গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন, গবাদি পশু পালন ঋণ

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন

বাংলাদেশকে বলা হয় কৃষিপ্রধান দেশ। বিশ্বের খুব দেশেই বাংলাদেশের মত বাণিজ্যিকভাবে কৃষি কাজ করা হয় একই সাথে বাংলাদেশ গবাদি পশু পালনের ঐতিহ্য রয়েছে। ইতোপূর্বে ব্যক্তিকেন্দ্রিক গবাদি পশু পালন করা হতো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছাড়াই কিন্তু বর্তমানে শিক্ষিত যুবকরা চাকরির পেছনে না ছুটে অনেকেই ব্যবসায়িকভাবে গবাদিপশু পালন করছে। ব্যবসায়িকভাবে গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক সংস্থা লোন দিয়ে থাকে। যথোপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে পারলে খুব সহজেই এইসব ব্যাংক এবং আর্থিক সংস্থা থেকে সহজে লোন পাওয়া যায়।

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন
ছবি – গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন

আজকে আমরা গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন, গবাদি পশু পালন ঋণ নিয়ে কথা বলব। গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন কিভাবে নেবেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো কি কি এবং কোন কোন ব্যাংক লোন দিয়ে থাকে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আজকের ব্লগে।

গবাদি পশু পালন ঋণ কি

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন দেয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে আমাদের পরিষ্কারভাবে গবাদি পশু পালন ঋণ সম্বন্ধে ধারণা থাকা উচিত। যেমনটা আমরা বলেছিলাম ইতোপূর্বে গবাদিপশু ব্যক্তিকেন্দ্রিক পালন করা হতো কিন্তু পরবর্তীতে ব্যবসায়িকভাবে গবাদি পশু পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যাংক লোন দেয়ার পরিকল্পনা করে। শুধুমাত্র ব্যাংক নয় সরকারের যুব উন্নয়ন সংস্থাও বর্তমানে তরুণদের গবাদি পশু পালনে উৎসাহিত করতে সহজশর্তে বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশের চাকুরী সংকট রয়েছে তাই সরকার বরাবরই কৃষি ও গবাদি পশু পালনের শিক্ষিত তরুণদের উৎসাহিত করছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সরকারি ব্যাংক ও সামাজিক আর্থিক সংগঠন তরুণদের আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য ব্যবস্থা রেখেছেন।

গবাদি পশু পালন ঋণ কত প্রকার

সাধারনত বাংলাদেশে দুই ধরনের গবাদি পশু পালন ঋণ দেয়া হয়।

  1. সরকারি ঋণ
  2. বেসরকারি ব্যাংক ঋণ

২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুনদের চাকরি নির্ভরশীলতা কমানো ও যুবকদের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি করার লক্ষে সরকার যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষন চালু করেন। এর মাধ্যমে খুব সহজ শর্তে গ্রামের শিক্ষিত তরুনদের ঋণ দিয়ে থাকে সরকার।

এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক সহজশর্তে ঋণ দিয়ে থাকে।

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন কারা পাবেন

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক গবাদি পশু পালন ঋণ নিতে পারবেন তবে যেহেতু এটি একটি আর্থিক সংগঠন আপনাকে দিবে তাই তারা ঋণ দেয়ার আগে নিশ্চিত করবে যে আপনি ঋণ সঠিক সময়ে ফেরত দিতে পারবেন কি না। অর্থাৎ ঋণ দেয়ার পূর্বে কতটি গরু পালনের জন্য ঋণ নিতে চান সেই হিসেবে আপনার পর্যাপ্ত জমি এবং সক্ষমতা আছে কিনা তা সশরীরে যাচাই করবে পর্যবেক্ষক টিম। যদি আপনি পর্যাপ্ত জমি এবং আপনার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে খুব সহজ শর্তে এবং স্বল্প লাভে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক আপনাকে ঋণ প্রদান করবেন।

অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রমাণ দেখাতে হবে না শুধুমাত্র গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে আপনি আবার টাকা ফেরত দিতে পারবেন তা প্রমান করতে পারলেই হবে।

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন কোন কোণ ব্যাংক দেয়

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য আপনার হাতে অনেকগুলো অপশন রয়েছে। তবে এক এক ব্যাংক এর লোন প্রদানের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা শর্ত থাকে। নিচে আমরা এক নজরে কোন কোন ব্যাংক লোন দেয় তা এক নজরে দেখে নিবো।

  1. সোনালি ব্যাংক কৃষি উদ্যোক্তা লোন
  2. কর্ম সংস্থান ব্যাংক কৃষি উদ্যোক্তা ব্যাংক
  3. ব্র্যাক ব্যাংক কৃষি উদ্যোক্তা লোন
  4. ট্রাস্ট ব্যাংক
  5. অগ্রনী ব্যাংক
  6. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

গবাদি পশু পালন ঋণ নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আজকে আমরা মূলত কিভাবে ব্যাংক লোন নিবের সে ব্যাপারে আলোচনা করবো। এই পর্যায়ে আমরা দেখব বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গবাদিপশুর ঋণ নিতে কি কি কাগজপত্র লাগবে। বিভিন্ন ব্যাংকে কিছু অতিরিক্ত শব্দ থাকতে পারে তবে বেশিরভাগ ব্যাংকের মূলত একই ধরনের কাগজপত্র লাগে।

সার্টিফিকেট – গবাদি পশু পালন ঋণ পাওয়ার সবচেয়ে বড় একটি শর্ত হচ্ছে প্রথমে একটি ট্রেনিং নিতে হবে। বর্তমানে অনেক সরকারি বেসরকারি সংস্থা আছে যারা যুবকদের জন্য গবাদি পশু পালনের ট্রেনিং দিয়ে থাকেন এবং ট্রেনিং শেষে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করেন। ঋণ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ট্রেনিং সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে যাতে করে ব্যাংক বুঝতে পারে আপনার যথেষ্ট দক্ষতা আছে।

ট্রেড লাইসেন্স – যেহেতু আপনি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গবাদিপশু পালন করবেন নিজের নামে অথবা একটি কোম্পানির নাম দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স মানিয়ে নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ বছর থাকতে হবে। বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্স করা খুবই সহজ তাই এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই

জাতীয় পরিচয়পত্র – জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র ঠিক থাকে।

টিন সার্টিফিকেট – ঋণ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট লাগবে। অর্থাৎ আয়কর প্রদানের রশিদ দেখাতে হবে।

একজন গ্যারান্টর – ঋণ গ্রহণের প্রধান আরেকটি শর্ত হচ্ছে অর্থাৎ আপনার অবর্তমানে এই ঋণের দায় কে নেবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার পরিবারের কেউ হতে হবে অর্থাৎ বাবা মা সন্তান অথবা বউ এদের মধ্যে কেউ একজন আপনার ঋণের দায় নিতে হবে।

গরু রাখার শেড – আপনি যদি গরু কেনার জন্য ঋণ নেবেন সে অনুযায়ী গরু রাখার ওষুধ আছে কিনা তা দেখাতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি পাঁচটি গরু কেনার জন্য ঋণ আবেদন করেন তাহলে আগেই পাঁচটি গরু রাখার জায়গা ঠিক করে রাখতে হবে যাদের করে ব্যাংক থেকে লোক পর্যবেক্ষণে আসলে তা দেখতে পায়।

আরো পড়ুন – ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন ২০২২ । ইসলামী ব্যাংক সুদমুক্ত লোন বিস্তারিত

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন
ছবি – গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন

এই পর্যায়ে আমরা গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন দেয় এমন কয়েকটি ব্যাংক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

ট্রাস্ট ব্যাংক গবাদি পশু পালন ঋণ

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন দেয় এমন ব্যাংক গুলোর মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড অন্যতম। বাংলাদেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশ আর্মি ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত একটি বেসরকারী মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংক হচ্ছে ট্রাস্ট ব্যাংক।

ট্রাস্ট ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্র পর্যায়ে গবাদি পশু পালনে ঋণ দিয়ে থাকে অর্থাৎ আপনি যদি তিন থেকে পাঁচটি গরু পালনের জন্য ক্ষুদ্র পর্যায়ে ঋণ নিতে চান সেক্ষেত্রে ট্রাস্ট ব্যাংক গরুর খামার লোন নিতে পারেন।

ট্রাস্ট ব্যাংক মূলত সহজশর্তে এবং স্বল্প শর্তে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে থাকে।

প্রথমত উপরে আমরা যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বলেছি তা সঠিকভাবে দেখাতে পারলে ব্যাংক থেকে স্থান পরিদর্শনে যাবে। এবং সব ঠিক থাকলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনার এই লোন পেয়ে যাবেন। এরপর আস্তে আস্তে লাভের টাকা থেকে ব্যাংক লোন পরিশোধ করবেন।

ব্র্যাক ব্যাংক গরুর খামার লোন ২০২২

যেসব খামারে ব্যবসায়িকভাবে দুগ্ধ উৎপাদন করে থাকেন তাদের জন্য ব্রাক ব্যাংক খুবই সহজ শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইন্যান্সিং স্কিম বা পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের আওতায় ঋণ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে সুবিধা বঞ্চিত খামারিদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে খামার কার্য পরিচালনা করার জন্য ৫% সুদে ব্র্যাক ব্যাংক গরুর খামার লোন দিয়ে থাকেন।

বর্তমানে আপনার খাবারের ধরণ ও গরু সংখ্যার উপর নির্ভর করে ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে ব্র্যাক ব্যাংক।

ঋণের জন্য আবেদন করার পর ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট একটি টিম আপনার খামার পরিদর্শনের জন্য আসবেন এবং সবকিছু ঠিক থাকলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পাস হবে।

অগ্রণী ব্যাংক গবাদিপশু ঋণ ২০২২

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন দেয় এমন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। যারা গবাদিপশুর খাবার নিয়ে ব্যবসা করতে চান তাদের জন্য মূলত অগ্রণী ব্যাংক খুবই সহজ শর্তে এবং ৩% সুদে লোন দিয়ে থাকেন।

অর্থাৎ আপনাকে গরুর খাবার নিয়ে ব্যবসা করতে হবে যেমন খড় খৈল ভুষি এই জাতীয় যেকোনো খাবার নিয়ে ব্যবসা করতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংক গবাদিপশু দিন ২০২২ এর মাধ্যমে আপনি সহজেই পেতে পারেন।

তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই পর্যাপ্ত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যেহেতু ব্যাংক আপনাকে ঋণ দেবে লাভের আশায় তাই তারা ঋণ দেয়ার পূর্বে হবে চেক করে নেবে আপনার ট্রেড লাইসেন্স এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা আছে কিনা সব ঠিক থাকলে খুব সহজেই এই দিনটি নেয়ার মাধ্যমে আপনার ব্যবসার পরিধি আরও বাড়াতে পারবেন।

আরো পড়ুন – প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন নিয়ম 2022

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গরুর খামারের ঋণ

বর্তমানে বাংলাদেশে যে কয়টি ব্যাংক গবাদি পশু পালনের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তার মধ্যে অন্যতম একটি। অন্যান্য ব্যাংকের মতো এখানেও ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে এবং একইসাথে ব্যাংক থেকে একটি পর্যবেক্ষক টিম সরাসরি খামার পরিদর্শনে যাবেন। সাধারণত আপনার নির্ধারিত জায়গা এবং আপনার সব ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ৪% সুদে গরু পালনের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে।

তাই আপনি যদি গরুর খামার দেয়ার জন্য ঋণ নিতে চান তাহলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আপনার জন্য ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। প্রবাসি কল্যান ব্যাংক এর লোন আবেদনের নিয়ম জানতে এখানে ক্লিক করুন

গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন

উপরে আমরা গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন, গবাদি পশু পালন ঋণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা গরুর খামার দেয়ার কথা পরিকল্পনা করছেন আপনারা সর্বপ্রথম জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেকোনো একটি সরকারি প্রশিক্ষণ এ যুক্ত হয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিন। প্রশিক্ষণ নেয়া হয়ে গেলে খুব সহজেই যেকোনো ব্যাংক থেকে আবেদনের মাধ্যমে বর্তমানে সহজেই জেনে নিতে পারবেন।

আমাদের ওয়েবসাইটে আমরা নিয়মিত হন এই ধরনের লোন বিষয়ক ব্লগ নিয়ে আলোচনা করে থাকি। ভালো লাগলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়তে পারেন। আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন ।আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম, ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply