ভারত থেকে মসলা আমদানি নিয়ম ২০২৩

ভারত থেকে মসলা আমদানি নিয়ম ২০২৩

খাবার সুস্বাদু করতে মসলার কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন রান্নায় ব্যবহৃত হচ্ছে নানা জাতের নানা দেশের মশলা। ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেসব জিনিস আমদানি ক্রে তার বেশিরভাগ জিনিসই ভারত থেকে আমদানি করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং সার্কভুক্ত দেশ হয় ভ্যাট বা শুল্ক কম লাগে এবং ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থার খরচ খুবই কম।

অল্প খরচে কম দামে ভালো মানের মসলা ভারত থেকে আমদানি করা সম্ভব হয়। আজকে আমরা ভারত থেকে মসলা আমদানি নিয়ম ২০২৩ বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – ভারত থেকে গরু আমদানির নিয়ম

ভারত থেকে মসলা আমদানি করার পদ্ধতি

ভারত থেকে মশলা আমদানি করার জন্য আলাদা কোন নিয়ম নেই। ভারত থেকে যে কনো পণ্য আমদানি করতে এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। আজকে আমরা সহজ উপায়ে ভারত থেকে মশলা আমদানি পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করব-

১। আমদানি লাইসেন্স করা

ভারত থেকে যেকোনো পণ্য আমদানি করার জন্য প্রথমে আপনাকে আমদানি লাইসেন্স করতে হবে। আমদানি লাইসেন্স সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজন হয়-

  • আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র
  • টিআইএন
  • ট্রেড লাইসেন্স
  • চেম্বার অফ কমার্স এর সদস্য পদের সনদ ইত্যাদি লাগবে
  • আর যদি কোন কোম্পানি গঠন করে আমদানি করতে চায় তাহলে প্রথমে কোম্পানির নাম নিবন্ধন করতে হবে
  • নাম নিবন্ধনের ৬ মাসের মধ্যে কোম্পানি গঠনে বাকি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে
  • কোম্পানি গঠন করার পর আমদানি লাইসেন্স এর জন্য আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে নিকট আবেদন করতে হবে

২। বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ

আমদানি লাইসেন্স পেয়ে যাওয়ার পর ভারত থেকে পন্য আমদানি করার কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। পণ্য আমদানির জন্য প্রথমে বিক্রেতা কে খুজে বের করতে হবে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অনলাইনে বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে বিক্রেতার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। অথবা একজন আমদানি কারকের সাহায্য নিতে পারেন। আবার চাইলে ইন্ডিয়া মার্ট বা flipkart এর মত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। সেখানে ভারতের স্বনামধন্য রপ্তানি কারকের খোঁজ পাওয়া যাবে খুব সহজে।

৩। বিক্রেতার কাছ থেকে সেম্পল সংগ্রহ করা

রপ্তানি কারকের সন্ধান পাওয়ার পর প্রথমে আপনার কাজ হবে পণ্যের স্যাম্পল নিয়ে আসা। আমদানির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আপনি স্যাম্পল দেখা ছাড়া পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা পাবেন না। তাই পণ্যের গুনাগুন সম্পর্কে সঠিক ধারণার জন্য স্যাম্পল দেখা প্রয়োজন। ভারত থেকে যে কোন পন্য আমদানি করার আগে রপ্তানি কারকের কাছ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।

৪। প্রফরমা ইনভয়েস সংগ্রহ করা এবং এলসি করা

প্রফরমা ইনভয়েস হচ্ছে রপ্তানি কারক কর্তৃক প্রস্তুত একটি ইনভয়েস। যেখানে পণ্যের সমস্ত বিবরণ থাকে। যেমন- অন্যের পরিমাণ, পন্যের আকার, রং, গুণাগুণ, প্যাকেজের সাইজ, সকল প্রকার শর্ত ইত্যাদি। এই ইনভয়েস পাওয়ার পর আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে এবং একটি এলসি খুলতে হবে। এল সি খোলার পর বাকি কাজ হচ্ছে ব্যাংকের। ব্যাংক তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আপনাকে রপ্তানি কারকের কাছ থেকে পাওয়া ডকুমেন্ট সরবরাহ করবে।

৫। পন্য খালাস করা

ব্যাংকের কাছ থেকে ডকুমেন্ট পাওয়ার পর সেসব ডকুমেন্ট নিয়ে স্থলবন্দরে চলে যেতে হবে। সেখানে আপনি সি এন্ড এফ এজেন্ট এর মাধ্যমে ভারত থেকে পাঠানো পণ্য খালাস করতে পারবেন। পণ্য বুঝে পাওয়ার পর আপনি যেসব পণ্য ট্রাকে করে নিজের গুদামে নিয়ে যেতে পারেন।

ভারত থেকে মসলা আমদানি করার ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা

ট্রেন- বর্তমান সময় ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের মসলা ট্রেনের মাধ্যমে স্থলবন্দরে আমদানি করা হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা যায় এ বছর প্রায় ভারত থেকে মসলা আমদানির জন্য ২৬৫ কোটি সরকার পেয়েছে। বর্তমানে এই ট্রেন ব্যবস্থার মাধ্যমে টনে টনে বিভিন্ন ধরনের মসলা ভারত থেকে আমদানি করা হয়। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরগুলোতে এসব বোঝাই করা ট্রেন লক্ষ্য করা যায়।

ট্রাক- ট্রাকের মাধ্যমে কলকাতার বিভিন্ন শহরগুলো থেকে সাধারণত মসলার বড়বাজার থেকে মসলা আমদানি করা হয়ে থাকে। কলকাতা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় খুব সহজেই ট্রাক অথবা ট্রেনের মাধ্যমে মসলা আমদানি করা হয়। বড় বড় বোঝাই করা ট্রাকের মাধ্যমে রপ্তানি কারক ব্যবসায়ীরা মসলা বাংলাদেশে প্রেরণ করে থাকেন।

ভারত থেকে মসলা আমদানি করার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজেপি অথবা দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় শুল্ক দেওয়ার মাধ্যমে মসলার ট্রাকগুলো ক্লিয়ারেন্সে বাংলাদেশের প্রবেশ করে।

ভারত থেকে যেসব মসলা সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়

এলাচ- বিশ্বের মোট ১৭ জাতের এলাচ রয়েছে। দেশে আমদানি হয় অন্তত ১৩ জাতের এলাচ। বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি ৯৯% এলাচ আমদানি হয় কুয়াতে মেলা থেকে বাকি এক শতাংশ ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাত সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে।

জিরা- ভারত থেকে অবৈধ পথে সবচেয়ে বেশি যে পণ্য আসছে তা হল জিরা। ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগ রয়েছে তবে বৈধ পথে সবচেয়ে বেশি জিরা আসে ভারত থেকে। বন্দরের হিসাবে জিরার বাজারের ৬১% ভারতের দখলে। তুরস্কের দখলে ৩২ শতাংশ। মিশর পাকিস্তানও কম্বোডিয়া থেকেও কিছু পরিমাণ আমদানি করা হয় ৭৫৫৩ কোটি টাকার।

দারুচিনি- দারুচিনির বাজারে ভারত ও ভিয়েতনামের আধিপত্য। মোট আমদানির ২৬ শতাংশ আসে চীন থেকে বাকি ৪৩ শতাংশ ভারত ভিয়েতনাম থেকে। বাংলাদেশে আমদানি করা হয়ে থাকে গত বছরে দেশে প্রায় 88 কোটি টাকার এক হাজার ৬২ টন দারচিনি আমদানি হয়েছিল।

লবঙ্গ- বাংলাদেশের লবঙ্গ আমদানি পরিমাণ খুবই কম। বছরে আমদানি মাত্র ৩১০ টন পরিমানে অল্প হলেও লবঙ্গের বাজার ছয় দেশের দখলে তার মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হলো ভারত। আমদানির ৩৯ শতাংশ আসে ব্রাজিল থেকে বাকি ২৩ শতাংশ ভারত এবং বাকি শ্রীলংকা ইন্দোনেশিয়ার থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে।

রসুন- দেশি ও রসুনের কোন ছোট গুণগত মান ও ভালো তবে গৃহিণীদের পছন্দ আমদানি করার রসুনের দিকে। কেননা এসব রসুনের কোয়া বড় হয়ে থাকে আমদানি করার রসুনের বাজারে ভারত সহ থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়া ও চীনের থেকেও আমদানি করা হয়ে থাকে।

আদা- দেশীয় আদার বাইরে দেশে শুধু চীন এবং ভারতীয় আদা আমদানি করার কথা ব্যবসায়ীরা জানায়। বাংলাদেশের যে উৎপাদিত আধা হয় তা দিয়ে পরিমাণে খুবই কম যা ভারত এবং চীন থেকে আমদানি করে পরিমাণে সল্পতা পূরণ করা হয়।

হলুদ- ভারত মিয়ানমারও ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশে হলুদ আমদানি করা হয়। গত অর্থ বছরে প্রায় ২000 টন হলুদ আমদানি হয় এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানায়।

গোলমরিচ- গোলমরিচের চাহিদা মেটানো হয় মূলত ভিয়েতনাম থেকে। মোট আমদানির ৬১% আসে এই দেশ থেকে। তবে এছাড়াও ভারত থেকে মাদাগাস্কার ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ড থেকে বাকি অংশ আমদানি করা হয়। গত বছর আমদানি হয় ৬৯৮ টন।

অন্যান্য মসলা- বর্তমানে আধুনিক সময়ে বিভিন্ন মসলা বাটা বা গুড়া করার ঝামেলা হয় না কেননা এগুলা সব রেডিমেট বইয়ামে পাওয়া যায়। এখন বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় রসুনের গুড়া গুঁড়া মসলা গরম মসলা। বিভিন্ন মসলা আমদানি করা হয় বেশিরভাগ ভারত থেকে। এছাড়াও সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া পাকিস্তান থেকে এসব মসলা আমদানি করা হয়। এছাড়াও চীন নেদারল্যান্ড থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় দ্বীপের থেকেও বিভিন্ন ধরনের মসলা আমদানি করা হচ্ছে।

ভারত থেকে মসলা আমদানি

মন্তব্য

আজকে আমরা ভারত থেকে মসলা আমদানি নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভারত সম্পর্কে আরো বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন।

এছাড়াও আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply