চিকিৎসা পদ্ধতি কি। প্রথমেই যার শরীরে হিজামা করা হবে হিজামা স্পেশালিস্ট তার শরীরের শরন ও রোগের ধরন অনুযায়ী কাপ হিজামার জায়গা নির্বাচন করবেন। তারপর শরীরের নির্ধারিত ওই স্থান গুলোতে বিশেষ ধরনের তেল মাখানো হয় যায় যেনো চমাড়ার স্ট্রেস কমে যায় এমন চামড়া হিজামার জন্য উপযোগী হয়।
তেল মাখানো স্থানে বিশেষ আকৃতির কাপ বসানো হয়। কাপ সাধারন ডিসপোসাল (যা একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হয়), গ্লাস, সিরামিক বা মেটালিক হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে সাধারনত গ্লাসের কাপ ব্যবহার করা হয়। কাপ বসানোর পর কাপের ভেতরে অংশে শোষন শুর হয় এবং এই নেগেটিভ প্রেসারের কারনে কাপের নিচে আবদ্ধ টিস্যু ফুলে উঠে এবং রক্তনালী গুলো ফুলে ময়লা রক্ত কাপের নিচের অংশে এসে জমা হয়।
![হিজামা কিভাবে করে?](https://easyteching.com/wp-content/uploads/2022/04/hijama-300x188.webp)
এভাবে কিছু সময় রাখার পর কাপ খুলে ফেলা হয় এবং জীবানু মুক্ত ছোট ও বিশেষ এক ধরনের ব্লেড দিয়ে হিজামার স্থানে হালকা আচড় দেয়া হয়। তবে এধরনের আচড়ে সাধারনত রক্ত বের হয় না। মূলত ময়লা রক্ত যেনো দ্রুত ও সহজে বের হয়ে যায় এ উদ্দেশ্যে এই আচড় দেয়া হয়। কিছু কিছু হিজামা সেন্টারে ব্লেডের পরিবর্তে সুচ দিয়ে ছোট ছোট ফুটা করা হয় চামড়ায়। তবে সুচের চেয়ে ব্লেড বেশি কার্যকরী। এরপর কাপের নিচে ময়লা রক্ত ফেলে পুনরায় কাপ বসানো হয়। এই পক্রিয়া চলবে যতক্ষন না ময়লা রক্তের পরিবর্তে হলুদ রক্ত পানি বা সিরাম বের না হয়।
হিজামা থেরাপি খরচঃ হিজামার উপকারিতা কি
এতক্ষন আমরা হিজামার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম। আপনাদের অনেকেই জানতে চান হিজামার খরচ সম্পর্কে। হিজামা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। হিজামার ধরন ও রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী দাম কম বেশি হতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ হিজামা সেন্টারে তিন থেকে চার ধরনের হিজামা করানো হয়।
এক – সমস্ত শরীরঃ সধারনত যাদের কোমড়ে বা হাটুতে ব্যথা থাকে এই হিজামা তাদের জন্য। এক্ষেত্রে রোগীর শরীরে ২৫ এর বেশি স্থানে কাপ বসানো হয় এবং এধরনের হিজামার যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়। এধরনের হিজামার ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
দুই -শরীরের নির্দিষ্ট স্থানেঃ এই হিজামায় পুরো শরীরে কাপ বসানো হয় না। বরং শরীরের নির্দিষ্ট একটি স্থানে কাপ বসানো হয়। রোগীর সমস্যার উপর নির্ভর করে যেমন ঘাড়ে, পীঠে, কোমড়ে ১৫ বা তার বেশি কাপ বসানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে খরচ পড়বে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা।
তিন – শুধু মাথায়ঃ যাদের মাথা ব্যথা, চুল পড়া সহ মাথা কেদ্রিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই হিজামা। এধরনের হিজামার ক্ষেত্রে মাথা ও মাথার আশেপাশে ১০ বা তার অধিক কাপ বসানো হয়। এক্ষেত্রে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
চার – পরিক্ষামূলক এধরনের হিজামা যেকেউ নিতে পারে। অর্থাৎ আপনি যদি হিজামা পদ্ধতি ট্রাই করতে চান অথবা প্রথমবার ট্রাই করে দেখতে চান এই চিকিৎসা আপনার শরীরে কেমন লাগে সেক্ষেত্রে এই প্যাকেজ আপনার জন্য। আপনার শরীরে সমস্যা না থাকলেও নিতে পারবেন এবং এধরনের হিজামার ক্ষেত্রে কতগুলো কাপ বসবে সেটাও আপনি নিজে পছন্দ করতে পারবেন। সাধারনত প্রতি কাপ ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে রাখা হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি ৫ বা ৬ টা কাপ বসান আপনার খরচ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আসতে।
উপরে যে চার ধরনের হিজামা প্যাকেজ ও খরচ দেখানো হলো তা স্থান ও হিজামা সেন্টার এর উপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে। তাই আপনি আপনার নিকটস্থ
হিজামার উপকারিতা কি
হিজামা বা কাপিং চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ৩ হাজার বছর পুরনো এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিজে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহনে তার সাহাবিদের উৎসাহিত করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিজামা পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন বলে হাদিসে প্রমান পাওয়া যায়। তিনি শুধু ব্যবহার ই করেন নি বরং তার সাহাবি ও সাথীদের ব্যবহারে উৎসাহিত করেছিলেন। হিজামার মাধ্যমে সাধারনত শরীর থেকে বদ রক্ত বের করে দেয় যা মূলত কিডনি ডায়ালাইসিস করে। গবেষনার দেখা গেছে হিজামা গ্রহনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পূর্বের তুলনায় ১৫ শতাংশ ঔষধ কম ব্যবহার করতে হয়। কাপিং থেরাপির সংস্থা ICTA থেকে হিজামার কিছু উপকারিতা বর্ননা করা হয়েছে।
১। নিয়মিত হিজামা থেরাপি গ্রহনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সংস্থাটি গবেষনার মাধ্যমে দেখিয়েছে হিজামা গ্রহনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
২। দীর্ঘকালীন রোগ প্রতিরোধ করে। অর্থাৎ শরীরের দীর্ঘকালীন ব্যথা বা যেকোন সমস্যা সমাধানে হিজামা ভালো ভূমিকা রাখে।
৩। কার্ডিওভাস্কুল রোগের জন্য হিজামা খুব ভালো কাজ করে। কার্ডিওভাস্কুলার রোগ বলতে সাধারনত উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, খিচুনি ইত্যাদি রোগকে বুঝানো হয়। হিজামা থারাপির মাধ্যমে কার্ডিওভাস্কুলা জনিত রোগ ভালো হয় গবেষনায় প্রমানিত।
৪। মাথা ব্যথা ও চুল পড়া রোধে হিজামা খুব ভালো কাজ করে।
৫। আত্মীক প্রশান্তি। গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত হিজামা থেরাপি গ্রহনকারী ব্যক্তি শুধু শারিরিকভাবে ই নয় আত্মীকভাবে ও প্রশান্তি অনুভব করেন।
হিজামা থেরাপির অপকারিতা
সঠিক পদ্ধতিতে হিজাপা থেরাপি নিলে এর কোন সাইড ইফেক্ট নেই বা এখনো খুজে পাওয়া যায়নি। প্রমান হিসেবে বলা যায় এটার যদি কোন সাইড ইফেক্ট প্রমানিত হতো তাহলে আমেরিকার মত যায়গায় এটা প্রচলিত হতো না। আপনি হয়তো যেনে অবাক হবেন যে আমেরিকায় বহু আগে থেকে হিজামা থেরাপি চালু আছে যদিও তারা এটাকে হিজামা বলে না বা সুন্নত হিসেবে এই চিকিৎসা নেয় না। তবে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কিছুটা সাইড ইফেক্ট শোনা গেছে। কারন হিসেবে বলা যেতে পারে হিজামা সেন্টার গুলোর যথেষ্ট যান্ত্রপাতি ও যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব। তাই সঠিক যায়গায় সঠিক পদ্ধতিতে হিজামা কারলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না এটা নিশ্চিত।
শেষ কথা
এতক্ষন আমরা জানলাম হিজামা থেরাপি কি, হিজামার উপকারিতা কি, হিজামা কিভাবে করা হয়। সব উপকারিতা বাদ দিলেও শুধু নবিজির সুন্নত হিসেবে সবার একবার এই থেরাপি ট্রাই করা উচিৎ। হিজামা এই আর্টিকেল নিয়ে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুন –