সাইপ্রাস কাজের বেতন কত
বাংলাদেশের যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার বেশিরভাগই আসে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা থেকে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে মানুষ যাতায়াত করে। এসব দেশের মধ্যে অন্যতম দেশ হলো সাইপ্রাস। সাইপ্রাস কাজের বেতন কত সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।
আজকে আমরা সাইপ্রাস কাজের বেতন কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
সাইপ্রাস এর অবস্থান
সাইপ্রাস ভুগলের দিক দিয়ে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত হলেও দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য। সাইপ্রাস হলো ভূমধ্যসাগরের পূর্ব অববাহিকার একটি এবং পরে এটি ভূমধ্যসাগরের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ বলেই জানা যায়। ক্ষেত্র অঞ্চল অনুযায়ী এটি বিশ্বের ৮০ তম বৃহত্তম অঞ্চল।
আনাতুলিয়াতে উপদ্বীপের দক্ষিণ অবস্থিত হলেও এই দ্বীপটির সাইপ্রাস চাপের অন্তর্গত। সাইপ্রাসের আয়তন হলো ৯২৫১ বর্গ কিলোমিটার এবং এর জনসংখ্যা ১১ লাখ ৮৯০০০। সাইপ্রাসের আদিবসতি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ১০ সহশ্রব্ধ ১৯৭৫ সালে ব্রিটেন থেকে সাইপ্রাস স্বাধীনতা লাভ করে।
সাইপ্রাসের ৭০% অধিবাসী ক্রিস্টান ১৮% মুসলিম বাকিরা অন্যান্য ধর্মালম্বির। সাইপ্রাসের মুদ্রার নাম দক্ষিণ সাইপ্রাস ইউরো। উত্তর সাইপ্রাসের তুর্কিলিরা।
সাইপ্রাস ভিসার আবেদনের নিয়ম
নিচে সাইপ্রাস ভিসার আবেদন করার নিয়ম উল্লেখ করা হল-
- সাইপ্রাসের যাওয়ার পরিকল্পনাকারী ব্যক্তির প্রথমে একটি ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হবে
- শ্রমিকের পক্ষেই পারমিটের জন্য আবেদন করা নিয়োগ কর্তার দায়িত্ব নিয়োগকর্তাকে প্রমাণ করতে হবে যে সাইপ্রাসে এমন কোন যোগ্য চাকরিপ্রার্থী নেই যা পূরণ করতে পারে।
- তাদের শ্রমবিভাগ থেকে সুপারিশের একটি চিঠিও প্রয়োজন হবে।
- প্রয়োজনীয় চিঠি পাওয়ার পর নিয়োগ কর্তাকে সিভিল রেজিস্ট্রি এবং মাইগ্রেশন বিভাগে পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে।
- ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর কর্মীর ভিসার জন্য আবেদন করার করতে পারবে
- আর আবেদন করার জন্য বাংলাদেশের সাইপ্রাস দূতাবাস বা কনসুলেটে যেতে হবে
- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভিসা ইস্যু করার সাথে সাথে আবেদনকারী সাইপ্রাস ভ্রমণ করতে পারবেন
- এরপর কর্মচারীকে সাইপ্রাসে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে
- রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করার জন্য তাদের স্থানীয় পুলিশ বিভাগ সিভিল রেজিস্ট্রি এবং মাইগ্রেশন বিভাগের কেন্দ্রীয় অফিসে যেতে হবে।
- সেখানে আবেদনকারীদের একটি স্বাক্ষর এবং বায়োমেট্রিক ডাটা এবং প্রয়োজনীয় নথি প্রদান করতে হবে
সাইপ্রাস ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সাইপ্রাস ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনে কাগজপত্র কি কি প্রয়োজন হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- একটি বৈধ পাসপোর্ট
- স্নাতক সার্টিফিকেট
- লেবারদের জন্য মেট্রিক পাশের সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতা সার্টিফিকেট
- সাইপ্রাস ভাষা ট্রেনিং এর সার্টিফিকেট
- ইংরেজি ভাষা জানলেও উল্লেখ করতে হবে
- জব পাওয়ার কভার লেটার
- চাকরির প্রযুক্তিপত্র মূল প্রশংসা পত্র যা নিয়োগ কর্তা কর্তিক দেওয়া হয়
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- ভিসা ফি
- সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- আইডেন্টি সার্টিফিকেট অর্থাৎ জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট বা জাতীয় পরিচয় পত্র
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- ব্যাংক একাউন্টের কাগজপত্র
সাইপ্রাস কাজের বেতন কত
সাধারণত সাইপ্রাস কাজের বেতন কত সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। সাইপ্রাস কাজের বেতন কোম্পানি নির্বাহী পরিচালকের মাসিক ৩৫০০ ইউরো এবং বার্ষিক ৪১ হাজার ইউরো জা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা। মিড লেভেল ম্যানেজারের ৩৩ ইউরো এবং বার্ষিক চার চল্লিশ হাজার ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৫ লক্ষ টাকা সহ অন্যান্য পদের ১৮০০ ইউরো এবং বার্ষিক ২১ হাজার ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ২৪ লক্ষ টাকা।
তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় সাইপ্রাসের মাসিক সর্বনিম্ন বেতন হলো ৭00 ইউরো যা বাংলাদেশী টাকার হিসাবে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত দক্ষতা অনুসারে বেতন নির্ধারিত হয়।
সাইপ্রাস বিভিন্ন কাজের বেতন নির্ধারণ প্রক্রিয়া
সাধারণত যারা সাইপ্রাসের হোটেল অথবা রেস্টুরেন্ট সহ কৃষি কাজে নিয়োজিত থাকে তাদের বেতনে এভারেজ ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরোর মত হয়ে থাকে। যা প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মত এটা অবশ্যই সাইপ্রাস নির্দিষ্ট বেতন দেয় না। পরবর্তীতে কাজের দক্ষতা অনুসারে বেতন বাড়ে।
যদি নির্দিষ্ট কোন এজেন্সির মাধ্যমে কাজে নিয়োজিত হন তাহলে নির্ধারিত বেতন অনুযায়ী আপনাকে বেতন দেওয়া হবে। অর্থাৎ কাজের চুক্তি যেমন হবে বেতন তেমনি দেওয়া হবে। সাইপ্রাসের বেশিরভাগ কোম্পানিগুলোতে সচরাচর বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।
যেমন থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা অথবা যাতায়াতের জন্য গাড়ি ভাড়া সহ দেশে আসার জন্য বিমান ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ কোম্পানি বহন করে। বাংলাদেশ থেকে যদি প্রথমবার সাইপ্রাসে যান তাহলে সর্বনিম্ন বেতন দেয়া হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তবে আপনার অভিজ্ঞতা পারফরম্যান্স আপনার কোম্পানি এবং সার্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বেতন কমবেশি নির্ধারিত হয়।
সাইপ্রাসের টাকার মান
সাইপ্রাসের মুদ্রার নাম হল ইউরো। সাইপ্রাস ইউরোপের ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি দেশ তাই ইউরোপের মুদ্রা ইউরো রেট এবং সাইপ্রাসের মুদ্রার রেট একই রকম হয়ে থাকে। এ কারণে বাংলাদেশের কম বেশি অনেকেই জানেন সাইপ্রাসের মুদ্রা হচ্ছে সাইপ্রাস ইউরো। বর্তমানে সাইপ্রাস টাকার মান ১১৭ টাকা অর্থাৎ এক সাইপ্রাসের এক টাকা বাংলাদেশে ১১৭ টাকার সমান।
আন্তর্জাতিক মুদ্রার বাজার অন্যান্য দেশের মুদ্রা রেটের অনেক বেশি পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশী টাকার বিপরীতে ইউরো রেট তেমন একটা পরিবর্তন হয় না। প্রতিদিনই সামান্য কম বেশি উঠানামা করে তবে বর্তমানে সাইপ্রাসের এক টাকা বাংলাদেশের ১১৭ টাকায় রেট চলছে।
সাইপ্রাস কোন কাজের চাহিদা বেশি
সাইপ্রাস দেশে কোণ কাজের চাহিদা বেশি সে সম্পর্কে জানব। সাইপ্রাস অন্যান্য দেশগুলোর থেকে অনেক বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে থাকে এবং ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। তাই দেশটিতে টুরিস্টদের সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন কাজে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়।
যেমন- হোটেলে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাতটি ক্যাটাগরিতে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া নির্মাণ শ্রমিকেরও বেশ চাহিদা রয়েছে সাইপ্রাসে। এছাড়াও সাইপ্রাসের বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরিতে লোক নেওয়া হয়।
সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে
সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে বা সাইপ্রাস যেতে ভিসার কত টাকা প্রয়োজন হয় সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। এখন আমরা জানবো সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে। যদি আপনি কোন এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাস যেতে চান তাহলে একরকম খরচ হয়।
আবার ব্যক্তিগতভাবে যেতে চাইলে অন্য রকম খরচ হয়। তবে সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগবে সেটা সম্পূর্ণই আপনার এজেন্সির উপর নির্ভর করবে। যদি কোন বিশ্বস্ত এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাস যেতে পারেন তাহলে সাইপ্রাসের সর্বমোট আনুমানিক ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার মত লাগতে পারে।
এটা সাইপ্রাসাদের সর্বনিম্ন টাকা এমাউন্ট। যদি দালাল চক্রের হাতে পড়েন তবে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
সাইপ্রাস ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৩
সাইপ্রাস ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে হলে দুই ধরনের ভিসার মধ্যে যেকোনো একটি ভিসা নিতে হবে।
১। একটি হচ্ছে সিজনাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
২। আরেকটি হচ্ছে পার্মানেন্ট ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
সাইপ্রাস ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিতে হলে সে ক্ষেত্রে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদী ভিসা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ভিসার খরচ হয় দেড় লাখ টাকার মত। আর যদি সিজনাল ভিসার মাধ্যমে সাইপ্রাসে যেতে চান তাহলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। এক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে পুনরায় আবার রিনিউ করার ও সুযোগ থাকে।
তাছাড়া সেখানে যদি স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে কেউ কাজে নিয়োজিত হতে চায় বা যেতে চায় তাহলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না। সাইপ্রাসের কাজের জন্য যাচ্ছে বর্তমানে অনেকেই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সাইপ্রাসের কাজের জন্য যাচ্ছে। যেমন হোটেল রেস্টুরেন্ট ড্রাইভিং বার কৃষি কাজ বিভিন্ন ধরনের কোম্পানিতে বর্তমানে কাজ করছে।
সাইপ্রাস কাজের ভিসা কাদের দেওয়া হয়
বাংলাদেশ থেকে অথবা অন্য কোন দেশ থেকে যদি সাইপ্রাস কোম্পানি আপনাকে কাজের জন্য হায়ার করে তবে আপনি সাইপ্রাসে কাজের জন্য ভিসা পাবেন। তবে আপনি যদি ইউরোপেন ইউনিয়ন মেম্বার দেশগুলোর নাগরিক হন তাহলে সাইপ্রাস আপনার কোন ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হবে না।
সাইপ্রাস এ কাজ করা এবং ভ্রমণের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা ইউনিয়ন দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত সিটিজেনদের রয়েছে। এছাড়াও আইসল্যান্ড এই দেশগুলোর সিটিজেনদের কাছে ভিসার প্রয়োজন হয় না।
সাইপ্রাস কাজের ভিসার জন্য যোগ্যতা
অনেকেই সাইপ্রাসের কোম্পানিগুলো নিয়োগ এর জন্য যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চান। সাইপ্রাস কাজের ভিসার জন্য যোগ্যতা উল্লেখ করা হলো-
- সাইপ্রাসের কোম্পানিগুলোতে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে প্রতিবছর ৪২ হাজার ইউরোতে চাকরি করতে পারেন
- মিডলেভেল ম্যানেজার এবং কেরানী পদে ২১ হাজার ইউরোতে চাকরি পেতে পারেন
- যদি ইউরোপেন ইউনিয়নের সিটিজেনশিপ কর্মী না থাকে সেক্ষেত্রে আপনাকে সাপোর্ট করতে পারে
- সাইপ্রাসের বেশিরভাগ কাজের দক্ষতা ভাষা সঠিকভাবে জানলে প্রাধান্য দেয়া হয়
- এছাড়াও ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর কর্মীদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়
সাইপ্রাস ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মেয়াদ
সাইপ্রাসের কাজের ভিসার মেয়াদ মূলত চার বছরের হয়ে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন কৃষি কাজ অথবা লাইফ স্ট্রোক সেক্টরে ভিসার মেয়াদ ৬ বছর থাকে। তবে কাজের ভিসার মেয়াদ চার বছর হলেও পরবর্তীতে এই ভিসা রিভিউ করার সুযোগ থাকে। সাইপ্রাস কাজের বেতন সহ সাইপ্রাস সম্পর্কে অনেক তথ্য আজকে আমরা উল্লেখ করেছি।
সাইপ্রাস কাজের বেতন কত
আজকে আমরা সাইপ্রাস কাজের বেতন কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি সাইপ্রাস কাজের বেতন কত আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত এবং পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
