আমার প্রিয় শেখ রাসেল রচনা – শেখ রাসেলের জীবনী

শেখ রাসেল রচনা

বাঙালি জাতির মহান ব্যক্তিত্বের তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সর্নাক্ষরে লিখা রয়েছে। শেখ রাসেল ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট সন্তান। ১৯৭৫ সালের কালো রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সময় তার পরিবারের সকলকে হত্যা করা হয়। সে হত্যাকাণ্ডের শেখ রাসেল শত্রুদের হত্যার শিকার হয়।

বঙ্গবন্ধুর পরিবার এবং বঙ্গবন্ধুর রক্তে এই বাঙালি জাতির ইতিহাস লিখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারের হত্যার নির্মম এবং করুন পরিণতির কথা প্রায় আমরা সকলেই জানি। আজকে আমরা আমার প্রিয় শেখ রাসেল রচনা সমগ্র এবং শেখ রাসেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং শেখ রাসেলের জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – সকল গুরুত্বপূর্ন পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ২০২৩

ভূমিকা

শেখ রাসেল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের মধ্যে কনিষ্ঠপুত্র ছিল শেখ রাসেল। মাত্র ১১ বছর বয়সে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শেখ রাসেল। তার এই মৃত্যু বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের দাগ রয়ে গেছে। তবে তার কয়েক বছর জীবন ইতিহাস এতটাই প্রভাবিত করেছে যে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

শেখ রাসেলের জন্ম

শেখ রাসেলের জন্ম হয় ১৯৬৪ সালের ১৮ই অক্টোবর। দেশে তখন ভরা হেমন্ত এর সময়। ঘরে ঘরে তখন নতুন ফসল তোলার আনন্দে কৃষক নেচে উঠেছে। এমনই আনন্দের সময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল শেখ। শেখ রাসেলের জন্ম হয়েছিল বড় বোন শেখ হাসিনার ঘরে।

সমগ্র বাড়ি জুড়ে সেদিন আনন্দের জোয়ার বয়েছিল। জন্মের কিছুক্ষণ পর শেখ হাসিনার ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন। জন্মের সময় শেখ রাসেল চেহারায় ছিলেন খুবই সুস্বাস্থ্যবান এবং দেখতে খুবই সুন্দর ছিলেন।

নামকরণ

শেখ রাসেলের নামকরণের পেছনেও বিশেষ কাহিনি রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব শান্তির পক্ষে এবং যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এই সূত্র তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বাট ট্রান্ট রাসেলের একজন ভক্ত ছিলেন। রাসেল ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের বড় নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সমগ্র পৃথিবী যখন সম্ভবত একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় ছিল।

তখন যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম আদর্শ হয়ে ওঠেন এই বাট্রান্ড রাসেল। এমন মহান ব্যক্তিত্বের অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন শেখ রাসেল।

ছেলেবেলা

শেখ রাসেলের ছেলেবেলা ছিল আর দশটা বাচ্চার মতই। তবে জন্মের পর খুব বেশি তিনি বাবার সান্নিধ্য পাননি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে ঢাকায় থাকলেও পরে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। শোনা যায় বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়ে মাত্র দুই বছরের শিশুর রাসেল তার বড় বোনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন সে বঙ্গবন্ধুকে বাবা বলে ডাকতে পারে কিনা

সামান্য কিছু ছাড়া বাকি জীবনের বেশিরভাগ সময়টায় রাসেল কাটিয়েছেন তার মা এবং বোনদের সাথে। তার পড়াশোনার শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে। ১১ বছর বয়সে যখন তার মৃত্যু হয় তখন তিনি সেই স্কুলেরই চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।

আরো পড়ুন – অনলাইনে শেখ রাসেল কুইজ ২০২৩ বিস্তারিত

শেখ রাসেলের জীবনী

আমার প্রিয় শেখ রাসেল রচনা এর অন্যতম অংশ হল তার ছেলেবেলা। শেখ রাসেল খুবই অল্প বয়সে মারা যায়। তার জীবনের অধিকাংশ সময়ে শিশু বয়সে নিষ্পাপ আত্মভোলা কর্মকাণ্ডে পরিপূর্ণ ছিল। শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর ভাষায় টমি নামের একটি কুকুর ছিল যার সাথে শিশু রাসেল সব সময় খেলা করতো। একদিন খেলার সময় কুকুরটি জোরে ঢেকে উঠলে রাসেলের মনে হল টমি তাকে বকাবকি করছে।

শিশু রাসেল তখন তার বোন রেহানার কাছে এসে কেঁদে ফেলে। এছাড়াও শেখ রাসেলের মাছ ধরার ভীষণ শখ ছিল। মাছ ধরে আবার সেই মাছে পুকুরে সে ছেড়ে দিত। এমন কাজের মধ্যে এসে খুবই আনন্দ পেতো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের জন্ম হলে রাসেল জয়কে নিয়ে সারাদিন ছোটাছুটি করে খেলা করতো। অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃত ছিল শেখ রাসেলের শৈশব।

তার এই দুরন্তপনার সঙ্গে ছিল তার লাল রঙের একটি বাইসাইকেল। বাইসাইকেল চোড়ে রোজ স্কুলে যেত রাসেল। পড়াশোনা খেলাধুলা দূরন্তপনা এসব নিয়ে শেখ রাসেলের শৈশব আনন্দে কেটেছিল। শেখ রাসেলের মধ্যে খুব ছোটবেলাতেই বঙ্গবন্ধুর মতোই মানবিকতা সম্পন্ন মনোভাব হৃদয়ের উপস্থিত ছিল। সব মানুষসহ পশুপাখিদের জন্য ছিল তারা অবাধ ভালোবাসা।

শেখ রাসেলের হত্যাকান্ড

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট অভিশপ্ত রাতে একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা সেইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলে। সেই দিন সকালে বঙ্গবন্ধু এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত কর্মচারী মহিদুল ইসলামের কথা অনুযায়ী রাসেল দৌড়ে এসে তাকে ধরেন।

জানতে চান সেনারা তাকেও মারবে কিনা। এমন অবস্থায় একজন সেনা কর্মকর্তা মহিদুল কে মারলে রাসেল তাকে ছেড়ে দেয়। সে কাঁদতে থাকে তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। সে সময় একজন ঘাতক রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে।

স্মৃতিচিহ্ন

শেখ রাসেল ক্রিয়াচক্র, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ এবং শেখ রাসেল স্কেটিং স্টেডিয়াম রয়েছে শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখার জন্য। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাব। ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে খেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এই ক্লাবটি। শেখ হাসিনা ১৯৮৯ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারিতে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এটি সামাজিক সংস্কৃতি এবং ক্রিয়া সংগঠনের মাধ্যমে শিশু শেখ রাসেলের স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এই সংগঠনটির উদ্বোধন করেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

তার নামে রচিত গ্রন্থ

শেখ রাসেলের নামে কিছু রচিত গ্রন্থ রয়েছে যা বিভিন্ন লেখক তার স্মৃতিচারণের জন্য উৎসর্গ করেন। মশের আলী হীরা শেখ রাসেলের স্মৃতি স্মরণে “আমি মায়ের কাছে যাব- শেখ রাসেল” নামে বই প্রকাশিত করে। যা শেখা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে। মূল বইটি আর টাইপ করা হয় এবং সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৯। এছাড়াও শেখ হাসিনা ২০১৯  সালে “আমাদের ছোট রাসেল সোনা” নামে একটি বই বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত করে।

উপসংহার

শেখ রাসেল জাতির কাছে এক সাহসী যুবক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে। বাঙালি জাতি তার মধ্যে খুঁজে পায় রূপকথার মত নিজেদের ছেলেবেলা কে। তার মৃত্যুর কাহিনী বারবার আমাদেরকে দেশের সেই করুন ইতিহাসের দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়। মানুষ কতটা ক্ষমতা লোভী হলে মাত্র ১১ বছরের একটি ছোট্ট শিশুকে অবধি রেহাই দেয়নি। তার স্মরণে বাংলাদেশে গঠন করা হয়েছে শেখ রাসেল ক্রিয়া চক্র, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ, শেখ রাসেলের নাম অনুসারে ঢাকায় একটি স্কেটিং স্টেডিয়াম রয়েছে।

এভাবেই শেখ রাসেল বাঙালি জাতির স্মৃতিতে চির অমর হয়ে থাকবে এবং শেখ রাসেলের স্মৃতি বুকে নিয়েই বাংলাদেশ আরও অনেক দূর অগ্রসর হবে।

শেখ রাসেল রচনা

মন্তব্য

আজকে আমরা শেখ রাসেল রচনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এবং কোন টাইপের আর্টিকেল আপনাদের পছন্দ তা কমেন্টে লিখে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

নতুন নতুন আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply