বিকাশে টাকা জমানোর নিয়ম – বিকাশ সেভিংস স্কিম

বিকাশ ডিপিএস কি?

বাংলাদেশে কিস্তি বা মাসিক চুক্তিতে টাকা জমানো বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা এই স্ক্রিনটি ব্যবহার করে স্বল্প সময় এবং সর্ব পরিমাণ অর্থ জমা করে থাকে।

সম্প্রতি বিকাশ ও আইডি এন সি ফাইন্যান্স লিমিটেড যৌথভাবে একটি সেভিংস একাউন্ট সুবিধা নিয়ে আসে যা শুধুমাত্র বিকাশ ব্যবহারকারীরা পাবে।

ব্যাংকে সাধারণ সেভিংস স্কিম খুলতে চাইলে বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হতো কিন্তু বিকাশে সেরূপ কোন কিছুই প্রয়োজন হবে না।

যেকোনো বিকাশ ব্যবহারকারী চাইলেই ছোট থাকুন অনুসরণ করে বিকাশ একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন। অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা পর্যন্ত সেভিংস একাউন্টে জমা রাখতে পারবেন।

এছাড়াও সেভিংস একাউন্ট এর মেয়াদ ২ বছর, ৩ বছর, কিংবা ৪ বছর মেয়াদী হতে পারে। সেভিংস স্কিম এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মুনাফা সহ সম্পূর্ণ টাকা বিকাশ একাউন্টে জমা হবে যা কোনরকম ক্যাশ আউট চার্জ ছাড়াই তুলে নেয়া যাবে।

বিকাশে টাকা জমানোর নিয়ম

বিকাশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান idlc ব্যবহারকারীদের জন্য মূলত দুই রকম সেভিংস স্কিম এর ব্যবস্থা রেখেছেন। প্রথমটি হল সর্বনিম্ন কত টাকা জমা রাখবেন এবং দ্বিতীয়টি হল সর্বনিম্ন কতদিনের জন্য জমা রাখবেন।

বর্তমানে এই সেবার আওতায় একজন বিকাশ ব্যবহারকারী মাসিক ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা, ২০০০ টাকা কিংবা ৩০০০ টাকার কিস্তিতে টাকা জমা রাখতে পারবেন।

টাকার পরিমাণ সিলেক্ট করা হয়ে গেলে এ পর্যায়ে কত দিনের জন্য টাকা জমা রাখতে চান সেটি সিলেক্ট করতে হবে। বর্তমানে একজন ব্যবহারকারী সর্বনিম্ন ২ বছর, ৩ বছর কিংবা ৪ বছরের জন্য টাকা জমা রাখতে পারেন।

বিকাশে আইডিএলসিতে সঞ্চয়ী হিসাব খোলার নিয়ম

বিকাশ অ্যাপ এর মাধ্যমে খুব সহজ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে সেভিংস অ্যাকাউন্টটি খুলে ফেলতে পারবেন। এত পূর্বে কিছু রেস্ট্রিকশন থাকলেও বর্তমানে যেকোনো ধরনের বিকাশ ব্যবহারকারী এই সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুবিধা নিতে পারবেন।

photo 2023 01 06 10 48 52

ধাপ ১ – প্রথমেই মোবাইলের বিকাশ একাউন্ট থেকে সেভিংস অপশনটি সিলেক্ট করুন।

ধপ ২ – এরপর নতুন সেভিংস স্কিন খুলুন এই অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।

ধাপ ৩ – এরপর সেভিংস একাউন্টের মেয়াদ (২ বছর/ ৩ বছর/ ৪ বছর)  এবং টাকা জমা রাখার ধরন সিলেট করতে হবে।

ধাপ ৪ – এই পর্যায়ে প্রতি মাসে কি পরিমাণ (৫০০/১০০০/২০০০/৩০০০) টাকা জমা রাখতে চান সেটি সিলেক্ট করতে হবে। মানে একজন ব্যবহারকারী ৫০০, ১০০০ টাকা, ২০০০ টাকা কিংবা ৩০০০ টাকা মাসিক জমা রাখতে পারবেন।

ধাপ ৫ – এ পর্যায়ে সেভিংস একাউন্টের জন্য একজন নমিনি সিলেক্ট করতে হবে এবং নমিনের কিছু ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। মমিনি হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে আপনার অবর্তমানে এই অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ পাবে।

ধাপ ৬ – এই পর্যায়ে সেভিংস অ্যাকাউন্টের কিছু নিয়মাবলী ও শর্ত দেখানো হবে শর্ত সেগুলোতে ওকে ক্লিক করুন। এবং সর্বশেষ বিকাশ পিন দিয়ে ওকে পাঠালে চেপে ধরে রাখতে হবে।

এই সহজ ৬ টি ধাপের মাধ্যমে যে কেউ ঘরে বসেই বিকাশ আইডিএলসি সেভিংস স্কিম খুলতে পারবেন। প্রতিমাসে আপনার সিলেক্ট করা এমাউন্ট বিকাশ একাউন্ট থেকেই অটোমেটিক কেটে নেয়া হবে।

বিকাশ সেভিংস স্কিম লাভের পরিমান

বিকাশ আইডিএলসি সঞ্চয় হিসেবে একজন ব্যবহারকারী ফিক্সড ৭% মুনাফা পাবেন তার মোট জমানোর টাকার উপরে। অর্থাৎ কোন গ্রাহক যদি ২ বছরের জন্য এক হাজার টাকা করে কিস্তিতে টাকা জমা রাখেন তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি লাভসহ ২৫ হাজার ৭৭১ টাকা পাবেন।

তবে কোনো কারণে একজন গ্রাহক যদি মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হয় তাহলে সম্পূর্ণ টাকা তার বিকাশে চলে আসবে এক্ষেত্রে গ্রাহক কোন লোভ্যাংশ পাবে না।

বিকাশ ডিপিএস একাউন্টে সর্বনিম্ন কতটাকা জমা দেয়া যায়

বিকাশ ডিপিএস একাউন্টে প্রতিমাস সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা জমা রাখা যায়। বর্তমানে একজন ব্যবহারকারী বিকাশ সেভিংস একাউন্টে মাসে ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা ২০০০ টাকা, কিংবা ৩০০০ টাকা জমা রাখতে পারবেন।

ঠিক একই ভাবে একাউন্ট খোলার সময় এর মেয়াদকাল সিলেক্ট করতে হবে। বর্তমানে একজন ব্যবহারকারী ২ বছর, ৩ বছর, চার বছর মেয়াদে একাউন্ট খুলতে পারবেন।

বিকাশ সেভিংস একাউন্ট থেকে টাকা তোলার নিয়ম

বিকাশ সেভিংস অ্যাকাউন্ট এরই নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে লাভসহ সম্পূর্ণ টাকাটি বিকাশ একাউন্টে জমা হয়ে যাবে। এবং একজন ব্যবহারকারী কোনরকম ক্যাশ আউট খরচ ছাড়াই খুব সহজে টাকাটি ক্যাশ আউট করে নিতে পারবেন।

তবে কোনো কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই যদি টাকা তুলে নেয়া হয় সেক্ষেত্রে গ্রাহক ৭% মুনাফা পাবেন না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মূলধন টি ক্যাশ আউট চার্জ ব্যতীত একজন গ্রাহক তুলে নিতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ একজন গ্রাহক যদি ৩ বছরের জন্য বিকাশ সেভিংস একাউন্ট খুলে থাকেন এবং কোন কারণে তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগে জমানো টাকা তুলে নিতে চায় সে ক্ষেত্রে ৭% মুনাফা নাও পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একাউন্টের মূল টাকাটি ক্যাশ আউট চার্জ ব্যতীত তুলে নিতে পারবেন।

বিকাশে টাকা জমানো কি হালাল?

বিকাশ সেভিংস একাউন্টে টাকা জমানো হালাল নয়। যেহেতু বিকাশ সেভিংস স্কিমে ৭% হারে ফিক্সড এমাউন্ট সুদ দেয়া হয় তাই ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কোনভাবেই হালাল নয়।

সাধারণত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে কোন ফিক্সড এমাউন্টের লাভ দেয়া হয় না সেক্ষেত্রে আলেমগণ এটিকে হালাল বলে থাকেন। কেননা ব্যাংকের লস হলে এই লসের পরিমাণ আপনার উপর ও আসবে।

তাই তাই আপনার যদি হালাল-হারাম নিয়ে কনফিউশন থাকে তাহলে আমরা সাজেস্ট করব বিকাশ সেভিংস একাউন্টে টাকা জমানোর প্রয়োজন নেই।

বিকাশ আইডিএলসি সঞ্চয় হিসাব এর সুবিধা

বিকাশে টাকা জমানোর নিয়ম নিয়ে আলচনা করার পর এই পর্যায়ে আমরা সাধারণ ব্যাংকের ডিপোজিট কিংবা সেভিংস একাউন্ট এর তুলনায় বিকাশ আইডিএলসি সঞ্চয় হিসাব এর বেশ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা উল্লেখ করবো।

অ্যাকাউন্ট খোলা সহজ – সাধারণ ব্যাংকে ডিপোজিট একাউন্ট খুলতে গেলে অনেক কাগজপত্র কিংবা সিকিউরিটি দরকার হয় সে তুলনায় বিকাশ সেভিংস একাউন্ট ঘরে বসে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই খুলে ফেলা যায়।

সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা জমা – যেকোনো সেভিংস একাউন্টেই সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা জমা দেয়া যায় কিন্তু সাধারণত ৫০০ টাকা নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে সেভাবে জমা দেয়া হয় না। সে তুলনায় বিকাশ সেভিংস একাউন্টে ঘরে বসেই নিজের বিকাশ একাউন্ট থেকে ৫০০ টাকা করে মাসে সহজেই জমা রাখতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

ফ্রিতে টাকা তোলা যায় – নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে একজন ব্যবহারকারীর একাউন্টে লাভসহ জমানো টাকা কোনরকম ক্যাশ আউট চার্জ ব্যতীত তুলে নিতে পারবে ব্যবহারকারী। এক্ষেত্রে ব্যাংকে কিংবা এটিএম বুথে দোড়াদোড়ি করার কোন ঝামেলা নেই।

অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা সহজ – সাধারণত ব্যাংকের একটি ফিক্সড ডিপোজিট বন্ধ করে টাকা তুলে নিতে চাইলে বেশ সময়ের প্রয়োজন হয় এবং হয়রানি শিকার হতে হয়। সে তুলনায়বিকাশ সেভিংস একাউন্টে একজন ব্যবহারকারী চাইলে যে কোন সময় একাউন্ট ক্লোজ করে তার জমানো টাকা তুলে নিতে পারেন। যদিও এক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বেশি হবে।

বিকাশে টাকা জমানোর নিয়ম

মন্তব্য

উপরে আমরা বিকাশে টাকা জমানোর নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু ও প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত জানানো থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আমরা দ্রুত সময়ের মতো উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply