গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়?
গর্ভবতী হওয়ার পরবর্তী সময় থেকে মায়েদের নিজের এবং সন্তানের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়। এক্ষেত্রে মায়েদের চিন্তিত হতে লক্ষ্য করা যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেও গর্ভাবস্থায় পেট বড় বা ছোট থাকা। গর্ভাবস্থায় পেট বড় বা ছোট হওয়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরেই পেট বড় হতে থাকে। আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় এবং এর কারন সহ বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, এর চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় পেট বড় হওয়ার সময়
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় তা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা কিছুটা অসম্ভব কারণ প্রত্যেকটি গর্ভবতী মায়ের আলাদা শরীর এবং আলাদা শরীরের গঠন। সাধারণত গর্ভাবস্থায় পাঁচ মাস থেকেই মায়েদের পেট বাড়তে শুরু করে। অনেক্ষেত্রে দেখা যায় মায়েদের দ্বিতীয় ট্রাই মিস্টার থেকেই পেট তেমন একটা বাড়ে না। আবার কারো কারো প্রথম ট্রাই মিস্টারেই পেট বড় হতে থাকে।
কিছু কিছু গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে পজিটিভ প্রেগনেন্সি টেস্ট পাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যে পেট ফোলা ফোলা ভাব থাকতে পারে তবে। এর কারণ ভিন্ন হতে পারে।যদি অনেক আগেই পেট বাড়তে থাকে তবে এর কারণ হতে পারে-
- পেটে ফোলা ভাব
- পেটে গ্যাস হওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- যমজ সন্তান থাকলে
তবে প্রথমবার মা হতে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মাঝে পেট বাড়তে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভধারণ করা মহিলাদের পেট তারও আগে বাড়তে শুরু হতে পারে। কারণ তাদের জরায়ু এবং পেটের পেশি আগের গর্ভধারণের কারণে প্রসারিত থাকে। তবে গবেষণায় দেখা যায় ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত জরায়ু টিউবের ভিতরে থাকে। যার কারণে তখন পেট তেমন একটা বোঝা যায় না।
এই সময়ের পর থেকে মায়েদের পেল্ভিস বাইরের দিকে বাড়তে থাকে। এছাড়াও মায়েদের জ্বীনের উপর নির্ভর করে পেট বোঝা যায়। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতীদের পেট বড় বা ছোট হওয়া বয়সের উপর নির্ভর করে। বয়স বেশি হলে এক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি পেট বাড়তে শুরু করে। আর কম বয়সী মেয়েদের দেরিতে বাড়তে পারে। কারণ কম বয়সী মেয়েদের পেটের বেশি শক্ত ও মজবুত থাকে।
পেট বাড়তে শুরু হওয়া দেরি হলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। অনেকের জরায়ু পেছনের দিকে হেলানো থাকে এটাই বাচ্চার বৃদ্ধিতে তেমন বাধা সৃষ্টি করে না। জরায়ু যখন ফেলবেস থেকে বের হয়ে পেটের দিকে বাড়তে থাকে তখন এটা ঠিক হয়ে যায়।
আরো পড়ুন – গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় পেট ছোট দেখানোর কারণ
অনেক সময় বাচ্চা ও পুষ্টি ভাবে বেড়ে উঠলে অথবা ঠিকভাবে বেড়ে না ওঠার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মায়েদের পেট ছোট দেখাতে পারে। তবে এর জন্য অবশ্যই ডাক্তারে পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। ডাক্তার একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট তৈরি করে দিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় বিস্তারিত জানুন নিচে।
তবে মনে রাখতে হবে এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের কথা শুনে চলা উচিত আশেপাশের মানুষের কথা কানে না নেওয়া উত্তম। প্রত্যেক মায়ের ক্ষেত্রে তার পেট কেন ছোট দেখায় সেটা বলা অসম্ভব তবে কিছু কিছু অবস্থায় ঠিক থাকার পরেও কারো কারো পেটে রাখার ছোট থাকতে পারে।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পেট ছোট দেখানোর অনেকগুলো কারন রয়েছে-
- বাচ্চার অপুষ্টি জনিত কারণ
- মায়ের শরীরের অনিয়মিত বৃদ্ধি
- গর্ভাবস্থার কোন রোগ
- পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া
- বাচ্চার আকার ছোট হওয়া
- বাচ্চার অবস্থানের কারণে পেট ছোট দেখা যায়
- ফিট এবং নিয়মিত পেটের পেশির ব্যায়াম করেন এমন মায়েদের পেট বোঝা যায় না
- পেটের পেশি শক্ত এবং মজবুত থাকলে পেট সহজে বড় হয় না
- লম্বা মায়েদের পেট খুব একটা বোঝা যায় না
- বাচ্চার চারপাশে থাকা এম এ এমনেউটিক ফ্লুইড এর কারণে ও মায়ের পেট ছোট মনে হতে পারে
আরো পড়ুন – গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় পেটের বৃদ্ধির চার্ট
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় এই পর্যায়ে আমরা চার্ট অনুযায়ী দেখবো। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক গঠন অনুযায়ী এই চার্ট কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
প্রথম সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহ- ডিম্বস্ফোটন ঘটে, শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণুর নিষেক হয়, পেটের গুরুত্বপূর্ণ কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না কারণ শিশু সময়ে প্রায় দুই মিলিমিটার লম্বা হয়।
চার সপ্তাহ থেকে আট সপ্তাহ- শিশু এক ইঞ্চি লম্বা হয়। তবে এমন কিছু বড় পরিবর্তন হওয়ার কথা নয় তবে পেটে কিছু একটা ভা্রি অনুভব করা যেতে পারে।
আট সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ- শিশুটি ২.৫ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে এবং গর্ভবতীদের কোমরে হালকা বৃদ্ধির লক্ষ্য করা যায় এবং প্যান্ট টাইট লাগতে পারে।
১২ থেকে ১৮ সপ্তাহ- এই সময় বাচ্চা প্রায় ৫ ইঞ্চি লম্বা হয় এবং পেটের মোটামুটি লক্ষনীয় হয় এবং গর্ভবতী তা কিছুটা আন্দাজ করা যায়।
১৮ থেকে ২২ সপ্তাহ- শিশু এখন প্রায় সাত ইঞ্চি লম্বা। মোটামুটি এখন যে কেউই পেট দেখে বুঝতে পারে যে গর্ভাবস্থা চলছে।
২২ থেকে ২৬ সপ্তাহ- এই সময়ে জুড়ে খুব দ্রুতই পেটের আকার পরিবর্তন হবে এবং এখন শিশু প্রায় ১৫ ইঞ্চি আকার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
২৬ থেকে ৩০ সপ্তাহ- বর্তমানে গর্ভের শিশু স্থিতিশীল বৃদ্ধি হবে এবং সে প্রায় ১৮ ইঞ্চি লম্বা হবার এবং পেটের আকার লক্ষণীয়ভাবে এই সময়টাতে বৃদ্ধি পায়।
৩০ থেকে ৩২ সপ্তাহ- এখন শিশুর ওজন দ্রুতই বৃদ্ধি পাবে এবং পেটের আকার ও দ্রুতই বৃদ্ধি পাবে। তবে এখন পেটের আকার বড় হওয়ার চাইতে এটি ফুলে বেরিয়ে আসতে দেখতে এমন দেখা যাবে।
৩২ থেকে ৩৬ সপ্তাহ- এখন শেষে মোটামুটি ১৯ থেকে ২২ ইঞ্চি লম্বা হবে। গর্ভাবস্থা জুড়ে পেট যতটা বৃদ্ধি পায় এই সময়ে তার থেকে সবচেয়ে বড় হবে এটি বেশ ভারী লাগতে পারে এবং বর্তমানে এর চেয়ে বেশি ওজন বাড়বে না তবে বেশি বেশি গোল গাল লাগবে।
গর্ভাবস্থায় পেটের আকার কি গুরুত্বপূর্ণ?
গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় এই আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটের আকার ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ন।
গর্ভবতী হওয়ার পরবর্তী সময়ে বন্ধু এবং আত্মীয় বেশির ভাগই ওজন পেটের আকার ইত্যাদি বিষয়ে তাদের অনেক মতামত শেয়ার করবে এবং তাদের অভিজ্ঞতা অনুসারে মন্তব্য করবে। তবে গর্ভবস্থায় পেটের আকারে কিছু তেমন কিছু যায় আসে না গর্ভাবস্থায় যতক্ষণ না আপনি অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল না হয়ে থাকেন চিন্তার কিছু নেই। পেটের আকার কখনোই গর্ভবতীর চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত নয়।
ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট মিস করা যাবে না এবং নিয়মিত সময় পরপরই ডাক্তারকে দেখাবেন এবং নিয়মিত চেকআপ করে আপডেটেড রাখবেন।
আরো পড়ুন – গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন, মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন
পেটের আকার কি শিশু লিঙ্গ প্রকাশের সহায়ক?
পুরনো প্রচলিত নিয়ম অনুসারে কোন মহিলা তার যেভাবে শিশুকে বহন করে বা সহজ কথায় পেটের আকার নির্ধারণ করতে পারে যেটি ছেলে নাকি মেয়ে। যদি ছেলে হয় তবে পেটের নিচের দিকে শিশু থাকবে আর পেট সামনের দিকে বেরিয়ে আসবে। আর যদি মেয়ে হয় তবে তার ওজন কোমরের দিকে ছড়িয়ে যাবে এবং পেটের উপরের অংশ থাকবে। যেমনটি বলা হয়েছে এটি প্রচলিত কাহিনী বিজ্ঞান এটিকে সমর্থন করে না।
গর্ভাবস্থায় শিশুকে কিভাবে বহন করবে বা পেটের আকার দেখে কখনোই সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায় না। বর্তমানে লিঙ্গ নির্ধারণ করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় আশ করি বুঝতে পেরেছেন।
পেটের আকার শিশুর আকারের সমান না হওয়ার কারণ
গর্ভবতীর উচ্চতা- যদি গর্ভবতী লম্বা এবং দীর্ঘ পেট থাকে তাহলে পেট সম্ভবত বাহিরের দিকে বেশি বাড়বে না এবং পেটে দেখতে আরো ছোট হবে। ফলস্বরূপ বাচ্চা বাইরের দিকের চেয়ে উপরের দিকে বাড়বে। অন্যদিকে যদি লম্বা না হয়ে খাটো হয়ে থাকে তাহলে পাঁজর এবং কোমরের দিকে পেটের নিম্নাংশ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে এর কারণে পেট আরো বড় দেখা যায়।
শিশুর অবস্থান- অনেক সময় গর্ভাবস্থায় শিশুরা বিভিন্ন রকম অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। যদি গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে হয়ে থাকে তাহলে সচেতন থাকতে হবে যে গর্ভের শিশু প্রচুর পরিমাণে নড়াচড়া করে কিনা। জরায়ুতে আপনার শিশু বারবার অবস্থান পরিবর্তন করে যেমন শিশুর মাথা নিচু অবস্থানে থাকা বা আড়াআড়িভাবে থাকা বারবার পরিবর্তন হওয়ার ফলে পেটে আকার পরিবর্তন হয়।
পেটের ভেতরের স্থানের অভাব- জরায়ু প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে দেহের অন্যান্য নির্দিষ্ট অঙ্গ যেমন প্লাসেন্টা এবং অন্তর গুলো তাদের পৃথক অবস্থানের সাথে আপোষ করবে। জরায়ু বাড়ায় সাথে সাথে জরায়ু টিকে এর পেছনে ঠেলে দেওয়া যেতে পারে। এতে পেটটি বাচ্চার আকারের মত বৃহত্তর প্রদর্শিত হতে পারে।
প্রথম গর্ভাবস্থা- প্রথম প্রেগনেন্সি সময় পেট অত বেশি বোঝা যায় না। কেননা পেট দেরিতে বাড়ার কারণ হলো প্রথম গর্ভাবস্থায় পেটের পেশি শক্ত মজবুত ও ছোট থাকে যার ফলে পেট খুব সহজে বৃদ্ধি পায় না। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় বিস্তারিত।
এমোনিয়াটিক তরলের পরিমাণ- গর্ভাবস্থায় শিশুর আশপাশে এমন একটি তরল উঠে নামা করতে পারে। এমনই ঠিক তরল খুব বেশি বা খুব কম হলে শিশুর জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে কোন মহিলার দেহে এমিলিটিক তরল উৎপাদন করে। তারপরে শিশুটি ফুসফুস থেকে তরল সঞ্চালনের জন্য বিকাশ লাভ করে এই তরলের পরিমাণ এর কারনে পেটের আকার ছোট বড় হয়।
মন্তব্য
আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয় আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং এ সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয় কেন, এর চিকিৎসা
- গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া
- গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয়
- গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন, মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন