বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি
বর্তমান সময়ে বাচ্চাদের প্রস্রাব এবং পায়খানার বিভিন্ন রোগ হতে লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগই বাচ্চাদের ডায়াপার পরানো হয়ে থাকে। এছাড়াও কৃমির সমস্যা খুব বেশি লক্ষ্য করা যায় তাই বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হতে দেখা যায়। অনেকেই বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হবার কারণ এবং বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত সার্চ করে থাকেন।
আজকে আমরা বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির ঔষধ
বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হবার কারণ
- বাচ্ছারা বারবার মলত্যাগ করে যার ফলে অনেক সময় বাচ্চাদের মলদ্বার ঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয় না যার ফলে চুলকানি হতে পারে
- অতিরিক্ত মলদ্বার পরিষ্কার করলে মলদারে চুলকানি তৈরি হতে পারে
- সাবান দিয়ে পরিষ্কার করলেও মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে
- খসখসে টয়লেট পেপার বা রঙ্গিন টয়লেট পেপার ব্যবহার করার ফলেও চুলকানি হতে পারে
- বাচ্চাদের ওয়েট টিস্যু ব্যবহার করার প্রবণতা বেশি বেশিরভাগ সময় ওয়েট টিস্যু ব্যবহারের ফলেও চুলকানি হতে পারে
- এছাড়াও কৃমি বাচ্চাদের মলদ্বার চুলকানির প্রধান কারণ
- ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমনেও চুলকানি হতে পারে
- বিভিন্ন এলার্জি বা চর্ম রোগের কারণেও মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে
- কফি চকলেট বিয়ার বাদাম টমেটো দুধ এবং দুধ খাবার মসলাদার খাবার থেকেও মলদ্বারে চুলকানি হয়
- এন্টিবায়োটিক ও মলদ্বারে চুলকানির কারণ হতে পারে
- ফিশার পাইলস ফিস্টুলা মুলতানি চুলকানি করে থাকে
- এছাড়াও আইবিএস ডায়রিয়া এবং মল ধরে রাখার অক্ষমতা জনিত কারণেও চুলকানি হয়
- মলদারে ক্যান্সারের কারণেও অনেক সময় চুলকানি হয়
আরো পড়ুন- বাচ্চা পেটে আসার দোয়া
বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হবার লক্ষণ
- মলদার লাল হয়ে থাকা
- বাচ্চা সারাক্ষণ কান্নাকাটি করা
- বাচ্চা ঠিকভাবে পায়খানা করতে না চাওয়া
- পায়খানা করার সময় কান্নাকাটি করে
- বারবার সেখানে হাত দেওয়া
- প্যান্ট বা ডায়াপার পরতে না চাওয়া
- ঘুম না হওয়া
পায়খানার রাস্তায় চুলকানি দূর করার ক্রিম
বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি দূর করার ক্রিম পাওয়া যায়। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত কোন ক্রিম বাচ্চাদের ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে সাধারণত সবচেয়ে ভালো বাচ্চাদের চুলকানি দূর করার ক্রিম হলো-
আফুন ১%, পেভিসন, এরিয়ান,বেটামেসন সি এল, ডি র্যাশ,সুডো ক্রিম।
বাচ্চাদের কৃমির ওষুধের নাম
কৃমির কারণেও বাচ্চাদের অনেক সময় পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হতে লক্ষ্য করা যায়।সাধারণত বাচ্চাদের বড়দের চাইতে খুব বেশি কৃমির প্রবনতা দেখা যায়। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে সাধারণত বাচ্চারা বাইরের খাবার বেশি খায় বলে, বা এছাড়াও ময়লা জিনিস বেশি ধরার ফলে এবং খালি পায়ে হাটার ফলেও কৃমি হয়।
বাজারে বাচ্চাদের বয়স অনুসারে বিভিন্ন ধরনের কৃমির ওষুধ পাওয়া যায়। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর বাচ্চাদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। বাজারে ওষুধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো-
আলবেন,আলবেন ডি এস, মেলফিন,সোলাস।
বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করনীয়
সাধারণত মলদার জায়গাটি খুবই নরম যার ফলে চুলকানি বা ইনফেকশন হলে বাচ্চারা খুবই অসুস্থ অনুভব করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মায়েরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় সে ক্ষেত্রে নিচে দেওয়া ব্যবস্থা গুলো অনেক আংশিক তাদের সাহায্যে আসবে। চলুন জেনে নেয়া যাক বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করণীয় কি-
জায়গাটি শুষ্ক রাখতে হবে- সব সময় খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চাদের মলদার যেন ভেজা না থাকে। কেননা ভিজে স্থান ছত্রাক সংক্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ।
প্যান্ট পালটানো- চুলকানি হলে দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চারবার শিশু প্যান্ট বদলে দিতে হবে এবং ঘুমানোর সময় ভালো নরম প্যান্ট পরাতে হবে।
পাউডার ব্যবহার করা- শিশুর পায়ুপথে শুষ্ক রাখার জন্য কোন ষ্টার্চ পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমে হাতে পাউডার ভালোভাবে করে ঝাকিয়ে নিয়ে শিশুর নিতম্বের পাশে ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে।
পায়খানার পর মলদার ভালোভাবে পরিষ্কার করুন- শিশুর প্রতিবার বাথরুম করার পর পায়ুপথ ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পরে একটি নরম শুষ্ক কাপড় অথবা টিস্যু পেপার দিয়ে স্থানটি মুছে দিতে হবে এবং একইভাবে শিশুকে পরিষ্কার করা শেখাতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা করা- শিশুকে কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যার ফলে শিশুর চুল্কানো অনেক কমে যাবে। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য হবার ফলে বাথরুম করার সময় চাপ প্রয়োগ করতে হয়। তাই শিশুকে চুলকানি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন – ৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়
বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
গরম পানির ও লবন- শিশুর সহ্য হয় এমন হালকা গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ একটি গামলা বা বালতিতে নিয়ে তাতে শিশুকে ১৫ মিনিট বসিয়ে রাখতে হবে। তাই পথে চুলকানি কারণ যাই হোক না কেন তা কমে যাবে এই পদ্ধতিতে।
বেকিং সোডা- হালকা গরম পানিতে তিন থেকে চার চামচ সোডা গুলে একটি গামলায় নিয়ে শিশুকে ১৫ থেকে ২0 মিনিট বসিয়ে রাখতে হবে। প্রতিদিন দুইবার করে এভাবে রাখলে শিশুর মলদ্বারের চুলকানি চলে যাবে।
ভায়োডিন ব্যবহার করা- বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে হালকা গরম পানিতে একটা চামচ ভায়োডিন ব্যবহার করে শিশুকে বসিয়ে রাখলে ধীরে ধীরে মলদ্বারে চুলকানি রোগ দূর হয়ে যাবে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন অথবা প্রতিদিনের একবার করে এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে বাচ্চাদের মলধারে চুলকানি দূর হয়ে যায়।
বাচ্চাদের ডায়পার র্যাশ দূর করার উপায়
- ৬/৮ ঘন্টা পরপর ডায়াপার চেঞ্জ করা
- ডায়াপার চেঞ্জ করার সময় ওয়েট টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করা
- এক টানা ডায়াপার না পরানো
- শিশুর ডায়াপার এরিয়া ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার
- র্যাশ উঠলে সে স্থানে বাতাস লাগতে দেওয়া
- টাইট ডায়াপার হলে কোমরের এলেস্টিক কেটে দিতে হবে
- র্যাশ বেশি হলে সিজবাথ করতে হবে
- দিনে ৩/৪ বার ডায়াপার র্যাশের ক্রিম ইউজ করতে হবে
- সঠিক মাপের ডায়াপার ইউজ করতে হবে
- ভালো ব্যান্ডের ডায়াপার ইউজ করা
- র্যাশ হলে কম কম ডায়াপার ইউজ করতে হবে
বাচ্চাদের কৃমি দূর করার উপায়
বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হবার অন্যতম কারন হল ক্রিমি। বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করনীয় কি তা জানার পাশাপাশি বাচ্চাদের কৃমি দূর করার উপায় জানা দরকার-
- সব সময় পরিষ্কার রাখা
- মলত্যাগের পর ২ হাত সাবান দিয়ে ধোয়া
- বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
- প্রতি ৩/৪ মাস পর পর কৃমির ঔষধ খাওয়ান
- করলা ভাজি খাওয়া
- মলদারে নারিকেল তেল দেলে কৃমি মরে যায়
- সব সময় জুতা পরানো
- ওয়াশরুমে খালি পায়ে না যাওয়া
বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি এড়াতে করণীয়
- বাচ্চাদের এলার্জি হয় এমন খাদ্য এড়িয়ে চলা
- সুতি কাপড় ঢেলেঢালা পোশাক পরা
- সমস্যা না হলে ডায়াপার এড়িয়ে চলা
- মলত্যাগ এবং অতিরিক্ত ঘামের পর মলদ্বার ভালোভাবে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখা
- বেশি ওয়েট টিস্যু বা খসখসে টয়লেট পেপার ব্যবহার না করা
- সুগন্ধি সাবান ব্যবহার না করা
- প্রতি তিন মাস অন্তর কৃমির ওষুধ খাওয়ানো
- মলত্যাগ করার পর বাচ্চাদের মলদার ভালোভাবে পরিষ্কার করে দেওয়া
- বাচ্চাদের নিয়মিত পায়খানা করানোর ট্রেনিং দেওয়া
- এবং মলদ্বারে পায়খানা আটকে না রাখার অভ্যাস এড়িয়ে চলা শেখানো
কখন চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে
- তীব্র চুলকানি হলে
- সব সময় চুলকানি হলে
- চুলকানির সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে গেলে
- সংক্রমণ বা ইনফেকশন ঘটলে
- মলদ্বারে চাকা থাকলে
- মলদ্বারে ঘা হয়ে গেলে
- বাচ্চা কান্নাকাটি করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি
আজকে আমরা বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হলে করনীয় কি কি বিষয় রয়েছে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি বাচ্চাদের পায়খানার রাস্তায় চুলকানি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন। পারবো জীবনে ঢুকানো লাগবে না।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির ঔষধ
- বাচ্চা পেটে আসার দোয়া
- ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির ঔষধ
- কাজী ফার্মস বাচ্চার বর্তমান দাম ২০২৩