কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায়

কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায়

ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাঠের ফার্নিচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা কম বেশি সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই ঘরের জন্য কাঠের ফার্নিচার ক্রয় করে থাকি। কিন্তু এই কাঠের ফার্নিচার কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় সে সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। অনেক সময় কাঠের ফার্নিচারে বিভিন্ন ধরনের দাগ পড়ে যায় তা কিভাবে তুলতে হয় আমাদের অনেকেরই অজানা।

আজকে আমরা কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায়, ও কাঠের জিনিস যত্নে রাখার কিছু অসাধারণ টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – দালাল ছাড়া বিদেশ যাওয়ার উপায় ২০২৩

কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার সহজ উপায়

ঘরোয়া ভাবে কোন কেমিক্যাল ছাড়াই খুব সহজে কাঠের ফার্নিচার নতুন এবং পরিষ্কার রাখা খুবই সহজ। শুধু সামান্য একটু সময় নিয়ে পরিষ্কার করলেই এই ফার্নিচারগুলো অনেকদিন পর্যন্ত নতুনের মত থাকবে। নিচে কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো-

ধুলো জমতে না দেওয়া- কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ হলো ফার্নিচারের ধুলো জমতে না দেওয়া। কাঠের আসবাবপত্রে কিছুতেই ধুলো জমতে দেওয়া যাবে না। তাতে নিয়মিত শুকনা কোন নরম পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে রাখতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। তাছাড়া সপ্তাহে দুইদিন অন্তত মুছে রাখতে হবে। খুব বেশি ভেজা কাপড় দিয়ে একেবারে কাঠের আসবাবপত্র মুছা উচিত নয়। প্রয়োজনে পানি ফেলে কাপড় দিয়ে ফার্নিচার মুছে নিতে হবে।

হালকা ভেজা কাপড়- কাঠের আসবাবপত্রে পরিষ্কারের সময় কখনোই পানি লাগানো যাবেনা। কাঠের আসবাবপত্র বেশি দিন ভালো রাখতে হলে সব সময় পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ এতে বার্নিশ খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত শুকনা কাপড় ও ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করলে বার্নিশের চকচকে ভাবটা দীর্ঘদিন পর্যন্ত থাকে। তাছাড়া ময়লা পরিষ্কার করার জন্য হালকা ভিজা পাতলা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।

পাতলা সুতি কাপড় ব্যবহার করা- সবসময় কাঠের আসবাবপত্র সহজে পরিষ্কারের জন্য পাতলা সুতির কাপড় ব্যবহার করা উত্তম। এছাড়াও ঘরের পুরাতন ব্যবহার করা পাতলা কোন কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। মোটা কাপড়ের বেশি ঘষাঘষি করলে বার্নিশ উঠে যেতে পারে। অথবা কাঠের দাগ লেগে যেতে পারে তাই কাঠের যত্নে পাতলা এবং সুতি কাপড় ব্যবহার করাই উত্তম।

উডেন ক্লিনিং স্প্রে- বর্তমানে বাজারে কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন উডেন ক্লিনিং স্প্রে পাওয়া যায়। এগুলার নাম খুব একটা বেশি নয়। তাই যে কেউই কাঠের আসবাবপত্র পরিস্কার এবং কাঠিয়ার পক্ষ থেকে ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুন – মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

কাঠের ফার্নিচারের বার্নিশ উঠে গেলে করণীয়

বিভিন্ন দামে কাঠের আসবাবপত্রের পালিশ অনেক সময় উঠে যেতে দেখা যায়। এতে করে চিন্তিত হবার কিছু নেই। চা খাওয়ার পর টি ব্যাগ ডুবিয়ে পানিতে ডুবিয়ে নিতে হবে। তবে সেই চা যেন কড়া চায়ের পাতা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চা ঘরে তাপমাত্রায় এলে টি ব্যাগ ফেলে দিয়ে জলে কাপড় ডুবিয়ে তা নিংড়ে নিতে হবে। এরপর আদ্র কাপড় দিয়ে আসবাবপত্র মুছে নিতে হবে। এতে রঙ উঠে যাওয়া কাঠের আসবাবপত্রে ফিরবে পুরনোজ্জ্বলতা।

কাঠের জিনিসে পানি দাগ পড়লে করণীয়

কাঠের জিনিসে যদি কোন পানির দাগ পড়ে যায় তাহলে সৌন্দর্য খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে ওই পানির দাগ এর জায়গায়  টুথপেস্ট লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর নরম কাপড় দিয়ে ঘষে নিতে হবে। পরে টুথপেস্ট তুলতে একটি হালকা ভেজা কাপড় নিয়ে ঘষে ঘষে তুললেই ফার্নিচার আগের মত হয়ে যাবে।

কাঠের আসবাবপত্রে কালি পড়লে পরিষ্কার করার নিয়ম

কাঠের আসবাবপত্রে যদি কালি পড়ে যায় তাহলে পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে হবে। যেখানে দাগ পড়েছে এবার সেখানে এই পানি লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর নরম শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। পরে আদ্র কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। শেষে আবারো শুকনা কাপড় দিয়ে মুছলে ভেজা ভাব কেটে যাবে।

নকশা যুক্ত কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার নিয়ম

সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেকেই নকশা যুক্ত কাঠের ফার্নিচার কিনে থাকেন। কিন্তু সঠিকভাবে পরিষ্কার করার নিয়ম না জানার কারণে ফার্নিচারের কাজের ভিতর ধুলোবালি জমে যায়। বড় বড় কাজের নকশা করা আসবার পত্রের পরিষ্কার জন্য বড় ব্রাশ আর ছোট নকশার জন্য পরিষ্কার করার জন্য ছোট ব্রাশ রয়েছে। এছাড়াও পুরাতন দাত মাজার ব্রাশ কাজে লাগানো যেতে পারে।

কয়েকদিন পর পর ব্রাশ দিয়ে খাটের ভেতর পরিষ্কার না করলে সহজেই ধুলো জমে যায়। কাঠের খাযে ধুলো জমে গেলে তা পরিষ্কারের জন্য ব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে নেওয়ার পর পানি ছেড়ে এরপর ভেজা ব্রাশ দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। এছাড়া বাজারে এখন নানা ধরনের উডেন ক্লিনার পাওয়া যায় সেগুলো দিয়েও পরিষ্কার করা যেতে পারে।

কাঠের আসবাবপত্রে ছত্রাক পড়লে করণীয়

অনেক সময় দেখা যায় কাঠের ফার্নিচারে ছত্রাক পড়ে যায়। কাঠের ফার্নিচারে ছত্রাক পরলে কাঠ খুব সহজে নষ্ট হয়ে যায়। তাই দরজা বা জানালা থেকে আসবাবপত্র সব সময় দূরে রাখতে হবে। যেন বৃষ্টির জল বা বৃষ্টির ফোটা এগুলো না এসে পড়ে। কাঠের আসবাবপত্র ছত্রাকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে বার্নিশ। বছরের দু একবার অন্তত কাঠের আসবাবপত্র বার্নিশ করিয়ে নিতে হবে।

বিশেষ করে বর্ষার আগে বার্নিশ করালে আসবাব পত্র খুব ভালো থাকে। এছাড়াও কাঠের আসবাবপত্র ফ্লোর অথবা মাটি ছুঁয়ে থাকলে সেখান থেকে বাষ্প উঠে আসতে পারেনা। তাই আসবাবপত্র পায়া গুলোর নিচে কিছু দিয়ে রাখতে হবে। ছত্রাক পড়লে কখনোই কাঠের আসবাবপত্রে তেল দেওয়া যাবে না। এই ধরনের সমস্যা দূর করতে স্প্রে পাওয়া যায়। তাছাড়া বার্নিশ করার সময় জীবাণুমুক্ত বিশ তেল ব্যবহার করার ফলেও ছত্রাক থেকে কাঠের আসবাবপত্র মুক্ত রাখা যায়। কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায় গুলো খুবই সহজ যার মাধ্যমে কাঠের আসবাবপত্র যত্নে রাখা যায়।

কাঠের আসবাবপত্রের যত্নে কিছু টিপস

কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায় গুলোর জানলে কাঠের আসবাবপত্র যত্নে রাখা সম্ভব হয়। যেমন-

  • ফার্নিচার এ যাতে পোকামাকড়ের উপদ্রব না হয় সেজন্য ছয় মাস পর পর নিম তেল ফার্নিচার স্প্রে করতে হবে
  • ভেজা কাপড় দিয়ে উডেন ফার্নিচার পরিষ্কার না করাই উত্তম। এতে আসবে এর উপরে দাগ হয়ে যায়
  • কাঠের আসবাবপত্র প্রতিদিন শুকনো নরম কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।
  • কাঠের আসবাবপত্র ফাঁকে ফাঁকে ধুলো জমে থাকে। তাই ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।
  • কাঠের ফার্নিচার চকচকে রাখতে চাইলে ছয় মাস পর পর পলিশ করানো যেতে পারে
  • ফার্নিচার ভালো রাখতে হলে নানা ধরনের পলিশ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে না। যে কোন এক ধরনের পালিশ একবারের জন্য ব্যবহার করতে হবে।
  • কোন কাঠের ফার্নিচারে পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে সেই ফার্নিচারটি আলাদা করে রাখতে হবে। এরপর পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে
  • রোদের মধ্যে কাঠের আসবাবপত্র রাখা যাবে না। এতে কাঠের রং নষ্ট হয়ে হালকা হয়ে যায়
  • তাছাড়া রোদের তাপে কাঠে ফাটল ধরতে পারে এবং কাঠ বাঁকা হয়ে যেতে পারে
  • ঘরের মধ্যে খুব রোদ পড়লে আসবাবপত্র ভালো রাখার জন্য পর্দা ব্যবহার করতে হবে।
  • কাঠের টেবিলের উপর সরাসরি পানি গ্লাস রাখা যাবে না। পানির গ্লাস রাখার জন্য ট্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা পানি লাগলে কাঠ নষ্ট হয়ে যায়।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম এরকম বদ্ধ জায়গায় কাঠের আসবাব স্টোর করা ঠিক না। এতে কাঠ নষ্ট হয়ে যায়।
  • ফার্নিচার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে ফার্নিচারের জয়েন্টগুলো যেন না ভাঙ্গে
  • খুব বেশি ফার্নিচার একসাথে আনা নেওয়া না করাই ভালো
  • গরম পাত্র কাঠের যে কোন ফার্নিচারের উপর রাখলে অনেক সময় কাঠের রং নষ্ট হয়ে যায় এবং পাত্রের দাগ বসে যায়। সে ক্ষেত্রে নরম কাপড় কর্পূর বা মিনাল স্পিড দিয়ে ঘষতে থাকলে সেই দাগ উঠে যাবে।
  • কাঠের মধ্যে স্ক্র্যাচ বা আঁচড়ের দাগ হলে ম্যাচিং সু পালিশ ব্যবহার করা যেতে পারে
  • সিগারেটের ছাই পড়ে দাগ হলে স্ক্র্যাচ কনসেলিং পালিশ ব্যবহার করা যেতে পারে
  • কাঠের আসবাবপত্র সব সময় পাতলা কাপড় বা কাভার দিয়ে ঢেকে রাখাই ভালো এবং টেবিলের উপর টেবিল ম্যাট ব্যবহার করা ভালো
  • কাঠের ফার্নিচার দেয়াল দরজা জানালা থেকে কিছুটা দূরে রাখা ভালো।
  • বর্ষাকালে বৃষ্টি পরা বন্ধ হলে জানালা খুলে দিতে হবে এতে করে ঘরে আলোবাতাস বাতাস প্রবেশ করবে এবং ঘর আদ্রতা মুক্ত থাকবে
  • কাঠের আসবাব পত্রে কর্পূর বা ন্যাপথলি ন ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ব্যবহার করলে কাঠের আসবাবপত্রের ছত্রাক পড়ে না চাইলে সারা বছরও ব্যবহার করা যেতে পারে

কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায়

মন্তব্য

আজকে আমরা কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ফলো করলে কাঠের ফার্নিচার গুলো যত্নে রাখা সম্ভব। আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন –

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply