ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার
আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তবে কি খাচ্ছেন তা খেয়াল রাখা খুবই জরুরী। কিন্তু এত বাছবিচার করা হলে পুষ্টির বিষয়টি চিন্তার হতে পারে।
ফ্রিডম ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউট – এর ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ড. গেরার্ট বার্নস্টেইন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের পুষ্টি পূরণের একমাত্র লক্ষ্য হবে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এমন খাবার খাওয়া।
আজকে আমরা ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ১০ টি নিষিদ্ধ খাবার
এখানে জেনে নিন এমন ১০টি খাবারের কথা যা ডায়বেটিস রোগীদের নিষিদ্ধ খাবার এবং বাজে ও ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হতে পারে।
১. সাদা চাল: যত সাদা চালের ভাত খাবেন, টাইপ ২ রোগীদের ঝুঁকি তত বাড়তে থাকবে। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাদা চালের খাবার খেলে প্রতিদিনই ঝুঁকির মাত্রা ১১ শতাংশ হারে বেড়ে যায়।
প্রক্রিয়াজাত করে সাদা করা হয়। তাছাড়া এই খাবার চিনির মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিবর্তে বাদামী চালের ভাত খেতে পারেন। এতে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
২. ব্লেন্ডেড কফি: সিরাপ, সুগার এবং ক্রিম সমৃদ্ধ ব্লেন্ডেড কফি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। একে স্রেফ কফি হিসেবে খাবেন হয়তো আপনি।
তবে এর ব্লেন্ডেড সংস্করণে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ানোর উপাদান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। একটা ব্লেন্ডেড কফিতে ৫০০ ক্যালরি, ৯৮ গ্রাম কার্ব এবং ৯ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এর পরিবর্তে নন ফ্যাট সংস্করণ কফি বেছে নিন।
৩. চাইনিজ খাবার: চাইনিজ খাবার মুখরোচক হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর।এতে রক্তে সুগারের মত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।
তাই এর বদলে বাড়িতে চাইনিজ খাবার বানিয়ে নিন স্বাস্থ্যকরভাবে যা আপনার রকে চিনির পরিমাণ বাড়াবে না।
৪. পেস্ট্রি: ডোনাট, টোস্ট বা পেস্ট্রির মতো মুখরোচক খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। এসবের প্রক্রিয়াজাত সাদা চাল থেকে তৈরি হয় যাতে উচ্চমারার ফ্যাট, কার্ব এবং সোডিয়াম রয়েছে।
তাই এর পরিবর্তে বাদামী চালের কেক খান। কম চিনি রয়েছে এমন পিনার বাটার ব্যবহার করুন।
৫. ফলের রস: সকালের নাস্তা ফলের রস খুব স্বার্থপর হলেও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য হুমকি। তাছাড়া দোকানে পাওয়া যায় এমন ফলের রসের প্রচুর পরিমানে চিনি থাকে। এর বদলে কম সুগার রয়েছে এমন ফলের দুটি বা একটি টুকরো খেতে পারে।
৬. এনার্জি বার: আসলে থাকে চকলেট, কার্ব এবং চিনি। যে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অবশ্য বর্জনীয়। তাই আপনাদের ক্ষুধা লাগলে বাড়িতে বানানো স্ন্যাক্স খেতে পারেন।
৭. ফ্রেন্স ফ্রাই: এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব মারাত্মক খাবার। একটু বেশি পরিমাণে খেলে রক্তের সুগারের লেভেল বেড়ে যাবে। ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন এটিকে এড়িয়ে চলতে বলেছেন।
বাড়িতে কিছু আলু বেছে খেতে পারেন এবং একে এড়িয়ে অন্যান্য শাকসবজি খেতে পারেন।
৮. চর্বি সমৃদ্ধ মাংস: ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। তাই চর্বিযুক্ত মাংস পুষ্টিকর হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াবে। তাই বিশেষ করে রেড মিট এর মত মাংস বাদ দিতে হবে। এতে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাট রয়েছে।
এর বদলে প্রোটিন সমৃদ্ধ বিন, লেনটিস ইত্যাদি খেতে পারেন। তাছাড়া মা সামুদ্রিক খাবারও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
৯. রিফাইন্ড সিরিয়াল: উপাদেয় সিরিয়াল রক্তে সুগারের লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলাই ভালো।
এর পরিবর্তে সবজি ও ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। ডিমের কুসুমে কোলেস্টরেল রয়েছে যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১০. ফ্রুট স্মুথি: নাম শুনলে মনে হয় খুবই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এটি চিনিতে পরিপূর্ণ। তাই খেতে মন চাইলে বাড়িতে চিনি ছাড়া তৈরি করে উপভোগ করুন।
আরো পড়ুন – কোন রোগের কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ১৫ টি উপকারী খাবার
ডায়াবেটিস কমিও নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি উপযুক্ত ডায়েট প্লান খুবই জরুরি এবং এর কোন বিকল্প নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের সবসময় সতর্কতার সাথে খাবার গ্রহণ করতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের নিষিদ্ধ খাবার যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি উপকারী খাবার রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারী কিছু খাবারের তালিকা নিচে দেয়া হলো। তারপরেও এ সকল খাবার গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
১. সবুজ শাকসবজি: সবুজ শাকসবজি ডায়াবেটিসের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খনিজ লবণ ও ফাইবার থাকে যা সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সবুজ শাকসবজি হজম প্রক্রিয়াকে ভালো রাখে এবং শরীরকে বিভিন্ন হার্টের রোগ, ক্যান্সার ও স্ট্রোক থেকে মুক্ত রাখে। উল্লেখযোগ্য কিছু শাকসবজি হলো: ব্রোকোলি, সিম, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কলমি শাক, পালং শাক ইত্যাদি।
২. ফলমূল: ডায়াবেটিস মানে আপনি ফল খেতে পারবেন না বিষয়টি এমন নয়। ফলে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার থাকে। তবে ফলের জুস খাবেন না কারণ এতে ফাইবার নেই। উল্লেখযোগ্য কিছু ফল হলো: তরমুজ, স্ট্রবেরি, আনার, বাঙ্গি ইত্যাদি।
৩. স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার: স্টার্চ সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার হলো আলু, ভাত, পাস্তা, রুটি ইত্যাদি। এ সকল স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।
৪. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: আমাদের শরীর সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই। এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীরা মাছ, মাংস, ডিম জাতীয় প্রাণিজ প্রোটিন ছাড়াও ডাল, সিমের বিচি, বাদাম এ সকল উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও গ্রহণ করতে পারেন। গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস কম খাওয়াই ভালো। এদের বদলে মাছ খাওয়াই ভালো। তবে আপনারা চেষ্টা করবেন বেশি করে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার।
৫. দুগ্ধ জাতীয় খাবার: দুধ, পনির, দই ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে যার শরীরের হাড়, দাঁত এবং পেশির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এসব খাবার খেতে কোন সমস্যা নেই।
৬. এভোক্যাডো: এটি একটি সুস্বাদু ফল এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। একে চিনি ও কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ অনেক কম এবং ফাইবার ও ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় না। ধারণা করা হয় এভোকাডোতে ডায়াবেটিস কমানোর উপাদান রয়েছে যদি ওই জন্য আরও বিস্তর গবেষণা দরকার।
৭. ডিম: একজন মানুষ দৈনিক ডিম খেলে তার হার্টের বিভিন্ন রোগ কমাতে সাহায্য করে। ডিমে প্রচুর প্রোটিন ও ভালো কলেস্টেরল (HDL) রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। দৈনিক সকালের নাস্তায় প্রত্যেকের একটি করে ডিম খাওয়া উচিত।
৮. টক দই: অনেকেই ভাবতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার এর মধ্যে টক দই রয়েছে, তাদের ধারণা একেবারেই ভুল। টক দই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং এতে প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। তাছাড়া টক দই হজম জটিলতা থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
৯. ভিনেগার: ভিনেগারের অনেক উপকারী দিক রয়েছে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও ভিনেগার উপকারী।
১০. বাদাম: বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু একটি খাবার। বাদামে অধিক ফাইবার এবং কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের হার্টের বিভিন্ন রোগের জন্য বাদাম উপকারী।
১১. মটরশুঁটি: বাংলাদেশে মটরশুঁটি অত্যন্ত সহজলভ্য এবং এটি অনেক স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল (ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম) ও ফাইবার রয়েছে। মটরশুঁটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। মটরশুঁটি ডায়াবেটিস রোগীদের নিষিদ্ধ খাবার এর মধ্যে একদমই নেই, বরং এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১২. স্ট্রবেরি: দেরিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল রয়েছে যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৩. রসুন: রসুনের একটি কোয়ায় ৪ ক্যালরি, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, ফাইবার রয়েছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৪. চিয়া বীজ: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি খাবার। এতে উচ্চমাত্রায় ফাইবার ও কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা শরীরে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় না। তাছাড়া চিয়া বীজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
১৫. ব্রকোলি: ব্রোকলি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। গবেষণায় দেখা গেছে যে আধা কাপ সিদ্ধ ব্রকোলিতে ২৭ ক্যালোরি, ৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। ব্রকোলি ব্লাড সুগার লেভেল কমাতেও সাহায্য করে। ব্রকোলি একটি কম ক্যালোরি খুব কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যাতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান।
মন্তব্য
আজকে আমরা ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার ও যে খাবারগুলো ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকার সে সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছি। আশা করছি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অনেক কাজে অনেক লাগবে। ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুতই রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- পিজি হাসপাতালের কেবিন ভাড়া
- কোন রোগের কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
- ইবনে সিনা হাসপাতাল গ্যাস্ট্রোলিভার ডাক্তার তালিকা