গলা ব্যাথার ঔষধের নাম, গলা ব্যথার ঘরোয়া টোটকা

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম

সর্দি কাশি সহ হালকা ঠান্ডা লাগলে সবার আগে যে উপসর্গ দেখা যায় তা হল গলা ব্যথা। এছাড়াও মানুষের শরীরের বিভিন্ন রোগের কারণেও এই গলা ব্যথা হয়ে থাকে। গলা ব্যথার ওষুধের নাম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। আজকে আমরা গলা ব্যাথার কারণ গলা ব্যথা হলে করণীয় কি এবং গলা ব্যথার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – গলার ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ

গলা ব্যথা কি?

ইংরেজিতে গলা ব্যথাকে বলা হয় আর ইনজাইটিস। গলা ব্যাথার এই সমস্যার প্রধান কারণ হলো ঠান্ডা কাশি অথবা বিভিন্ন জীবাণু কারণে ব্যথা হয়। সাধারণত শীতকাল অথবা গরম কালে অনেকে বর্ষাকালে ওই ধরনের চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। চুলকানি পরবর্তীতে গলা ব্যথা এবং কাশির সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

  • গলা ব্যথার লক্ষণ
  • গলা ব্যথা হওয়ার পূর্বে গলায় চুলকানি হবে
  • খসখসে ভাব হবে
  • গলা ফুলে যাবে
  • কথা বলতে কষ্ট হবে
  • খাবার গিলতে বা ঢোক গিলতে কষ্ট হবে
  • আর শ্বাস নিতে গলা ব্যথা হবে
  • ঠান্ডার কারণে বাষ্পের কারণে গলা ব্যথা হলে লালা শুকিয়ে যাবে
  • অনেক সময় কাশির সাথে রক্ত পড়বে
  • গলা ভাঙ্গা
  • সর্দি
  • কাশি
  • জ্বর
  • গায়ে ব্যাথা মাথা ব্যথা
  • হাড়ের সংযোগে ব্যথা
  • থুতুতে রক্ত
  • দেহে পিঠ অথবা হাতে পায়ে ফুস্কড়ি দেখা দেয়।
  • কানে ব্যথা
  • নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট
  • বমি বমি ভাব
  • দুর্বলতা

গলা ব্যথার কারণ

সাধারণত বিভিন্ন কারণে গলা ব্যথা হয়। বেশিরভাগ সময় ঠান্ডা জনিত কারণে গলা ব্যথা হলেও সর্দি কাশি ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে গলা ব্যথা হতে লক্ষ্য করা যায়। নিচে গলা ব্যাথার কারণ গুলো উল্লেখ করা হলো-

ভাইরাস ইনফেকশন- গলা ব্যথার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ সৃষ্টি হয়। এ ভাইরাস গলায় প্রদাহ বা জ্বালার সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে ব্যথা এবং অস্বস্তি হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণ গুলোর মধ্যে আছি কাশি এবং কফ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের কারণে অনেক সময় গলা ব্যথা হতে পারে। জিনিস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গলা ব্যথা সৃষ্ট হয়। এ ভাইরাস দ্বারা গলা ব্যথা হলে খুবই বেশি ব্যথা হয় যার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা লাগতে পারে।

এলার্জি- পরাগ বা পোষা প্রাণীর খুশকির মত জিনিসগুলোতে এলার্জি প্রতিক্রিয়া গলাতে জ্বালা করতে পারে এবং ব্যথা হতে পারে। গলা ব্যথার সাথে অন্যান্য উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন চুলকানি নাক দিয়ে পানি পড়া আছে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এলার্জি থেকে গলা ব্যথা হওয়া থেকে সর্ব রক্ষা করা সর্বোত্তম উপায় হলো যতটুকু সম্ভব এলার্জিজনিত জিনিস এড়িয়ে চলা।

ঠান্ডা বাতাস- অনেক সময় শীতের সময় ঠান্ডা বাতাসে শ্বাস নেওয়ার ফলেও গলায় ব্যথা করে থাকে। এর কারণে গলার ভিতরে ঘা হতে পারে এটি সাধারণত শীতকালের সময় বেশি দেখা দেয়। একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা বাতাসে আদ্রতা যোগ করতে এবং গলা ব্যথা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

ধূমপান- ধূমপান বা সেকেন্ড হ্যান্ড ধূমপানের সংস্পর্শে অনেক সময় গলা ব্যথা করতে পারে। ধূমপান গলার ক্যান্সার হওয়ার যোগ্য কেউ বাড়িয়ে দেয় তাই ধূমপান ত্যাগ করে ধূমপানের সংস্পর্শে না আসা গলা ব্যাথা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

এসিড রিফ্লাক্স- এসিড রিফ্লাক্স বাজিইআরডি পাকস্থলী এসিড আবার গলাতে সংক্রমন প্রবাহিত করতে পারে। যার ফলে গলায় জ্বালা এবং ব্যথা হতে পারে। এরকম গলা ব্যথা হলে আরো বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায় যেমন অম্বল, বুকে ব্যথা এবং গিলতে অসুবিধা হওয়া। এর কারণে পেটে এসিড কমানোর ওষুধ দেয়া হতে পারে।

গলায় আঘাত- গলাতে আঘাত যেমন ধারালো কিছু গিলে ফেলা অথবা গলায় আঘাত করার কারণে গলায় ব্যথা হতে পারে। এভাবে গলায় ব্যথা পেলে কাশির সঙ্গে রক্ত পড়াতে পারে। এরকম গলার অবস্থা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ক্যান্সার- যদিও এটি বিরল কিন্তু গলার ক্যান্সারের কারনে গলা ব্যথা হতে পারে। এর অন্যান্য লক্ষণ গুলোর মধ্যে কর্কশতার কথা বলার অসুবিধা এবং ঘাড়ে একটি চাকা অনুভব হতে পারে। বর্তমান সময় গলার ক্যান্সার অনেক হতে লক্ষ্য করা যায়।

আরো পড়ুন – ইড়া পিঙ্গলা নাড়ির ব্যায়াম করার সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা (ছবি সহ বিস্তারিত)

গলা ব্যথার ঔষধের নাম

বাজারে মেডিসিনের দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের গলা ব্যথার ওষুধ পাওয়া যায়। তবে সাধারণত কি কারনে গলা ব্যথা হচ্ছে তা জানা প্রয়োজন। অনেক সময় গলা ব্যথার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর প্রয়োজন হয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শিত কোন ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। তবে বাজারে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি গলা ব্যথার ওষুধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

E Fix 100Mg- সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে গলা ব্যথা হলে এটি গলা ব্যথার এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। ফুসফুসের সংক্রমণ এবং গান গলা টনসিল ইত্যাদি সংক্রমণের জন্য এ ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

শোয়ালেক্স- অভিজ্ঞদের মধ্যে গলা ব্যাথার ঔষধের নামের মধ্যে শোয়ালেক্স অন্যতম। নেপচুন ফার্মা সিটিক্যালস লিমিটেড থেকে এই ওষুধটি তৈরি করা হয় যা সেবন করলে গলা ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।

রোলাক- গলা ব্যথা জন্য আরেকটি কার্যকরী ট্যাবলেট হলো রোলাক। সাধারণত রোলাক হল পেইন কিলার যা শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা হলে সেবন করা যায়। তবে ওষুধটি গলা ব্যথার কমাতে সাহায্য করে।

Napa extend- আপনার গলা ব্যথার পাশাপাশি যদি একদিন জ্বর সর্দি কাশি থেকে থাকে তাহলে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হল নাপা এক্সটেন্ড। এই ওষুধটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম তাই এটি নির্দ্বিধায় সেবন করা যেতে পারে।

Moxacil 500- গলা ব্যথার ওষুধ গুলোর মধ্যে এই ওষুধটি অন্যতম। এর ফলে অনেক অনেক পুরনো গলা ব্যাথা, দ্রুত গলা ব্যথা সেরে যায় এবং বারবার গলা ব্যথা হওয়া থেকে মুক্তি লাভ করতে সাহায্য করে।

গলা ব্যথার এন্টিবায়োটিক ঔষধ

অনেক সময় গলা ব্যথা তীব্র হলে বা কয়েকদিন পর পর গলা ব্যথা অথবা গলা ব্যথা হল দীর্ঘ সময় থাকলে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হয়। এন্টিবায়োটিক ছাড়া অনেক সময় গলা ব্যাথা কমানো সম্ভব না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কোন টেস্ট ছাড়া কি কারনে গলা ব্যথা হয় সে কারণ জানা ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

তবুও গলা ব্যথার জন্য সাধারণত এন্টিবায়োটিক হিসেবে জিম্যাক্স ৫০০ ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ওষুধটি যেহেতু এন্টিবায়োটিক তাই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে তাই সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আরো পড়ুন – সর্দি কাশি গলা ব্যথার ওষুধ ছাড়া কিভাবে ভাল করবেন

গলা ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

  • ভাইরাস ইনফেকশনের কারণে গলা ব্যথা হলে তার সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। গলা ব্যথার দ্রুত উপসম করার জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো হল-
  • গরম পানিতে এক থেকে দুই চামচ মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে
  • এছাড়াও গরম পানির সাথে এক চামচ লবণ মিশিয়ে ঘর করা কুলি করতে হবে
  • গরম পানি গরম জাম মধু ও গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে বারবার পান করতে হবে
  • গলা ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে
  • শুষ্ক গলা ভালো করতে মেন্থলের বাষ্প নিতে হবে
  • হলুদ দুধ পান করা। গলা ব্যথা কমাতে হলুদ দুধের জুড়ি নেই। গরম এক গ্লাস দুধের সাথে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে দিনে ্দু থেকে তিনবার পান করলে গলা ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
  • মেথি অনেক উপকার করে। গলা ব্যথা ছাড়াতেও মেথি বীজ হতে  দুর্দান্ত প্রতিকার
  •  নিয়মিত রসুন খেলে সর্দি কাশীষহ গলার বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রান্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
  • গোল মরিচ শুধু রান্নায় নয় শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার জন্য খাওয়া হয়ে থাকে। বিশেষ করে সর্দি কাশি এবং গলা ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য গোলমরিচ খাওয়া যেতে পারে। গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মত পান করলে দ্রুত গলা ব্যথায় কমে যায়।

অতিরিক্ত গলায় ব্যথা হলে করণীয়

  • গরম পানি এবং মধু পান করা
  • লেবু চা পান করা
  • সবসময় হাইড্রেট থাকা
  • গলার ব্যথা কমতে দিনে কয়েকবার লবণ এবং গরম জলের মিশ্রণ দিয়ে গরগরা করা সহ কুলি করা
  • গলার ব্যথা কমানোর জন্য আইবপ্রফেন বা এসিটামিনের মত ওভার অ্যাকাউন্টটার ব্যথা উপশমের চেষ্টা করা
  • হিউমিডি ফায়ার ব্যবহার করা যা গলাকে আদ্র করতে সাহায্য করে
  • গরম পানিতে গোসল করা
  • লালা উৎপাদন করে এমন ক্যান্ডি খাওয়া
  • ধূমপান সেকেন্ড হ্যান্ড ধূমপান এবং শক্তিশালী রাসায়নিক এর মত ক্ষতিকর জিনিস এড়িয়ে চলা
  • গলা ব্যথা হলে কন্ঠকে বিশ্রাম দেওয়া অর্থাৎ কথা কম বলা
  • খাওয়ার সময় ব্যথা কমাতে উষ্ণ সুপ এবং নরম ফলের মতো খাবারগুলো খাওয়া
  • আপেল সিডার ভিনেগার বা মার্শমেলো রুটের মতো প্রাকৃতিক প্রতিকারের চেষ্টা করা

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

  • গলা ব্যথার দিন দিন বেড়ে গেলে
  • গলা ব্যথার সাথে বমি হলে
  • মাথা ব্যাথা প্রবণতা বাড়লে
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি বা চুলকানি দেখা দলে
  • গলার ভেতরে অস্বস্তি চুলকানি অনুভব করলে
  • গলায় টনসেলের ব্যথা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে
  • গলা ব্যাথার সাথে জ্বর থাকলে
  • গলা ব্যথা হলে কাশির সাথে রক্ত পড়লে
  • কয়েকদিন পর পর গলা ব্যথা হলে
  • গলা ফুলে গেলে
  • কথা বলতে না পারলে
  • গলা ভেঙ্গে গলার স্বরের পরিবর্তন হলে
  • ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে
  • জ্বরের মাথায় 101 ফারেনহাইটের উপরে হলে
  • মুখ হাঁ করতে এবং খাওয়া-দাওয়া করতে বেশি অসুবিধা হলে
  • গলা ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি সময় হলে
  • কাশির সঙ্গে রক্ত গেল অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম

আজকে আমরা গলা ব্যথার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি গলা ব্যাথার ঔষধের নাম আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্ক কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েব সাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply