বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ, শিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয়

বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ

চোখ ওঠা রোগের সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। বয়স্ক থেকে শুরু করে শিশুরা পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। চোখ ওঠা রোগ সাধারণত মৌসুম ভিত্তিক হয়ে থাকে। অর্থাৎ যখন এই রোগ দেখা যায় আশেপাশে যারা থাকে তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ চোখ ওঠা রোগ ছোঁয়াচে এবং ভাইরাস জনিত রোগ।

বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ

আজকে আমরা আলোচনা করব বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ নিয়ে। বাজারে অনেক ধরনের চোখের ড্রপ পাওয়া যায়। যেমন অপটিমক্স, ট্রবব্রেক্স, ক্লোরামফেনিকল ইত্যাদি।

বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ নিয়ে আলোচনা করার আগে আমরা আলোচনা করব বাচ্চাদের চোখ কেন ওঠে এবং কেন লাল হয়?

বাচ্চাদের চোখ উঠার কারণ

বাচ্চাদের ছোট ওঠার বেশ কিছু কারন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই সনাক্ত করতে হবে চোখ ওঠার সম্ভাব্য কারন কি। নিচে আমরা কয়েকটি সম্ভাব্য কারন বর্ননা করার চেষ্টা করছি বাচ্চার সম্ভাব্য কারন খুজে বের করে সে হিসেবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণেঃ সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে বাচ্চাদের চোখ উঠতে পারে। তবে সাধারণত লক্ষ করলে দেখা যায় যখন চোখে জ্বালা পোড়ার সাথে ময়লা আসে, তখন আমরা বুঝতে পারবো এটা ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে হয়েছে। আর যদি চোখ শুধু জ্বালা পোড়া করে তাহলে বুঝতে হবে শুধু ভাইরাসজনিত কারণে চোখ লাল হয়েছে বা চোখ ওঠা রোগ হয়েছে।

চোখে অতিরিক্ত পরিমাণ ধুলাবালি পড়লেঃ বাচ্চারা যখন বাইরে খেলাধুলা করার জন্য যায়। তখন দেখা যায় তাদের চোখে অতিরিক্ত ধুলাবালি পড়ার কারণে চোখ খচখচ করতে থাকে। এবং আস্তে আস্তে চোখ লাল হতে শুরু করে। চোখে ধুলাবালি পড়ার কারণে চোখ উঠতে পারে।

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে মাধ্যমেঃ আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ এর মাধ্যমেও চোখ ওঠা রোগ সৃষ্টি হতে পারে। যেমন আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত গামছা বা টাওয়াল ব্যবহারের মাধ্যমে বাচ্চাদের চোখ ওঠা রোগ হতে পারে।এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ ব্যাবহার করা যেতে পারে।

মৌসুমী আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেঃ অনেক সময় মৌসুমী আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বাচ্চাদের উঠতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মূলত দেখা যায় একসাথে অনেকেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে। কেননা এই রোগ যেহেতু ছোঁয়াচে তাই একজনের সংস্পর্শে আর একজন আক্রান্ত হতে পারে।

চোখে আঘাত পাওয়ার কারণেঃ সাধারণত বাচ্চারা যখন খেলাধুলা করে অনেক সময় তারা নিজেদের মধ্যে ঝামেলার জন্য একজন আরেকজনকে আঘাত করতে পারে। ফলে দেখা যায় কোন কারনে চোখে আঘাত পেলে চোখ ফুলে যায় বা লাল হয় চোখ ওঠার এটাও একটা কারণ বলা যেতে পারে।এই ক্ষেত্রে বেশি না ঘাবড়িয়ে বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ ব্যাবহার করা যেতে পারে।

চোখ ওঠার উপসর্গ বা লক্ষণ

  • চোখে অস্বস্তি বোধ হয় বা চোখ খচখচ করে
  • আস্তে আস্তে চোখের পাতা ফুলতে শুরু করে
  • চোখ ব্যথা হয়
  • চোখ লাল হতে শুরু করে
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ে
  • চোখ মোটেও আলো সহ্য করতে পারে না
  • আস্তে আস্তে চোখ জ্বালাপোড়া শুরু করে
  • চোখে পিচুটি কেতুর জমে
  • চোখ কিছুটা ঝাপসা মনে হয়
  • ঘুম থেকে ওঠার পর এক চোখ অথবা দুই চোখেই পাতা লেগে থাকে

সতর্কতা: অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ বা ওষুধ সাধারণত কোন ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান থেকে নিয়ে থাকেন। যেহেতু চোখ শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভিটি একটি অঙ্গ তাই বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ ব্যবহারে অনেক সচেতন থাকতে হবে।

কখনো কারো কাছ থেকে শুনে বা নিজেরাই বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ বা ওষুধ বাচ্চাদের চোখে লাগাতে যাবেন না। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে। ডাক্তার চোখের অবস্থা বুঝে যে ড্রপ দিলে বাচ্চার চোখ তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে সেই ড্রপ দিয়ে দেবেন।

বাচ্চাদের চোখ ওঠার ঘরোয়া চিকিৎসা

বাচ্চাদের চোখ ওঠার সাথে সাথেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া ঠিক নয়। শুরুতে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অনুসরন করে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। নিচে আমরা কিছু ঘরোয়া উপায় আলোচনা করছি –

  • পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে বার বার চোখ পরিষ্কার করা
  • বার বার পানি দেয়া থেকে বিরত রাখুন
  • শক্ত কাপড় দেয়া যাবে না
  • চোখ কিছুক্ষন পর পর পাতলা তুলা দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে
  • শক্ত কাপড় চোখে দেয়া যাবে না

বাচ্চাদের চোখ ওঠা রোগের চিকিৎসা

বাচ্চাদের চোখ ওঠা রোগের চিকিৎসা বলতে তেমন কিছু নাই। এই রোগ মূলত এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাদের চোখের ড্রপ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত নিজে থেকে কোনভাবেই ড্রপ ব্যবহার করা ঠিক নয় যেহেতু চোখ খুব সংবেদনশীল একটি অঙ্গ।

বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ

সাধারণত বাজারে বাচ্চাদের চোখের ড্রপ বা ওষুধ অনেক ধরনের পাওয়া যায় তবে আপনাদেরকে অবশ্যই সচেতন ভাবে বা সতর্কতার সাথে ঔষধ গুলো কিনতে হবে। যাতে কোন রকম ভেজাল বা প্রতারিত না হয়ে যান সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

বাচ্চাদের চোখ ওঠার ঔষধ গুলো হল

  • ক্লোরোফেন
  • অপটিমক্স
  • ট্রবব্রেক্স
  • ক্লোরামফেনিকল

বাচ্চাদের চোখ ওঠা রোগ কত দিনের মধ্যে ভালো হয়

সাধারনত বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ ব্যবহার করার পর এক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। অনেক ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রোগ থেকে মুক্তি না মেলে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে

যেহেতু চোখ একটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ অঙ্গ। তাই আমাদেরকে চোখ ওঠা রোগের ক্ষেত্রে অনেক সচেতন থাকতে হবে। মূলত বাচ্চাদের এই রোগ এমনিতেই সেরে যায় বা বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ ব্যবহার করে।তবে অনেক ক্ষেত্রে চোখ ওঠা রোগের জন্য চোখের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে।

মূলত কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাব সেই বিষয়গুলো নিয়েই নিচে আলোচনা করা হল

  1. বাচ্চাদের চোখ খুব বেশি লাল হলে বা খুব বেশি খচখচ করলে অথবা জ্বালাপোড়া করলে
  2. বয়স্ক এবং শিশুদের চোখ ওঠা রোগের চিকিৎসা মূলত একই রকম। তবে বাচ্চারা যেহেতু তাদের সমস্যা গুলোর কথা বলতে পারেনা তাই বাচ্চাদের চোখের সমস্যা হলে অবশ্যই একজন ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
  3. যখন চোখ খুব বেশি ফুলে যায় বা পানি পড়া শুরু হয় তখন সাধারণত সাত দিন অপেক্ষা করা দরকার। যদি সাত দিনের মধ্যে ও চোখের ফোলা ভাব ও পানি পড়া বন্ধ না হয় তাহলে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

চোখ ওঠা রোগ নিয়ে ভয়ের তেমন কিছু নেই। সাধারণত এই রোগ এমনিতেই ভালো হয়। তবে দুই সপ্তাহের বেশি সময় যদি এই রোগ ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ

শিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয়

শিশুদের চোখে কেতুর হলে সাধারণত চোখ বন্ধ হয়ে যায়।এটা মূলত শিশুদের চোখ থেকে এক গুলো আঠালো রস নিঃসৃত হয় ।সে আঠালো রস শক্ত হয়ে কেতুর আকার ধারণ করে।

কেতুর হলে চোখের পাতা একবার এই বন্ধ হয়ে যায় এতে করে চোখ খুলতে সমস্যা হয়।

তাই কেতুর হলে আমাদের যে কাজগুলো করতে হবে

  • চোখ বার বার ভেজা পরিস্কার কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।
  • টিসু পেপার একবার ব্যাবহার করার পর আর ব্যাবহার করা যাবে না।
  • চোখ পরিস্কার করার সময় নরম কাপড় ব্যাবহার করতে হবে,কোন ভাবেই শক্ত কাপড় ব্যাবহার করা যাবেনা।
  • শিশুর চোখে কাজল জাতিও জিনিস দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • হাত দিয়ে চোখ ধরা যাবে না।হাত সবসময় পরিস্কার রাখা জুরুরি।
  • বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ ব্যবহার করার সময় ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। বয়স্ক থেকে বাচ্চারা পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এবং এই রোগ সম্পর্কে জানতে হবে। যেহেতু বাচ্চারা তাদের সমস্যার কথা গুলো বলতে পারেনা তাই প্রথমে বাচ্চার চোখ ওঠার ড্রপ ব্যবহার করুন।

যদি দেখতে পান যে বাচ্চাদের চোখে ড্রপ ব্যবহার করার পরেও বাচ্চার চোখ ভাল হচ্ছেনা। তাহলে অবশ্যই একজন ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ নিন। কারণ একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বুঝতে পারবে বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ কোনটা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবে। অথবা অন্য কোন মলম বা ওষুধ দিতে পারে।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply