জিপিএফ হিসাব দেখার নিয়ম
বর্তমানে আধুনিক যুগে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই সব কাজের সমাধান করা যায়। অনলাইনে জিপিএ হিসাব দেখার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। বর্তমানে অনলাইনে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত এনআইডি এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে অনলাইন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা যায়। অনলাইনে সাধারণ প্রোফিটেড ফান্ড বা জিপিএফ দেখার নিয়ম কি তা আর্টিকেলে বিস্তারিত উল্লেখ করব।
আশা করছি জিপিএফ হিসাব দেখার নিয়ম সম্পর্কে আর্টিকেলটি ভালো থাকবে।
আরো পড়ুন – ঔষধ কোম্পানিতে চাকরির আবেদন পত্র লেখার নতুন নিয়ম
জিপিএফ কি?
জিপিএফ বা General Provident Fund হল সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল। অর্থাৎ জিপিএফের পূর্ণাঙ্গ অর্থ হল সরকারি কর্মচারী ভবিষ্যৎ প্রকল্প। এই প্রকল্প ব্যবস্থায় সরকারি কর্মকর্তারা তাদের বেতনের কিছু পরিমাণ একটি একাউন্টে ভবিষ্যতে হবে জমা করেন। যা তাদের কর্মজীবনের পরবর্তীতে অবসর গ্রহণের পর এককভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে।
সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের জেলা উপজেলা একাউন্টিং অফিসে একটি ব্যক্তিগত জিপিএফ একাউন্ট তৈরি করতে হবে মাসিক বেতনের কিছু অংশ ওই অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হয়। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে বেতন থেকেই কেটে নেওয়া হয়। বছরের শেষে মূল ব্যালেন্সের ১৩% লাভ এর সাথে উক্ত জিপিএফ একাউন্টে জমা হয়। প্রতিবছর উপজেলা ট্রেজারি একাউন্টিং অফিসে গিয়ে দেখতে হয় জিপিএ ব্যালেন্স বা জিপিএফ এ কত টাকা ব্যালেন্স আছে।
আরো পড়ুন – ইউরোপ স্টুডেন্ট ভিসা ২০২৩ – আবেদনের নিয়ম যোগ্যতা
অনলাইনে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার জন্য প্রথমেই www.cafopfm.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রথমে ভিজিট করতে হবে এবং GPF Information ক্লিক করতে হবে। সেখানে এনআইডি ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে সাবমিট করতে হবে এরপর আপনার মোবাইলে আসা ওটিপি কোড ভেরিফিকেশন করে জিপিএফ ব্যালেন্স দেখা যাবে।
পূর্বে জিপিএফ তথ্য জানার জন্য আর্থিক বছরে শেষে অর্থাৎ জুলাই মাসে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে জিপিএফ একাউন্ট স্লিপ সংগ্রহ করতে হতো কিন্তু বর্তমানে এটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাই অনলাইনে ঘরে বসে জিফিএফ ব্যালেন্স সম্পর্কে জানতে পারেন।সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ও সুবিধা বন্টনের জন্য জিপিএফ চালু করার পর জিপিএফ হিসেবে পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট শাখা অধীনে আনা হয়। তাই এখন থেকে পেনশন এবং ফান্ড ম্যানেজমেন্ট শাখা জিপিএফ ফান্ডের হিসাব নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ করবে।
জিপিএফ হিসাব দেখার জন্য যা যা প্রয়োজন
যেহেতু ঘরে বসে অনলাইনে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা যায় তাই ব্যক্তিগত কিছু নথিপত্র প্রয়োজন হবে। যার আপনাকে জিপিএ ব্যালেন্স চেক করতে সাহায্য করবে আর কোন ডকুমেন্ট ছাড়া আপনি জিপিএস চেক করতে পারবেন না। জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার জন্য প্রয়োজন –
১। এনআইডি বা স্মার্ট কার্ড
২। ফিক্সেশন এ ব্যবহারকৃত মোবাইল নাম্বার
৩। একটি ডিভাইস
৪। ইন্টারনেট কানেকশন
৫। নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ভিজিট করা
জিপিএফ হিসাব দেখার নিয়ম
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করতে প্রথমে Cafopfm.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে এরপর ধাপে ধাপে নিচের নিয়ম গুলো ফলো করতে পারেন –
১। Cafopfm.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে GPF Information অপশনে ক্লিক করলে উপরের ছবির মত পপ আপ অপশন আসবে।
২। পপ আপ এ একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। এখানে আপনাকে আপনার এনআইডি নম্বর এবং পেমেন্ট ফিক্সেশন এর জন্য ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে। এরপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
৩। মোবাইল নাম্বারে একটি এসএমএস আসবে। যেখানে একটি চার ডিজিট এর ওয়ান টাইম কোড ওটিপি পাঠানো হবে। উক্ত ৪ ডিজিটের কোডটি উল্লেখ করে আবারো সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৪। যদি তথ্য সঠিক থাকে তাহলে পরবর্তী পেজে আপনার জিপিএফ ব্যালেন্স বা জিপিএফ হিসাব দেখতে পাওয়া যাবে এবং ওই পেইজে যা যা দেখতে পাবেন তা হল-
- Financial hear
- Subscriber name
- Account No:
- NID:
- Volume number
- Page number
এসব অপশনের নিচে আপনার জিপিএস ব্যালেন্স আগের বছরের হিসাব অর্থাৎ ওপেনিং ব্যালেন্স এবং ক্লোসিং ব্যালেন্স বর্তমানে আর্থিক বছরের ব্যালেন্স এবং ১৩% লাভ সহ আগের বছরের হিসাব দেখা যাবে।
জিপিএফ হিসাব ডাউনলোড করার নিয়ম
অনেকেই জিপিএপের হিসাব বের করার পর জিপিএফ হিসাব দেখার নিয়ম এর পর পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে চায়। তাদের জন্য সহজে বর্ণনা করা হলো। যদি ওয়েবসাইটে জিপিএফ হিসাব দেখার পর আপনার গণনা পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে চান তাহলে ওয়েব সাইট থেকে এক পাশে ডাউনলোড অপশন আছে সেখান থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারবেন।
জিপিএফ ব্যালেন্স হিসাব বা ক্যালকুলেশন করার নিয়ম
জিপিএফ হিসাব দেখার নিয়ম জানার পর জিপিএ ব্যালেন্স হিসাব বা ক্যালকুলেশন করার নিয়ম জানা প্রয়োজন। subscription কলামে আপনার বর্তমান অর্থ বছরের জমা হওয়ার মোট টাকার অংক দেখা যাবে। উক্ত টাকা কে আপনার প্রতি মাসে সে যে পরিমাণ টাকা কর্তন করা হয় সে টাকা দিয়ে ভাগ করতে হবে। যেমন-
উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যক্তির মাসিক বেতন ১000 টাকা প্রফিটেড ফান্ডে জমা রাখলে উক্ত subscription balance যা থাকবে সেটাকে এক হাজার দিয়ে ভাগ করতে হবে। আপনার আগের বছরের ব্যালেন্সের উপরে ১৩ পার্সেন্ট যোগ করতে হবে এবং আপনার বর্তমান বছরে মোট ব্যালেন্সের যোগ করুন। এবার মোট সংখ্যা হবে আপনার ক্লোজিং ব্যালেন্স।
এছাড়াও আপনি সহজেই প্রভিডেন্ট ফান্ডের অবস্থা বা জিপিএফ একাউন্ট এর আগের বছরের অবস্থা অথবা জিপিএফ ক্যালকুলেটর মাধ্যমে মাসিক টাকার পরিমাণ সহ বছরের অবস্থা শেষে জানতে পারবেন। এবং এজন্য আপনাকে https://cafopfm.gov.bd/calculator.php এই লিংকে যেতে হবে। এখানে ওপেনিং ব্যালেন্স আপনার বছরের শুরুর স্থিতি উল্লেখ করতে হবে। মান্থলি subscription এক বক্সে আপনার মাসিক কর্তনের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
অ্যাডভান্স উইথড্রোয়াল বক্সে আপনি যদি অগ্রিম উত্তোলন করে থাকেন সেটার পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। আর যদি উত্তোলন না করে থাকেন তাহলে বক্স খালি রাখতে হবে। রেট অফ ইন্টারেস্ট এর ঘরে সাধারণভাবে তেরো পার্সেন্ট হার উল্লেখ থাকে যদি আপনার জিপিএফ হিসেবে যদি এর থেকে বেশি ইন্টারেস্ট দেওয়া হয় তাহলে সেটি উল্লেখ করতে হবে। সবশেষে রেজাল্ট বাটনে ক্লিক করলে আপনার টোটাল মান্থলি subscription interest subscribesion balance দেখতে পাওয়া যাবে।
অনলাইনে জিপিএফ হিসাব দেখার জন্য যা যা লাগবে
যদি অনলাইনে জিপিএস হিসাব দেখার নিয়ম সহজ একটি প্রক্রিয়া তারপরেও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে। অনলাইনে জিপিএফ হিসাব দেখার নিয়মের পাশাপাশি দেখার জন্য কি কি লাগবে তা জানা প্রয়োজন। সেগুলো হলো-
১। একটি স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার অথবা ট্যাব।
২। ইন্টারনেট কানেকশন ।
৩। এনআইডি বা স্মার্ট আইডি নাম্বার।
৪। মোবাইল নাম্বার।
মোবাইলের মাধ্যমে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম
মোবাইল দিয়ে জিপিএস ব্যালেন্স চেক এবং জিপিএস হিসাব দেখতে হলে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার নিয়ম খুবই সহজ। মোবাইলে জিপিএফ একাউন্ট দেখার নিয়ম জানলে খুব সহজেই জানতে পারা যাবে আপনার জিপিএফ একাউন্টে কত টাকা জমা হয়েছে। এ কাজের জন্য নিজের পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করতে হবে-
১। প্রথমে আপনাকে www.cafopfm.gov.bd/ এই লিংকে ক্লিক করে প্রবেশ করতে হবে। এরপর ফোনের স্ক্রিনে জিপিএস তথ্য একটি পেজ আসবে। জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করতে দুটি অপশন আসবে অপশন দুটি হলো এনআইডি বাই স্মার্ট কার্ড এখানে এনআইডি বা স্মার্ট কার্ডের নাম্বার দিতে হবে এবং আরেকটি হল ফোন নাম্বার এখানে আপনার নিজের মোবাইল নাম্বার দিতে হবে অর্থাৎ prefication বা ফিফটি করার সময় যে নাম্বার দিয়েছিলেন এখানে সেই নাম্বারে দিতে হবে।
২। এনআইডি কার্ডের নাম্বার এবং মোবাইল নাম্বার দেয়া হয়ে গেলে সাবমিট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৩। এরপর মোবাইলে নাম্বার একটু ওটিপি কোড চলে আসবে এবং সেই কোড ফোনের স্ক্রিনে আসা বক্সে দিয়ে সাবমিট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৪। এবার জিপিএফ একাউন্টের ব্যালেন্স দেখতে পাবেন এবং এখান থেকে জানতে পারবেন আপনার জিপিএফ একাউন্টে কত টাকা আছে নিচে আপনি ওপেনিং ব্যালেন্স সাবস্ক্রিপশন রিফান্ড প্রো ফিড উইথ ড্রাল ক্লোসিং ব্যালেন্স ইত্যাদি সব দেখতে পাবেন।
৫। এছাড়া আপনি চাইলে উপরে ডান দিকের প্রিন্ট বাট অনেক ক্লিক করে জিপিএফ স্টেটমেন্ট ডাউনলোড করে নিতে পারেন। জিপিএফ এর টাকা তোলার জন্যই প্রিন্ট কপি ব্যবহার করা যাবে এতে কোন প্রকার অফিসিয়াল স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় না।
মন্তব্য
আজকে আমরা জিপিএফ হিসাব দেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব এবং জিপিএফ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত তথ্যের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- মাদ্রাসা এমপিও নোটিশ কিভাবে দেখে
- অনলাইনে বিদেশে চাকরির আবেদন করার নিয়ম
- সোনালী ব্যাংক স্কলারশিপ আবেদনের নিয়ম 2023