প্রতিবন্ধী স্কুল রাজশাহী
আগেকার সময় প্রতিবন্ধী অথবা প্রতিবন্ধী শিশুরা অবহেলিত হলেও এখন কিন্তু সরকার তাদের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বর্তমান আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হিসাব করলে দেখা যাবে শতকরা প্রায় সাত পার্সেন্ট এরও বেশি প্রতিবন্ধী আছে। প্রতিবন্ধী সনাক্ত করণ জরিপের আওতায় বর্তমান প্রতিবন্ধীর সংখ্যা 16 লাখ 65 হাজার 708 জন।
যেহেতু দেশের লোকসংখ্যার সাত পার্সেন্ট লোক প্রতিবন্ধী। এত বেশি সংখ্যক লোকের জন্য সরকার গুরুত্ব অনেক বেশি দিচ্ছেন। এবং অনেক উদ্যোগ নিচ্ছেন যাতে করে প্রতিবন্ধী শিশুরা ঝরে না যায়।
অন্যান্য শহরের মত রাজশাহীতেও বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিবন্ধী স্কুল আছে । যেখানে শিশুদেরকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়এবং শিশুদেরকে হাতে-কলমে শেখানো মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়। আজকের আর্টিকেলে প্রতিবন্ধী স্কুল রাজশাহী এ শিশুদেরকে কিভাবে পড়ানো হয় সেই সম্পর্কে।
প্রতিবন্ধী স্কুলের শিশুদের কি কি পড়ানো হয়
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগে মানুষ প্রতিবন্ধী শিশুদের কে সমাজের বোঝা মনে করলেও এখন সরকার প্রতিবন্ধী শিশুদের উপর বেশি জোর দিয়েছেন। যাতে করে শিশুরা নিজেই তাদের মেধা খাটিয়ে স্বাভাবিক শিশুদের মত জীবন সুন্দর করতে পারে। প্রতিবন্ধী স্কুলের শিশুদেরকে যা যা পড়ানো হয় তাদের মধ্যে তারা যে রকম প্রতিবন্ধী যেমন হতে পারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধী অথবা শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে পারে বাকপ্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধীদের ক্যাটাগরি
সাধারণত প্রতিবন্ধীর ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে তাদেরকে সেভাবেই শেখানো হয়। নিচে আমরা প্রতিবন্ধীদের সাধারন কিছু ক্যাটাগরি আলোচনা করছি।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যেহেতু দেখতে পায় না। তারা তাদের শ্রবণ এর মাধ্যমে সবকিছু আয়ত্ত করে নেয়। তারা শুনে শুনে সব কিছু শিখে। লেখার ক্ষেত্রে তাদেরকে ব্রেইন এর মাধ্যমে লিখতে হয়। এছাড়াও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের বই যা তারা হাত দিয়ে ধরে পড়তে পারে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী
শারীরিক প্রতিবন্ধী বলতে আমরা বুঝি সাধারণত যখন কোন শিশুর শরীরের কোন অঙ্গের অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায় তখন আমরা তাকে শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে থাকি। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুরা সাধারণত কিছু করতে পারে না।
অর্থাৎ তারা কিছু করতে চাইলেও স্বাভাবিকভাবে হয়ে ওঠে না। এদের শিক্ষা পদ্ধতি টা হল এমন তাদেরকে সবসময় শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। যাতে করে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী
শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা কিছু শুনতে পায় না। তাদেরকে আকার-ইঙ্গিত এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হয়। শ্রবন প্রতিবন্ধীদের ও সাইন ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে পড়ানো হয়।
বাক প্রতিবন্ধী
বাক প্রতিবন্ধী শিশুরা বুঝতে পারে কিন্তু বলতে পারেনা। তারা তাদের ভাষা আকার-ইঙ্গিত এর মাধ্যমে বুঝিয়ে থাকেন। আকার-ইঙ্গিত এর মাধ্যমে সাধারণত তাদের কে শিক্ষা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে এক বিশেষ ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয় যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় সাইন লেঙ্গুয়েজ বলা হয়।
মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধী/ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী
যারা মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধী তারা একদম পাগল টাইপের হয়ে থাকে। তারা কোনো কিছুই বুঝতে চায় না। তবে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক ভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। যদিও সে আগের অবস্থায় ফিরে নাও আসতে পারে। কিন্তু কিছুটা হলেও সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে।
প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষকদের যোগ্যতা
প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষন দেয়া হয়ে থাকে। সাধারনত অন্যান্য সরকারি সরকারি স্কুলের শিক্ষকের মত প্রতিবন্ধী স্কুলে ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নূন্যতম অনার্স পাশ এর সার্টিফিকেট থাকতে হয়। এছাড়া পূর্বে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
তবে নিয়োগের পর প্রত্যেক শিক্ষককে ৬ মাসের বিশেষ একটা ট্রেনিং সেশনে উপস্থিত হতে হয়। এই ট্রেনিং সেশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিবন্ধীদের কিভাবে পড়াতে হয় এবং কিভাবে তাদের যত্ন নিতে হয়। এছাড়াও সাইন ল্যাংগুয়েজ সহ বিভিন্ন টেকনিকাল বিষয় ও শিখানো হয় এই ট্রেনিং সেশনে।
প্রতিবন্ধী স্কুলের খরচ
প্রতিবন্ধী স্কুল গুলোতে সাধারণত কোনো রকমের বেতন দিতে হয় না কেননা সরকার দায়ভার পুরোটাই বহন করেন। বাচ্চাদের পড়াশোনার বই খাবার সহ অন্যান্য সকল খরচ সরকার বহন করে যাতে করে শিশুরা স্বাচ্ছন্দে পড়ালেখা চালাতে পারে। তবে যেগুলো বেসরকারি প্রতিবন্ধী স্কুল আছে সেগুলোতে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বেতন দিতে হয়।
কেন না বেসরকারি প্রতিবন্ধী স্কুল গুলো নিজেদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় সেহেতু তারা শিশুদের দেখাশুনা পড়াশোনা দেখভাল করার জন্য কিছু বেতন নিয়ে থাকেন। বেতন কত তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটির উপর। সাধারনত মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মত হয়ে থাকে।
প্রতিবন্ধী স্কুলের শিশুদের ভাতা
প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সরকার এখন অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন প্রতিবন্ধীদের কে মাসে মাসে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। 2022 – 2023 অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের মাসিক 750 টাকা থেকে এখন 100 টাকা বাড়িয়ে 850 টাকা করা হয়েছে। দেশে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রায় 20 লক্ষ লোক পেয়ে থাকে। সরকার আরও সাড়ে তিন লাক প্রতিবন্ধী উপভোগ করি লোকদের মধ্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরো পড়ুন – প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার নিয়ম, প্রতিবন্ধী ভাতা কবে দিবে, প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা
রাজশাহী প্রতিবন্ধী স্কুলের তালিকা
রাজশাহী যেহেতু একটি বিভাগীয় শহর এখানে বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধী স্কুল গড়ে উঠেছে। আমি এখন আপনাদেরকে রাজশাহী প্রতিবন্ধী স্কুলের নাম ও তার ঠিকানা গুলো সম্পর্কে জানাবো।
রাজশাহী বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বিদ্যালয়
ঠিকানাঃ আহমদপুর রাজশাহী-৬২০০
ফোন/মোবাইল নাম্বারঃ ০১৮১৮৪০২৬৯৮
পাবনা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়
ঠিকানাঃ আতাইকুলা রোড, শালগাড়িইয়া, পাবনা-৬৬০০
ফোন/মোবাইল নাম্বারঃ ০১৭২৭৩৯৪০১০,০১৭২৪৫৯৩৮৫৭
বগুড়া বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়
ঠিকানাঃ মালতিনগর, বগুড়া-৫৮০০
ফোন/মোবাইল নাম্বারঃ০১৭১৫০৪১৭৫৯
প্রতিবন্ধী স্কুলে কি সাধারন ছাত্ররা ভর্তি হতে পারে?
আপনাদের মধ্যে অনেকের জানার আগ্রহ যে প্রতিবন্ধী স্কুল গুলো কি শুধুমাত্র এক ধরনের প্রতিবন্ধীদের কে শিক্ষা দেওয়া হয়? হ্যাঁ কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয় যেমন যদি সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান শুধু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কে পড়ানো হয়।
তবে অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে একপ্রকার বা একশ্রেণীর প্রতিবন্ধীদের কে পড়ানো হয় না। এখানে সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের পড়ানোর ব্যবস্থা থাকে।
উপরে আমরা প্রতিবন্ধী স্কুল রাজশাহী নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ব্লগটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু ও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড করার নিয়ম, অনলাইনে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট আবেদন
- প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন ফরম ডাউনলোড, প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকা