মুখে ব্রণ কমানোর উপায় – ব্রণ দূর করার ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট

মুখে ব্রণ কমানোর উপায় 

নিজের মুখ সুন্দর রাখতে কে না চায়। তবে চেহারার সৌন্দর্য কমাতে ব্রণ শত্রুর মতো ভূমিকা পালন করে। সাধারণত কমবেশি সবার মুখেই ব্রণ হয়ে থাকে। তবে ব্রণ ওঠা যত সহজ ব্রণ দূর করা ততই কঠিন কাজ। বিভিন্ন কারণে মুখে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে লক্ষ্য করা যায়।

মুখে ব্রণ কমানোর উপায় সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আজকে আমরা মুখের ব্রণ কমানোর উপায় এবং ব্রণ দূর করার ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট সহ ব্রণের দাগ দূর করার ক্রিমের নাম আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।

মুখে ব্রণ কেন হয়

মুখে ব্রণ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসকরা বলেন মুখে ব্রণ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে হরমোনের সমস্যা। হরমোনের বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে ত্বকে ব্রণের উদ্ভব ঘটে। তবে এ ছাড়াও ত্বক তৈলাক্ত হলে অপরিষ্কার থাক, শরীরে পানির পরিমাণ কম হলে মুখে ব্রণ দেখা দেয়। তবে ব্রণ হওয়ার আরো অনেকগুলো কারণ রয়েছে যেমন-

ঘুম না হওয়া- একজন সুস্থ মানুষের জন্য দৈনিক 8 থেকে 10 ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। যাদের এই 8 থেকে 10 ঘন্টা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তাদের বেশির ভাগ মানুষের মুখের ব্রণ দেখা যায়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুম না হলে ব্রণের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।

অতিরিক্ত ঘাম- গরমের দিনে যাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম নিঃসৃত হয়। তাদেরকে অরুনা আক্রান্ত হতে দেখা যায়। মূলত শরীরের ঘাম বের হলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় যার ফলে ত্বক শুষ্ক ও পরিষ্কার হয় যার ফলে মুখে ব্রণ হয়। শরীর ঘামলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। পানির পরিমাণ কমে গেলে ব্রণ হয়।

পরিষ্কার ত্বক- ব্রণ এর অন্যতম কারন হল অপরিষ্কার ত্বক। ব্রণ মুলত ত্বকেই উঠে। তাই মুখ পরিষ্কার না রাখলে ব্রণ হতে পারে। গরমের সময় ত্বক ঘামায় এবং শীতের সময় শুষ্ক হয়ে যায় যার ফলে ব্রণ দেখা যায়। শরীরের ত্বকে ধুলোবালি জমলেও ব্রণ হতে পারে।

পানি কম পান করা– পানি কম পান করলে শরীরে ডিহাইড্রেশন ভোগে। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। ব্রণের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। তাই বেশি করে পানি পান করা হতে পারে মুখে ব্রণ কমানোর উপায়।

বয়সন্ধিকাল- ছেলে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে যখনই তারা বয়সন্ধিকালে পা দেয়। তখন তাদের শরীরের অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বয়সন্ধিকালে সবারই কমবেশি ব্রণ হতে দেখা যায়। বিকালে তাদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তায় ভুগবে ফলে ব্রণ হয়।

অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া- ভ্রুণ হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। কেননা তেল-মসলাযুক্ত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তেল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ত্বকে অতিরিক্ত তেল জমে চিটচিটে ভাব হয়ে যায়। যার ফলে ব্রণ হয়। ব্রণ মুক্ত ত্বকের জন্য বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

দুশ্চিন্তা করা- মুখে ব্রণ হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে দুশ্চিন্তা করা। যারা  বেশি দুশ্চিন্তা করে, মানসিক অশান্তিতে ভোগেন তাদের ব্রণের মত চর্মরোগ রোগ হতে পারে। তাই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা হতে পারে মুখে ব্রণ কমানোর উপায় ।

মুখে ব্রণ দূর করার ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট

মুখে ব্রণ দূর করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তবে মুখে ব্রণ ব্রণ দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট রয়েছে। ঘরে বানানো প্যাক গুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সেটাই হতে পারে প্রকৃতপক্ষে মুখে ব্রণ কমানোর উপায় । তবে কিভাবে মুখের ব্রণ কমানো যায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

কিছু সহজ ঘরোয়া টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

টুথপেস্ট- অনেক আগ থেকেই টুথপেস্ট ব্রণ দূর করার জন্য বহুল ব্যবহৃত। টুথপেস্ট ব্যবহারের মাধ্যমে এক দিনেই শুকিয়ে যায়। ব্রণ দূর করার জন্য টুথপেস্ট খুব দ্রুত কাজ করে। আক্রমণ আক্রান্ত ত্বকের উপর টুথপেস্ট দিয়ে রাখলে খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়।

নিম তুলসির পেস্ট- নিম শরীরের জন্য অনেক উপকারি। নিম ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী। নিমে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল গুণাবলী এবং তুলসী হচ্ছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ব্রণের জন্য অনেক কার্যকরী। ব্রণ হলে নিয়ম এবং তুলসী পেস্ট করে মুখে লাগানো যেতে পারে।

মধু এবং দারচিনি- সাধারণত মধুকে বলা হয় সর্ব রোগের ঔষধ। মধু খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। 1 চা চামচ মধুর সাথে আধা চামচ দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে রাতে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে করে ব্রণ দ্রুত সেরে যাবে।

রসুন- রসুনের অনেক গুণ রয়েছে। রসুন ব্রণের উপর ঘষলে অতি তাড়াতাড়ি চলে যায়। এক কোয়া রসুন মাঝখানে কেটে আলতো করে ব্রণের উপর দিনে দুই থেকে তিনবার মাসাজ করলে ব্রণ চলে যাবে। এতে হালকা জ্বালাপোড়া করলে ভয়ের কিছু নেই। ব্রণের জন্য রসুন অনেক কার্যকরী উপাদান।

ডিমের সাদা অংশ- ডিমের সাদা অংশ সারারাত ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখলে ব্রণ চলে যায়। সকালে উঠে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে মুখের তৈলাক্ত ভাব কমে যায়। এরপর লোশান বা ক্রিম লাগিয়ে রাখলে ত্বকে ব্রণ কম হয় থাকে।

অ্যালোভেরা-অ্যালোভেরা ও লেবুর রস মুখে লাগিয়ে মাসাজ করলে ব্রণ কমে যায়।প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস এলভেরার শরবত খেলে মুখে ব্রন খুব কম হয়।

ওটস-ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ও অটস এর জুড়ি নেই। ওটস ত্বকের অতিরিক্ত তেল কে শুষে নেয় ফলে মুখে ব্রণ কম হয়। এছাড়া ওর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কমবেশি আমাদের সবার বাসায়  থাকে।

শসা- শসা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী এবং কার্যকরী। শসার অনেক গুণাগুণ রয়েছে। শসার রস ব্রণের জর্জরিত মুখে  মাখলে ব্রণ কমে যায়। এছাড়াও শসা আমাদের চোখের নিচের কালি দূর করার জন্য অনেক উপকারী। শসা খেলে অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।

মুলতানি মাটি চন্দন- রূপচর্চার জন্য মুলতানি মাটি এবং চন্দন অনেক সুপরিচিত। রাতে ঘুমানোর পূর্বে মুলতানি মাটি এবং চন্দনের প্যাক মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কম হয় যার ফলে ব্রণ চলে যায়। ত্বক পরিষ্কার রাখলে ব্রণ হয়।

ব্রণ দূর করার খাবার

রূপ চর্চার পাশাপাশি কিছু খাবারের মাধ্যমে ব্রণ দূর করা সম্ভব। সাধারণত যেসব খাবারে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। এবং ত্বকের জন্য উপকারী সেসব খাবার খেলে ব্রণ দূর করা যেতে পারে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শসা, গাজর, লেবু,মধু, অ্যালোভে্রা, টমেট, এবং প্রচুর পরিমাণে পানি।

তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়

ব্রণ সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকে বেশি হয়ে থাকে। তৈলাক্ত ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখা উচিত। এবং তেল হয় এমন খাবার জিনিস ব্যবহার থেকে দূরে থাকা উচিত। প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে মুখ পরিষ্কার করা, তেলযুক্ত খাবার পরিহার করা, এবং অয়েল ফ্রি ফেসওয়াস ব্যবহার করা ইত্যাদি হতে পারে তৈলাক্ত মুখে ব্রণ কমানোর উপায়।

ছেলেদের মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

সাধারনত ছেলেরা ঘরের চাইতে বাইরে বেশি থাকে বলে তাদের ত্বক বেশি অপরিষ্কার ওহো তৈলাক্ত হয়ে থাকে। মেয়েদের ত্বকের তুলনায় ছেলেদের ত্বক বড় বা মোটা হয় বলে ব্রণ বেশি হয়। তবে ত্বকের যত্ন নিলে ব্রণ সহ বিভিন্ন স্কিনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

বাজারের ছেলেদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্রন দূর করার ফেসওয়াস ক্রিম পাওয়া যায়, তা ব্যবহারের পাশাপাশি উপরের ঘরোয়া টিপস গুলো ফলো করলে আশা করছি ব্রন চলে যাবে।

ব্রণ দূর করার ক্রিম

বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ব্রণ-দূর-করার-ক্রিম সাবান ও লোশন পাওয়া যায়। তবে আসল ঔষধ বা ক্রিম এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নকল ক্রিম পাওয়া যায়। তাই কেনার পূর্বে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। বোরো প্লাস,রেমি , নভাক্লিয়ার একনে ক্রিম, নরমে একনে ক্রিম, ডারমাডিস্ক এন্টি একনে সিরাম,ওয়ান নাইট এন্টি একনে প্যাচ এই ক্রিমগুলো সাধারণত ব্রণের জন্য মানুষ বেশি ব্যবহার করে থাকে।

তবে সবচেয়ে ভালো হয় একজন স্কিন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে স্ক্রীন টাইপ অনুসারে ব্রণের চিকিৎসা করা। ডাক্তার নিজেই ক্রিম সাজেস্ট করবেন।

ব্রণ দূর করার ঔষধ

অনেক সময় ব্রণ মারাত্মক আকার ধারণ করে যা শুধুমাত্র ক্রিম বা ঘরোয়া চিকিৎসা মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হয় না ফলে বিভিন্ন ঔষধ সেবন করতে হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। ট্রেভিটা টেন এমজি ক্যাপসুল ব্রণের জন্য সুপরিচিত।

এটির প্রধান কাজ হচ্ছে মুখে তেল উৎপাদন কম করা। যে কোন ফার্মেসিতে দূর করার ঔষধ পাওয়া যায়। ত্বক তৈলাক্ত কম হাওয়াই মুখে ব্রণ কমানোর উপায় ।

ব্রণের দাগ দূর করার ক্রিমের নাম

অনেক সময় ত্বকের ব্রণ কমে গেলেও ব্রণের দাগ রয়ে যায়। মুখের সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন উপায়ে মাধ্যমে ও ব্রনের দাগ দূর করা সম্ভব। তবে অনেক সময় সেনসিটিভ স্কিনের দাগ যেতে চায় না। ব্রণের দাগ দূর করার বাজারে অনেক ক্রিম পাওয়া যায় তার মধ্যে বোরো প্লাস, এবং রেমি স্পট ক্রিম অনেক কার্যকরী।

ব্রণ না হওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ

দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত স্কিন ডাক্তার মুখে ব্রণ দূর করার উপায় অগ্রওন না হওয়ার জন্য অনেক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেগুলো হচ্ছে বেশি করে পানি পান করা, সব সময় ত্বকের যত্ন নেওইয়া, ত্বক পরিষ্কার রাখা, ব্রণে হাত না দেওয়া, ত্বকে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যবহার না করা।

মুখে ব্রণ কমানোর উপায়

মন্তব্য

তাহলে আজকে আমরা জানতে পারলাম মুখে ব্রণ দূর করার উপায় এবং মুখে ব্রণ দূর করার ঘরোয়া টিপস।আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক পছন্দ হবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। অতি শীঘ্রই আমরা আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply