ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করনীয়
নবজাতক এবং ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে। সাধারণ শিশুদের সলিড খাবার শুরু করলে ছয় বছর পর থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য লক্ষ্য করা যায়। শিশুদের শুরুতেই ঔষধ না দিয়ে ঘরোয়া চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আজকে আমরা ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব।
ছোট বাচ্চাদের পেট কষা কেন হয়?
ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করনীয় সম্পর্কে জানার পূর্বে বাচ্চাদের কেন পেট কষা হয় সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। খাবারের অনিয়মের ফলে মূলত ছোট বাচ্চাদের পেট কষা হয়ে থাকে। তবে খাবারের অনিয়ম ছাড়াও কিছু কারণে পেট কষা সমস্যা হতে পারে। যেমন
- বাইরের পরিশোধিত খাবার খাওয়া
- টিনের কৌটা দুধ খাওয়ানো
- আঁশযুক্ত খাবার কম খান
- পানি কম খাওয়া হলে
- বাচ্চাদের হজম হয়না এমন খাবার খাওয়ানো
- কোষ্ঠকাঠিন্য হবার পর সঠিকভাবে মল ত্যাগ না করা
বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হবার লক্ষণ
বাচ্চাদের পেট কষার ঔষধ দেয়ার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে কিনা। শিশুর পায়খানা না হলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য কিনা সিওর হবার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হবার লক্ষণগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন।
- অনিয়মিত মলত্যাগ করা
- পেট শক্ত থাকা
- পেট ফুলে যাওয়া
- খাবার খেতে না চাওয়া
- মলত্যাগ করার সময় কান্নাকাটি করা
- মাঝে মাঝে পেট ব্যথা হওয়া
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
- মলত্যাগ করার সময় অতিরিক্ত প্রেসার দেওয়া
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- মল শক্ত হওয়া
ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঘরোয়া সমাধান
ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সাধারণত ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। সাধারণত খুব সহজভাবে ছোট বাচ্চাদের ঘরে থাকা বিভিন্ন উপাদান দিয়ে এবং খাবারের মেনু নির্ধারণ করার মাধ্যমে বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেওয়া যায়।
খেলাধুলা ও ব্যায়াম- সাধারণত বাচ্চাদের খাবার-দাবারের পর দৌড়ঝাঁপ ভাব শারীরিক ব্যায়াম করানো উচিত কেননা এর মাধ্যমে বাচাদেরখাবার খুব ভালোভাবে হজম হয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হয় না। সারা দিনে অন্তত এক ঘণ্টা শিশুর খেলাধুলা করা উচিত।
সঠিক পরিমাণে পানি পান করানো- পানি আমাদের খাবার হজম সহ শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। পানি কম খেলে ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । তাই প্রতিদিন বাচ্চার বয়স অনুসারে আপনাকে সঠিক পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া- বাচ্চাদের খাবার মেনুতে প্রতিদিন খাবার রাখা উচিত যুক্ত খাবার বা ফাইবার যুক্ত খাবার হজম হাতে সময় কম লাগে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি,কলা, পেঁপে।
কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দেখা দিলে ছোট বাচ্চাদেরকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো উচিত। যার ফলে পেটের মল সহজেই বের হয়ে যায়। শক্ত হয়ে যায় না।
পেট মালিশ- বাচ্চাদের সঠিক নিয়মে পায়খানা না হলে বাচ্চাদেরকে হালকা গরম সরিষার তেল পেটে মালিশ করা যেতে পারে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না।
ফলের রস বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো- বাচ্চাদের নিয়মিত পায়খানা না হলে অনেক দুশ্চিন্তার একটি বিষয়। ফলের রস বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো যেতে পারে এতে নরম হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
নিয়মিত মলত্যাগ করার অভ্যেস- বাচ্চা যখন থেকে আপনার কথা রেসপন্স করবে তখন থেকেই তাকে পটি ট্রেন করে ফেলা উচিত। নিয়মিত মলত্যাগ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দেখা যায় না। ধীরে ধীরে বাচ্চাকে নিয়মিত বলতে করার অভ্যেস করে ফেলতে হবে।
পরিশোধিত খাবার না খাওয়ানো- বাচ্চাকে বাইরের প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ানো হলে বেশিরভাগ সময়ই পেটের সমস্যায় ভুগতে পারে। কেননা বাইরের খাবার গুলোতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান যা খাবার হজমে বাধা প্রদান করে।
মাংস কম খাওয়ানো- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে বা পেট কষা হলে ওই সময়টাতে মাংস বা মাংস জাতীয় খাবার কম খাওয়ানো উচিত এতে খাবার হজম হতে চায় না।
খাদ্যের পরিবর্তন- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে মায়েদের বুকের দুধ পান করার সময় হলে মায়েদের আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে এবং বাচ্চার পেট নরম হয় এমন সব খাবার খাওয়া উচিত এতে বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। বুকের দুধ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
গ্লিসারিন বা অলিভ অয়েল- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে বাচ্চাদের পায়ুপথে গ্লিসারিন বা অলিভ অয়েল দিয়ে খুব সহজেই বাচ্চারা মলত্যাগ করতে পারে। অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে অলিভ অয়েল খাওয়ানো যেতে পারে।
বাচ্চাদের পায়খানা না হলে কি ঔষধ খাওয়াবেন
অনেকের ধারণা ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে কোন ঔষধ খাওয়ানো যাবে না কেননা পরবর্তীতে ঔষধ না খেলে তা সারবেনা না। মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বাচ্চাদের জন্য একটি কষ্টদায়ক অবস্থা। তাই দ্রুত বাচ্চাকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ঔষধ দেওয়া জরুরি।
বাচ্চাদের পায়ুপথে গ্লিসারিন বা সাপোজিটর দিলে খুব সহজেই বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় মলত্যাগ করে। এছাড়াও খাবার সঠিকভাবে হজমের জন্য অমিডন সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে।
নবজাতকের পায়খানা না হলে করনীয়
সাধারণত নবজাতকেরা এক সপ্তাহ পর্যন্ত পায়খানার না করাটা স্বাভাবিক। সেটা নির্ভর করে বাচ্চার গতিবিধির উপর বাচ্চা সুস্থ থাকলে কান্নাকাটি না করলে সমস্যা নেই। তবে নবজাতকের পায়খানা না হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে তবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নবজাতকের মায়ের খাবারের ডায়েট চার্ট।
- আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া- নবজাতকের মায়ের উচিত ডেলিভারির পর আশ যুক্ত খাবার খাওয়া তবে এ সময় শাক কম খাওয়া উচিত এতে নবজাতকের পেটে গ্যাস জমে না।
- বেশি করে পানি এবং তরল খাবার খাওয়া
- বাচ্চাদের প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ পান করানো
- বাচ্চাকে প্রতিদিন ব্যায়াম করানো
- পেটে সরিষার তেল মালিশ
- গরম কাপড়ের শেক দেওয়া
কি কি খাবার খেলে পেট কষা হয়
মূলত বাচ্চাদের পায়খানা না হওয়ার কারণ হল সঠিক খাবার তালিকা নির্ধারণ করা। তাই কোন কোন খাবার পেটের খাবার হজম করাতে সমস্যা তৈরি করে তা জেনে নেওয়া যাক-
- অতিরিক্ত মাংস মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া
- সুজি
- টিনের কৌটা ফর্মুলা দুধ
- প্যাকেট জাত জাতীয় খাবার
- শুকনো খাবার
- কাচা কলা
- রুটি
কোন কোন খাবার খেলে পেট পরিষ্কার হয়
যেসব খাবার খেলে সহজে বাচ্চাদের হজম হয় এবং পেট পরিষ্কার হয় তা হল-
- পাকা পেঁপে, পাকা আ,ম, বেল
- ঢেরোস গাজর মিষ্টি কুমড়া
- পানি
- তরল জাতীয় খাবার
- সুপ
- কলা
- কিসমিস
- আশ জাতীয় খাবার
ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে মায়েদের করনীয়
ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে মায়েদের কিছু সতর্কতাঃ মেনে চলা উচিত-
- বাচ্চাকে অতিরিক্ত খাওয়া হলো
- বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো
- সময় মত খাবার খাওয়ানো
- প্রতিদিন মলত্যাগ করার অভ্যাস তৈরি করানো
- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হওয়ার কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও অনেক কারণে হতে পারে তাই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া
- না জেনেবুঝে বাচ্চাদের ঔষধ খাওয়ানো
মন্তব্য
আজকে আমরা ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করনীয় কি এ সম্পর্কে আরও তথ্য দিয়ে একটি আর্টিকেল শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি অনেক কাজে লাগবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত এই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
