পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া
পিরিয়ড একজন সুস্থ নারী শারীরিক উপসর্গ। তবে অনেকেরই পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। অনেকেই তাই পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমানোর দোয়া এবং ঔষধ এবং পিরিয়ডে ব্যথা কমানো ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান। আজকে আমরা ব্যথা কমানোর দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
পিরিয়ড কি?
প্রতি চন্দ্র মাস পর পর হরমোনের প্রভাবে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জরায়ুর চক্রকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এবং রক্ত এবং জরায়ু মিশ্রিত অংশ দিয়ে নির্গত হয় সেটাকেই ঋতুচক্র বা পিরিয়ড বলা হয়। রক্তের সাথে পেটব্যথা মাথা ব্যথা বমি বমি ভাব মাথা ঘুরানো হতে পারে।
পিরিয়ডের ব্যথা হওয়ার কারণ
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া জানার আগে কি কি কারণে পিরিয়ডের ব্যথা হয়ে থাকে সেসব সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। নিচে পিরিয়ডের ব্যথা হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
জরায়ু সংকোচন- পিরিয়ডের ব্যথা হয় সাধারণত জরায়ুর সংকোচনের কারণে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঠিক আগে থেকেই এই জরায়ুর সংকোচন দেখা দেয়। ফলে তলপেটে ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি লক্ষণ। কারো কারো ক্ষেত্রে এই ব্যথা খুবই বেশি হতে পারে।
স্পষ্ট কারণ ছাড়া ব্যথা– প্রকাশ ও গ্লেন্ডি নামক হরমোনের কারণে সাধারণত জরায়ুর সংকোচনে কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। তবে কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াও এ সময় খুবই ব্যথা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও শরীরে বিভিন্ন রোগের কারণে পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হতে পারে।
অ্যান্ড্রমেট্রিওসিস- অ্যান্ড্রমেট্রিওসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যেখানে জরায়ুর কোষগুলো জরায়ুর বাইরে বেড়ে ওঠে। সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো কোমর এবং তলপেটে খুবই ব্যথা হয় যেটাকে পেলভিক পেন নামেও পরিচিত। পিরিয়ডের সময় ভারী রক্তক্ষরণ এবং এই সময়ে ৭ দিনের বেশি ও পিরিয়ড হতে লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়াও এই রোগ হলে দুই পিরিয়ডের মাঝখানে রক্তপাত পেটে ব্যথা গর্ভধারণের সমস্যাও হয়ে থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম- সন্তান ধারনে সক্ষম নারীদের প্রতি ১০ জনের একজন পি সি ও হরমোন জনিত ব্যধিতে আক্রান্ত হয়। সেক্ষেত্রে রোগীদের শরীরে এন্ড্রোজেনের উচ্চমাত্রা এবং অনিয়মিত পিরিয়ড হতে দেখা যায়। এর ফলে পিরিয়ডের সময় ভারী রক্ত ক্ষয় এবং মুখ এবং শরীর অতিরিক্ত চুল পেটে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি- আইইউ টি হল একটি ছোট জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যা জরায়ুতে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের আইইউডি বাজারে পাওয়া যায় এদের কোন কোনটিতে হরমোন থাকে আবার কোন কোনটি হরমোন মুক্ত থাকে। কিন্তু আইইউডি সম্পন্ন নিরাপদ হলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও ভারি রক্তপাত হতে পারে।
এডেনোমায়োসিস- এডোন নোমাইসিসের ফলে জরায়ু ফুলে যায়। এক্ষেত্রে সব সময় কোন উপসর্গ দেখা যায় না তবে এর কারণে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। এ সময় পিরিয়ডের সময় তলপেটে অনেক ব্যথা হয় যা ক্রমশ ও বাড়তে থাকে সেইসাথে ভিডিওটি সম্ভব এবং দীর্ঘায়িত হয়।
পিরিয়ডের ব্যাথার ধরন
সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা দুই ধরনের হয়ে থাকে। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া সম্পর্কে জানার পাশাপাশি পিরিয়ডের ব্যথার ধরন সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে পিরিয়ডের ব্যথার ধরন গুলো বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো-
প্রাইমারি ডিস মেমোরিয়া- সাধারণত কিশোরী এবং তরুণীদের এই ধরনের ব্যাথা দেখা যায় এতে তেমন কোন কারণ থাকে নাই ক্ষেত্রে ব্যথা সাধারণত পিরিয়ড শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে থেকেও শুরু হতে পারে অথবা দুই-একদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে তবে কোমর ব্যথা তলপেট কোন কোন ক্ষেত্রে উরুতে ব্যথা অনুভূত হতে দেখা যায় ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব কষ্ট বা পাতলা পায়খানা মাথাব্যথা যাতে সমস্যা দেখা দিতে পারে
সেকেন্ডারি ডিসমেমোরিয়া- এটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে এবং যার উৎপত্তি অন্য কোন রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। যেমন এন্ড্রো মেট্রিয়সিস পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ ফাইভরয়েড ইউটেরাস ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে পিরিয়ড শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে ব্যথা শুরু হয় এবং পিরিয়ডের সময় তীব্রতা অনেক বেশি থাকে।
কোন কোন ক্ষেত্রে পিরিয়ডের পরে এই ব্যথাটা কম বেশি থেকেই যায়।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু ঘরোয়া ভাবে পিরিয়ডের ব্যথা কমানো সম্ভব। নিচে পিরিয়ডে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
হট ওয়াটার ব্যাগ- পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম পানি শেক খুব বেশি কার্যকর হতে পারে। এটি প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক ধাপ। পেটে গরম পানি শেষ দিলে সাধারণত ব্যথা অনেক কমে যায় এবং আরাম লাগে। এমন কিছু খাবারও রয়েছে যেগুলো পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে তখন সেগুলো খাওয়া যেতে পারে।
কেন মাইলটি- এই চা পিরিয়ডের সময় বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসতে পারে। এই চায়ে রয়েছে অ্যান্টিনামী আন্টি বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। এই চা পান করলে সঙ্গে সঙ্গে দেহে লাইসেন্স নামক একটি উপাদান তৈরি করে যা স্নায়ুকে নির্দেশ করে। এতে যন্ত্রণা অনেক কমে যায়।
আদা চা- পিরিয়ডের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চা পান করলে অনেকটাই ব্যথা কমে যায়। আদা ব্যথা কমানোর পাশাপাশি বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
পানি পান করা- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে এ সময় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পিরিয়ডের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পানি হতে পারে অন্যতম উপায়। ডাক্তারের মতে সময় প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত এ সময় দেহে বাড়তি পানি খাওয়া প্রয়োজন।
চর্বি এড়িয়ে চলা- এ সময় চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। এসব খাবারের ক্ষতিকর উপাদান এবং লবণ থাকে যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়াতে সাহায্য করে। এ সময় বেশি করে কলা খেতে পারেন এ সময় কলা খুবই উপকার দেয়।
ক্যাফিন থেকে দূরে থাকা- চা কফিতে ব্যবহৃত ক্যাফিন থেকে দূরে থাকাটা বাঞ্ছনীয়। ক্যাফেইন রক্ত চলাচলকারী শিরা উপশিরা কে সংকুচিত করে দেয় বলে ডাক্তাররা জানান। এতে করে পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়তে পারে তাই এই সময় ক্যাফিন থেকে দূরে থাকতে হবে।
বিশ্রাম নেওয়া- পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন। এ সময় ঘুম মানসিক চাপে ব্যথা কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তারপরের সময় যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমানো প্রয়োজন।
গরম পানিতে গোসল করা- গরম পানিতে গোসল করলে স্বস্তি পাওয়া যায় এবং মিরানো ঠিক থাকে। তাই এ সময় হালকা গরম পানিতে প্রতিদিন গোসল করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং মানসিকভাবেও ফ্রেশ লাগবে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো কোন কোন খাবার পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নিচে সেসব খাবারের তালিকা দেয়া হলো-
- ডার্ক চকলেট
- আদা
- কলা
- ব্রকলি
- পালং শাক
- কমলা লেবু
- এক মুঠো বাদাম পেস্তা
- কাজু
- সূর্যমুখের বীজ
- আদা চা
- গ্রিন টি
- দারচিনি
- এলোভেরা রস
- মধু
- পেঁপে
- প্রচুর পরিমাণে পানি
পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা কমানোর ঔষধ
পিরিয়ডের ব্যথা ঘরোয়া ভাবে যত্ন নিলেই সেরে যায় তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে বা সহ্য না হলে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই ওষুধ সেবন করা যায়। ননস্টরয়েলার নন স্টেরয়ে ডাল এন্টি ইনফ্লেমেটরি ওষুধগুলো নিতে পারেন। যা প্রেসক্রিপশন ছাড়াও পাওয়া যায়। যেমন-
- ডাই ক্লোরোফেনাক
- আইবইউ প্রোগ্রাম
- বুটাপেন টুয়েন্টি
- নাপা এক্সটেন্ড
- রোলাক
- এলজিন ট্যাবলেট
- Neogest Tablet
- Traxy Tablet
- Hpr Is Tablet
পিরিয়ডের সময় কি কি কাজ করা উচিত নয়
এখন আমরা পিরিয়ডের সময় কোন কোন কাজ করা উচিত নয় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
- বেশিক্ষণ উপর হয়ে শুয়ে থাকা
- ভারী কাজ করা
- ভারী কোন জিনিস তোলা
- ভারী কোন ব্যায়াম করা
- পানি কম পান করা
- চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
- হাঁটাচলা কম করা
- গোসল না করা
- অতিরিক্ত জার্নি করা
পিরিয়ডের ব্যথা দূর করার দোয়া
অনেকেই পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। নিচে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো এই দোয়াটি পিরিয়ডসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
দোয়া- আউজুবিল্লাহি ওয়াক কুদ্রাতিহি মিন শারিমা আজিতু ওয়া উহা জিরো
অর্থ- হে আল্লাহ আল্লাহর নামে আমি আল্লাহর অসীম সম্মান এবং তার বিশাল ক্ষমতার উসিলায় আমার অনুভূত এ ব্যথার কষ্টকর অবস্থা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া
আজকে আমরা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ, মাসিক নিয়মিত হওয়ার ঔষধ
- পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয় – অনিয়মিত ঋতুস্রাব এর কারন ও প্রতিকার
- দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম