বিড়ি খেলে কি হয়
বর্তমান সময়ে সিগারেট বা বিড়ি খায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। অনেকে অভ্যাসের বসে কিংবা অনেকে ফ্যাশনের জন্য বা স্মার্টনেস প্রকাশের জন্য সিগারেট খেয়ে থাকেন। কিন্তু এই সিগারেট বা বিড়ি এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অনেকেই জানে না।
আজকে আমরা বিড়ি খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়?
বিড়ি খেলে কি হয়
বিড়ি বা সিগারেট খেলে স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিচে বিড়ি খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোকে সেগুলো নিয়ে বর্ণনা করা হলো-
- নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ
- ক্লান্তি
- শক্তি কমে যাওয়া
- স্বাদ এবং গন্ধের ইন্দ্রিয় শক্তি কমে যাওয়া
- কাশি
- হৃদপিন্ডের সমস্যা
- রক্ত প্রভাবিত করে এমন সমস্যা
- হার্টের সমস্যা
- ক্যান্সার হতে পারে
- ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে
- মহিলাদের পিরিয়ডের সমস্যা
- পুরুষদের মধ্যে এরেক্টাইল সমস্যা দেখা দেয়
- শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
- গড় আয়ু কমে যায়
- মারাত্মক ক্যান্সার হয়
- মৃত্যু ঝুকি বৃদ্ধি পায়
- টাকার অপচয় হয়
- সমাজের ঘৃণিত ব্যক্তি হয়
- ব্রেনের সমস্যা দেখা দেয়
- ইসলাম ধর্মে সিগারেট খাওয়া হারাম
- পরিবারের নিকট অপছন্দনীয় হয়ে যায়
- অসৎ সঙ্গে মিশে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়
- অন্যকে হেনস্থা করতে হয়
- সিগারেট খাওয়ার নেশায় পড়লে টাকার অভাবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম করতে হয়
পরক্ষ ধূমপানের ঝুঁকি
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা গবেষনায় দেখা যায় ধুমপায়ীর ধূমপানের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করাকে সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং বলে। যদি কেউ ধূমপান করে তাহলে তার সব তার ফুসফুসে যায় না আশেপাশে থাকা মানুষেরও নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ করে এবং পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হন।
যার ফলে গলা অথবা ফুসফুসের ক্যান্সার রোগ সহ অন্যান্য কঠিন রোগ হয়।প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় তামাক গ্রহণের কারণে। এর মধ্যে ১২ লাখ মানুষ পরক্ষ ধূমপানের শিকার। অনেকে জীবনের শেষ সময় নানা রকম কঠিন অসুখে ভগেন। ধূমপায়ীদের আশেপাশে থাকার ফলে সাধারণত সব রোগের সৃষ্টি হয়।
শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলেই পরোক্ষ ধূমপানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুকিতে থাকে শিশুরা এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটা বেশ ক্ষতিকর। গর্ভের সন্তানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধূমপানের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া সিগারেটের পরোক্ষ ধোয়ায় প্রায় সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যার মধ্যে ৭০ উপাদান ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার যারা হচ্ছেন তাদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ধূমপান এড়াতে করণীয়
ধূমপান ত্যাগের জন্য অনেকেই চেষ্টা করেন। কিন্তু ধূমপান ছাড়া খুব একটা সহজ নয়। তাই অনেকেই ধূমপান ছেড়ে আবার কিছুদিন পর পুনরায় শুরু করেন। বিড়ির অপকারিতা জানলে বিড়ি খাওয়া বাদ দেওয়া সহজ হয়। বিড়ি বা ধুমপান ছাড়তে হলে-
- নিজেকে কিছুটা সময় দিন
- পছন্দের জায়গায় বেড়াতে যান
- নিজের পছন্দ মত খাবার খান
- একেবারে হালকা ফুরফুরে মেজাজ থাকার চেষ্টা করুন
- ধূমপানে কথা মনে আনার চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই
- এ সময় পরিবারের প্রিয় মানুষের কথা ভাবুন
- যোগাসন করুন
- প্রাণায়াম মেডিটেশন করা যায়
- গান শোনা বিভিন্ন ক্রিয়েটিভিটির অভ্যাস করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা
- নিয়মিত শরীর চর্চা করলে এসব বদ অভ্যাস ছাড়া খুবই সহজ
- আপনার কাছে বন্ধু পরিবারের সদসভা ভালোবাসা মানুষের সঙ্গে কথা বলুন
- ধূমপান ছাড়তে মনোবিদের শরণাপন্ন হতে পারেন
- পরিবারের সাহায্য নিতে পারেন
- সামান্য নিকোটিন ঔষধের সাহায্য নিতে পারেন
- একেবারে হঠাৎ করে বন্ধ না করে ধীরে ধীরে কমিয়ে বন্ধ করে নিতে হবে
বিড়ি খাওয়ার উপকারিতা
যারা বিড়ি খায় বা ধূমপান বা সিগারেট খায় বা ধূমপানে আসক্ত তারা বিড়ি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। বিড়ি খাওয়ার কোন স্বাস্থ্যকর উপকার থাকে না বরং বিড়ি খাওয়ার বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুকির কারণ হতে পারে। যেমন- ফুসফুসের রোগ ধূমপান জনিত ক্যান্সার ক্রনিক অবসট্রাক্টিভ ডিজিজ সংক্রমণ শাসন সমস্যা ।
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাছাড়া সিগারেট খাওয়ার ফলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিগারেট খাওয়ার মূলত কোন উপকারিতা নেই। তবে সাধারণত মানুষ মনে করে বিড়ি খাওয়ার উপকারিতা হলো-
- টেনশন কমে যায়
- স্মার্টনেস বৃদ্ধি পায়
- মানসিক শান্তি কমে যায়
- মনের কষ্ট দূর করে দেয়
- মনে শান্তি নিয়ে আসে
মহিলারা সিগারেট খেলে কি সমস্যা হয়
সিগারেট সবার জন্য ক্ষতিকর পুরুষ বা মহিলা সবার জন্য একই রকম ক্ষতির সমান। চিকিৎসকরা বলেন এটি স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। ধূমপান নারীর স্বাস্থ্যের উপর যেভাবে প্রভাব ফেলে তা নিচে উল্লেখ করা হল। মহিলাদের বিড়ির অপকারিতা হল-
- ভ্রুন এবং শিশুর উপর প্রভাব
- ব্রুনের ফুসফুস সঠিকভাবে বিকশিত হয় না
- গর্ভধারণের সমস্যা
- অনিয়মিত পিরিয়ড
- গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- ধূমপান এবং তামাক মহিলাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে
- প্রিমেন্সটুরাল সিনড্রোম দেখা দেয়
- বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দেয়
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়
- হৃদরোগের সমস্যা বাড়ায়
- ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়
ধূমপান করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হলো-
- শ্বাসকষ্ট
- কাশি
- ফুসফুসে সমস্যা
- হার্ট অ্যাটাক
- মৃত্যু
- ক্যান্সার
- মহিলাদের প্রজনন সমস্যা
- ভ্রনের সমস্যা
- গর্ভপাতের সমস্যা
ধূমপান একেবারে ছাড়ার সহজ উপায়
বিড়ি খেলে কিহয় তা আমরা কম বেশি সবাই জানি তবে বিড়ি বা সিগারেট ছাড়ার সহজ উপায় অনেকেই জানেনা। কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করলে ধূমপান থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বা ধূমপান থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো-
পরিকল্পনা করা- প্রথমত ধূমপান ত্যাগের জন্য একটি শক্ত নিয়ত এবং পরিকল্পনা থাকতে হবে। যে প্রতিজ্ঞা করে রাখতে হবে নির্দিষ্ট তারিখের পর থেকে আর কোনোভাবেই ধূমপান করা যাবে না এবং নিজেকে প্রথমত বোঝাতে হবে যে ধূমপানের জন্য এটাই শেষ তারিখ।
ধূমপায়ীদের এড়িয়ে চলা- যারা ধূমপান করেন সেসব বন্ধু ভাই বা আত্মীয় স্বজনদের এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা তাদের কে সিগারেট বা ধূমপান করতে দেখলে নিজেরও ধূমপানের অভ্যাস আবার পুনরায় হবে। তাই যারা ধূমপান করে সবাই তাদের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানা- ধূমপান ছাড়ার পর ধূমপান আপনার শরীরের দিকে ক্ষতি করে বা আপনার সন্তানদের জন্য কতটা ক্ষতিকারক সে সম্পর্কে চিন্তা করুন এবং একটি তালিকা তৈরি করুন। স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এর কারণ বা আপনার আশেপাশে মানুষের ক্ষতি বিভিন্ন হার্ট ডিজিজ অপচয় বিভিন্ন চিন্তা করে ধূমপান ছাড়তে পারবেন।
খাবারের পরিবর্তন- দুপুরে কিংবা রাত পর অনেকে ধূমপান করতে অভ্যস্ত। অনেকের কাছে মাংস জাতীয় খাবারের পর ধূমপান ভালো লাগে। অন্যদিকে ফল এর মত খাবারের উপর ধূমপান কিছুটা সাধারনত কম হয়। তাই ধূমপান ছেড়ে দিলে কিছুদিন মাংস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। খাওয়া শেষ করে এমন কক্ষে চলে যান যেখানে বিড়ি খাওয়া যায় না।
ইতিবাচক মনোভাব রাখা- হয়তো অনেক সময় ধূমপান ছাড়া পরিকল্পনা করেও ছাড়তে পারেনি। তবে সব সময় পূর্বের কথা না ভেবে এবারে শেষবারের এমন আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে এবং আগেরবার যে ভুলগুলো করছিল সেগুলো যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
চা কফি কম পান করুন- গবেষকরা বলেন এলকোহল মিশ্রিত পানিও কোমল পানীয় চা-ক ইত্যাদি প্রানের সময় অনেকেই সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস করেন। যা ধুম্পানের ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয় তাই এ ধরনের পানির প্রচুর পানের অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে। এবং ফলের রস বা পানি পান করতে হবে।
ব্যস্ততা বাড়ানো- নিজেকে ব্যস্ত রাখার সময়গুলোতে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা খুব বেশি থাকে। সে সময়গুলোতে নিজেকে কোন কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পারেন। হাটাহাটি করা ব্যায়াম করা লোকজনের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, ধুমপান ছেড়ে দেওয়ার কথা সবার সাথে শেয়ার করুন।
মুখ খালি না রাখা- মুখ খালি থাকলেই ধূমপানের আগ্রহ জাগবে। তাই ধূমপান বাদ দিতে চাইলে সব সময় মুখে লজেন্স চকলেট রাখতে হবে। পকেটে সিগারেট বা ম্যাচের বাক্স ফেলে দিয়ে চকলেট রাখার অভ্যেস করুন।
অধুমপায়ী বন্ধু বাড়ান- ধূমপান ত্যাগের ক্ষেত্রে আপনার আশেপাশের মানুষের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যতটা সম্ভব বন্ধুদের আড্ডা এড়িয়ে যারা ধূমপান করে না তাদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
সিগারেট খাওয়া কি হারাম?
শরীয়তে সিগারেট সম্পর্কে কি বলা আছে তা জানা দরকার। শরীয়তের বিধানের সকল কিছুর কোন স্পষ্টভাবে দলিল নেই। তবে স্পষ্ট দলিল না থাকলে যে বস্তুটি হালাল তা কিন্তু নয় শরীয়তের স্পষ্ট উক্তি সমূহ থেকে কোন এমন কিছু নীতি নির্ধারণ করেন যার দ্বারা বলা যায় কোনটা হালাল বা কোনটা হারাম।
অনেক ফকিহদের মধ্যে সিগারেট বিড়িকে হারাম বলা হয় কেননা এতে করে অনর্থক অর্থ অপচয় হয়। আর ইসলামে অপচয়কে হারাম বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইসলামে তা ও হারাম। বেশি পরিমাণে আসক্তি হতে পারে। যাতে করে নেশা মাদকতা জ্ঞান শূন্যতা ইসলামে হারাম।
সিগারেট খেলে মুখ থেকে গন্ধ হয় আর ইসলাম অপবিত্র জিনিসকে হারাম ঘোষণা করেছে। সে হিসেবে সিগারেট খাওয়া হারাম।
বিড়ি খেলে কি হয়
আজকে আমরা বিড়ি খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- 13 February ki day? ১৩ ফেব্রুয়ারি কি ডে
- গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম [১০০% কার্যকরী]
- জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম, আশারায়ে মুবাশশারা