ট্যাটু করতে কত টাকা লাগে
মূলত ট্যাটুর জন্ম হয় হাজার হাজার বছর আগে। তবে বাংলাদেশ অফিশিয়ালি ২০১৮ থেকে ট্যাটু স্টুডিও ও পার্লার গুলোর যাত্রা শুরু হয়। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের সামনে, বেলিরোড, পান্থপথ এবং বিভিন্ন জায়গায় ট্যাটু শিল্পীদের দেখা পাওয়া যেত। মূলত বিভিন্ন ধরনের সেলিব্রেটিদের হাতে আঁকা ট্যাটু নিজেদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মানুষ ট্যাটু করে থাকে।
আজকে আমরা ট্যাটু কিভাবে করে এবং ট্যাটু করতে কত টাকা লাগে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন- স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম ২০২৩
ট্যাটু কিভাবে করে?
সাধারণত ট্যাটু দুই রকমের হয়ে থাকে। স্থায়ী এবং অস্থায়ী ট্যাটু। অস্থায়ী এয়ার ব্রাশ ট্যাটু হল অনেকটা তুলিতে কালি লাগিয়ে ছবি আঁকার মত স্টাইল। স্থায়ী ট্যাটু করতে সুচ ও কাজে লাগে। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে কালিসহ সূচ চামড়ার ভেতরে ঢুকানো হয়। আর শরীরে ফুটে উঠতে থাকে প্রজাপতি ড্রাগন আগুন অথবা বিশেষ কারো নাম সহ বিভিন্ন ধরনের নকশা।
যারা শরীরে শুইয়ের খোঁচা সহ্য করতে পারে না তাদের জন্য আছে বিশেষ ক্রিম যা দিলে জায়গাটিতে সেভাবে ব্যথা অনুভূত হয় না।
আরো পড়ূন – নাকের প্লাস্টিক সার্জারি খরচ কত?
ট্যাটু করতে কত টাকা লাগে?
সাধারণত শরীরের ট্যাটুর দাম ঠিক করা হয় প্রতি স্কয়ার ইঞ্চি হিসাব করে। জায়গা ভেদে স্কয়ার ইঞ্চির দাম ৮00 থেকে ৩000 টাকা হয়ে থাকে। তবে ভারী নকশা করলে ১৫ হাজার থেকে .১ লাখ ও লাগতে পারে। এছাড়াও পুরা এক হাতে ট্যাটু করতে ৮ থেকে ৯ ঘন্টার জন্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা লাগতে পারে। অনেক সময় ট্যাটুর ডিজাইনের উপর ও এর দাম নির্ভর করে।
বাংলাদেশে কিছু ট্যাটুর মূল্য তালিকা
- লাইফ টাইম তিল করা হয় একটা- ১000 টাকা
- ট্যাটু রিমুভ মিনিমাম চার্জ- ৫০০০ টাকা
- ট্যাটু রিমুভ যে কোন কালার প্রতি ইঞ্চি ব্ল্যাক কালার- ২ হাজার টাকা
- মাল্টি কালার- ২৫০০ টাকা
- ঠোঁটের যেকোনো কালার- ৫০০০ টাকা
- নাক কান ব্রো ছিদ্র মেডিসিন সহ- ৫০০০ টাকা
- ট্যাটু যে কোন কালার বা হাতে কাটা দাগ রিমুভ প্রতি ইঞ্চি- ২৫০০ টাকা
- আইভ্রু লাইফ টাইম এর জন্য- ৫000 টাকা
- মাতৃজনিত দাগ- ১ হাজার থেকে শুরু করে দাগের উপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়
- নাভির ছিদ্র- ১০০০ টাকা
- ঠোঁট ছিদ্র- ৫০০ টাকা
- ঠোঁটের কালো স্পট লেজার মেডিসিন সহ- ২০০০
- হেয়ার রিমুভ প্রতি ইঞ্চি দুই হাজার মিনিমাম চার্জ- ৫000 টাকা
- লেজার কার্বন ফেসিয়াল- পাঁচ হাজার টাকা
- এছাড়া অন্যান্য ট্যাটু করতে হলে ট্যাটুর ছবি দেখার পর দাম নির্ধারণ করা হয়
ট্যাটু করার পুর্বে করনীয়
- ট্যাটু করার আগের রাতে কখনোই ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল খাওয়া যাবে না। কারণ এসব পান করলে রক্ত পাতলা করে যাতে ট্যাটু করার সময় রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- অন্তত এক সপ্তাহ অনেক পানি খেতে হবে।
- সারাদিন অন্তত দুই লিটার পানি খাওয়া উচিত
- ট্যাটু করার সময় ট্যাটু শিল্পী যেন নতুন সুই ব্যবহার করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
- পুরাতন সুই ব্যবহার করলে শরীরে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
- ট্যাটু করার পূর্বে অবশ্যই ডায়াবেটিস বা এলার্জি আছে কিনা তা চেক করে নেওয়া উচিত
- এসব থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই আগে নিতে হবে
- ট্যাটু করার জন্য অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে
- যেহেতু ট্যাটু সারা জীবনের জন্য থেকে যায় তাই ট্যাটু করার পূর্বে বারবার চিন্তা করতে হবে
ট্যাটু করার পর করণীয়
- ট্যাটুর মাধ্যমে ত্বকের রোগ সহজে ছড়িয়ে পড়ে তাই সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে
- ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখার কয়েক ঘন্টা পর ট্যাটু পরিষ্কার করার আগে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে
- ট্যাটু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে এবং নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে
- ট্যাটুকে জোরে জোরে কখনোই ঘষা যাবে না
- ট্যাটু করার পর লোশন ক্রিম অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে হবে
- সপ্তাহে অন্তত দুইবার মশ্চারাইজার লাগাতে হবে
- ট্যাটুকে সবসময় রাসায়নিক পদার্থ এবং সূর্য অতিবেগুনি রশি থেকে দূরে রাখতে হবে
- বাইরে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ট্যাটুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সানস্ক্রিন লাগাতে হবে
- ট্যাটু করার কমপক্ষে তিন সপ্তাহ গরম পানিতে গোসল কিংবা সাঁতার কাটা উচিত নয়
ট্যাটু করার সময় ব্যাথা লাগে কি?
অনেকের মনে এই প্রশ্ন আসে ব্যথার ভয়ে শখ থাকা সত্ত্বেও অনেকে ট্যাটু করে না। ট্যাটু করার ক্ষেত্রে কাজ করা হয় এরিয়াতে এটি ত্বকের দ্বিতীয় স্তর। এখানে খুব বেশি ব্যথা লাগে না কিংবা রক্তপাত হয় না। তবে ট্যাটু শরীরের কোন অংশে করাবে সেটার উপরে ও ব্যথা নির্ভর করে। শরীরে কিছু অংশের ত্বক সংবেদনশীল বেশি সেখানে নির্ভরশীল।
তবে ব্যাথা কিছুক্ষণের মধ্যেই কমে যায়। অনেকেই ট্যাটুর ব্যথা সহ্য করতে পারে না তাই ট্যাটু করার সময় অনেক সময় ঔষধ লাগিয়ে দেয়া হয়।
অতিরিক্ত ট্যাটু করানোর ঝুঁকি
ট্যাটুর কালি থেকে ক্যান্সার হতে পারে এমন অনেকেরই ধারণা। বাজারের নকল ও নিম্নমানের প্রসাধনে ব্যবহারেও অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার হতে পারে ট্যাটু করার ক্ষেত্রে মানসম্মত কালি ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করে নিলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমেরিকা ও লন্ডন থেকে ট্যাটু করার বেশিরভাগ সামগ্রিক বিভিন্ন স্টুডিওতে আসে তাই অসুস্থ হবার সম্ভাবনা কম।
শরীরের ট্যাটু আকার বৈজ্ঞানিক কোন উপকারিতা নেই। তবে উল্কি ব্যবহারের ফলে হেপাটাইটিস, টিউবারকিউলোসিস ও টিটেনাস ইত্যাদি রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এটি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ট্যাটু সারা জীবন থাকে তাই রাসায়নিক পদার্থ ও সারা জীবন দেহের ভিতর থেকে যায়। রাসায়নিক পদার্থের কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কোন ধরনের ট্যাটু বেশি জনপ্রিয়
ট্যাটু আঁকায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বলে জানা যায়। এসব চিহ্ন দিয়ে ট্যাটু ধারী ব্যক্তি মূলত বিশেষ কাউকে ইঙ্গিত করে। এ ছাড়াও ভালোবাসার মানুষের নাম কিংবা নামের প্রথম অক্ষর, বিভিন্ন প্রাণীর মুখ, আগুন, ড্রাগন, মাথার খুলি, ফুল পাখি, লতাপাতা প্রজাপতি বেশি জনপ্রিয়।
তরুণ তরুণীরা ঘাড়পিঠ সহ শরীরের যেসব জায়গায় সহজেই দেখা যায় সেখানেই ট্যাটু করে থাকে। শরীরের যেসব জায়গা সংবেদনশীল বেশি থাকে যেমন হাতের কব্জি সেসব স্থানে ট্যাটু করা উচিত নয় বলে অনেকেরই ধারণা।
বাংলাদেশের ট্যাটু সেন্টার
ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ট্যাটু সেন্টার রয়েছে। ঢাকার গুলশান, বনানী, বেইলি রোড, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সামনে পান্থপথ নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, উত্তরা সহ বেশ কিছু জায়গায় ট্যাটু কারানো যায়। ট্যাটু করে দেওয়ার জন্য এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ট্যাটু স্টুডিও গড়ে উঠেছে।
বিডি ট্যাটু রিমুভ সেন্টার
ঠিকানা- টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স, ফ্লোর নম্বর ৪, শপ নাম্বার ৪৭০, শান্তিনগর ১২১৭
ফোন নাম্বার- ০১৬৭৯ ০৯২৪০৫
ঢাকা ট্যাটু স্টুডিও
ঠিকানা- টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স, ফ্লোর নাম্বার ৪, শপ নাম্বার ৪৭১, চামেলি বাগ শান্তিনগর, বীর উত্তম শামসুল আলম রোড ঢাকা ১২১৭
ফোন নাম্বার- ০১৯২০০৮১২৬৯৮
ইনক মি বেলিরোড
ঠিকানা- ১/২ বেলিরোড, ঢাকা ১২০৫
ফোন নাম্বার- ০১৬১৫৫৫0৩৪২
ইংক পার্ক ট্যাটু স্টুডিও বেস্ট ট্যাটু স্টুডিও ইন ঢাকা
ঠিকানা- হাউস নাম্বার ৭১৯, মিরপুর ডিওএইচএস, রোড ১০, ইভিনিং ৩ ঢাকা ১২১৬
ফোন নাম্বার- ০১৭৭৬৬৬৬0০
ঢাকা ট্যাটু স্টুডিও
ঠিকানা- হোল্ডিং নাম্বার ৩৯, আম্বালা কমপ্লেক্স, শপ নাম্বার ৮৯ ,রোড নাম্বার ২, ঢাকা ১২০৫
ফোন নাম্বার- ০১৯৩৩৯৯৯৯৩৩
অলিন্স ট্যাটু স্টুডিও
ঠিকানা- ৭২ বীর উত্তম কাজী নুরুজ্জামান রোড, ঢাকা ১২০৫
ফোন নাম্বার- ০১৬৭০৯৭৫৮১৬
লাক্সমী ইন বেইলিরোড
ঠিকানা- টুইন টাওয়ার্স কল, কর ঢাকা ১২০৫
ফোন নাম্বার- ০১৯২০৮১২৬৯৮
ট্যাটু আকার ব্যাপারে ইসলামিক মতামত
শরীরে ট্যাটু এর ব্যাপারে অধিকাংশ ফিকাহবিদের মতে হারাম। কারণ মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কৃত্রিমভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। পাশাপাশি আলাদা চুল লাগানো ভ্রু কেটে ফেলাইতে ইসলামী নিষিদ্ধ কেননা এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিভিন্ন পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়। তাই তিনি অপছন্দ করেন।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে”। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন- “আর তারা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি করবেই” (সূরা নিসা আয়াত ১২৯)। এছাড়াও হাদিসে আছে যারা নকল চুল ব্যবহার করে এবং অন্য মহিলাকে নকল চুল এনে দেয় অথবা যেসব মহিলা উল্কি অঙ্কন করে এবং তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন।
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে সৌন্দর্যের জন্য উলকি অংকন করে এবং যাদের জন্য করে আল্লাহতালা তাদের অভিসম্পাত করেছেন উলকি বা ট্যাটু শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ নয় বরং তা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে ফ্যাশন হোক বা শখের বসেই হোক উল্কি বা ট্যাটু আঁকা হারাম কারণ উলকির কারণে বা ট্যাটুর কারণে চামড়ায় পানি পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি হয় তাহলে অজু আদায় হবে না, আবার ফরজ গোসল সম্পন্ন হবে না ফলে অপবিত্র শরীর বয়ে বেড়াতে হবে। তাই শরীরে ট্যাটু না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ট্যাটু রিমুভ করার পদ্ধতি
ট্যাটু স্থায়ী তবে ট্যাটু তুলে ফেলা কষ্টসাধ্য নয়। সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো লেজার রিমুভার। এর উচ্চমাত্রার লেজার ট্যাটু রঞ্জন কেও ভেঙ্গে দেয়। তাই যারা ট্যাটু তোলার কথা ভাবছে তাদের এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। ট্যাটু তোলার সময় সামান্য ব্যথা হতে পারে লেজার টেকনিক ত্বকের জন্য বেদনাদায়ক। অনেক ক্ষেত্রে ট্যাটু তোলার জন্য এনেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হয় অথবা শরীরের ট্যাটুর জায়গা অসাড় করতে ক্রিম ব্যবহার করা হয়।
ট্যাটু তোলা কোন সংক্ষিপ্ত এবং দ্রুত প্রক্রিয়া নয়। কমপ্লিট ট্যাটু তুলতে ৮ থেকে ১০ টা সেটিং এর প্রয়োজন। ট্যাটুর রং এবং অবস্থান উপর নির্ভর করে সেশনের সংখ্যা বাড়তে পারে। ট্যাটু করাতে যেমন খরচ তেমনি তুলতেও খরচ হয়। ট্যাটু তোলার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে অনেক সময় রক্তপাত হতে দেখা যায়।
মন্তব্য
আজকে আমরা ট্যাটু কিভাবে করে, ট্যাটু করতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি ট্যাটু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করতে পেরেছি। তবে ট্যাটু সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য প্রশ্ন অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –