স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা। স্কটল্যান্ড ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আমরা ইতঃপুর্বে বিভিন্ন দেশের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি। আপনাদের অনেকে স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। স্কটল্যান্ড হচ্ছে গ্রেট ব্রিটেনের একটি দেশ এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে উন্নত ও প্রভাবশালী দেশ গুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে অথবা ছাত্ররা পড়াশুনার উদ্দেশ্যে স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়তে যেতে চান। কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে বেশিরভাগ যথাযথ ভাবে স্কটল্যান্ড যেতে পারেন না। আজকের ব্লগে আমরা চেষ্টা করবো স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা ও খরচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে।

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা

আরো পড়ুন – আমেরিকা স্টুডেন্ট ভিসা খরচ ও আবেদনের নিয়ম (নতুন আপডেট)

স্কটল্যান্ড কেমন দেশ

আপনাদের মধ্যে যারা স্কটল্যান্ড যাবেন তাদের অনেকের ই একটা কমন প্রশ্ন থাকে স্কটল্যান্ড দেশ হিসেবে কেমন? এখন আমরা চেষ্টা করবো স্কটল্যান্ডের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে আলোচনা করতে যেনো স্কটল্যান্ড নিয়ে আপনার একটা ক্লিয়ার ধরনা হয়ে যায়। স্কটল্যান্ড হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত একটি উন্নত দেশ তা গ্রেট ব্রিটের সাথে ৯৬ কিলোমিটার বর্ডার নিয়ে অবস্থিত। স্কটল্যান্ডের সৌন্দর্য্যের একটা বড় দিক হলো এখানে প্রায় ৭৯০ টার মত ছোট বড় প্রাকৃতিক দ্বীপ রয়েছে। যা এই রাষ্ট্রের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করে তুলেছে।

এডিনবরা হচ্ছে স্কটল্যান্ডের রাজধানী ও দেশের দ্বীতিয় বৃহত্তম শহর। স্কটল্যান্ডকে এক সময় ইউরোপের তেলের রাজধানী বলা হতো। বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর মধ্যে একটি হিসেবে কনসিডার করা হয় স্কটল্যান্ড কে। এছাড়াও বিশ্বের বেশ কয়েকটি নামকরা ইউনিভার্সিটি স্কটল্যান্ডের অবস্থিত। অনেক দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখানে উচ্চ শিক্ষার জন্য আসেন। এছাড়াও পড়াশুনার পর রয়েছে কাজ করার সুযোগ তাই আপনি যদি এমন একটি দেশে যেতে চান যেখানে পড়াশুনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ রয়েছে তাহলে স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা আপনার জন্য ভালো একটি পছন্দ হতে পারে।

আরো পড়ুন – আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা ২০২২ | আয়ারল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষা – আবেদনের নিয়ম ও খরচ

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা – কেন আবেদন করবেন?

অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কেনো যাবেন। অর্থাৎ স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আমাদের কাছে জানতে চান। আমরা চেষ্টা করবো স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা কিছু উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে এখন আলোচনা করতে। আশা করছি আপনাদের উপকারে আসবে।

  • স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার IELTS  বাধ্যতামূলক নয় তবে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। এবং ইংরেজীতে দক্ষ হলে আপনি পড়াশুনা ও কাজের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা পাবেন।
  • স্কটল্যান্ড ইইউ র সিনজিনভুক্ত দেশ। অর্থাৎ এই দেশের ভিসা পেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর অন্যান্য দেশে ও বিনা ভিসায় ভিজিট করতে পারবেন। এটা খুব বড় একটা সুবিধা হতে পারে পড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজের ক্ষেত্রে।
  • স্কটল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সদস্য। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের তুলনায় উন্নয়ন খুব দ্রুততার সাথে বেড়ে চলছে।
  • ব্যাংক ফান্ড বেশি একটা দেখাতে হয় না।
  • ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যায় খুব সহজে।
  • পড়াশুনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ পাওয়া খুব সহজ।
  • পড়াশুনা শেষে ফুলটাইম কাজের সুযোগ রয়েছে।

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা – কিভাবে আবেদন করবেন?

স্কটল্যান্ড দেশ সম্পর্কে জানা হলো। এবং লিথুনিয়া কেনো আবেদন করবেন সেটা জানা হলো এখন চলুন দেখে নেয়া যাক লিথুনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম। অর্থাৎ আপনি যদি লিথুনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা র জন্য আবেদন করবেন ঠিক করেন তাহলে কিভাবে আবেদন করবেন তা বিস্তারিত জানবো এই পোষ্টে।

প্রথমে যেমনটা আমরা বলেছিলাম স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের জন্য IELTS  এর প্রয়োজন হয় না তবে ভালো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে আবেদন করতে হলে আপনার IELTS এর প্রয়োজন পড়বে। স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে আপনার কোর্স এবং ডিগ্রির ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর আপনার কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করা। কোর্স সেলেকশন ও বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করার ক্ষত্রে আপনারা এই ওয়েব সাইট থেকে সাহায্য নিতে পারেন। ওয়েবসাইটে রিসার্চ এর মাধ্যমে আপনি নিয়ের জন্য বেষ্ট অউনিভার্সিটি সিলেক্ট করে সে হিসেবে প্রিপারেশন শুরু করতে পারেন। নিচে আমরা স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা সেরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দেয়ার চেষ্টা করছি। এই লিস্টের প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটি বিশ্বমানের এবং বাংলাদেশীদের জন্য ভালো সুযোগ রয়েছে।

  • University of St Andrews
  • University of Glasgow
  • University of Edinburgh
  • University of Strathclyde
  • University of Aberdeen
  • Heriot-Watt University
  • University of Dundee
  • University of Stirling
  • Edinburgh Napier University
  • Glasgow Caledonian University
  • Robert Gordon University
  • Queen Margaret University
  • Abertay University
  • University of the West of Scotland

আবেদনের প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রথমে আপনাকে আবেদনের জন্য সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ডাক যোগে বা অনলাইনে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। সব ঠিক থাকলে ৬-৭ দিনের মধ্যে আপনার কনফার্মমেশন মেইল আসবে। এরপর আপনাকে ১ বছরের অগ্রিম টিউশন ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত নির্দিষ্ট একাউন্টে জমা করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন কারনে ভিসা কনফার্ম না হলে আপনি সম্পূর্ন টাকা ফেরত পাবেন। তবে এখানে এপ্লিকেশন ফি ১৫০ থেকে ২০০ ইউরো প্রদান করতে হবে, যা অফেরৎযোগ্য। এরপর টিউশন ফি জমা দেওয়ার পর তারা আপনাকে ৪/৫ দিনের মধ্যে অফার লেটার এবং ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস পাঠাবে।

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের সকল কাগজপত্র স্কটল্যান্ড সেন্টার ফর কোয়ালিটি এসেসমেন্ট ইন হাইয়ার এডুকেশন (SKVC) থেকে রেকগনাইজ করাতে হবে। পূর্বে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের পূর্বেই করা হত কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে প্রথমে আপনাকে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করতে হবে এবং সেখান থেকে পাওয়া কনডিশনাল অফার লেটার প্রুফ অফ পারপাস হিসেবে জমা দিতে হবে। এরপরই আপনি সকল ডকুমেন্টস রিকগনাইজ করানোর সু্যোগ পাবেন। আপনি সকল ডকুমেন্টস রিকগনাইজের জন্য বাংলাদেশ থেকে ই পাঠাতে পারেন। অথবা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানালে তারা তাদের অফিশিয়াল ই-মেইল থেকে সকল ডকুমেন্টস SKVC-এ পাঠিয়ে দিবে। SKVC-এ এপ্লিকেশন ফর্মের লিঙ্ক ও সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাবার ঠিকানা নিচে দেওয়া হল:

ওয়েবসাইট: https://www.studyin-uk.com/consultation/

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা: টিউশন ফি

ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের তুলনায় স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা য় পড়তে গেলে খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয়। সাধারনত মাস্টার্স প্রোগ্রামের এর জন্য টোটাল আপনার খরচ হবে ৩১০০ থেকে ৩৬০০ ইউরোর মত। আর ব্যাচেলর প্রোগ্রামে মোট খরচ হতে পারে ১৬০০ থেকে ৪১০০ ইউরো। তবে যেমনটা আমরা আগেও বলেছি খরচ নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ালি, স্কলারশীপ ও ডিগ্রির ধরনের উপর নির্ভর করে এই খরচ কুছুটা কম বেশি হতে পারে।

এছাড়া ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার অবশ্যই আর্থিক সচ্চলতার প্রমান দিতে হবে। এক্ষত্রে স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা র জন্য আপনার ব্যাংক সলভেন্সি ৬-৭ লক্ষ টাকা দেখাতে হতে পারে। আর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গেলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হবে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে হবে।

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা: মাসিক খরচ ও পার্ট টাইম জব

যেমনটা আমরা আগেও বলেছি স্কটল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য তাই আপনি এই ভিসা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ গুলোয় খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবেন যার কারনে আপনার পার্ট টাইম জব করা লিথুনিয়া অনেকটাই সহজ ও সহজলভ্য। সাধারনত পড়াশুনার পাশাপাশি আপনি সপ্তাহে ১৮ ঘন্টা ও সামার ভেকেশনে ফুলটাইম কাজের সুযোগ পাবেন। অনেকের ধারনা ইউরোপের দেশ গুলোতে লিভিং কস্ট বেশি। কথা সত্য কিন্তু সেখানে জবে স্যালারি ও অনেক বেশি। তাই আপনি জব করার মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের খরচ তুলে নিতে পারবেন।

স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা: চাকুরি ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

স্কটল্যান্ড আপনি পড়াশুনা শেষ করার পর আপনি ৬ মাস সময় পাবেন চাকুরি খুজে নেয়ার। এই ৬ মাসের মধ্যে চাকুরি ব্যবস্থা হয়ে গেলে আপনাকে টানা ২ বছর চাকুরি করতে হবে TRP (Temporary Resident Permit) এর মাধ্যমে। এর পর আপনি স্থায়ীভাবে চাকুরির আবেদনের সুযোগ পাবেন। তাছাড়া আপনি যদি টানা ৮ বছর লিথুনিয়ায় থাকেন এরপর লিথুনিয়ার নাগরিকত্ত্বের জন্য আবেদন করতে পারেবেন।

একটা ব্যাপার আরেকবার বলা উচিৎ। স্কটল্যান্ড থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর আপনি চাইলে ইউরোপের যেকোন দেশে ওই সার্টিফিকেট দেখিয়ে জব করতে পারবেন। যেহেতু স্কটল্যান্ড হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।

মন্তব্য

উপরে আমরা চেষ্টা করেছি স্কটল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আবেদন করতে। আশা করছি আপনারা খুব ক্লিয়ার একটি ধারনা পেয়েছেন। ভিসা ও স্কলারশিপ নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্ট গুলো পড়ুন। এছাড়া ভালো লাগলে এই ভিডিও টি আপনার নিকট আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ

আরো পড়ুন – অ্যান্ডোরা টুরিস্ট ভিসা ২০২২ । অ্যান্ডোরা পর্যটন ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

This Post Has 3 Comments

Leave a Reply