৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়

৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়

গরমের মৌসুমে শিশুদের হঠাৎ ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া বা সর্দি জমে থাকার মত রোগ দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঔষধের পাশাপাশি নবজাতকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। আজকে আমরা ৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় ও এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়

লবণ পানির মিশ্রণ- এক থেকে তিন মাসের বাচ্চাদের সর্দি লাগলে নাক বন্ধ হয়ে আসে তাই শিশুর সর্দি লাগলে অবশ্যই হালকা গরম পানির সাথে এক চিমটি লবন মিশিয়ে ড্রপে করে দুই নাকে দুই ফোটা করে প্রতিদিন দুইবার দিতে হবে।

নাক পরিষ্কার রাখা- বিভিন্ন ঔষধের দোকানে নবজাতক বাচ্চার কান এবং নাক পরিষ্কার জন্য চিকন কটনবাড পাওয়া যায় সেসব দিয়ে সর্দির সময়ে বাচ্চার নাক অবশ্যই সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে করে বাচ্চার নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হবে না এবং সর্দি জমে থাকবে না।

কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো- সাধারণত জন্মের পর এক বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের হালকা গরম পানিতে সব সময় গোসল করানো উচিত। এতে করে শিশুর শরীরে তাপমাত্রা বজায় থাকে এবং শিশুর সর্দি বুকে চেপে যায় না।

প্রতিদিন গোসল করানো- নবজাতকের সর্দি হলে অনেকেই সর্দি বেড়ে যাবার ভয়ে প্রতিদিন গোসল করায় না যার ফলে নাকের সর্দি বুকে চেপে যায় এবং সর্দি বেড়ে যায় তাই নবজাতকের সর্দি কমাতে অবশ্যই প্রতিদিন শিশুকে গোসল করানো উচিত

সরিষার তেল মালিশ- সরিষার তেল এবং রসুন হালকা গরম করে নবজাতকের শরীরে বুকে হাতে পায়ের তালুতে মাসাজ করতে হবে দিনে এক থেকে দুইবার এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই মাসাজ করলে বাচ্চার ঘুমের সমস্যা হয় না। মেসেজ করার সময় নাকের পাশে হালকা একটু দিয়ে রাখলে ভালো হয়।

১-৬ মাস বয়সী বাচ্চাদের সর্দির সিরাপ

বাজারে বিভিন্ন ধরনের সর্দির সিরাপ পাওয়া যায়। তবে নবজাতকদের কোন ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ঘরোয়া উপায়ে সর্দি না কমলে পেডিয়ামিন,টোফেন সিরাপটি হতে পারে নবজাতকের জন্য খুবই উপকার। বাচ্চার বয়স অনুযায়ি ঔষধ দিতে হয়।

নবজাতকের সর্দির কারণ

সাধারণত নবজাতকদের সর্দি হওয়ার অনেকগুলো সাধারণ কারণ থাকে। নরমাল সর্দি কাশি সাধারণত সহজেই সেরে যায় কিন্তু অন্য কোন কারণে সর্দি হলে তা সহজে সারতে চায় না। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চা প্রচন্ড গরম আবহাওয়া থাকে জন্মের পর পৃথিবীর পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সময় লাগে
  • ফ্ল জনিত সর্দি কাশি হতে পারে
  • ঋতু পরিবর্তনের সময়
  • গরমে অতিরিক্ত ঘাম হলে
  • শীতের সময় অতিরিক্ত গরম জামা কাপড় পরালে
  • অথবা দুগ্ধ পান শিশুদের জন্য বাচ্চার মায়ের সর্দি লাগার ফলেও সর্দি হতে পারে
  • ধুলাবালির ফলে
  • এলার্জির ফলেও সর্দি কাশি হতে পারে

শিশুদের সর্দি সারানোর ঘরোয়া উপায়

ঘরোয়া উপায়ে শিশুর সর্দি কাশির সারানো খুবই সহজ পদ্ধতি। সাধারণ কিছু জিনিস দিয়ে এই টোটকা গুলো ঘরে বানানো যে কারো পক্ষে সম্ভব।

আদা ও মধুর সিরাপ- সর্দি হলেই বাচ্চাদের আদা এবং মধুর সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে ছয় মাসের বেশি বয়সে বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে এই সিরাপ খাওয়ানো যায়। মনে রাখতে হবে এক বছরে্র কম বয়সী বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো যায় না।

মধু এবং লেবুর রস- মধু এবং লেবুর রস সর্দির জন্য অনেক বেশি কার্যকর একটি উপাদান। লেবুর ভিটামিন সি সর্দি সারাতে অনেক কার্যকরী। এক টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে। দিনে দুইবার এই টোটকা খাওয়ানোর ফলে খুব সহজেই সর্দি সেরে যায়।

মৌরি ও মধুর সিরাপ- সর্দির ফলে অনেক সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয় মৌরি ব্যবহার করলে শ্বসন প্রণালীকে সুস্থ রাখা যায় মোরঈ এবং মধুর সিরাপ বাচ্চাদের সর্দি জন্য অনেক উপকারী।

লেবু চা- বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে এটি অনেক উপকারী চা। চায়ের লিকার হালকা করে দিয়ে সাথে লেবু এবং মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের তিন থেকে চার চামচ প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার খাওয়ালে খুব সহজেই বাচ্চাদের সর্দি ভালো হয়ে যায়।

গরম পানি ও মধু- সর্দির সময়কাল ছাড়াও হালকা গরম পানি মধু দিয়ে প্রতিদিন সকালে বাচ্চাদের খাওয়ালে সর্দি সহ বিভিন্ন রোগের থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। এছাড়া সর্দি হলে ঠান্ডা পানি খাওয়ার পরিবর্তে গরম পানি খেলে সর্দি খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়।

শিশুদের সর্দির ঔষধের নাম

বাজারে বাচ্চাদের সর্দির বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। তবে যে কোন সজীবন করা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাচ্চাদের সর্দির কিছু উল্লেখযোগ্য ঔষুধের নাম হল-

  • prosma
  • pediamine
  • Tofen
  • perasolin

সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয়

বাচ্চাদের সর্দি হবে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। হাতে করে রাতে ঘুমানোর সময় ঘরঘর শব্দ হয়। এবং বাচ্চা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না। তাই সর্দির সময় বাচ্চাদের নাক পরিষ্কার রাখা জরুরী। না্ক পরিস্কার রাখার ড্রপ হলো-

  • Norsol drop
  • লবণ পানির ড্রপ (ড্রপারে করে হাল্কা গরম পানির সাথে লবন মিশিয়ে দেওয়া)

বাচ্চাদের সর্দি হলে কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত

বিভিন্ন খাবারে মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ সারানো যায়। কেননা খাবারের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা বাচ্চাদের ওষুধের পরিবর্তে খুব দ্রুত কাজ করে। বাচ্চাদের সর্দি হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত সেগুলো হল-

  • গরম সুপ
  • চা
  • লেবুর শরবত বা লেবুর রস
  • মধু
  • গরম পানি
  • সরিষার তৈরি খাবার
  • ভিটামিন সি যুক্ত ফল
  • বার্লি জল
  • আপেলের সস বা আচার
  • ভাতের মাড়
  • মিষ্টি আলু
  • গাজর
  • ডালিমের রস
  •  সাবুদানা
  • ব্রকলি
  • টমেটো স্যুপ
  • হলদি দুধ
  • বেশি বেশি সবজি
  • গরম দুধ

সর্দি হলে বাচ্চাদের যেসব খাবার খাওয়ানো উচিত নয়

সামান্য অসাবধান হলেই শিশুরা সর্দি কাশি তে আক্রান্ত হয়ে যায়। শীতকাল অথবা গরম কাল হলে তো কথাই নেই। তবে শিশুরা সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলে কোন সব খাবার খাওয়ানো উচিত নয় তা সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।

  • দুগ্ধজাত খাবার
  • আঙ্গুর
  • কলা
  • ডাব
  • লাউ
  • শসা
  • কুমড়া
  • দই
  • আইসক্রিম
  • ফ্রিজের ঠান্ডা জিনিস

সর্দির কারণে বাচ্চা খেতে না চাইলে করণীয়

বাচ্চারা অসুস্থ হলে বদমেজাজি বা খিটখিটে হয়ে যায়। এ সময় খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করতে পারে তাই সর্দি কাশি হলে বাচ্চাকে খাওয়ানোর কিছু টিপস জানা থাকলে অসুস্থ শিশুকে খুব সহজে খাওয়ানো সম্ভব।

  • ছয় মাস বা তার কম বয়সী বাচ্চাদের সর্দি হলে শুধুমাত্র বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ দেওয়া উচিত
  • বাড়তি খাবার খাওয়া শিশুদের দিনে তিনবারের বেশি খাবারের পরিবর্তে ঘন ঘন অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ানো যেতে পারে
  • সহজে হজম হয় এমন সব খাবার দিতে হবে
  • ডাক্তার বাচ্চার জন্য ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন খাওয়ার পরামর্শ দিলে তার অনুসরণ করা উচিত
  • বাচ্চার খাওয়া সম্পর্কে উদাসীন হলে সে যা খেতে চায় সেটাই দিতে হবে
  • জোর করে কোন খাবার খাওয়ানো যাবে না

ঠান্ডা জনিত সমস্যা প্রতিরোধের উপায়

যেকোনো রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। শিশুর সর্দি কাশি হলে এর থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কষ্টকর। তবে কিছু জিনিস মাথায় রাখলে অবশ্যই শিশুর সর্দি কাশি প্রতিরোধ করা যায়।

  • ঠান্ডা আবহাওয়ায় শিশুর শরীর চাদর বা গরম জামা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে
  • হাঁপানির কারণে যদি বারবার সর্দি কাশি হয় তবে হাঁপানির জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে
  • সংক্রমণ প্রতিরোধের টিকা দিতে হবে
  • শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
  • নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে
  • শিশুর ব্যবহারের জিনিসপত্র এবং রুম সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে
  • গরমে শিশুদের ঘামতে দেওয়া যাবে না
  • প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করাতে হবে

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত

সাধারণত শিশুদের সর্দি কাশি একটি সাধারণ রোগ। এটি খুব সহজেই ঘরে নিরাময় করা সম্ভব। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুদের সর্দি কাশি খুব সহজেই সারে না ধৈর্য সহকারে চিকিৎসা করলে খুব সহজেই এ থেকে মুক্তি মেলে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

  • দীর্ঘদিন সর্দি থাকলে
  • সর্দির সাথে শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিলে
  • বাচ্চা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে
  • সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে আসলে
  • সর্দির সাথে রক্ত বের হলে
  • সর্দির সাথে অতিরিক্ত জ্বর থাকলে
  • চোখ লাল হয়ে থাকলে
  • খাওয়া বন্ধ করে দিলে
  • সর্দির কারণে অতিরিক্ত ওজন কমে
  • গেলে খুব ঘন ঘন সর্দি দেখা দিলে

৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয়

মন্তব্য

আজকে আমরা ৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় ও এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি এটি সবার অনেক উপকারে আসবে। ৩ মাসের শিশুর সর্দি হলে করণীয় কি তার সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply