চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম
গরমের শুরু অথবা শীতের শেষ সময়ের দিকে চিকেন পক্স বা জল বসন্ত অনেকের ত্বকেই উঠতে দেখা যায়। এ সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শরীরে বাসা বাধে বিভিন্ন ধরনের স্কিনের রোগ। যার মধ্যে জল বসন্ত বা চিকেন পক্স উল্লেখযোগ্য।
আজকে আমরা চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম ও এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব।
আরো পড়ুন – লজ্জাস্থানের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
চিকেন পক্সের লক্ষণ
চর্মরোগ গুলোর লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি হয়ে থাকে। তাই চিকেন পক্স হলে চিনতে সুবিধা হওয়ার জন্য চিকেন পক্ষে লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
- চিকেন পক্স শুরু হওয়ার পূর্বে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে
- হালকা ব্যথা থাকে গায়ে
- অল্প অল্প জ্বর পরবর্তীতে অনেক জ্বর থাকে
- গায়ে ছোট ছোট বিচি বা উঠবে
- সাধারণত এই বিচিগুলো বুকে পিঠে প্রথমে দেখা যায়। পরে সারা শরীরে উঠতে পারে।
- এই বিচিগুলোতে পানি থাকে
- দেখতে অনেকটা ফোসকার মত হয়
- শিশুদের জন্য অনেক সময় কোন উপসর্গ ছাড়াই সরাসরি রেস দেখা যায়
- এইরাশ বেশ চুলকায়
- মুখের ভেতরে চোখে হাতে পায়ের তালুতে মাথায় হতে পারে
- গলা ব্যথা মাথাব্যথা জ্বর ক্লান্তি সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে
পক্সের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম ব্যবহারের পুর্বে অবশ্যই ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা করা উচিত। ঘরোয়া ভাবে খুব সহজেইপক্সের দাগ দূর করা যায়। এই উপায় গুলো খুবই সহজ এবং এসব উপাদান সবার ঘরেই থাকে। তাই খুব সহজে এসব ব্যবহার করে চিকেন পক্সের দাগ দূর করার সম্ভব।
ডাবের পানি- কয়েক দিন পর পর ডাবের পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে চিকেন পক্স এর দাগ খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়।
খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার- চিকেন পক্সের দাগ দূর করার জন্য খাটি নারিকেল তেল ব্যবহার খুব দ্রুতই চিকেন পক্সে দাগ সারাতে পারে।চিকেন পক্সের দাগ দূর করার উপায় এর মধ্যে অন্যত্ম। দিনে তিন থেকে চার বার এই নারিকেল তেল ব্যবহার করা উচিত।
লেবুর রস এবং হলুদ- লেবুর রস বিভিন্ন দাগ দূর করে। এ জন্য এক টুকরা তুলা সামান্য লেবুর রস নিয়ে পক্সের দাগ এর উপর ব্যবহার করলে সহজে ই পক্সের দাগ চলে যায়।
এলোভেরা- এলোভেরা চুলের জন্য খুবই উপকারী পাশাপাশি চিকেন পক্সের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। এলোভেরা কেটে জল বের করে পক্সের দাগে লাগালে খুব দ্রুত পক্সের দাগ মিশে যায়।
মধু- মধুতে আছে প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি পক্সের দাগ ও ছোপ দূর করে। প্রতিদিন পক্সের দাগের উপর হালকা মধু নিয়ে মাসাজ করলে ধীরে ধীরে দাগ চলে যায়।
ওটস- মধুর সাথে ওটস মিশিয়ে দাগের উপর লাগালে খুব সহজেই পক্সের দাগ চলে যায়। আধাঘন্টা পর্যন্ত রেখে এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
বেকিং সোডা- এটি একটি অ্যালক্যালিন পদার্থ যার অ্যাসিডিটি খুব নিচুস্তরের। হাফ টেবিল চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে নিয়ে দাগযুক্ত স্থানগুলোতে প্রতিদিন লাগাতে হবে।
গাঁদা ফুল- চিকেন পক্সের দাগ দূর করার জন্য এই ফুলের জুড়ই নেই। দুই টেবিল চামচ গাঁদা ফুলের পাপড়ি এক কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পেস্ট করে দাগের উপর রাখতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি এই দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
চন্দন তেল- রূপচর্চার জন্য আমরা অনেকেই এই তেল ব্যবহার করে থাকি। তবে চন্দন তেল চিকেন পক্স জনিত দাগ গায়েব করতে এর জুড়ি নেই। চন্দন তেলের সাথে ভিটামিন ই ওয়েল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
গাজর- গাজর 100 গ্রাম ব্লেন্ড করে গাজরের পেস্ট প্রতিদিন চিকেন পক্সের দাগের উপর ব্যবহার করলে খুব সহজেই চিকেন পক্সের দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হলুদ- হলুদ খুব সহজেই চিকেন পক্সের দাগ দূর করার জন্য অধিক কার্যকর একটি উপাদান। যা ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বসন্ত বা পক্স এর দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
মাখন – চিকেন পক্স এর দাগের স্থানে টাটকা মাখন লাগাবেন। বিশেষ করে বয়ষ্কদের চামড়ায় এটি ভালো কাজ করে। সাধারনত ৭ দিনের মধ্যে এই দাগ দূর হয়ে যায়।
চিকেন পক্স এর ঔষধ
পক্সের দাগ দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম এবং অয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়। এসব ক্রিমের মধ্যে ওকুভির ৫% ক্রিম চিকেন পক্সের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নিউট্রোজিনা অন দ্য স্পট একনি ক্রিম পক্সের দাগ দূর করার জন্য এই ক্রিম উল্লেখযোগ্য।
সতর্কতাঃ আপনার যদি সেনসিটিভ ত্বক হয় বা শরীরে অতিরিক্ত এলার্জি থাকে তাহলে অবশ্যই ওকিভির ৫% ক্রিম নেয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কেননা এই ক্রিম ত্বকের প্রতি বেশ সেনসিটিভ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ওকুভারি ৫% ক্রিম চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম পাশাপাশি যৌনাঙ্গে হার্পিস সমস্যার জন্য ও ব্যবহার করা হয়।
চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম
বাজারে বিভিন্ন ধরনের পক্সের ঔষধ পাওয়া যায়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে পক্স ৫০০ এমজি ট্যাবলেট খাওয়ানো উচিত। এটি একটি এন্টিবায়োটিক ওষুধ যা পক্সকে সংক্রমিত হতে রোধ করে।
কি কি খেলে চিকেন পক্স ভালো হয়
চিকেন পক্স হলে অনেকগুলো খাবারই শরীরের জন্য অনেক উপকার করে। এসব খাবারের নাম জানা থাকলে চিকেন পক্স সংক্রমিত হয় না এবং চিকেন পক্সের দাগ হয় না।
- এ সময় রোগীকে বেশি বেশি ক্যালরি ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে
- মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সুপ খাওয়ানো যেতে পারে
- ইলিস ছাড়া যে কোন মাছের পাতলা ঝোল এবং ভাত খাওয়া যায়। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
- পক্স হলে রোগীকে বেশি বেশি ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে। এটি শরীরে পুষ্টি যোগাবে। তবে লেবুর রস খাওয়ানো যাবে না কারণ এতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে উচ্চমাত্রার। মুখের ভিতরে ক্ষতস্থানে জ্বালা যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে।
- এন্টিব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ কাঁচা পেঁপে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়
- এক চা চামচ মধুর সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়
- বেশি করে পানি বিভিন্ন ফলের জুস বাটার দুধ খাওয়া যেতে পারে
আরো পড়ুন – চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম
কোন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা
পক্স হলে অনেকগুলো খাবার এড়িয়ে চলা উচিত এতে শরীরে চিকেন পক্স সংক্রমণ বেশি হয় না এবং চুলকানো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- টক জাতীয় খাবার। এতে এসিড থাকে যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশবিস্তার করে
- বসন্তের সময় লেবু একেবারেই খাওয়া যাবে না
- অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা
- পক্স হলে মুখের ভিতরেও ক্ষত সৃষ্টি হয় ঝাল খাওয়া জাবেনা। ঝাল লাগলে প্রদাহ বেড়ে যাবে
- চর্বি জাতীয় খাবার যেমন- মাখন তেল বাদাম পনির নারিকেল বা চকলেট জাতীয় খাবারের অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে যা পক্স বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
- লেবু এ সময় লেবু বা টক জাতীয় সাইট্রিক এসিড নিঃসৃত কোন খাবার রোগীকে খাওয়ানো যাবে না
চিকেন পক্সের টিকা ও দাম
বর্তমানে চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন বিভিন্ন ক্লিনিক বা হসপিটালে দেওয়া যায়। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যে চিকেন পক্স ভ্যাকসিন শিশুকে দেওয়া হয়। এটি ১২ বছর বয়স পর্যন্ত এক ডোজ তার বেশি বয়সে দুই মাস অন্তর পর পর দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া যায়।
সংস্পর্শ ঘটার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন দিলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে পক্স কম সংক্রমিত হয়। পক্সের এই ভ্যাকসিন বিভিন্ন হসপিটালে বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। বর্তমানে এটি ২০০ থেকে ৬০০ টাকা ও হয়ে থাকে।
চিকেন পক্স হলে করনীয়
চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম নাম জানার পূর্বে অবশ্যই জেনে নেয়া উচিত চিকেন পক্স হলে কি কি করতে হয়। যে কোন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা ঘরে করলেই অসুখ গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায় না।
- পক্সের ব্যথার হাত থেকে নিস্তার পেতে হলে সব সময় শরীর ঠান্ডা জল দিয়ে মুছে নিতে হবে। এতে খানিকটা আরাম মিলবে
- সব সময় রোগীর শরীর ঠান্ডা রাখা উচিত ।
- প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করতে হবে
- তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে কখনোই গোসল করানো যাবে না
- নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। নিমের অ্যান্টিসেপটিক উপাদান পক্স দূর করতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন দুবেলা করে জামা কাপড় বদলানো উচিত করা
- প্যারাসিটামল খেতে পারে। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- প্রতিদিন দুবেলা করে জামা কাপড় বদলানো উচিত। এতে সংক্রমনের ঝুঁকি কমে যায়
- সব সময় সুতি কাপড় ও পাতলা কাপড় পড়তে হবে। এতে চুলকানি বা অস্বস্তি বাড়ে না
- পক্সে চুলকানি হলে নখ লাগানো যাবে না। নক লাগালে স্থায়ীভাবে পক্সের দাগ থেকে যেতে পারে
- শিশুদের শরীরে পক্স হলে নখ ছোট করে দিতে হবে
- পক্সের চুলকানি কমাতে অলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন লাগানো যেতে পারে
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ এবং পক্সের উপর অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগানো যেতে পারে
চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম
আজকে আমরা চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম নিয়ে একটি আর্টিকেল শেয়ার করেছি। আশা করছি চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম এই আর্টিকেলটি দৈনন্দিন জীবনে এটি সবার অনেক কাজে লাগবে। চিকেন পক্সের দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –