আমি চিকন হবো কিভাবে
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্য সচেতন। কেউই অতিরিক্ত মেদ বাড়াতে চায় না। তাই অনেকেই আমি চিকন হবো কিভাবে বা চিকন হবার ঘরোয়া পদ্ধতি কি এবং চিকন হওয়ার কোন ঔষধ আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে চান। আজকে আমরা আমি চিকন হবো কিভাবে অনেকের এই প্রশ্নের উত্তর এবং চিকন হবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।
আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
- আরো পড়ুনঃ খুব সহজে ওজন কমানোর উপায়
মোটা হওয়ার কারণ
চিকন হবো কিভাবে সে সম্পর্কে জানার আগে মোটা হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যায় সেগুলো এড়িয়ে চললে খুব সহজে চিকন হওয়ার সম্ভব। মোটা হওয়ার কারণগুলো হলো-
- অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল
- পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব
- সঠিক নিয়মে না খাওয়া
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের ঘাটতি হওয়া
- বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে
- বিভিন্ন ধরনের ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে
- তেল বা চর্বি জাতীয় জিনিস বেশি খেলে
- নিয়মিত ব্যায়াম না করলে
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে না হাটলে
- প্রেগনেন্সি এর কারণে
- থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে
- জন্মনিয়ন্ত্রক ট্যাবলেট সেবন করলে
- ভিটামিন ট্যাবলেট খেলে
আমি চিকন হবো কিভাবে
চিকন স্বাস্থের অধিকারী হওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে জেনে নিতে হবে আপনার মোটা হওয়ার কারণগুলো কি কি। সাধারণত আমাদের মেদ বা স্বাস্থ্য মোটা বা চিকন হওয়ার নির্ভর করে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস জীবন ধারণের অভ্যেস এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর।
মোটা হয়ে যাওয়ার এসব সমস্যা সমাধান করলে সহজেই চিকন হওয়া যায়। নিচে চিকন হবো কিভাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়া- সবজি খেলে ওজন কমে। হ্যাঁ খাবারের প্রতিদিন মাচ মাংসের চেয়ে যে সবজি খাবার তালিকায় বেশি রাখতে হবে। সবজির মধ্যে রয়েছে পুষ্টি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট এগুলো শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের ফ্যাট কমাতেও অনেক সাহায্য করে।
ছোট প্লেটে খাবার খাওয়া- বড় থালা বা প্লেটে খাবার খেলে সব সময় বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই সব সময় ছোট থালায় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। খাবার কম খেতে চামচ ব্যবহার করতে পারেন হাত দিয়ে গেলে খেলে অনেক সময় বেশি খাবার একবার আপনার মুখে দেন। তাহলে হাতের বিকল্প হিসেবে চামচ গ্রহণ করে খাবার খেয়ে খাওয়া যেতে পারে।
পরিমাণের চাইতে কম খাওয়া- আগে যেখানে তিনটি রুটি খেতেন সেখানে এখন একটি রুটি খান। যেখানে একথালা ভাত খেতেন সেখানে এক কাপ ভাত খাওয়ার অভ্যাস করুন। যার ফলে পেট সবজি আর ফল দিয়ে ভরান। এতে করে শরীর খুব তাড়াতাড়ি চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত হাঁটুন- শরীরের ওজন কমাতে চাইলে বা যারা চিকন হবো কিভাবে সে উপায় জানতে চান তারা প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে পারেন। প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটলে খুব সহজে চিকন হতে পারবে।
আপনার বিএমআর জেনে নিন- চিকন হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে আপনার বিএমআর অর্থাৎ বাসাল মেটাবলিজম রেডিও জেনে নিতে হবে। সহজ ভাষায় যেটাকে আমাদের ওজন উচ্চতা এবং দৈনিক কাজের হিসাব পরিমাপ করে বলে দেয় আমাদের শরীরের ক্যালরির চাহিদা কত হওয়া উচিত।
google এ সার্চ করলেই আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরির পরিমাণ দেখতে পারবেন। সে ক্যালোরির চাহিদার তুলনায় ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে খুব সহজে চিকন হতে পারবেন। চিকন হবো কিভাবে যারা জানতে চায় তাদের জন্য এই পদ্ধতি অন্যতম।
সঠিক সময়ে ব্রেকফাস্ট করা- অনেকেই সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করা বাদ দিয়ে দুপুরের খাবার খান। চিকন হওয়ার আশায় নিয়মিত খাবার মিস করেন। কিন্তু এটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকারক হয় এতে সাময়িকভাবে শরীর থেকে কিছুটা ওজন ঝরলেও পুনরায় ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে।
সকাল বেলার ব্রেকফাস্ট না করলে পেটে অতিরিক্ত খিদা থাকতে পারে যার ফলে দুপুরে অতিরিক্ত খাওয়া হতে পারে।
ওয়েট লস ডায়েট চার্ট তৈরি করা- চিকন হওয়ার জন্য অনেক ওয়েট লস্ট ডায়েট চার্ট রয়েছে। শরীরের গঠন অনুযায়ী যে কোন ধরনের ডায়েট ফলো করতে পারেন তা অবশ্যই একজন ডায়েটেশিয়ান এর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া ঘরে বসেও নিজের প্ল্যান অনুযায়ী কোন একটি ডায়েট প্ল্যান তৈরি করতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের ওজন কমানোর টাইম রয়েছে। যেমন- কিটো ডায়েট, ক্রাশ ডায়েট, জিএম ডায়েট, ইন্টারমিডিয়েট ফাস্টিং।
ব্যায়াম করা- চিকন হবো কিভাবে যারা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকেন। তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো প্রতিদিন ব্যায়াম করা। চিকন হওয়ার জন্য আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন পেতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। ব্যায়াম আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং শরীর এখন জমে থাকা ক্ষতিকর ফ্যাট দূর করে।
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর হয়ে যায়। দিনে অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ব্যায়াম করতে হবে। ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন যেমন যোগ ব্যায়াম কার্ডিও এরোবিক্স রেজিস্ট্যান্স জুম্বা।
কার্বোহাইড্রেট কম গ্রহণ করা- কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে মোটা করে। তাই খাদ্য তালিকায় যতটা সম্ভব কারগ্রাইডেটেড পরিমাণের কম রাখতে হবে এবং প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি রাখতে হবে। যেমন ভাত আলু রুটি এগুলোর পরিবর্তে মাছ এই মুরগির মাংস সব খাবার গ্রহণ করতে হবে।
গরুর মাংস খাসির মাংস বা রেড মিট জাতীয় মাংস যত যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। যারা চিকন হবো কিভাবে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তারা এই নিয়মটি ফলো করতে পারেন।
ফাস্টফুড বা প্রক্রিয়াকরণ খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা- মোটা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ফাস্টফুড। এসব খাবার খেতে ভালো লাগলো এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হয়ে থাকে। তাছাড়া চিকন হতে গেলে সব খাবার অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
ফাস্টফূড তৈরিতে বিভিন্ন ফ্যাট উপকরণ থাকে। তাই চিকন হবো কিভাবে যাদের মনে প্রশ্ন থাকে তারা অবশ্যই এসব খাবার এড়িয়ে চলবেন।
কোমল পানীয় এড়িয়ে চলা- বিভিন্ন ধরনের ড্রিকস বা কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে। এসব খাবার দীর্ঘদিন খেলে ওবিসিডি হৃদরোগ ডায়াবেটিসহ আরও বিভিন্ন ধরনের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ডায়েটিশিয়ানরা ওজন কমানোর জন্য যে জিনিসটি সবার আগে নিষেধ করেন তা হলো এসব কোমল পানিও পান করা থেকে বিরত থাকা।
পর্যন্ত পরিমাণ পানি পান করা- প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি বা দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্ষতিকর ফ্যাট এবং রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যায়। এতে করে আমাদের শরীর হাইড্রেটের থাকে এবং চর্বি না জমার ফলে শরীর চিকন হয়ে যায়।
পানি আমাদের মেটাবলিজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিবেলা খাবার আগে ১ গ্লাস পানি খেয়ে নিলে খাবারের চাহিদাও কমে আসে।
রাতে তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণ করা- অনেকেই রাতের খাবার দেরিতে গ্রহণ করেন কিন্তু চিকন হওয়ার জন্য রাতের খাবারটা সঠিক সময় শেষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাতের খাবার শেষ করার পরপরই আমাদের বেশিরভাগ মানুষ ঘুমাতে চলে যায় এর ফলে সে খাবারে পুরোটাই আমাদের শরীরে ফ্যাট জমা করে।
তাই রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া উচিত।
চিন্তা মুক্ত রাখা- নিজেকে অবশ্যই দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে হবে। চিকন হওয়ার জন্য নিজেকে যতটা চিন্তা মুক্ত রাখবেন ততই অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট শরীর থেকে কমে যাবে। কারণ অতিরিক্ত চিন্তার কারণ আমাদের পরিপাক ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। খাদ্য হজমের সমস্যা করতে পারে। ফলে খাবারগুলো শক্তিতে রূপান্তরিত না হয়ে ফ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
চিকন হবো কিভাবে বা অনেকে ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট সম্পর্কে জানতে চান। নিচে ওজন কমানোর একটি ডায়েট চার্ট দেওয়া হল-
সকাল আটটায়-
- সেদ্ধ ডিম একটি, সাদা অংশ বা অন্য ক্যালোরি একবাটি জাম্বুরা জুস করে বা এমনি খেতে পারেন। ৯৬ ক্যালোরি
- দুইটি রুটি- ২১০ ক্যালোরি
- ভেজিটেবল সুপ- ১৫০ ক্যালোরি
সকাল ১১ টা-
- এক কাপ গ্রিন টি চিনি ছাড়া (কোন ক্যালোরি নেই)
- একটি আপেল- ৮১ ক্যালরি
- একটি কমলা- ৮৬ ক্যালোরি
দুপুর ২ টায়-
- ভাত এক কাপ- ২১৬ ক্যালোরি বা দুইটি রুটি ২১০ ক্যালোরি
- এক বাটি মিক্সড ভেজিটেবল- ৮৫ ক্যালোরি
- এক কাপ ডাল- ২২০ ক্যালোরি বা এক টুকরা মাছ
বিকাল পাঁচটা-
- এক কাপ গ্রিন টি চিনি ছাড়া
- দুইটি ক্রিম ছাড়া বিস্কিট- ৩০ ক্যালোরি
সন্ধ্যা সাতটা-
- ডাবের পানি- ৪৬ ক্যালোরি অথবা ৮ থেকে ১০ টি পেস্তা বাদাম- ৭০ ক্যালোরি
রাত ৮ তা ৩০-
- ভাত এক কাপ- ২১৬ ক্যালোরি বা দুটি রুটি ২১০ ক্যালোরি
- এক কাপ সালাদ- ৫০ ক্যালোরি
- এক কাপ সবজি- ৮৫ ক্যালোরি বা আধা কাপ টক দই ৮৫ ক্যালোরি
ওজন কমানোর টিপস
উপরে আমরা চিকন হবো কিভাবে সেসব উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আমরা দ্রুত ওজন কমানোর টিপস গুলো কি কি সেগুলো জানবো।
- প্রতিদিন সকাল দুপুর এবং রাতের খাবারের পূর্বে দুই গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করা
- সকালে খালি পেটে এক টুকরা লেবু এবং হালকা গরম কুসুম গরম পানি পান করতে হবে
- রেগুলার সালাদ খাবারের সাথে খেতে পারেন
- সবজির লিস্টে ব্রকলি লেটুস পালংশাকে বা সবুজ সবজি রাখার চেষ্টা করতে পারেন
- রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত দুই ঘন্টা আগে খেতে হবে
- চর্বি জাতীয় ঔষধ কম খেতে হবে
- দ্রুত ওজন কমানোর চাইতে আস্তে আস্তে ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
ওজন কমানোর ঔষধ
চিকন হবো কিভাবে যারা এর উত্তর খুজতে থাকেন তারা চিকন হওয়ার ঔষধ ও সেবন করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওজন কমানোর ঔষধ পাওয়া গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে বাজারে ওজন কমানোর ঔষধ গুলোর তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো-
- পিউরেক্স সিরাপ
- সাফি সিরাপ
- ফাইটোলক্কা বেরি ট্যাবলেট
আমি চিকন হবো কিভাবে
আজকে আমরা আআমি চিকন হবো কিভাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আমি চিকন হবো কিভাবে, চিকন হওয়ার উপায় কি আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আমি চিকন হবো কিভাবে আর্টিকেল সম্পর্কে মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে।
আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ