পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া
আসসালামু আলাইকুম। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় ব্যয়বহুল ও ভালো ভালো চিকিতসা পাওয়া খুবই কষ্টকর। সাধারন সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই খারাপ আবার আপনি যদি ভালো চিকিৎসার জন্য বেসরকারি কোন হাসপাতালে ভর্তি হোন সেক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হবে বড় অংকের টাকা যা অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সম্ভব হয়ে উঠে না। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে পিজি হাসপাতাল কিছুটা ব্যতিক্রয়।
পিজি হাসপাতাল সরকারি হলেও এর চিকিৎসা ব্যবস্থা বাংলাদেশের সেরা এবং সরকারি হওয়ার খরচ অন্য যেকোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় কম। এজন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ প্রিয়জনকে নিয়ে এই হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা নিতে। যাদের পরিচিত ডাক্তার বা আপনজন আছেন তারা বিভিন্নভাবে কেবিন ভাড়া করে ফেলেন কিন্তু যাদের পরিচিত কেউ নেই তারা পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া করার সঠিক নিয়ম না জানার কারনে বিপাকে পড়তে হয়। আর এর সুযোগ নেয় একদল দালাল চক্র যারা নতুন রোগীদের টার্গেট করে ও কেবিন ভাড়া দিবে বলে টাকা খেয়ে নেয়।
![পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া](https://easyteching.com/wp-content/uploads/2022/07/%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%AE-%E0%A6%93-%E0%A6%96%E0%A6%B0%E0%A6%9A-1-300x169.webp)
আজকে ব্লগে আমরা পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এছাড়াও জানতে পারবেন পিজি হাসপাতালে ভর্তির নিয়ম ও পিজি হাসপাতালে টেস্ট খরচ। আশা করছি আজকের ব্লগটি ভালোভাবে পড়লে কোন দালালের সাহায্য ছাড়াই পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া করতে পারবেন।
পিজি হাসপাতাল কোথায়
যারা ঢাকার বাইরে থেকে ডাক্তার দেখাতে আসবেন তাদের বড় একটি অংশ জানেন ই না পিজি হাসপাতাল কোথায়। পিজি হাসপাতাল যার বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল এবং এটি ঢাকার প্রান কেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত। পিজি হাসপাতালের পাশেই রয়েছে দেশের আরেকটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতাল বারডেম। আপনি যদি ঢাকার বাইরে থেকে আসেন তাহলে শাহবাগ মোড়ে আসলেই পেয়ে যাবেন পিজি হাসপাতাল।
পিজি হাসপাতাল কবে বন্ধ থাকে
যেকোন সরকারি হাসপাতালের মত পিজি হাসপাতালেও দুইটি ভিন্ন ইউনিট রয়েছে।
- আউটডোর
- ইমার্জেন্সি
আউটডোর হচ্ছে রোগীদের প্রাথমিক ভাবে দ্রুত একটি সাজেশন দেয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালের একটি পুরাতন সিস্টেম। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে আউটডোর বন্ধ থাকে। অর্থাৎ শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত যেকোন দিন আপনি ২০ টাকা টিকেট করে বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার দেখাতে পারবেন।
ইমার্জেন্সি বিভাগ রাত দিন ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। এ ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে চিকিতসা প্রয়োজন এমন রোগীদের যেকোন সময় নিয়ে আসলেই ভর্তি করাতে পারবেন। প্রথমত জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাক্তার রোগীর শারিরীক অবস্থা দেখে তাকে যেকোন একটি ইউনিটে রেফার করবেন এবং পরবর্তীতে ওই ইউনিট চিকিতসা নিয়ন্ত্রন করবেন।
পিজি হাসপাতালে ভর্তির নিয়ম
পিজি হাসপাতালে কেবিন যেকেউ চাইলে ভাড়া করতে পারে না। অর্থাৎ নিয়ম অনুযায়ী কেবিন ভাড়া করার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের রেফারেন্স লাগবে। চলুন আমরা এক নজরে পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া করার নিয়ম দেখে নেই। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মত পিজি হাসপাতেলেও চার ধরনের সিট আছে। জেনারেল ওয়ার্ড, ডাবল বেড কেবিন, কেবিন আর ডিলাক্স। আপনি যখন রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসবেন তখন রোগীর কন্ডিশন অনুযায়ী ও চিকিৎসা করতে কতদিন সময় লাগবে তার উপর নির্ভর করে ডাক্তার আপনাকে সিটের জন্য রেফার করবেন।
ডাক্তারের রেফার করা কাগজ ও রোগী ভর্তির সময় দেয়া কাগজপত্র নিয়ে আপনাকে যেতে হবে পিজি হাসপাতালের মূল ভবনের তিন তলায় সিট বরাদ্ধ দেয়ার কাউন্টারে। সেখানে ডাক্তারের দেয়া রেফারেন্স কাগজপত্র জমা দেয়ার পর ৩০ মিনিট পর আপনাকে নির্দিষ্ট সিট বুকিং দেয়া হবে। আপনি যদি সঠিক নিয়ম না জেনে হাসপাতালে সিটের জন্য চেষ্টা করেন সেক্ষেত্রে দালাল এই সুযোগ নিয়ে আপনার কাছ থেকে কিছু টাকা খাওয়ার চেষ্টা করবে। তাই আমরা বলবো পেরেশানি না হয়ে ঠান্ডা মাথায় নিজে চেষ্টা করুন দেখবেন কোন অতিরিক্ত টাকা ছাড়াই সহজে নিজেই পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া করতে পারছেন।
পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া কত
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোর চেয়ে পিজি হাসপাতালের কেবিন সিস্টেম ভিন্ন ও অনেক উন্নত। বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে হাসপাতালের বেড ছাড়াও ফ্লোরে কিংবা বারান্দায় রোগী রেখে চিকিৎসা করানো হয় কিন্তু পিজি হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মেডিকেল যেখানে বরাদ্ধ করা সিটের বাইরে কোন রোগী ভর্তি করানো হয়। অর্থাৎ ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালের বরাদ্ধ করা নির্দিষ্ট সিটের বাইরে কাউকে ভর্তি করানো হবে না।
পিজি হাসপাতালে মূলত চার ধরনের সিট রয়েছে।
- জেনারেল ওয়ার্ড
- ডাবল বেড কেবিন
- কেবিন
- ডিলাক্স রুম
জেনারেল ওয়ার্ড হচ্ছে যেখানে ৭ থেকে ১০ টি বেড থাকে। এই ধরনের সিটের ভাড়া দিন প্রতি ৬০০ টাকা।
ডাবল বেড কেবিন হচ্ছে এমন রুম যেখানে দুটি মাত্র রোগীর বেড থাকে। এক্ষেত্রে রোগীর বেড ছাড়াও বসার জন্য প্রশস্থ যায়গা থাকে। এ ধরনের সিট ভাড়া দিনে ১০২৫ টাকা।
কেবিন হচ্ছে যেখানে একটিমাত্র সিট থাকে। রোগীর বেড ছাড়াও রোগীর জন্য আলাদা লকার, আত্মীয়দের বসার প্রশস্থ যায়গা রয়েছে। এ ধরনের রুমের ভাড়া দিন প্রতি ২০৫০ টাকা।
ডিলাক্স রুম হচ্ছে কেবিনের চেয়ে আরো উন্নত। ডিলাক্স রুমের ভাড়া দিন প্রতি ৩ হাজার টাকার মত।
অবশ্য আপনি চাইলেই হোটেলের মত নিজের ইচ্ছামত রুম পছন্দ করতে পারবেন না। রোগীর কন্ডিশন অনুযায়ী ডাক্তার রেফার করবেন এবং সে অনুযায়ী আপনাকে সিট দেয়া হবে। এছাড়াও রোগের ধরন ও চিকিতসার সময় সীমার উপর নির্ভর করে আপনার রোগীকে কি ধরনের রুম দেয়া হবে তা নির্ভর করবে।
পিজি হাসপাতাল অনলাইন টিকেট বুকিং
![পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া](https://easyteching.com/wp-content/uploads/2022/07/Capture-300x155.webp)
বর্তমানে আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে পিজি হাসপাতাল অনলাইন টিকেট বুকিং করতে পারেন। অনলাইন পিজি হাসপাতালের টিকিট বুকিং করতে চাইলে https://onlinehmis.wbhealth.gov.in/Login.aspx এই লিংক টি কপি করে ব্রাউজারে পেস্ট করুন। অথবা এখানে ক্লিক করুন। লিংকে ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন যেখানে আপনার মোবাইল নাম্বার দিতে বলবে। মোবাইল নাম্বার দেয়ার পর একটি ওটিপি আপনার মোবাইলে পাঠানো হবে। ওটিপি দিয়ে ভেরিফাই করা হয়ে গেলে নির্দিষ্ট কিছু স্টেপ ফলো করে খুব সহজেই পিজি হাসপাতাল অনলাইন টিকেট বুকিং করতে পারবেন। আরো বিস্তারিত জানতে পিজি হাসপাতালের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন এখান থেকে।
পিজি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর নিয়ম
পিজি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে হলে আপনাকে টিকিটের মাধ্যমে দেখাতে হবে। প্রথমে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে আপনার নাম বয়স ও সমস্যার কথা বললে কাউন্টার থেকে আপনাকে নির্দিষ্ট ডাক্তারের কাছে রেফার করা হবে। এর পর লাইন ধরে ঐ নির্দিষ্ট ডাক্তারকে দেখাতে হবে। আর আপনি যদি পুরনো রোগী হোন সেক্ষেত্রে পূর্বের কাগজপত্র দেখালে টিকিট কাউন্টার থেকে নতুন করে একটি টিকিট দেয়া হবে। এরপর আগের নিয়মে সিরিয়াল ধরে ডাক্তারে দেখাতে হবে।
পিজি হাসপাতাল মোবাইল নাম্বার
উপরে আমরা পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া নিয়ে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এরপর ও অনেক সময় বিভিন্ন কারনে আমাদের হাসপাতালের হেল্প লাইনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা লাগতে পারে। আপনি যদি যেকোন প্রকার তথ্য বা অভিযোগ জানানোর জন্য পিজি হাসপাতাল কর্তপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে চান তাহলে আপনাকে 01866-637482, +88 02 55165760-94 এই নাম্বারগুলোতে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়াও আপনি সরাসরি হেল্প ডেস্ক বা তথ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করেও আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন।
পিজি হাসপাতালে টেস্ট খরচ
অনেকেই আমাদের কাছে জানতে পিজি হাসপাতালে টেস্ট খরচ কেমন। যারা বাইরে থেকে আসেন বেশিরভাগ ই একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা সাথে নিয়ে আসেন। তাই চিকিতসা খরচ ও টেস্টের খরচ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা ব্যাপার। টেস্টের খরচ নির্ভর করে টেস্টের ধরনের উপরে। তবে অন্য যেকোন বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের তুলনায় পিজি হাসপাতালে টেস্ট খরচ অনেক খব হবে এটা নিশ্চিত। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে দালাল হতে সাবধান হতে হবে। যেকোন প্রকার টাকার লেনদেন করার পুর্বে অবশ্যই রশিদ চাইবেন। রশিদ ছাড়া কেউ টাকা চাইলে দিবেন না।
পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া
উপরে আমরা পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া করার নিয়ম ও খরচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ব্লগটি আপনাদের উপকারে এসেছে। ব্লগটি ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন যাতে তারাও বিপদের সময় ব্লগটি পরে উপকৃত হতে পারে। আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগ গুলো পড়ার অনুরোধ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ