বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার করার নিয়ম

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার

বর্তমান সময়ে আধুনিক যুগে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট কুরিয়ার করা হয়। অথবা দেশের বাইরে থেকেও বিভিন্ন ধরনের পণ্য অর্ডার করে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশে আনা যায়। এতে করে বিভিন্ন ধরনের ইউনিক এবং দেশের বাইরে্র প্রোডাক্ট দেশে বসেই ব্যবহার করা যায়। তবে অনেকেই জানেন না কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারত বা অন্যান্য দেশে কুরিয়ার করতে হয়।

আজকে আমরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – ভারতে ব্রেন টিউমার অপারেশন খরচ

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার কিভাবে পাঠায়?

বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ বিশ্বের যে কোন দেশে পার্সেল পাঠানো যায় কিছু নিয়মকানুন মেনে এবং কিছু কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ১৮১ টি দেশে পার্সেল পাঠানো যায়। এখন আমরা জানব কোন কোন মাধ্যমে ভারত এবং দেশের বাইরে পার্সেল পাঠানো যায়।

১। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে

২। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কুরিয়ার কোম্পানির মাধ্যমে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ডি এইচ এল, ফেডেক্স, টি এন্ড টি, ইউ পি এস ইত্যাদি

আবার পোস্ট অফিসে বা কুরিয়ার এর মাধ্যমেও ৩ ভাবে ভারতে পার্সেল কুরিয়ার করা যায়।

১। ইএমএস বা এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস- এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি যেটা নিজের সরকারি ডাক বিভাগের সাথে সংযুক্ত থাকে। সি এম এস এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পার্সেল যেতে পাঁচ থেকে দশ দিন সময় লাগে। সারফেস পার্সেল থেকে ই এম এস পার্সেল এর চার্জ তুলনামূলক বেশি বলতে গেলে সবচেয়ে বেশি। যেমন ভারতে পার্সেল পাঠাতে হলে বিএমসির মাধ্যমে তাহলে খরচ আসবে প্রথম ২৫০ গ্রাম ২২৩০ টাকা পরবর্তী ২০ কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজি ২৮০ টাকা।

২। এয়ার পার্সেল- এটি সাধারণত পোস্ট অফিসের আওতাধীন হয়। এই মাধ্যমে পার্সেল প্লেনে করে ভারত সহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। এটাকে এয়ারপোর্ট টু এয়ারপোর্ট সার্ভিস বলে। যদি ঢাকা থেকে কোন পার্সেল ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাতে হয় তাহলে তারা এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিবে নিজের লোক এসে এয়ারপোর্ট থেকে প্রোডাক্ট কালেক্ট করতে হবে।

এক্ষেত্রে ইএমএস এর থেকে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হয়। সাধারণত পার্সেল ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ডেলিভারি হয়। এর খরচ প্রথম ৫00 গ্রামে ১৮৫০ টাকা এবং পরবর্তী ২0 কেজি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা।

৩। সারফেস পার্সেল বা সি মেইল নামেও পরিচিত পার্সেল- এই মাধ্যমে পার্সেল এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৌঁছানোর জন্য জাহাজ ব্যবহার করা হয়। তাই সারফেস পার্সেল তুলনামূলকভাবে খরচ কম হয় কিন্তু সময় অনেক বেশি লাগে। যেমন- ২০ থেকে ৪৫ দিন। এখানে পার্সেল পাঠ পাঠাতে প্রথম ৫০০ গ্রামের জন্য ১৪৩০ টাকা এবং পরের ২০ কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজি ২৮০ টাকা খরচ হয়।

আরো পড়ুন – বাংলাদেশে এনজিওগ্রাম খরচ কত

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার পাঠানোর নিয়ম

ধাপ ১– বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার পাঠাতে হলে সরাসরি পোস্ট অফিসে খোঁজ নিতে হবে অথবা নিজ এলাকায় ডিএসএল বা ফেডেক্স অফিসে খোঁজ নিতে হবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর যে কোনটার নাম গুগলে সার্চ দিলে তাদের হোম পেজ আসে সেখানে হটমেইল দেওয়া থাকে সেখানে যোগাযোগ করলে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এবং কোথায় কোথায় ব্রাঞ্চ আছে সে সম্পর্কে জানা যাবে।

ধাপ ২- পছন্দমত কুরিয়ার সার্ভিস টি ঠিক করার পর খোঁজ নিতে হবে সেখানে পার্সেল পাঠানোর নিয়ম কি। এক এক কুরিয়ার সার্ভিসের প্যাকেজিং সিস্টেম এবং ওজন করার সিস্টেম একই রকম এবং প্যাকেজিং নির্ভর করে আপনি দেশের বাইরে কি পাঠাবেন তার ওপর।

ধাপ ৩- জরুরী কাগজপত্র অথবা পচনশীল নয় এমন প্রোডাক্টের খরচ এবং প্যাকেজিং সিস্টেম একরকম এবং খাবার বা পচনশীল জাতীয় বস্তুর প্যাকেজিং এবং খরচ অন্যরকম। সে ক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিসে পচনশীল জাতীয় পণ্য অ্যাভয়েড করাই উত্তম। এছাড়াও কাচের কোন জিনিস বা ভেঙ্গে যেতে পারে এমন কোন জিনিস পাঠানোর জন্য সাবধানতার সাথে প্যাকেজিং করতে হবে।

ধাপ ৪- কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য পাঠাতে হলে নিজের ঠিকানা এবং কোথায় পাঠাবেন তার ঠিকানা সহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য পাঠাতে গেলেই তাদের রিসিপশন থেকে এই ফর্মটি দেওয়া হয়ে থাকে। সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করে জমা দিয়ে যেকোনো পার্সেল পাঠানো যায়।

ভারতে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস এবং খরচ

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস

দেশ এবং দেশের বাইরে পার্সেল পৌঁছানোর জন্য বর্তমানে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস খুবই প্রসিদ্ধ। দেশের বাইরে ভারত সহ ১৬৫ টি দেশে পার্সেল পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

সুন্দরবনের শাখা 

মতিঝিল- এবি ব্যাংক, চব্বিশ পঁচিশ দিলখুশা বাণিজ্যিক এলাকা ঢাকা ১০০০।

ফোন নাম্বার- ৯৫৫১৯৮৪

ফ্যাক্স নাম্বার- ৮০২৯৫৬৩৯৯৫

জয়পুরহাট- নন্দী মার্কেট দ্বিতীয় তলা সদর রোড

ঝিনাইদহ- ১৮৫, এইচ এস এন রোড জাহিদ ষ্টোর

কুষ্টিয়া- ৫২ এন এ ফ্রড কুষ্টিয়া

দিনাজপুর- রাজু মিশন স্কুলের সামনে

পাবনা- বাণী সিনেমা হলের উত্তর পাশে

সিরাজগঞ্জ- সৌরভী নানি জালালাবাদ বেকারির পাশে

রংপুর- প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলা রংপুর

নোয়াখালী- আবু সুপার মার্কেট সদর

বগুড়া- ঢাকা ব্যাংকের নিচে

ফেনী- ট্রাঙ্ক রোড সাউথ হাট ব্যাংকের পাশে

রাজশাহী- সাহেব বাজার মার্কেট রাজশাহী

কক্সবাজার- ঢাকা ব্যাংকের পাশে কক্সবাজার

লক্ষ্মীপুর- সদর জেলা মোড়ের পাশে

দেশের বাইরে পার্সেল পাঠানোর খরচ

ভারত- যেকোনো পণ্য প্রতি কেজি ৫০০ টাকা। পৌঁছানোর সময় ৪৮ ঘন্টা

পাকিস্তান- যেকোনো পণ্য প্রতি কেজি ১৮০০ টাকা। পৌঁছানোর সময় ৭২ ঘন্টা

সৌদি আরব- যেকোনো পণ্য এক কেজি ২০০০ টাকা। পৌঁছানোর সময় ৭২ ঘন্টা

আমেরিকা- যে কোন পণ্য এক কেজি ২৮০০ টাকা। পৌঁছানোর সময় ৭২ ঘন্টা

বাংলাদেশ পোস্ট অফিস

বাংলাদেশ পোস্ট অফিস থেকে বিদেশে যে কোন পণ্য খুব সহজেই পাঠানো যায়। তবে বাংলাদেশ পোস্ট অফিস থেকে বিদেশে কোন পণ্য পাঠাতে হলে কত খরচ করতে হয় তা অনেকেই জানেনা। যেমন-

ভারত ইএমএস- প্রথম ২৫০ গ্রাম ৮৫০ টাকা, পরবর্তী ২০ কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজি ৭০ টাকা।

এয়ার পার্সেল- প্রথম ৫০০ গ্রাম ৭৫০ টাকা পরবর্তী ২০ কেজি পর্যন্ত প্রতি কেজি ৯০ টাকা

DHL কুরিয়ার সার্ভিস

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পণ্য পাঠানোর জন্য ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিস খুবই ভালো সেবা দিয়ে থাকে। দিয়েছেন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভারতে খুব সহজেই যে কোন পণ্য সহজে পাঠানো যায়। দিয়ে জেল কুরিয়ার সার্ভিসে ভারতে পণ্য পাঠানোর খরচ হলো-

ভারত ইএমএস ডকুমেন্ট রেট-

৫০০ গ্রামের খরচ-১৩৮০ টাকা

১ কেজি -৩৭৭০ টাকা

১ কেজি ৫০০ গ্রাম- ২৪০০ টাকা

২ কেজি- ৫৩৬৫ টাকা

ভারত ইএমএস নন ডকুমেন্ট রেট-

৫০০ গ্রামের খরচ- ২১৪৫ টাকা

১ কেজি-২৬৫৫ টাকা

১ কেজি ৫০০ গ্রাম- ৩১৭০

২ কেজি- ৩৬৮০ টাকা

এবং পৌঁছানোর সময় ৪৮ ঘন্টা। এবং এখানে ৭০ কেজি এর বেশি পণ্য পাঠানো যায় না।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার পাঠানোর শর্ত

  • কোন মাদক জাতীয় দ্রব্য কুরিয়ার করা হয় না
  • নির্দিষ্ট ওজনের অতিরিক্ত ওজনের কোন জিনিস পার্সেল করা যায় না
  • সঠিক তথ্য না দিলে পার্সেল পাঠানো হয় না
  • পচনশীল জাতীয় দ্রব্য কুরিয়ার করা যায় না
  • সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোন বস্তু কুরিয়ার করা যায় না
  • কুরিয়ার করতে হলে বাংলাদেশে নাগরিক হতে হয়

মন্তব্য

আজকে আমরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর দেশ থেকে ভারতে যেকোনো পার্সেল কুরিয়ার করতে সমস্যা হবে না। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতিশীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply