বর্তমান বাংলাদেশের চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। চোখ ওঠা রোগ কেন হয়? বিভিন্ন কারণে চোখ ওঠা রোগ হতে পারে। চোখ ওঠা রোগ যেহেতু একটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এটি সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে ছড়াতে পারে।
এছাড়াও কখনো কখনো এলার্জির মাধ্যমেও চোখ ওঠা রোগ হতে পারে। আবার অনেক সময় মৌসুমী বায়ুর আদ্রতার পরিমাণ বেশি হলে ও চোখ ওঠা রোগ হতে পারে।
চোখ ওঠার রোগ কি?
এই রোগকে সাধারণত কনজাংটিভাইটিস বলা হয়। সাধারনত ঋতু পরিবর্তন ও বিরূপ আবহাওয়ায় চোখে কিছু ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখ চুলকানোর মত সমস্যা গুলো দেখা দেয়। ডাক্তারি ভাষায় এই রোগকে কনজাংটিভাইটিস বলা হয় এবং আমাদের দেশের সাধারন ভাষায় রোগ নেয়া বা চোখ ওঠা বলা হয়।
চোখ ওঠা কি ছোঁয়াচে ?
চোখ ওঠা রোগ বা কনজাংটিভাইটিস একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগে যে আক্রান্ত হয় সে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত চশমা, গামছা, টাওয়াল অথবা রুমাল অর্থাৎ তার ব্যবহৃত কোন প্রসাধনী কোন সুস্থ ব্যক্তি যদি ব্যবহার করে থাকে। তাহলে তারও চোখ ওঠা রোগের সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
যেহেতু এই রোগ মূলত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায় তাই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে সুস্থ ব্যক্তির ও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিচে আমরা চোখ ওঠা রোগ কেন হয় এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানবো।
চোখ ওঠা রোগ কেন হয়
যেহেতু এটি একটি ভাইরাস ও ব্যকটেরিয়া জনিত রোগ তাই বেশ কিছু কারনে চোখ উঠা রোগ হতে পারে। যদি আপনার চোখ ওঠার কারণ গুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন ।তাহলে আপনাদের জন্য সুবিধা হবে যে কিভাবে চিকিৎসা করলে চোখ ওঠা থেকে খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া যাবে। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই চোখ ওঠার কারণ গুলো সম্পর্কে
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে
সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে চোখ ওঠা রোগ হতে পারে। তবে বুঝতে হবে যদি চোখ ওঠার পর চোখ দিয়ে ময়লা আসে তাহলে বুঝতে হবে এটি ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়েছে। আর যদি ময়লার সাথে সাথে চোখ জ্বালাপোড়া করা শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে এটা ভাইরাস জনিত কারণে হয়েছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ এর কারনে
আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শের মাধ্যমে চোখ ওঠা রোগ ছড়াতে পারে। কেননা চোখ ওঠা রোগ একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত টাওয়ার রুমাল চশমা অথবা টিস্যু পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে চোখ ওঠা রোগ হতে পারে।
চোখে অতিরিক্ত পরিমাণ ধুলাবালি পড়লে
সাধারণত চোখের মধ্যে যদি অতিরিক্ত পরিমাণ ধুলাবালি পড়ে তাহলে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কেননা চোখে ধুলো বালি পড়লে চোখ আস্তে আস্তে খচখচ করা শুরু করে। পরবর্তীতে দেখা যায় আস্তে আস্তে চোখ লাল হয় এবং এভাবে চোখ উঠতে শুরু হয়।
চোখে আঘাত পাওয়ার কারণে
চোখে আঘাত পাওয়ার কারণে ও চোখ ওঠা রোগ হতে পারে। অনেক সময় বাইরে কাজ করার সময় অথবা খেলাধুলা করার সময় দেখা যায় কোন কারনে চোখে আঘাত পাওয়ার কারণে চোখ আস্তে আস্তে লাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে চোখ ফুলতে শুরু করে এভাবেও চোখ ওঠা রোগ হতে পারে।
মৌসুমী বায়ুতে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে
মৌসুমী বায়ুর আদ্রতা পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে ও চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে। কেননা বায়ুতে যখন আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে তখন বায়ুতে রোগ-জীবাণুর পরিমাণ বেশি থাকে। এবং আস্তে আস্তে চোখ লাল হতে শুরু করে এবং এভাবে চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে।
চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ
- প্রাথমিক অবস্থায় চোখ লাল হয়ে যায়
- তারপর চোখ খচখচ শুরু করে
- চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়
- চোখে ব্যথা অনুভূত হয়
- চোখ মোটেও আলো সহ্য করতে পারে না
- চোখে পিচুটি বা কেতুর হওয়া শুরু হয়
- ঘুম থেকে ওঠার পর দেখা যায় দুই চোখের পাতা জমাট বেঁধে লেগে গেছে
- অনেক সময় চোখ ঝাপসা হয়ে
সাধারণত এই লক্ষণ গুলো যদি আপনাদের কারো চোখের মধ্যে দেখতে পান।তাহলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে আপনার চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।
চোখ ওঠার ড্রপ
সাধারণত যখন চোখ ওঠা রোগ হয় তখন আগেই ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাসায় নিজেরা কিছু ড্রপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ড্রপ ব্যবহারের সাথে সাথে আপনাদেরকে নিজেদের চোখর সুন্দর ভাবে যত্ন নিতে হবে।
আমরা আজকে আপনাদের সাথে কয়েকটি ড্রপ এর বিষয়ে বলব যেগুলো ব্যবহার করে আপনারা চোখ ওঠার প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করে দেখতে পারেন।
আশা রাখি এ ড্রপ গুলো ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের চোখ ওঠা রোগের সমাধান পাবেন। ড্রপ গুলো হল
- অপটিমক্স
- ক্লোরোফে
- ট্রব্ব্রেক্স
- ক্লোরামফেনিকল
চোখ ওঠা কিভাবে ছড়ায়
চোখ ওঠা রোগ কেন হয় বা চোখ ওঠা রোগ কেন ছড়ায় সাধারণত অনেক কারণে চোখ ওঠা রোগ ছড়াতে পারে। চোখ ওঠা যেহেতু একটি ছোঁয়াচে এবং ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত টিস্যু, রুমাল, টাওয়াল অথবা যেকোনো প্রসাধনীর মাধ্যমে চোখ ওঠা রোগ ছড়াতে পারে।
চোখ ওঠা রোগের ঔষধ
চোখ ওঠা রোগ মূলত ততটা সিরিয়াস কিছু না। এই রোগ মূলত এমনিতেই ভাল হয়। এ রোগ সাধারণত এক সপ্তাহের মতো থাকে তবে অনেক ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের মতো থাকতে পারে। যদি দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিনের বেশি সময় থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ দেবে সে ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমেই ঔষধ না নিয়ে চোখ ওঠা রোগ কেন হয় সে বিষয়গুলো এড়িয়ে চললেই আশা করা যায় এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
চোখ উঠার দোয়া
আজকে আমরা আপনাদেরকে চোখ ওঠা রোগের দোয়া সম্পর্কে জানাবো। ইনশাআল্লাহ আপনারা এই দোয়াটি পাঠ করলে চোখ ওঠা রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। দোয়াটি হচ্ছে
চোখ ওঠা রোগের দোয়াঃ (আরবি উচ্চারণ)
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِىْ وَ شَرِّ بَصَرِىْ وَ شَرِّ لِسَانِىْ وَ شَرِّ قَلْبِىْ وَ شَرِّ مَنِيِّىْ
চোখ ওঠা রোগের দোয়াঃ( বাংলা উচ্চারণ)
”আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররি সাময়ি ওয়াসাররি বাসারি ওয়াসাররি লিসানি ওয়া সাররি ক্বালবি ওয়া সাররি মানিয়্যি”
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানের অপকারিতা, চোখের অপকারিতা, মুখের অপকারিতা, অন্তরের অপকারিতা ও বীর্যের অপকারিতা থেকে মুক্তি কামনা করছি।
চোখ উঠা রোগের সাবধানতা
আমরা অনেক সময় দেখা যায় চোখ ওঠা রোগ হলে যে কোনো ফার্মেসীতে গিয়ে চোখ ওঠার কথা বলে চোখের ঔষধ বা ড্রপ নিয়ে এসে চোখে লাগাই। এটা কিন্তু কোন ভাবে উচিত না। কেননা চোখ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ অঙ্গ। অনেক সময় দেখা যায় ভুলবশত কারণে অন্য কোন ড্রপ ফার্মেসি থেকে নিয়ে এসে চোখে লাগানোর পর চোখে আরো বেশি সমস্যার সৃষ্টি হল।
এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দায়ভার কিন্তু আপনারই। কেননা আপনি কোন ডাক্তারের পরামর্শ বা কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই ড্রপটি ক্রয় করে চোখে লাগিয়েছেন।
উপরে চোখ ওঠা রোগ কেন হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সে কারনগুলো সঠিকভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
চোখ ওঠা থেকে মুক্তির উপায়
আক্রান্ত চোখে অপরিষ্কার পানি, ধুলাবালি অথবা দূষিত বায়ু যাতে প্রবেশ না করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যাদের চোখ ওঠে তারা বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে থাকেন। এতে করে চোখের ভেতরে যে ময়লা থাকে তা আস্তে আস্তে বের হয়ে যায়।
তাই আপনাদেরকে চোখ ওঠা রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই চোখ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এবং চোখে যাতে ধুলাবালি অথবা দূষিত বায়ু প্রবেশ না করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
যেহেতু চোখ ওঠা একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
মন্তব্য
চোখ ওঠা রোগ কেন হয় আমরা সেই সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। এবং চোখ ওঠা থেকে মুক্তির উপায়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের চোখ ওঠা রোগ কেন হয় এই সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা দিয়েছে। যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী শেয়ার করতে পারেন।
আরো পড়ুন –