ঈদের নামাজ কি
ঈদের নামাজ আরবিতে সালাতুল ঈদ বা সালাতুল ঈদাইন হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদের দিনে বিশেষভাবে পড়া সালাত। মুসলিম প্রধান দেশে ঈদের নামাজ বেশ আনুষ্ঠানিকতার সাথে পালন করা হয় এবং এটা বিশ্বাস করা হয় এই দিন মুসলমানদের জন্য পুরষ্কার স্বরূপ। যদিও আমাদের দেশে ঈদের নামাজ সাধারনত মসজিদে আদায় করা হয় তবে ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে আদায় করা শ্রেয়।
আজকে আমরা ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম ও মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আরো পোড়ুন – রমজানে পার্ট টাইম জব বাংলাদেশ ২০২৩
ঈদের নামাজ পড়ার সময়
সাধারনত সূর্যদয়ের পর থেকে যোহরের সালাতের পূর্বে ঈদের নামাজ পড়া যায়। তবে ইসলামে ঈদুল ফিতর এর নামার একটু দেরিতে এবং ঈদুল আযহার নামাজ দ্রুত পড়া সুন্নত হিসেবে পাওয়া যায়। যেহেতু ঈদুল আযহার নামাজের পর পশু কুরবানির মত গুরুত্বপূর্ন কাজ থাকে তাই নবিজী ঈদুল আযহার নামাজ যথাসম্ভব দ্রুত পড়তেন। অন্যদিকে ঈদুল ফিতরের দিন নবীজি দেরি করে পড়তেন পাওয়া যায়। তাই সংক্ষেপে বললে সূর্যদয়ের পর থেকে যোহরের পুর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাজ পড়া যায় তবে ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আযহার নামাজ একটু দ্রুত পড়া শ্রেয়।
আরো পড়ুন: হিজামার উপকারিতা কি? হিজামা কিভাবে করা হয়
ঈদের নামাজের নিয়ত আরবিতে
যেকোন নামাজের ক্ষেত্রে নিয়ত হচ্ছে অপশনাল অর্থাৎ নিয়ত মুঝে উচ্চারন করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে এরপর ও করতে চাইলে আরবি বা বাংলা যেকোনভাবে ই নয়ত করতে পারেন।
আরবি নিয়তঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতা সালাতি ঈদিল ফিতর, মায়া ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা নিয়তঃ ঈদের ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সাথে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখি হয়ে শুধু আল্লাহর জন্য আদায় করছি … আল্লাহু আকবার।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা কয়েকজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম এখন আমরা বিস্তারিত জানবো। দুই ঈদের নামাজের আযান ইকামত হয় না তবে অন্যান্য নামাজের মত উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ ও রুকু সিজদার মত ই সালাত আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সাথে আদায় করতে হয়। প্রথম রাকাতে হাত বেধে অতিরিক্ত ৩ তাকবিরের পর সূরা ফাতিহার সাথে সুরা মিলাতে হয়। আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা মিলানোর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দিয়ে রুকুতে যেতে হয়।
প্রথম রাকাতঃ
- তাকবিরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাধা।
- সানা পড়াঃ ” সোবহানাকা আল্লাহুমা অবেহামদিকা অতাবারা কাসমুকা অতায়ালা যাদ্দুকা ও লাইলাহা গাইরুকা।”
- অতিরিক্ত ৩ টা তাকবির দেয়া। প্রথম তাকবির দিয়ে হাত ছেড়ে দিতে হবে এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে পুনরায় হাত বেধে নিতে হবে।
- এরপর সূরা ফাতিহার সাথে অন্যান্য নামাজের মত সূরা মিলাতে হবে এবং রুকু সিজদার সাথে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
দ্বিতীয় রাকাতঃ
- বিসমিল্লার সাথে সূরা ফাতিহা তিলওয়াত করা ও নরমাল নামাজের মত সূরা মিলানো।
- সূরা মিলানো হয়ে গেলে রূকুতে যাওয়ার আগে প্রথম রাকাতের মত অতিরিক্ত তিন তাকবির দেয়া। প্রথম তাকবিরে হাত ছেড়ে দিতে হবে এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বাধা
- অতিরিক্ত তিন তাকবির দেয়া হয়ে গেলে অন্যান্য নামাজের মত রূকু সিজদা করা।
- সর্বশেষ তাশাহুদ ও সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করতে হবে।
ঈদের নামাজের খুতবা
ঈদের নামাজ শেষ করে ঈমাম খুতবা দিবে এবং উপস্থিত মুসল্লিরা তা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। তবে অনেক ইসলামি স্কলার খুতবার ব্যাপাতে শিথিলতার কথা বলেছেন। অর্থাৎ অনেক স্কলারের মতে খুতবা না শুনলেও ঈদের নামাজ হয়ে যাবে। তবে খুতবা শুনে একবারে বাসায় যাওয়া ই শ্রেয়।
আরো পড়ুন: শবে কদর নামাজ কত রাকাত | লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম
মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান
হ্যা, মহিলারা চাইলে ঈদগাহে যেতে পারবেন এবং ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে মহিলাদের ঈদের নামাজ সুন্নত নাকি নফল এটা নিয়ে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। যেমন ঈমাম শাফেয়ি রঃ এর মতে মহিলাদের ঈদ গাহে যাওয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ নারীরা চাইলে ঈদ গাহে যেতে পারবেন এবং আলাদাভাবে পর্দার সাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
অন্যদিকে ইমাম হানাফি রঃ এর মতে নারীদের ঈদের নামাজ পড়া নফল। আর নফল নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ।সে হিসেবে মহিলাদের ঈদগাহে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা শরিয়ত সম্মত নয়।
মধ্যাকথা হলো, যেহেতু আমাদের দেশে নারীদের ঈদের নামাজের জন্য ঈদ গাহে আলাদা তেমন কোন ব্যবস্থা করা হয় না তাই যদি কেউ চায় বাসায় ঈদের নামাজ নফল হিসেবে আদায় করে নিতে পারেন আর এটাই শ্রেয় হবে।
ঈদের নামাজ মাসবুক হলে করনীয়
ঈদের নামাজ মাসবুক হলে করনীর সম্পর্কে এখন আমরা জানবো। প্রথমে জেনে নেয়া যাক মাসবুক কি। মাসবুক হচ্ছে যে মুক্তাদি ঈমামের পেছনে নামাজ পড়তে গিয়ে নামাজের কিছু অংশ মিস করে ফেলেছে বা ধরতে পারেনি। অর্থাৎ আপনি যদি জামাতে নামাজ পড়তে যান আর ঈমাম অলরেডি কিছু পরিমান নামাজ শেষ করে ফেলেছেন তাহলে আপনি মাসবুক। এখন দেখা ঈদের নামাজ মাসবুক হলে করনীয় কি
ঈদের নামাজের কিছু অংশ বাদ গেলে করনীয়ঃ ঈদের নামাজের প্রথম রাকাতে কিরাত অবস্থায় শরিক হলে তাকবীরে তাহরীমার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলে নিবেন। এরপর বাকি নামায যথানিয়মে ইমামের সাথে আদায় করবে। এক রাকাত ছুটে গেলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে আগে সূরা-কিরাত পড়বে এরপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে।
আর কোনো ব্যক্তি ইমামের তাশাহহুদ অবস্থায় জামাতে শরিক হলে তার নামাযও সহীহ হবে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের সালামের পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই দুই রাকাত নামায পড়বে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে। অতপর কিরাত পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো সঠিকভাবে বলবে যেমন টা আমরা উপরে আলোচনা করেছিলাম।
আরো পড়ুন – শবে কদর নামাজ কত রাকাত
বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়া যাবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাব হচ্ছে হ্যা, পড়া যাবে। তবে বিশেষ প্রয়োজন বা সমস্যা না থাকলে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের সালাত আদায় করাই শ্রেয়। বর্তমানে করোনা মহামারির কারনে অনেক দেশে বড় জমায়েত করতে দিচ্ছে না সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে অনেকে বাসায় ঈদের নামাজ পড়তে হচ্ছে।
বাসায় ঈদের নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই জামাতের সাথে পড়তে হবে এবং খুতবা দিতে হবে। এবং ঈদের নামাজের জামাতের ক্ষেত্রে ঈমাম ব্যতিত নূন্যতম তিনজন মুসল্লি থাকতে হবে। এই শর্থগুলো পূরন হলেই পরিবারের সাথে বারিতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: নামাজের নিষিদ্ধ সময় | যে ৩ সময়ে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ
ঈদের নামাজ কয় তাকবীর
যেমনটা আমরা উপরে আলোচনা করেছি ঈদের নামাজে নরমাল দুই রাকাত নামাজের তুলনায় অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সাথে আলোচনা করতে হয়। অর্থাৎ তাকবিরের দিক থেকে ঈদের নামাজ অন্যান্য দুই রাকাত নামাজের মত ই শুধু প্রথম রাকাতের শুরুতে ও দ্বিতীয় রাকাতের শেষে ৩ তাকবির করে অতিরিক্ত মোট ৬ টা তাকবির দিতে হয়।
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজের পার্থক্য
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজের মধ্য কোন পার্থক্য নেই। তবে নামাজের সময় নিয়ে নবিজীর কিছু বিশেষ দিক নির্দেশনা রয়েছে। যেমন ইদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরি করে পড়া উত্তর সে তুলনায় ঈদুল আযহা একটু আগে পড়া হয় কেননা নামাজের পর পশু কুরবানীর কাজ বাকি থাকে।
এছাড়া ঈদুল ফিতরে নামাজে যাওয়ার আগে নবিজী মিষ্টি মুখ করে বের হতেন কিন্তু ঈদুল আযহায় এমন কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
শেষ কথা
ঈদ আমাদের মাঝে ভালোবাসা ও মায়ার বার্তা নিয়ে আসে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ এই দিনে পুরনো সব ব্যথা বেদনা ভুলে সমাজে ও পরিবারে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়া। ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম নিয়ে কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে এই পোষ্টে কমেন্ট কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ
আরো পড়ুন – রমজানে পার্ট টাইম জব বাংলাদেশ ২০২৩