চীনে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার নিয়ম
বর্তমানে চীন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় দেশ। অর্থ সঞ্চয় করে বিদেশে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করার জন্য চীন হতে পারে একটি ভালো জায়গা। চীনে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার নিয়ম সম্পর্কে অনেক স্টুডেন্টই জানতে চায়। তবে সঠিক তথ্য না জানার কারণে অনেকেই এ বিষয়ে চিন্তিত হয়। আজকে আমরা চীনে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ
চীনে পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ
চীনে এতদিন কোন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে গেলে রেস্টুরেন্ট বার কিংবা অন্য কোথাও কাজ করতে পারত না। কারণ রেস্ট্রিকশন ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে তার কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এখন শর্তসাপেক্ষে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে বিশ ঘন্টা কাজ করতে পারবে এতে করে অর্থ উপার্জন তৈরি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
যদি কেউ রেস্টুরেন্টে কাজ করে তাহলে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশী মুদ্রায় 5000 টাকা উপার্জন করতে পারে অর্থাৎ মাসে বিশ হাজার টাকা। এছাড়াও চীনে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক চীনা ভাষার কোর্স করতে হয়। এতে চীনা ভাষায় যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার দক্ষতা তৈরি হয় ফলে চীনের কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। চীনের বিভিন্ন ধরনের স্টুডেন্টদের চাকরি উল্লেখ করা হলো-
শিক্ষকতা
চীনে অবস্থানরত বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী যারা ইংরেজিতে ভাল দক্ষতা অর্জন করেছে তারা সেখানে শিক্ষকতা করতে পারে। যারা ইংরেজি ভালো তাদেরকে ইংরেজিতে টিচিং করার ভালো সুযোগ রয়েছে। চাইলে অনলাইনে ইংরেজি শেখানো যায় আবার অফলাইনে ইংরেজি শেখানো যায়। বিভিন্ন স্কুল ইংরেজি শেখাতে সপ্তাহে কয়েক ঘন্টা বিভিন্ন স্কুলে ইংরেজি শেখানো যায়। সেখান থেকে ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
প্রতি ক্লাসে তারা ২০০ থেকে ৩০০ আরএমবি অর্থাৎ প্রায় চার হাজার টাকা করে দিবে। সপ্তাহে ১০ ঘন্টা কাজ করলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক সচ্ছল হওয়া সম্ভব।
কনটেন্ট রাইটি
ছাত্রাবস্থায় চীনে টাকা আয় এর জন্য কনটেন্ট রাইটিং একটি ভালো উপায়। যদি কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে ধারণা থাকে তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম লেখালেখির মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা সম্ভব। কন্টেন্ট রাইটিং এর জন্য অনেক জায়গা আছে যেখানে সপ্তাহে কিছু ঘন্টা করে লিখে আয় করা যায় এর জন্য প্রায় বাংলাদেশি ৬০০০ টাকা দিয়ে থাকে। তবে কনটেন্ট লিখতে হবে ইংরেজিতে এজন্য ইংরেজিতে খুব ভালো দক্ষতা থাকতে হবে।
ফটোগ্রাফি
চীনে ফটোগ্রাফি খুব একটি জনপ্রিয় এবং ক্রিয়েটিভ কাজ। যদি ভালো ছবি তোলার স্কিল থাকে এটাকে অর্থ উপার্জনের উপায় বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যারা ফটোগ্রাফির ছবি পোট্রেইট করতে চায় তাদেরকে পোর্টেট ছবি করে দিলে এজন্য তারা ৮০০ আর এমবি এর মত অর্থ দেয় যা বাংলাদেশে নয় হাজার টাকার চেয়ে কিছুটা বেশি। এছাড়াও দিন তারিখ ঠিক করেও ফটোশুট করে অর্থ উপার্জন করা যায়।
এবং ফটোগ্রাফার হিসেবে ভালো হলে নিউজ এজেন্সি ও ম্যাগাজিন এদের কাছে বিভিন্ন ছবি বিক্রি করে আয় করা যায়। চীনে ফটোগ্রাফি একটি বড় মার্কেটপ্লেস আছে চাইলে অনলাইনে ও ছবি তুলে বিক্রি করা যায়। এজন্য প্রতি ফটোতে পঞ্চাশ আর এমবি বা ৬০০ টাকার মতো দিয়ে থাকে।
অনুবাদক
চীনে অনেক উচ্চ শিক্ষার জন্য গেলে ইংরেজি এবং চাইনিজ দুইটি ভাষায় ভালো দক্ষতা অর্জন করে এক্ষেত্রে তারা দোভাষীদের মত কাজ করতে পারে। চাইনিজ ভাষা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে চাইনিজ ভাষায় রূপান্তর করে বুঝাতে হবে। ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই ট্রান্সলেশন এর কাজ করে ভালো একটি উপার্জন করা যায়।
তাছাড়া বিভিন্ন দর্শনার্থীদের বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে তথ্য বলে দিয়ে তাদের থেকে টাকা উপার্জন করতে করা যায়।
ভয়েস ওভার
ভয়েস ওভার হল কোন একটা স্ক্রিপ দেয়া হবে বিভিন্ন বইয়ের হতে পারে বা শর্ট ফিল্ম এর জন্য অথবা বিভিন্ন পণ্যের অ্যাডভার্টাইজিং এর জন্য সেই স্ক্রিপ্ট সুন্দর করে পড়তে হয়। কোথায় থামতে হয় কোথায় জোরে কথা বললে সুন্দর হয় সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রেখে পড়তে হবে। এইখানে প্রতি স্ক্রিপ্ট টার জন্য প্রায় ১০০ আর এমবি প্রদান করা হয়। এভাবে ভয়েস ওভার পার্ট টাইম হিসেবে কাজ করে চীনে ছাত্র অবস্থায় টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অফিস
এই ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অফিসে পার্ট টাইম জব করা যায়। এ কাজটি খুবই প্রচলিত একটি কাজ। এখানে নতুন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করা যায়। পুরাতন শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা সমাধান করা যায়। এখানে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে যেমন- ফোন কলে কোন স্টুডেন্ট কে বিভিন্ন আপডেট সম্পর্কে জানানো, শিক্ষার্থীদের জন্য কনটেন্ট লেখা, তাদের জন্য বিভিন্ন নোটিশ বা তাদেরকে এ সম্পর্কে অবগত করা।
তবে এই কাজের জন্য তেমন একটা টাকা দেয়া হয় না। প্রতি মাসে ১৫০০ আর এমবি দেয়া হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে ইউনিভার্সিটির উপর।
রেস্টুরেন্ট বা বারে চাকরি
পূর্বে চীনে ছাত্রদের রেস্টুরেন্ট বা বারে কোন ধরনের কাজ করা নিষিদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা কিছুটা শিথিল হয়েছে। তাই স্টুডেন্টরা এখন রেস্টুরেন্ট বা বা ড়ে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার মতো কাজ করতে পারবে। এতে নিজের থাকা খাওয়া বা পড়ালেখার খরচ এখন ছাত্ররা নিজেই উপার্জন করতে পারে।
আরো পড়ুন – চীনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ
চীনে পড়ালেখা করার পর চাকরি
চীনে পড়ালেখার মান ভালো এবং বাস্তবমুখী। শিক্ষার্থীরা চীনের কোন যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাল দক্ষতা নিয়ে বের হওয়ার পর বড় অংশের বড় বড় বিভিন্ন কোম্পানি চাকরির অফার দিয়ে দেয়। পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। তবে বহু চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করে। লেখাপড়া শেষ করে এসব কোম্পানিগুলোতে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
চীনে বড় বড় কোম্পানিগুলোর নানা রকম টেকনিক্যাল এবং নন টেকনিক্যাল কর্মকর্তার প্রয়োজন হয়। সেসব কোম্পানিতে বিদেশিরা খুব সহজেই চাকরি করতে পারেন।
চাকরির যোগ্যতা
চীনে যেকোনো চাকরি করার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো চীনা ভাষা এবং ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। এবং চীনে স্থায়ী বাসিন্দাদের সাথে পরিচিত হলে যে কোন চাকরি পেতে খুব সুবিধা হয়। কেননা অপরিচিত হলে যে কোন জায়গায় চাকরি পেতে প্রথমে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
পরামর্শ
চীনে বিদেশীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইন রয়েছে। তাই যেকোনো কাজে যোগদানের পূর্বে সেসব আইন সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। কেননা চীনের ল খুবই স্ট্রিট হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যে কোন ভুল করলে দেশ থেকে সরাসরি নিজস্ব দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং চীনের ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে বহিষ্কারও করা হইয়। তাই যে কোন কাজে যোগদান করার পূর্বে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
মন্তব্য
আজকে আমরা চীনে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি চীনের যেসব বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। চীনে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুতই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
এবং আর্টিকেলটি ভালো লাগলে চীনে বসবাস করা বাংলাদেশি বন্ধুদের সাথে তাদের সুবিধার্থে শেয়ার করতে পারেন।
আরো পড়ুন – চীনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা