হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায়
বর্তমানে শহুরে সমাজে মানুষের কাজ সহজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আধুনিক টেকনোলজি বাজারে এসেছে। টেকনোলজি এসে মানুষের জীবন তো সহজ হয়েছে কিন্তু মানুষকে পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় অলস করে তুলেছে। যার ফলস্বরূপ হাঁটুর ব্যথা, বাতের ব্যথা, স্থুলতা সহ নানা রকম জটিল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
কিন্তু সঠিক সময়ে কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম আর নিয়ম ফলো করলে হাঁটুর ব্যথা অনেকটাই নিরাময় করা যায়। আর কেউ যদি সুস্থ থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই এই নিয়ম গুলো ফলো করলে হাঁটুর ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন তাহলে আজকে হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আরো পড়ুন – ঘারোয়াভাবে হাত পা ফর্সা করার উপায়
হাঁটুর ব্যথা কেন হয়
হাঁটুর ব্যথা মুলত দুই কারনে হয়ে থাকে। প্রথমত বয়সের কারনে হাড় ক্ষয়ের কারনে হাঁটু ব্যথা যা খুবই কমন একটি সমস্যা। আর দ্বিতীয় কারন হচ্ছে এক্সিডেন্ট এর কারনে লিগামেন্ট ছিড়ে গেলে বা হাড় ক্ষতিগ্রস্থ হলে।
বয়সের কারনে হাঁটু ব্যথা: সাধারনত ৪০ বছরের পর থেকে হাঁটুর ক্ষয় শুরু হয় এবং হাঁটুর ব্যথা শুরু হয়। বিশেষ করে পুরুষের তুলনায় নারীরা এই সমস্যা নিয়ে বেশি আসে ডাক্তারের কাছে। নারীদের ৪৫ বছরের পর যখন পিরিয়ড বন্ধ হয়ে তখন থেকে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বয়সের কারনে কয়েক ধরনের সমস্যা হতে পারে, যেমন
- অস্টিও আথ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা।
- অস্টিও পেরেসিস বা হাড়ের ক্ষয় সমস্যা।
- জয়েন্ট ইনফেকশন বা হাড়ের জোড়ায় ক্ষয়।
উপরের কয়েকটি হচ্ছে বয়সের কারনে হাঁটু ব্যথা হওয়ার কমন কিছু কারন। এছড়াও নিয়মিত ব্যয়াম না করা বিশেষ করে নিয়মিত না হাটা, স্থুলতা, অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের কারনেও হাঁটুর হাড় ক্ষয় হওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বয়সের কারনে যদি সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে টোটকা চিকিতসা না নিয়ে সরাসরি আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
এক্সিডেন্ট এর কারনে হাঁটু ব্যথা: অনেক সময় এক্সিডেন্ট এর ফলে হাঁটুর লিগামেন্ট বা টেন্ডন আঘাত প্রাপ্ত হয় তাহলেও হাঁটু ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট ব্যয়াম করতে হবে। আজকের আলোচনায় অবশ্য আমরা কিছু কমন ব্যয়াম নিয়ে আলোচনা করবো।
হাটুর ব্যথা সারানোর উপায়
এতক্ষন আমরা হাটুর ব্যথা কেনো হয় তা নিয়ে বিস্তারিত জানলাম। এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো হাটুর ব্যথার সারানোর উপায় কি বা আরো ভালোভাবে বললে হাটুর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম নিয়ে আলোচনা করবো।
হাঁটুব্যথার চিকিৎসা: হাঁটুব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করবে আপনার ব্যথার ধরন অনুযায়ী। যেমন হাঁটুতে পানি জমলে চলাফেরা করা বন্ধ, আবার ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারনে হলে খাবারের পাশাপাশি প্রচুর হাঁটতে বলবে। হাটুতে পানি জমলে আলাদা চিকিৎসা আবার হাঁটু ফুলে গেলে গরম শ্যাক দিতে হবে। এছাড়া হাঁটুব্যথার কমন একটা চিকিৎসা হচ্ছে পা সোজা করে মাংশ পেশী টাইড করা আবার ঢিল দেয়া।
এছাড়া আপনার চিকিৎসকের দেয়া পরামর্শ নিয়মিত ফলো করতে হবে। সাধারনত চিকিৎসকরা কিছু কমন জিনিস সাজেশন দিয়ে থাকেন যেমন ডায়াবেটিকস থাকলে নিয়ন্ত্রনে রাখা, উচু কমোড বসা, সরাসরি নিচু না হয়ে প্রথমে হাটু গেড়ে বসা, ওজন বেশি হলে নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। বিশেষ করে হাটু ফোলা থাকলে হাটাহাটি কম করে বিশ্রামে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
হাঁটুব্যথায় ব্যায়াম: হাঁটুব্যথা থেকে নিরামইয়ের বিশেষ কিছু ব্যায়াম আছে যা নিয়মিত ও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করলে উপকার পাওয়া যায়। এই ব্যায়ামগুলো প্রতিদিন অন্তত ৩ থেকে ৪ বার করতে হবে, প্রতিবার ব্যায়ামটি করতে হবে ৮ থেকে ১০ বার করে। অর্থাৎ প্রতিবার ১০ বার করে মোট ৩ বার করতে হবে।
- হাঁটুব্যথা থেকে নিরাময়ের অন্যতম ও প্রধান একটি ব্যায়াম হচ্ছে সাঁতার কাটা। এতে জয়েন্টের ওপর চাপ কম পড়ে, কিন্তু মাংসপেশি শক্ত হয়। এক গবেষনায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত সাঁতার কাটে তাদের হাঁটুব্যথা বা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
- দুই হাঁটু সোজা করে পা দুটি টান টান করে রাখুন। এভাবে ১০ সেকেন্ড করে রাখুন। তারপর পা দুটি স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে বিশ্রাম নিন। ৮ থেকে ১০ বার ব্যায়ামটি কন্টিনিউ করুন। শুয়ে বা বসে কিংবা অফিসে কাজের ফাঁকেও এই ব্যায়াম এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।
- হাঁটুর নিচে তোয়ালে ভাঁজ করে রেখে পায়ের পাতা টান টান করে শুয়ে থাকুন ১০ সেকেন্ডের জন্য। এরপর একই অবস্থানে থেকে পায়ের পাতা স্বাভাবিক রেখে বিশ্রাম নিন। এই পদ্ধতিতে এক টানা ৫ থেকে ১০ বার ব্যায়াম করুন। এই ব্যায়ামটি হাঁটুব্যথা র জন্য তো কার্যকর বটেই সাথে মাংশপেশীর জন্য ও খুব উপকারি।
- চেয়ারের পেছনের উঁচু অংশে দুই হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। একবার ডান হাঁটু তারপর পরেরবার বাম হাঁটু ভাঁজ করুন। এভাবে ৮ থেকে ১০ বার ব্যায়াম কন্টিনিউ করুন।
উপরের ব্যায়াম গুলো নিয়মিত করার অভ্যাস করতে পারলে যেকেউ ই পরবর্তী বয়সে হাঁটুব্যথা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে আশা করি। এছাড়া কারো যদি ইতমধ্যে হাঁটুব্যথা সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এই ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্যথা কিছুটা নিয়ন্ত্রনে থাকবে আশা করা যায়।
হাঁটুব্যথা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
এতক্ষন আমরা হাঁটুর ব্যথা সারানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু আমরা যদি শুরু থেকেই সচেতন হই এবং কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলি তাহলে হাটুব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিচে আমরা কিছু উপায় বলে দিচ্ছি যার সাহাযে আপনি হাঁটুব্যথা প্রতিরোধ করতে পারবেন।
- নিয়মিত হাটা। বিশেষ করে ভোর বেলা ও সন্ধ্যার পর নিয়মিত হাটার চেষ্টা করতে হবে। এতে শুধু হাঁটুব্যথা নয় আপনার ডায়বেটিকস, স্থুলতা সহ অনেক রোগের উপকার হবে।
- বর্তমানে আমরা মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে গেছি যে বাস্তবে খেলাধুলা করার সময় ই পাই না। তাই বয়ষ্ক কিংবা বাচ্চা সবার ই খেলাধুলা করার অভ্যাস করতে হবে। এতে করে আপনার মাংশপেশী শক্ত হবে।
- যেমনটা আমরা উপরে বলেছি সাঁতার হচ্ছে এই রোগের ভালো একটি ঔষধ। তাই হাঁটুব্যথা থেকে বেচে থাকতে চাইলে নিয়মিত সাতার কাটার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের চেষ্টা করুন। বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার গ্রহনের চেষ্টা করুন।
- স্থুলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ব্যায়াম করতে পারেন। কারন স্থুলতা ও হাঁটুব্যথার একটি অন্যতম কারন।
স্কিনি প্যান্ট পরার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত জানুন
হাঁটু ব্যথার ট্যাবলেট
সাধারনত হাঁটু ব্যথার ট্যাবলেট হিসেবে এই ট্যাবলেট নিচের মেডিসিন গুলো সাজেস্ট করে থাকে। যদিও আমরা সাজেস্ট করি আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রোফারলি টেস্ট করানোর পর মেডিসিন নেয়া উচিত।
- এফেনাক
- ক্লোফেনাক
- ক্যালবো – ডি Tablet
- Neso Tablet
- Acical – D Tablet
হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়
অনেকেই জানতে চান হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় বা এই ব্যথার প্রতিকার কি? হাটুর জয়েন্টে ব্যথা মূলত হয় ক্যালসিয়াম এর অভাবে ও বয়সের কারনে। সাধারনত বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছরের উপরে হলেই হাটুর জয়েন্টে ব্যথা শুরু হয়। এই ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে কিছু ব্যায়ামের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের ক্যাপসুল দিবেন।
তাই আপনি যদি শুরু থেকে ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান তাহলে আপনি হাটুর জয়েন্টে ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন আশা করি।