ভারত থেকে বাইক আনার নিয়ম

ভারত থেকে বাইক আনার নিয়ম

ইন্ডিয়াতে মোটরসাইকেলের দাম খুবই কম। তাই বাংলাদেশের অনেকেই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়া থেকে কিনতে আগ্রহী হয়। ইন্ডিয়াতে মোটরসাইকেলের দাম কম হওয়ার কারণ হলো ইন্ডিয়াতেই মোটরসাইকেল উৎপাদন করা হয়। তাই আমদানি লাইসেন্স থাকলে ইন্ডিয়া থেকে বাইক কিনে বাইকের বিজনেস শুরু করা যায়।

কলকাতা থেকে বেনাপোল এবং বেনাপোল থেকে ঢাকা দূরত্ব খুবই কম তাই ট্রান্সপোর্ট খরচ অনেক কম হয়ে থাকে। আজকে আমরা ভারত থেকে বাইক আনার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – বাংলাদেশ থেকে ভারতে কুরিয়ার করার নিয়ম

ভারত থেকে বাইক আনার সহজ উপায়

ভারত থেকে বাইক আনা অনেকের কাছেই কঠিন বলে মনে হয় কিন্তু সহজ উপায় জানা থাকলে এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। আগে ১৫৫ সিসির উর্ধ্বে সব মোটরসাইকেল আমদানি নিষিদ্ধ ছিল। নতুন নিয়মে তিন বছরের অধিক পুরনো এবং ১৬৫ সিসির উর্ধ্বে সকল প্রকার মোটর সাইকেল আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে সর্বোচ্চ তিন বছর পুরাতন মোটরসাইকেল আমদানি করা যাবে। এই তিন বছর প্রমানের জন্য বিএসআইসি লাগবে। ভারত থেকে মোটরসাইকেল আনার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। যেমন-

ধাপ ১- প্রথমে সেলার এর সাথে দরদাম ঠিক করে একটি পিআই নিয়ে আসতে হবে

ধাপ ২- পিআই দিয়ে আপনাকে ব্যাংক থেকে এলসি করতে হবে

ধাপ ৩- ব্যাংকে এল সি ওপেন করার পর সেলার আপনাকে পণ্য পাঠাবে। সেটা বেনাপোল বা যে কোন বন্দ্রের দিক দিয়ে পাঠাতে পারে

ধাপ ৪- এবার আমদানি করা সকল কাগজপত্র ব্যাংকে থেকে নিয়ে কোন সিএনএফ কে দিতে হবে। ওরাই আপনার হয়ে সকল কাজ সম্পন্ন করে মোটরসাইকেল আপনাকে বুঝিয়ে দিবে।

ধাপ ৫- বাংলাদেশে বাইক আসার পর বিআরটিসি থেকে পরীক্ষা করিয়ে দিতে হবে।

ভারত থেকে বাইক আনার ভ্যাট

মোটরসাইকেল আনার ক্ষেত্রে ১৫১% ডিউটি বা ট্যাক্স দিতে হয়। এক পার্সেন্ট রেফারেন্স ভ্যালুটেক্স দিতে হয়। মোটরসাইকেলে কত ট্যাক্স আসতে পারে তা অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতে অর্থবছরে ফোর স্টোকের ৫০cc থেকে অনধিক ২৫০cc ক্ষমতাযুক্ত মোটরসাইকেল এর আমদানি শুল্ক অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে।

fore stock এর ৫০cc থেকে ২৫০cc ক্ষমতাযুক্ত মোটরসাইকেলের সর্ব মোট আমদানি শুল্ক ধারণ ধার্য করা হয়েছে শতকরা ১৫১%। যদিও পুলিশ ছাড়া ১৫০ সিসির অধিক ক্ষমতাযুক্ত মোটরসাইকেল ব্যবহার করা অনুমতি নেই তবে সে ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা যাবে। তবে ১৫২% ট্যাক্স আসবে মূল দামের উপর।

আরো পড়ুন – বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীর ভ্রমণ প্যাকেজ 2023

ভ্যাটসহ বাইকের খরচ

যদি আর ফিফটিন ভি থ্রি ইন্ডিয়া থেকে কেনা হয় তাহলে-

বাইকের দাম হবে- ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং

১৫২% টেক্স হবে- ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা

এনসি খরচ- ২০০০০ টাকা

ট্রান্সপোর্ট- ৫000 টাকা

সিআইডিএফ খরচ- ২০০০০ টাকা

বিআরটিএ এবং নানা খরচ মিলিয়ে- ২০ হাজার টাকা

টোটাল খরচ- ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা বাংলাদেশের দাম হয় পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে যত বেশি পরিমাণে মোটরসাইকেল আমদানি করবে তার খরচ আরো কমে আসবে।

লাইসেন্স ছাড়া ভারত থেকে বাইক আনার নিয়ম

যে কেউই আমদানি লাইসেন্স না করে ইন্ডিয়া থেকে বাইক আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে আপনি স্যাম্পল হিসেবে এক পিস নিয়ে আনতে পারবেন ইন্ডিয়া থেকে বাইক ক্রয় করে বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে আসবেন। সেখানে কাস্টমস ইনস্ট্যান্ট আপনার ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসা বাইকের উপর একটি ট্যাক্স ধরবে।

তবে এই ট্যাক্সটা নির্ভর করবে কাস্টমস অফিসারের উপর সেই জন্য ট্যাক্সের কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না। তবে এভাবে আমদানি করলেও ট্যাক্স অনেক বেশি হয়ে থাকে।

ভারত থেকে বাইক আনার পর রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম

  • মালিকও আমদানি কারক বা ডিলারশত সঠিক ভাবে পূরণ ও স্বাক্ষর করা নির্ধারিত আবেদন পত্র
  • একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে কোন গাড়ির মালিক হলে সে ক্ষেত্রে একজনের নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য সকল সম্মতি সম্বলিত কাগজ
  • প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ক্ষেত্রে স্বাক্ষর ও সিলমূল অফ এন্ট্রি ইনভয়েস বিল অফ লিডিং ও এল সি এ কপি সিম সার্টিফিকেট বা cell intimation বা বিক্রয় প্রমাণ পত্র
  • প্যাকিং লিস্ট ডেলিভারি চালান ও গেট পাশ তিন সার্টিফিকেট এবং অগ্রিম বা অনুমিত আয় করে প্রদানের প্রমাণ পত্র
  • বিদেশি নাগরিকের নামে রেজিস্ট্রেশন বা মালিকানা বদলি হলে বাংলাদেশের ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসার মেয়াদের কপি
  • প্রস্তুত কারক বা বিআরটিএ করতে অনুমোদিত বডি ও আসন ব্যবস্থার স্পেসিফিকেশন সম্মিলিত ড্রয়িং
  • সি কে ডি মটর চ্যানেলের ক্ষেত্রে বিআরটি এর টাইপ অনুমোদন ও অনুমোদিত সংযোজনী তালিকা
  • বডি ভ্যাট চালান ও ভেট পরিষদের রশিদ
  • রেজিস্ট্রেশন ফি জমাদানের রশিদ
  • কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ছাড়পত্র
  • ব্যক্তি মালিকানাধীন আবেদনকারীর ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র পাসপোর্ট টেলিফোন বিল বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি যে কোন একটি সত্যায়িত কপি
  • নিলামে ক্রয় কিত মোটরসাইকেল হলে প্রতিরক্ষা বিভাগের গাড়ির ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদত্ত ছাড় প্ত্র
  • মটরজান পরিদর্শক কর্তৃক গাড়িতে পরিদর্শন প্রতিবেদন

ভারত থেকে বাইক কেনার সুবিধা

  • কম দামে ভালো বাইক পাওয়া যায়
  • বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন বাইক পাওয়া যায়
  • নকল বাইক হবার সম্ভাবনা কম থাকে
  • দেশের ভালো ব্রেন্ডের বাইকের তুলনায় ভারতে বাইকের দাম খুবই কম
  • ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা ভালো থাকার ফলে আনা নেওয়া অসুবিধা নেই
  • ট্রান্সপোর্ট খরচ ও কম
  • বাইকের কাগজপত্র সব রেডি করাই থাকে
  • ভারত থেকে আনা বাইক রেজিস্ট্রেশন করাও খুবই সহজ

ভারত থেকে বাইক আনার সাবধানতা

অনেকেই বর্ডার ক্রস বাইক নিলাম থেকে বা বিভিন্ন নিলামে বাইক কিনে থাকেন। সেখানে পাঁচ লাখ টাকার বাইক ২ লাখ টাকায় পাওয়া যায় কিন্তু অনেকে কম দামি বাইক কেনার লোভে অবৈধ বাইক কিনে থাকেন। যার ফলে পরবর্তীতে পুলিশ অথবা ডিবি পত্র ছাড়া গাড়ি দেখলে অথবা ট্যাক্স ছাড়া গাড়ি আমদানি করা দেখলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের মামলা হতে পারে।

তাই ভারতের বর্ডার ক্রস করা বাইকগুলো না কেনাই উত্তম। অনেকে বাইক চুরি করেও বর্ডার ক্রস বাইক হিসেবে বিক্রি করে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জেল অথবা জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্ডার ক্রস এর অবৈধ বাইকের মালিক হওয়ার চাইতে বৈধ ট্যাক্স দিয়ে কিনলে বাইক ইউজ করা বেশি নিরাপদ।

ভারত থেকে বাইক আনার নিয়ম

মন্তব্য

আজকে আমরা ভারত থেকে বাইক আনার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং বাংলাদেশ থেকে বাইক আনার নিয়ম সম্পর্কে কোন মন্তব্য ও মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই আপনাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

This Post Has 4 Comments

  1. Aktarujjaman sumon

    আমি নতুন বাইক কিনতে চাই ইন্ডিয়া থেকে সেখেত্রে কিভাবে কিনতে পারবো। ব্যবসা করার জন্য না নিজে চালানোর জন্য। প্লিজ জানাবেন।

    1. Easy Teching

      G20 sumit, Election এইসব কেন্দ্র করে এখন আগের মত বর্ডার দিয়ে বাইক আনা কমে গেছে। আর এখন পেলেও দাম কিছুটা বেশি পড়বে। আপনি নির্বাচন শেষে কিনতে পারেন। অথবা এখন চেক করেন মন মত পান কি না।

    1. Easy Teching

      বর্তমানে বাইক আনা কিছুটা কষ্টকর হয়ে গেছে আগের তুলনায়।

Leave a Reply