অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম ও খরচ ২০২৩

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম

এত পূর্বে পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করার জন্য দালালের পেছনে ঘুরতে হতো এবং পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে পুরাতন মিটার পরিবর্তন করতে অথবা সম্পূর্ণ নতুন লাইনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ মিটার খুব সহজেই পাওয়া যায়। আজকে আমরা দেখব কিভাবে অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম – এলটিএ (আবাসিক) আবেদন করতে হয়।

সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন না করলে আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই স্কিপ না করে পুরো আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম বিস্তারিত

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম নিচে ধাপে ধাপে বর্ননা করা হলো। সবগুলো ধাপ সঠিকভাবে অনুসরন করলে খুব সহজেই নতুন কানেকশন পেয়ে যাবেন। কিন্তু কোন তথ্য দিতে ভুল করলে পরবর্তীতে পরিবর্তন করা বেশ ঝামেলার কাজ। তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন।

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম

ধাপ ১ – প্রথমেই http://www.rebpbs.com/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন এবং আবেদন অপশনে ক্লিক করুন। সরাসরি আবেদনের পেইজে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন। লিংকে প্রবেশ করার পর উপরের ছবির মত একটি ফরম ওপেন হবে।

ধাপ ২ – এই পর্যায়ে আপনাকে ধাপে ধাপে তথ্যগুলো দিতে হবে। আমরা নিচে প্রতিটি তথ্য কিভাবে দিবেন সেটি সংক্ষেপে বর্ননা করার চেষ্টা করছি।

সমতির নাম – এখানে আপনি মূলত যে পল্লী বিদ্যুত সমিতির আওতায় সেটি সিলেক্ট করতে হবে। উদাহরন স্বরুপ আমি কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি – ১ সিলেক্ট করছি।

জোনাল অফিস – আপনার বাড়ি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোন জোনে পড়েছে সেটি সিলেক্ট করতে হবে। আমার ক্ষেত্রে বাড়ি কুমিল্লা সদরে হওয়ায় জোনাল অফিস হিসেবে সদর দপ্তর সিলেক্ট করছি। আপনি আপনার জোন সিলেক্ট করতে হবে।

সংযোগের ট্যারিফ – এ পর্যায়ে আপনি কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য মিটার চাচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে। এখানে অনেকগুলো অপশন আছে তবে সাধারণত আবাসিক ও বাণিজ্যিক এই দুটি অপশনের জন্য সাধারণ মানুষের আবেদন করে থাকে। আপনি যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য মিটার লাগাতে চান সেক্ষেত্রে এলটি – ই (বানিজ্যিক) আর বাসা বাড়ির জন্য হলে এলটি – এ (আবাসিক) সিলেক্ট করুন।

আজকের আর্টিকেলে আমরা এলটি – এ (আবাসিক) অর্থাৎ বাসা বাড়ির জন্য মিটারের আবেদন করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব।

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম
আবেদনকারীর বিবরন

আবেদন কারীর বিবরন – এই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী আবেদনকারী ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। তথ্যগুলোর মধ্যে আবেদনকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, স্বামীর নাম ইত্যাদি অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী দিতে হবে। অন্যথায় আবেদন গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হবে না।

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম
স্থায়ী ঠিকানা

স্থায়ী ঠিকানা – এই পর্যায়ে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে। আপনি মিটার যেখানেই লাগান না কেন স্থায়ী ঠিকানা অবশ্যই অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী হতে হবে। এক্ষেত্রে ভুল করলে আবেদন গ্রহনযোগ্য হবে না।

আপনার স্থায়ী ঠিকানা এবং মিটার আবেদনের ঠিকানা যদি একই হয় তাহলে ” প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সংযোগস্থলে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করুন ” এই অপশনটি সিলেক্ট করুন।

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম
প্রস্তাবিত বিদ্যুত সংযোগস্থলের বিবরন

প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সংযোগ স্থলের বিবরন – এই পর্যায়ে আপনি যে স্থানে মিটার লাগাতে চান তার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে মোজা, জমির খতিয়ান নাম্বার ও দাগ নাম্বার সতর্কতার সাথে দিতে হবে। আর যেকোন নাম্বার যেমন খতিয়ান নাম্বার/ দাগ নাম্বার অবশ্যই ইংরেজিতে দিবেন। আর বাকি সব তথ্য বাংলায় দিবেন।

জিওগ্রাফিক তথ্য – এই পর্যায়ে নিকটস্থ বিদ্যুৎ খুঁটি থেকে আপনার ঘরের আনুমানিক দূরত্ব কত মিটার সেটি উল্লেখ করতে হবে। সেই সাথে আপনার পার্শ্ববর্তী কোন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ থেকে ৩ ডিজিটের বই নং এবং ৪ ডিজিটের হিসাব নং টি প্রদান করতে হবে। এবং নাম্বারগুলো অবশ্যই ইংরেজিতে দিতে হবে।

অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম
লোড

লোড – এই পর্যায়ে আপনার মিটারের আওতায় কতটি আনুমানিক কতটি লাইট, কতটি ফ্যান, কতটি ফ্রিজ, মোটর টেলিভিশন চলবে সেটি ওয়াট সহ সিলেক্ট করবেন। এটি সম্পূর্ন আনুমানিক। লাইন দেয়ার আগে বিদ্যুৎ অফিস থেকে সরাসরি লোক এসে হিসাব করবে। তাই খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই/

প্রতিটি লাইট ২৫ ওয়াট, ফ্যান ১০০ ওয়াট, টেলিভিশন ১২০ ওয়াট, রেফ্রিজারেটর ১৫০ ওয়াট, সাধারন সকেট ২০ ওয়াট হিসেবে পূরন করুন। সর্বমোট কত ওয়াট হয়েছে সেটি নিচে দেখতে পাবেন। চেষ্টা করবেন ১০০০ ওয়াটের বেশি যেন না হয়। তবে একটু বেশি হলেও সমস্যা নেই।

বাড়ির/প্রতিষ্ঠানের লোকেশন এবং মন্তব্য(বাংলা) – এই পর্যায়ে আপনার বাড়ির এক্সাক্ট ঠিকানা নিজের মত করে লিখে দিতে পারেন। এটি অপশনাল তাই খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। নিজের মত করে বাংলায় বাড়ির ঠিকানা লিখে দেয়ার চেষ্টা করুন।

ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র এবং খারিজ আপলোড করুন – এই পর্যায়ে আবেদনকারীর ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, এবং খারিজ এর ছবি আপলোড করতে হবে।

ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাইজ(৩০০x৩০০) ১৫০ কিলোবাইট এর মধ্যে হতে হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাইজ(৬০০x৪৭৫) ৩০০ কিলোবাইট।

এবং খারিজ এর ছবি সর্বোচ্চ সাইজ ৭০০ কিলোবাইট এবং নিজে জমির মালিক না হলে উত্তরাধীকার সনদ আপলোড করুন। এবং একাধিক ছবি হয়ে গেলে সবগুলো ছবি একসাথে করে পিডিএফ আপলোড করুন।

সর্বশেষ ” আমি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এর নিম্নে উল্লেখ্য পরিষেবা শর্তাবলীর সাথে একমত হচ্ছি ” এই অপশনটি সিলেক্ট করুন ।

অনলাইনে মিটারের আবেদ খরচ

অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করতে কোন রকম খরচ হয় না। আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা দেয়ার সময় ১২০টাকা চার্জ নিবে। এছাড়া মিটার দেয়ার জন্য ৫০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। এর বাইরে প্রাথমিক পর্যায়ে আর কোন খরচ নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েটার লাগানোর সময় কর্মচারীদের কিছু টাকা দিতে হয় তবে সেটি অফিসিয়াল নয়।

উপরে আমরা অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম আলোচনা করেছি সেভাবে আবেদন করলে মিটার হাতে পাওয়া পর্যন্ত সর্বমোট এক হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে।

কারেন্টের মিটার নষ্ট হয়ে গেলে করনীয়

মিঠা নষ্ট হয়ে গেলে প্রথমে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে কর্তব্যরত কর্মচারীকে সেটি জানাতে হবে। প্রথমেই আপনার বাসার ঠিকানা বিস্তারিত উল্লেখপূর্বক একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরমটি বিদ্যুৎ অফিসে জমা দেওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে কর্মচারীরা এসে নতুন পুরাতন মিটার ঠিক করে দেবে অথবা প্রয়োজনে নতুন মিটার দিয়ে যাবেন।

সাধারনত ৭ দিনের মধ্যেই মিটার নষ্ট হয়ে গেলে নতুন মিটার হাতে পেয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগতে পারে বিশেষ করে আপনার বাড়ি যদি একেবারে গ্রামের দিকে হয়।

মন্তব্য

উপরে আমরা অনলাইনে মিটারের আবেদন নিয়ম ও খরচ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। উপরে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে খুব সহজেই মিটার হাতে পেয়ে যাবেন। তবে তথ্যপূরণের ক্ষেত্রে অবশেষে সাবধান হতে হবে কেননা ভুল হলে পুনরায় তথ্য ঠিক করতে অনেক সময় লেগে যায়।

যে কোন সমস্যায় আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply