সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
ফরজ এবং সুন্নতের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং নফল ইবাদতের জন্য বিভিন্ন নামাজ পড়া হয়ে থাকে। সেসব নামাজের মধ্যে সালাতুল হাজত অন্যতম। জীবনে যখন অন্ধকার দূর্দশা নেমে আসে তখন আল্লাহর সাহায্য তালাশের জন্য এই সালাতুল হাজত আদায় করা হয়। আজকে আমরা সালাতুল হাজত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার কারণ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
সালাতুল হাজত কি?
মানুষের প্রয়োজনে শেষ নেই। তেমনি আশার কোন নির্দিষ্ট পরিমাপ নেই। আশা নিরাশা দুঃখ সুখ দুশ্চিন্তা সব নিয়ে আমাদের এই জীবন। এরপরও মানুষ স্বপ্ন দেখেন উন্নত জীবনের খোঁজে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে। ইসলাম চেষ্টা তদবিরের বিরোধী নয় বরং ইসলাম সব পরিস্থিতিতে মানুষকে দিক নির্দেশনা প্রদান করে যা বিভিন্ন নামাজ এবং জিকিরের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
এই সালাতুল হাজত নামাজকে প্রয়োজনের মুহূর্তের নামাজ বলা হয়ে থাকে অর্থাৎ মানুষের বিশেষ কোন কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক মানসিকভাবে কোন দুশ্চিন্তা দেখা দিলে তখন এই সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করে থাকে।
সালাতুল হাজত পড়ার কারণ
আমাদের সকলের জীবনে বিপদ-আপদ রোগ বালা মুসিবতের হাত থেকে রক্ষা কর্তা হলেন একমাত্র আল্লাহ। সেজন্য বিপদে পড়লে বা কোন কিছুর প্রয়োজন বা ইচ্ছা পোষণ করতে চাইলে একমাত্র আল্লাহ তাআলার আশ্রয় নেয়া উচিত। আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চাওয়ার একটি মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। আর এই সালাতুল হাজত হলো ইচ্ছা পূরণের নামাজ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বান্দাকে নিজের মাধ্যমে সাহায্য কামনা নির্দেশ দিয়েছেন। এমর্মে আল্লাহ তা’আলা বলেন- “হে মুমিনগণ তোমরা ধৈর্য সহকারে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো নিশ্চয়ই আল্লাহতালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা ১৫৩)। অন্য এক হাদীসে আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু সালামের কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং আল্লাহতালা কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন।
আরো পড়ুন – কারিনা কাপুর বয়স, পরিবার, ধর্ম, আয় বিস্তারিত
সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়
সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় কুরআন ও হাদিস উল্লেখ নেই। কেননা হাদিস উল্লেখ আছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তার জীবনে যখনই বিভিন্ন বিপদ-আপদে আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজির হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করতেন তখন তিনি সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতেন।
তবে অনেকের মতানুসারে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে এশার নামাজের পর অথবা ঘুমানোর আগে কিংবা তাহাজ্জুতের পরের সময়। সালাতুল হাজত নামাজ নফল নামাজ। আর নফল নামাজ যে কোন সময় পড়া যেতে পারে শুধুমাত্র নিষীদ্ধ সময় ছাড়া।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত
অনেকে আছে যারা আরবি বলতে বা বুঝতে পারে না। সে ক্ষেত্রে নিজের ভাষায় নিয়ত করলে সুবিধা হয়। তবে আরবীতে নিয়ত করার মূল কারণ হচ্ছে আরবি হরফ বা অক্ষর পাঠ করলে প্রতি হরফে ১০টি করে নেকি আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে। সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত হল-
আরবি নিয়ত- ” নাওয়াই তুয়ান উসল্লি লিল্লাহি তাঁয়ালা রাকাতেই সালাতুল হাজত সালাতি নফলী রাসূলিল্লাহি তাঁয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শরীফা্তি আল্লাহু আকবার “
বাংলা নিয়ত-“আমি কেবলামুখী হয়ে সালাতুল হাজতের নফল দুই রাকাত নামাজের জন্য নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর”
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
যদিও সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ের অন্য কোন আলাদা নিয়ম নেই। স্বাভাবিক অন্যান্য নফল নামাজের মতই ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে সুরা ফাতেহা এবং অন্যান্য সূরা মিলিয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয় এবং নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার হামদ এবং সানা বা প্রশংসায় এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করে আপনার মনের কথা বা আপনার প্রয়োজনে কথা আল্লাহর নিকট দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন।
তবে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে একজন ব্যক্তির হালাল বা বৈধ ইচ্ছা হচ্ছে চারটি এবং এই চারটি বৈধ ইচ্ছাগুলো পূরণ হওয়ার জন্য প্রতিরাতে এশার নামাজের পর ঘুমানোর আগে দুই রাকাত করে সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করে নামাজ শেষে হালাল বা বৈধ ইচ্ছা পূরণের জন্য দোয়া করা।
সালাতুল হাজতের দোয়া
দোয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে হাদীস শরীফে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠের কথা বর্ণনা দেওয়া আছে- দোয়াটি হল-
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু হালিমুল কারিম সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন আসআলুকা মজিবাতি রাহমাতুল্লাহ রাহমাতিকা ও আচ্ছা ইমাম মাগফিরাতিক মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামতা মিন কুল্লি ইসমিন লা তাদাওলি জাম্বান ইল্লা গাফরতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হাজাতান হিয়া লাকা রিজান ইল্লা কাজেইটাহা ইয়া আরহামির রাহীমিন ” (তিরমিজি)
অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি ধৈর্যশীল এবং মহামহীন মহান। আরশের মালিক আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র সকল প্রশংসা সারা বিশ্বে প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার জন্য। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট তোমার রহমত লাভের উপায় সমূহ তোমার ক্ষমা লাভের কঠিন ওয়াদা প্রত্যেক ভালো কাজের ঐশ্বর্য এবং সকল খারাপ কাজ থেকে দূরে গিয়ে প্রত্যাশা চাচ্ছি। হে মহান অনুগ্রহ করে আমার প্রতিটি অপরাধ ক্ষমা করো আমার প্রতিটি দুশ্চিন্তা দূর করে দাও এবং যে প্রয়োজনে চাহিদা তোমার সন্তোষ লাভের কারণ হয় তা পরিপূর্ণ করে দাও।
সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত
বিভিন্ন হাদিস এবং বিভিন্ন বই পড়ে জানা যায় সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত অনেক। এক হাদীসে এসেছে হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা বর্ণনা করেন যে- নবী করীম সাল্লাল্লাহু সালামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন প্রয়োজন বা বিষয় চলে আসতো তখন তিনি সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার দরবারে সালাতুল হাজতে নামাজ আদায় করে আল্লাহর তায়ালার আশ্রয় বা সাহায্য কামনা করতেন।
সকল মুসলমান মুমিন ব্যক্তিদের শারীরিক মানুষের সামাজিক বা পারিবারিক যেকোনো ধরনের বিপদ দেখা দিলে ধৈর্যের সাথে আল্লাহতালার ইবাদত করা এবং আল্লাহ তা’আলা আশ্রয় চাওয়া উচিত। সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে সকল রকম বিপদ এবং বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করেন।
সালাতুল হাজত সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর
সালাতুল হাজাত কি?
উত্তর- সালাতুল হাজাত ইসলামের একটি বিশেষ প্রার্থনা যা প্রয়োজনের প্রার্থনা নামেও পরিচিত। বা ইচ্ছা পূরণে বা নির্দিষ্ট সমাধানের জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার মাধ্যম।
আমি কখন সালাতুল হাজার আদায় করব?
উত্তর- সালাতুল হাজত যে কোন সময় আদায় করা যেতে পারে। তবে বিশেষভাবে রাতের বেলায় আদায় করা উত্তম।
সালাতুল হাজতে কয় রাকাত নামাজ পড়তে হয়?
উত্তর- সালাতুল হাজত হলো দুই রাকাত নামাজ যা ইসলামের অন্যান্য নফল নামাজের মতই পড়তে হয়।
সালাতুল হাজকা আদায়ের কোন সুনির্দিষ্ট উপায় আছে?
উত্তর- হ্যাঁ সালাতুল হাজতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে যার মধ্যে নামাজের সময় কোরআন থেকে নির্দিষ্ট দোয়া এবং সূরা পাঠ করা হয়।
সালাতুল হাজত এককভাবে বা দলগতভাবে আদায় করা যাবে কি?
উত্তর- সালাতুল হাজ্তের ব্যক্তিগত এবং দলগত নামাজ উভয় ভাবে আদায় করা ইসলাম গ্রহণযোগ্য।
সালাতুল হাজত কতবার আদায় করতে হবে? এমন কোন নির্দিষ্ট সময় আছে কি?
উত্তর- সালাতুল হাজত কতবার আদায় করতে হয় এর নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। তবে কারো প্রয়োজন পূরনা নির্দিষ্ট সমাধানের জন্য যতবার প্রয়োজন ততবার পড়া যেতে পারে।
সালাতুল হাজত পড়লে কি আর মনের আশা পূরণ হয়?
উত্তর- সালাতুল হাজত এমন এক প্রকার ইবাদত যেখানে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। কিন্তু কারো ইচ্ছা পূরণ করা বা তাদের সমস্যা সমাধান করা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত একমাত্র আল্লাহর।
মন্তব্য
আজকে আমরা সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের আপডেট তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- প্রেমে পড়লে কি হয়? কিভাবে বুঝবেন প্রেমে পড়েছেন?
- ঘারোয়াভাবে হাত পা ফর্সা করার উপায়
- বেফাক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখার নিয়ম মাদরাসাওয়ারী