ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ এর নাম

ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ

শরীরে  অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমা শুধুমাত্র দেখতেই খারাপ লাগে বিষয়টা এমন নয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠিন ও জটিল রোগ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর মেডিসিন ব্যবহার করেন যা উপকারের পরিবর্তে শরীরে সমস্যা সৃষ্টি করে। কিন্তু হোমিও ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর উপায়ে আস্তে আস্তে শরীরের চর্বি কাটানো সম্ভব এবং ওজন কমানো সম্ভব।

আজকে আমরা ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।  আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।

আরো পড়ুন – স্থায়ীভাবে মোটা হওয়ার ইসলামিক উপায়

ওজন বাড়ার কারণ

ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ সেবনের পূর্বে জানতে হবে কোন কোন কারনে শরীরের ওজন বাড়তে পারে। এতে করে সমস্যার সমাধান করতে সহজ হবে।

উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাবার – লবণ বা সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম যুক্ত খাবার খেলে তৃষ্ণা বাড়বে। এর ফলে আপনি আরো বেশি পানি খাবেন। লম্বা সময় এরূপ করলে শরীরে ওজন বৃদ্ধি পাবে। প্রতিদিন ছয় গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।

হরমোনের ওঠানামা – নারীদের মাসিকের চক্রের সময় শরীরে ইস্ট্রোজেনর ওঠানামার কারনে সামান্য পরিমাণ পানি আসে বলে কিছুটা ওজন বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টোরেনের ওঠা নামার কারণে ওজন কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। এই ওঠা নামা স্বাভাবিক, এটি সামগ্রিক স্বাস্থ্যে কোন প্রভাব ফেলে না।

অত্যধিক অ্যালকোহল – সাধারণত অ্যালকোহল খিদে বাড়িয়ে দেয়। ১ গ্রাম অ্যালকোহলে ক্যালরির পরিমাণ ৭। যেহেতু অ্যালকোহলে কোন পুষ্টিগুণ নেই, তাই এই ক্যালোরিকে ”ফাঁকা ক্যালরি” বলে যা শুধু ওজন বাড়ায়। কেউ যদি প্রতিদিন ৩০০ গ্রামের বেশি অ্যালকোহল খান তাহলে তার ওজন বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।

প্রাত্যহিক বা সাপ্তাহিক ওজনের ওঠানামা স্বাভাবিক। যদি আপনার ওজন ছয় মাসের মধ্যে ৬ পাউন্ড এর বেশি ওঠানামা করে, তাহলে চিকিৎসক বা ডায়েটিশিয়ানেরপরামর্শ নিন।

ব্যায়াম – ব্যায়ামের সময় ও পরে পেশি ও কোষগুলো পানি টেনে নেয়। এ কারণে ব্যায়াম করার পর ওজন সামান্য কিছু বেশি দেখায়, যা কিনা আপনার পেশির – চর্বির ওজন নয়। তাই ব্যায়াম করার পর পরই ওজন মাপা উচিত নয়।

অন্ত্রের সমস্যা – হজমে সমস্যা, সিলিয়াক ডিজিজ, ক্রস ডিজিজ, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) ইত্যাদিতে যারা ভুগছেন তাদের জন্য অন্ত্রের উপর ভরসা করা কঠিন। আবার এগুলো না থাকলে বদহজম, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা যাদের আছে, তাদের প্রতিদিনের ওজন ওঠা নামা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, অন্ত্রের সমস্যার কারণে শরীর ভার হয়ে ওজন বেশি দেখায়।

ওষুধ সেবন – কিছু ওষুধ যেমন ক্যাফেইন বড়ি, মূত্রবর্ধক বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার ফলে ওজন প্রাথমিকভাবে বাড়তে পারে। তবে ধীরে ধীরে ওষুধগুলো শরীরের সাথে সামঞ্জস্য করে নিলে পরবর্তী সময়ের আর অসুবিধা হবে না।

ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ

এ পর্যায়ে আমরা ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ এর তালিকা বর্ণনা করবো। নিচে আমরা যে ঔষধ গুলো সিলেক্ট করেছি এগুলোর তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই যে কেউ কোন রকম দুশ্চিন্তা করা ছাড়াই ওষুধগুলো সেবন করতে পারেন। তারপরেও আমরা সাজেশন দিব সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

সাফি – ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ গুলোর মধ্যে হামদর্দ এর সাফি সিরাপ অন্যতম। আপনার দেহের বাড়তি ওজন কমিয়ে স্লিম রাখে। এটা বয়সের উপর নির্ভর করে খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

Fucus ves Q – শরীরের অতিরিক্ত মেদ চর্বি কমানোর জন্য Fucus ves Q বেশ জনপ্রিয় একটি হোমিও ঔষধ। এটি এক একজন এক এক ভাবে ব্যবহার করে থাকেন। তবে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় অল্প জলে ১০ ফোটা করে মিশিয়ে সেবন করুন।

Phytolacca Berry Q – শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর আরেকটি জনপ্রিয় ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিন্দু ঔষধ হচ্ছে Phytolacca Berry Q। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় খালি পেটে ৫ ফোটা করে Phytolacca Berry Q পানিতে মিশিয়ে সেবন করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টানা তিন মাস এই ওষুধটি সেবন করলে শরীরের অতিরিক্ত চলবে অনেকটা কমে যায়।

Phytolacca Berry 3X – উপরে আমরা যে ঔষধ গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি তার প্রত্যেকটি ছেলে তরল। কিন্তু Phytolacca Berry 3X হচ্ছে ট্যাবলেট জাতীয় ঔষধ। প্রতিদিন একটি করে ট্যাবলেট সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে সেবন করুন। ব্যবহারকারীদের রিভিউ অনুযায়ী এই ট্যাবলেট থেকে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে এটি সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ক্যালকেরিয়া কার্বনিকা – ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ গুলোর মধ্যে অনেকে এটিকে সেরা বলে থাকেন। এই ওষুধের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এটির কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। যারা লম্বা সময় নিয়ে কোনরকম সাইড ইফেক্ট ছাড়া চর্বি কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এটি ভালো একটি অপশন হতে পারে।

নেট্রাম মোর –  নেট্রাম মোর শুধুমাত্র শরীরের ওজন এই কমায় না বরং শরীরের জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরের দুর্বল ভাব দূর করে এবং শরীরকে চাঙ্গা করে। বিশেষ করে যাদের বয়স 50 বছরের বেশি তাদের জন্য এই ওষুধটি সেটা একটি পছন্দ হতে পারে। ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

লাইক ও পোডিয়াম – লাইক ও পোডিয়াম ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ গুলোর মধ্যে অন্যতম কার্যকরী একটি ঔষধ। বিশেষ করে যাদের উরু বা শরীরের নিম্ন অঞ্চলে অত্যাধিক চর্বি জমে তাদের জন্য এটি ভালো একটি অপশন হতে পারে।

আরো পড়ুন – পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

ওজন কমানোর বিদেশী ঔষধ

ওজন কমানোর জন্য বিখ্যাত কিছু বিদেশিও সহজে বর্তমানে বাংলাদেশে পাওয়া যায় তার কিছু নামসহ ওষুধের দাম বিস্তারিত দেওয়া হল-

  1. আয়ুরস্লিম- ৩৫০ টাকা
  2. সাফফ্রন – ৮৯৯ টাকা
  3. ট্রু স্লিম প্রো – ২৩৬৮ টাকা
  4. দেটক্সি স্লিম – ৮৯৯ টাকা

ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়

ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ এর পাশাপাশি ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট ট্রাই করা উচিত। কেননা শুধুমাত্র ঔষধের উপর নির্ভর করে ওজন কমানো প্রায় অসম্ভব। হোমিও ঔষধের পাশাপাশি অবশ্যই নিজের লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করতে হবে এবং ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে হবে। ওজন কমানোর ঘরোয়া কিছু পরীক্ষিত পদ্ধতিটি আলোচনা করা হলো

শসা – শসাতে ৯০ শতাংশ পানি এবং ১৩.২৫ শতাংশ ক্যালরি থাকে যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে খাবারের সাথে শসার তরকারি বা সালাদ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

লাউ জাতীয় সবজি – লাউ জাতীয় সবজিগুলোতে অত্যাধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার জাতীয় সবজি শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য নয় বরং হার্টেরও অনেক উপকার করে থাকে।

লেবু মধু ও গোলমরিচের মিশ্রন – সামান্য গরম পানিতে এক চামচ মধু সাথে পরিমাণ মতো লেবু ও গোলমরিচের মিশ্রণ নিয়মিত পান করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কেটে যায়। এছাড়া মধু ও গোলমরিচ চর্বি দূর করা ছাড়াও শরীরের নানারকম উপকার করে।

আদার রস – ও মধুর মিশ্রণ ওজন কমানোর জন্য বেশ কার্যকরী একটি পন্থা। দিনে দুই থেকে তিনবার মিশ্রণ পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমতে শুরু করবে। এই ধরনের মিশ্রণ পান করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বরং শরীরের জন্য উপকারী।

কোন খাবারে ওজন বাড়ে

কিছু কিছু খাবার আছে যা মানুষের শরীরের ওজন বৃদ্ধী করে। ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ সেবনের পাশাপাশি কোন খাবারের ফলে ওজন বাড়ে তা জানা প্রয়োজন।এতে করে খাবার  গ্রহনে কিছুটা সাবধান হওয়া যাবে।

  • ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার
  • বাদাম
  • খেজুর
  • লাল মাংশ
  • ফাস্ট ফুড
  • ভাজাপোড়া
  • তেল জাতীয় খাবার খাবার
  • মশলা জাতীয় খাবার
  • অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার

ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

উপরে আমরা যে কয়টি ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ সম্পর্কে আলোচনা করেছি সেগুলোর তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে বাজারে ওজন কমানোর ঔষধের নামে এমন কিছু মেডিসিন পাওয়া যায় যেগুলো সেবনের ফলে শরীরে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতী কে দেখা দেয়।

বিশেষ করে ওজন কমানোর ঔষধ সেবনের ফলে কিডনিতে সমস্যা দেখা যায়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যেতে পারে। তাই ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ

মন্তব্য

আজকে আমরা ওজন কমানোর হোমিও ঔষধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন প্রশ্ন বা মতামত জানার থাকলে এই পোস্টের কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply