ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ

ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ

ওজন কমাতে হারবাল ওষুধের জুড়ি নেই। তবে কোন হারবাল ঔষধ কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ওজন কমায় তা অনেকেই জানেনা। সাধারনত কোন ঔষধ ই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।

আজকে আমরা ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আর্টিকেল শেয়ার করব। বেশিরভাগ ঔষধ ই ই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হীন। তাই যে কেউ চাইলে টেনশন ছাড়াই ব্যবহার করতে পারেন।

ওজন বাড়ার কারণ

নানা কারণেই শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। তবে অনেকগুলো নির্দিষ্ট কারণ আছে যা অবহেলার কারণে আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে জায়। সেসব সম্পর্কে অবশ্যই জানার প্রয়োজন।

  • অতিরিক্ত মদ্যপান
  • বংশের জিনগত সমস্যা
  • অলস জীবন যাপন করা
  • অতিরিক্ত খাওয়া
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
  • মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগা
  • বেশি বেশি জাঙ্ক ফুড খাওয়া
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
  • অনিদ্রা
  • গর্ভধারণ করা
  • দীর্ঘদিন ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা
  • বসে বসে অতিরিক্ত কাজ করা
  • আশ জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করা

ওজন কমানোর বিভিন্ন হারবাল ওষুধের নাম

জিনসেং- একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান। চীন দেশে ওজন কমানোর ঔষধ হিসেবে এই জিনসেং অনেক জনপ্রিয়। বর্তমানে বাংলাদেশের জিন্সিং এর চা পাওয়া যায়। এই ঔষধ শরীরে জমে থাকা চর্বি গুলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং নতুন কোন চর্বি শরীরে জমতে দেয় না। সেবন করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো গরম পানির সাথে লেবু এবং মধু মিশিয়ে জিনসেং সাথে পান করা। এভাবে প্রতিদিন চায়ের মতো করে দুইবার পান করতে হবে।

সাফি- সাফি হামদার্দ কোম্পানির একটি আয়ুর্বেদ ঔষধ যা ব্যবহারে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব। এই সিরাপের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সাফির শরীরের ওজন কমানো ছড়াও খেল তৈলাক্ততা, ব্র্‌ কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।,

ক্যালকেরিয়া কার্বনিকা- ওজন কমার জন্য ক্যালকেরিয়া কার্বোনিকা এই হোমিওপ্যাথিক ওষুধটি ঔষধের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এটি প্রাকৃতিকভাবে বানানো হয়। এই ওষুধটি ব্যবহার করে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমানো সম্ভব। শরীরের অতিরিক্ত ওজন ব্যবহার কমানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

নেট্রাম মোর- এই হোমিওপ্যাথিক ওষুধটি একইভাবে সঠিক প্রতিকার। যা পাউন্ড শেড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ সময় বিষন্নতার জন্য শরীরের ওজন বেড়ে গেলে এ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়। এই ওষুধটি ব্যবহারে ওজন কমানোর জন্য অসাধারণ ফলাফল দেয়।

লাইক ও পোডিয়াম- এটি চর্বি কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে রোগীর শরীরের উরু বা নিম্ন অঞ্চলের অত্যাধিক পরিমাণ চর্বি হয়ে থাকলে এই হোমিও ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

ওজন কমানোর এলোপ্যাথি ঔষধ

  1. জিরো ফ্যাট 120mg ক্যাপসুল- এ ক্যাপসুল বাজারে বিভিন্ন মেডিসিনের দোকানে পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত ওজন হ্রাস বা ফিরে পাওয়া থেকে ইতিমধ্যে হারিয়ে যাওয়া ফ্যাট 120 mg ক্যাপসুল অনেক ভালো কাজ করে। তবে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। এটি সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা উচিত। এর দাম ৫০ টাকা।
  2. ওরলিস্টেড- বাজারে ওরলিস্টেড উপাদানে তৈরি ৬০ এমএল এবং ১২০ এমএলএ দুইটি ওষুধ পাওয়া যায়। যা চর্বি উৎপাদনে এবং শোষণে বাধা দেয়। এটি শরীরের চর্বি কমিয়ে ওজন কমাতে সক্ষম। চর্বি এবং রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। এই ঔষধ এর দাম ৫০ টাকা।
  3. এডিপোনিল- ৫০ টাকা
  4. ডায়েটিল-৭০ টাকা
  5. লোয়েট-৭০ টাকা
  6. অলিস্টাট-৫০ টাকা
  7. স্লিম ফাস্ট-৪৫ টাকা
  8. অরনিকাল-৫০ টাকা

আরো পড়ুন – শরীরের মেদ কমানোর ঔষধ ও ঘরোয়া টিপস

ওজন কমানোর বিদেশী ঔষধ

ওজন কমানোর জন্য বিখ্যাত কিছু বিদেশিও সহজে বর্তমানে বাংলাদেশে পাওয়া যায় তার কিছু নামসহ ওষুধের দাম বিস্তারিত দেওয়া হল-

  1. আয়ুরস্লিম- ৩৫০ টাকা
  2. সাফফ্রন – ৮৯৯ টাকা
  3. ট্রু স্লিম প্রো – ২৩৬৮ টাকা
  4. দেটক্সি স্লিম – ৮৯৯ টাকা

ওজন কমানোর ইনজেকশন

নতুন এই ঔষধ খিদা দমনে মানুষের শরীরে খুব কার্যকরী । আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর বিভিন্নভাবে ব্যবহার চালানো হয়েছে। সপ্তাহে একবার সেমাগ্লুটাইড নামে এই ওষুধ ইনজেকশন হিসেবে দেয়া হয়। এই ইঞ্জেকশন দেওয়ার ফলে মাসে গড়ে এক কেজি করে .১৫ মাসে ১৫ কেজি কমানো সম্ভব।

ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়

শসা- দেহের চর্বি কমাতে অনেক প্রসিদ্ধ এবং প্রিয় একটি ঘরোয়া টোটকা। এতে ৯০ শতাংশ পানি এবং ১৩.২৫ শতাংশ ক্যালোরি থাকে যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে অনেক সাহায্য করে। এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীর সুস্থ রাখে।

লাউ জাতীয় সবজি- সাধারণত ওজন কমানোর জন্য পানি জাতীয় ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। লাউ এ পুরোটাই ফাইবার এবং পানি দিয়ে ভরা। এতে সামান্য ফ্যাটও নেই। এটি অনেকক্ষণ পেটকে ভরে রাখে তাই তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগে না। লাউয়ের জুস করেও তরকারির পাশাপাশি খাওয়া যেতে পারে।

ভিনেগার- ভিনেগার বা সিরকা ওজন কমাতে দারুণ ভূমিকা পালন করে। লেবুর মত ভিনেগার ও রক্তকণিকা থাকা চর্বি দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভিনেগার দেহের চর্বির কোষগুলোকে সরিয়ে দিয়ে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সাথে ভিনেগার যোগ করলে সেটার কার্যকারিতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ ভিনেগার এবং একটা টেবিল চামচ লেবু জোগ করতে হবে।

গরম পানি- গরম পানি খাওয়ার নানা ধরনের উপকারিতা আছে। গরম পানির রক্ত থেকে চর্বিগুলোকে বের করে ফেলে যার ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাওয়ার তিরিশ মিনিট আগে এবং পরে নিয়মিত গরম পানি পান করা উচিত। খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে পানি পান করা যাবে না। তাই ওজন কমাতে ঠান্ডা পানিতে গরম পানি ব্যবহার করাই উচিত।

গ্রিন টি- বর্তমানে জনপ্রিয়তার ঊর্ধ্বে রয়েছে এই গ্রিন টি যা ওজন কমাতে অনেক পরিচিত। গ্রিন টিতে রয়েছে অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে জমে থাকা চর্বি গলিয়ে ফেলে। চিনি ছাড়া এই গ্রিন টি পান করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া জায়। খুব ভালো ফলাফলের জন্য দিনে তিন থেকে চার কাপ পান করতে হবে।

মধু এবং দারচিনি- মধু এবং দারচিনি কার্যক্ষমতা অনেক। মধু দেহে হজম ক্রিয়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় আর দারচিনি রক্তচাপ ক্মিয়ে রাখে। দেহে ওজন কমানোর হরমোনের রস বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ককে ওজন কমানোর মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে একটা দারচিনি নিয়ে চুলায় দিতে হবে ১৫ মিনিট ফুটন্ত পানিতে রেখে এর পর নামিয়ে ঠান্ডা করে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করা জায়।

লেবু মধু গোলমরিচের মিশ্রণ- ওজন কমাতে লেবু মধু গোলমরিচের কোন জুড়ি নেই। ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক চিকিৎসা এটি। গোলমরিচ দেহে নতুন চর্বি কর গঠনে বাধা প্রদান করে এবং রক্তকণিকায় থাকা চর্বি কমিয়ে ফেলে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক টেবিল চামচ পানি এক টেবিল চামচ গোলমরিচ ভালো করে মিশিয়ে পান করতে হবে।

আদার রস- আদার রস এবং মধুর মিশ্রণে ওজন কমানোর জন্য অনেক কার্যকরী। দিনে দুইবার এই মিশ্রণ গ্রহণ করলে ওজন দ্রুত কমতে সাহায্য করে। তিন টেবিল চামচ মধুর সাথে 2 টেবিল চামচ আদার রস হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করতে হবে।

কোন কোন খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে

ওজন কমার জন্য মূলত স্বাস্থ্যকর খাবার দেয় এটি যথেষ্ট। যথেষ্ট পরিমাণ খাবার খেলে এবং ডায়েট চার্ট ফলো করলে খুব সহজেই শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়। তাছাড়াও এমন অনেক খাবার আছে যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

  • লেবু
  • মধু
  • ড্রাই ফ্রুট
  • ফাইবার যুক্ত সবজি
  • লালা আটার রুটি
  • গ্রিন টি
  • শসা

কোন কোন খাবার ওজন বাড়ায়

যেসব খাবার শরীরে অতিরিক্ত ওজন বাড়ায় সেসব খাবার সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এতে করে শরীর যতই তো ওজন বাড়ার সময় সেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

  • ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার
  • আলু
  • ডিম
  • বাদাম
  • খেজুর
  • মিষ্টি
  • চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার
  • চর্বি জাতীয় খাবার
  • লাল মাংস
  • ফাস্টফুড
  • মসলা জাতীয় খাবার
  • ভাজাপোড়া
  • তেল জাতীয় খাবার

ওজন কমানোর ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ধরনের ঔষধ গ্রহণ করা উচিত নয়। বিশেষ করে কোন ডায়েট চার্ট ছাড়াই নিজে নিজে কোন ঔষধ গ্রহণ করলে তা ভয়াবহ ফল আর বয়ে আনতে পারে। ওজন কমানোর ঔষধের অবশ্যই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে-

  • এক্ষেত্রে ফ্যাট মলদ্বার দিয়ে বের হতে পারে
  • বমি পেতে পারে
  • খিদে কমে যায়
  • শরীর দুর্বল হয়ে যায়
  • ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন শরীরের শোষিত হয় না

ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ

ওজন কমাতে করণীয়

সাধারণত ওজন কমানোর জন্য দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম ফলো করলেই ওজন ধীরে ধীরে কমে যায়। ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ বা এলোপ্যাথি ওষুধের প্রয়োজন হয় না।

  • প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা
  • ওজন কমানোর বিভিন্ন ফলো করা
  • সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করা
  • একটিভ লাইফ স্টাইল
  • অতিরিক্ত না খাওয়া
  • সময় মত খাওয়া

মন্তব্য

আজকে আমরা ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ ও এর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি সবার অনেক কাজে লাগবে।ওজন কমানোর হারবাল ঔষধ সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুতই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply