চোখের এলার্জির ড্রপের নাম – চোখের এলার্জি দূর করার উপায়

চোখের এলার্জির ড্রপের নাম

এলার্জি খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ । শরীরের যে কোন জায়গায় এলার্জি হলে অনেক চুলকায় যা খুবই অস্বস্তিকর। তবে চোখে এলার্জি হলে চোখ দিয়ে পানি পড়া কিংবা চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মত মারাত্নক সমস্যাগুলো হয় যা মাঝে মাঝে বেশ জটিল আকার ধারন করে। যেহেতু এলার্জির পার্মানেট সমাধান নেই তাই শুরু থেকেই কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

আজকে আমরা চোখের এলার্জির ড্রপের নাম ও চোখের এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

চোখের এলার্জির হবার লক্ষণ

চোখের এলার্জির ড্রপের নাম জানার আগে এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কে ভালো আইডিয়া থাকা উচিত। যদিও এলার্জি ছাড়াও বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হতে পারে। তাই চোখের এলার্জি হবার কতগুলো নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে যা দেখে খুব সহজে এলার্জি সনাক্ত করা যায়। যেমন –

  • চোখ প্রচুর পরিমাণে চুলকানো
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া
  • চোখ দিয়ে পানি পড়া
  • চোখ ফুলে যাওয়া
  • চোখের ভিতর খচখচ করা
  • চোখে রক্ত উঠে যাওয়া
  • চোখে এলার্জি হলে দুই চোখে এক সাথেই হয়
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ার সাথে সাথে ঠান্ডা বা সর্দি হওয়া

চোখে এলার্জি হওয়ার কারণ

মূলত বংশগত কারনে অথবা শরীরের ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা হলেই শরীরে এলার্জির আবির্ভাব ঘটে । যেসব ভাইরাস এলার্জি সৃষ্টি করে সেটাকে এলার্জেন বলা হয় ।এলার্জি অনেক কারনে হতে পারে যেমন ধুলোবালি ,খাবার সহ বিভিন্ন কোন বস্তু তে। তবে রোগীর ধরনে ভেদে এলার্জির কারন ও ভিন্ন হতে পারে। যেমন –

  • রাস্তার ধুলাবালি চোখে ঢুকলে
  • পোষা প্রাণী থেকেও এলার্জি হয়ে থাকে
  • ঘরের কার্পেট বা পর্দার জমে থাকা ধুলাবালি চোখে প্রবেশ করলে
  • চোখে জমে থাকা ময়লা ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে
  • শরীরে এলার্জির পরিমাণ বেশি হলে
  • এলার্জি যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে (ইলিশ, বেগুল, হাসের ডিম ইত্যাদি)
  • পারফিউম বা বডি স্প্রে চোখে প্রবেশ করলে
  • চোখের যত্ন না নিলে
  • শরীরে অন্যান্য কঠিন রোগের প্রভাবে

চোখে এলার্জি হলে করণীয়

সাধারণত যাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সর্দি কাশি এলার্জির কারণে হয়ে থাকে তাদের মধ্যে চোখে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে এলার্জি হলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে চোখে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।

চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করা- চোখে এলার্জি হলে অবশ্যই চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত ।সানগ্লাস ব্যবহার করলে চোখে ধুলা বালি প্রবেশ করতে পারে না ফলে চোখ সুরক্ষিত থাকে এবং এলার্জির চুলকানো কম হয়।

এলার্জির দিনগুলোতে বাইরে কম বের হওয়া- চোখের এলার্জির ড্রপ বাজারে পাওয়া গেলেও সাবধানতা অবলম্বন করলে ড্রপ এর প্রয়োজন হয় না। চোখে এলার্জি হলে এলার্জি দিনগুলোতে বাইরে বের হওয়া উচিত। বাইরের জীবাণু ধুলাবালি চোখে প্রবেশ করবে।

ঘর এবং লিভিং রুম পরিষ্কার রাখা- মূলত এলার্জি ধুলাবালির কারণে হয়ে থাকে তাই এলার্জি দিনগুলোতে ঘরের ভিতরে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে ধুলোবালি জমে থাকে। বিশেষ করে ঝাড়ু দেয়ার পর অবশ্যই মেঝে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার না করা- অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কন্টাক লেন্স ব্যবহারের ফলে চোখের এলার্জি ও হয়ে থাকে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যাদের চোখে এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার না করাই উত্তম।

চোখের ড্রপ ব্যবহার করা- অনেকক্ষেত্রে চোখের এলার্জি মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে তাই চোখ এলার্জি হলে দেরি না করে সাথে সাথেই চোখের ড্রপ ব্যবহার করলে এলার্জি আক্রমণ কম হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হওয়া যায়।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া- বিভিন্ন কারণে চোখের অ্যালার্জি হতে পারে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের চিকিৎসা করা উচিত অথবা ড্রপ ব্যবহার করা উচিত।

এয়ারকন্ডিশন ব্যবহারে ফিল্টার ব্যবহার করা- এয়ার কন্ডিশন রয়েছে তারা ভালো ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত যাতে করে ধুলাবালি না জমে। এয়ারকন্ডিশন ব্যবহারের সময় বায়ো ফিল্টার ব্যবহার করলে ঘরের ভিতরের বায়ু পরিবর্তিত হয় যার ফলে এলার্জি হয় না।

হাঁচি কাশি হলে চোখে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধোয়া- ঠিক আছে সাধারণত এলার্জির কারণে হয়ে থাকে শরীরে এলার্জি পরিমাণ বাড়লে চোখে এলার্জি হয়। তাই যখনই হাঁচি কাশি হবে চোখে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

এলার্জি হলে চোখ না চুলকানো- চোখে এলার্জি হলে চুলকানির রোগ দেখা দেয়। চুলকানি হলে চোখ আরো বেশি লাল ও মারাত্মক হয়ে ওঠে। তাই চোখে এলার্জি হলে চোখে হাত দিতে হবে।

চোখে পানির ঝাপটা দেওয়া- এলার্জি সহ বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হলে বা চুলকালে প্রথম কাজ হচ্ছে চোখ পরিষ্কার এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া। বারবার চোখে পানির ঝাপটা দিলে কিছুটা স্বস্তি মিলে।

কাপড়ে বরফ নিয়ে চোখ চোখে চাপ দেওয়া- স্বাভাবিকভাবে চোখে এলার্জি হলে চোখ জ্বালাপোড়া করে তাই বাসায় থাকা বড় এক টুকরা পাতলা সুতি কাপড়ের নিয়ে চোখের উপর চাপ দিয়ে ধরে রাখলে চোখের জ্বালাপোড়া কিছুটা হলেও কমে।

চোখে নখ লাগানো যাবে না- চোখে নখ লাগালে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। কিংবা ছুলে যেতে পারে। তাই চোখ চুলকালে ও চোখে এলার্জি সময় মুখ লাগানো উচিত নয়।

 চোখের এলার্জির ভালো ড্রপের নাম

বাজারের চোখের এলার্জির জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও ড্রপ পাওয়া যায়। তবে চোখ শরীরে সেনসিটিভ অঙ্গ তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ড্রপ  গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে বাজারের কিছু চোখের এলার্জির ড্রপের নাম আজকে আমরা শেয়ার করব ।  বাজারে ড্রপ গুলোর মধ্যে এগুলো গুলো খুব ই কার্যকরী।

  1. dexagent
  2. Lovicin
  3. Dexagent ট

চোখে এলার্জির ঘরোয়া সমাধান

চোখের এলার্জির ড্রপের নাম জানা থাকলেও শুরুতে চোখের এলার্জিতে ঘরোয়া সমাধান ট্রাই করা উচিত। সাধারণত যারা বাজারে নকল ঔষধ ব্যবহার করতে ভয় পান তারা ঘরোয়াভাবে চোখে এলার্জি হলে তা দূর করার জন্য ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেন।

গোলাপজল- গোলাপজল চোখের এলার্জিতে অনেক উপকারী। চোখের এলার্জি হলে দুই থেকে তিন ফোটা গোলাপ জল দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলে। চোখে যে কারণেই এলার্জি হোক তার জীবাণু মরে যায়। গোলাপ জল ব্যবহার করার পর কতক্ষণ চোখ বন্ধ রাখতে হবে কেননা চোখ খুললে গোলাপজল পড়ে যাবে।

ঠান্ডা পানির ঝাপ্টা- চোখে এলার্জি হলে বারবার ঠান্ডা পানি ঝাপটা দিতে হবে। বারবার চোখে পানির ঝাপটা দিলে চোখে ধুলো বালি জমবে না।

বরফ- চোখে এলার্জি হলে বরফ  অনেক কার্যকরী। এক টুকরা বড় একটি পাতলা সুতি কাপড়ে পেঁচিয়ে দুই চোখে হালকা হালকা চাপ দিলে এলার্জি চুলকানি অনেক কমে যায় এবং লাল হওয়া ভাব কমে আসে।

লবণ পানি- এক গ্লাস পানির মধ্যে তিন চামচ লবন দিয়ে মিশিয়ে নিন। পানিতে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হবার পর এক টুকরো তুলোয় ভিজিয়ে চোখের উপর আলতো করে মুছে নিন। চোখে এলার্জির কারণে জ্বালাপোড়া ব্যথা কমে যাবে এবং চোখ পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সানগ্লাস পরা- চোখে এলার্জি হলে চোখে ধুলো বালি থেকে রক্ষা করার জন্য বাইরে গেলে চোখে সানগ্লাস পরা উচিত তাহলে চোখে ধুলো বালি পরেনা। এতে করে চোখে চুলকানো ভাব  কম হয়।

সায়েনি- এটি এমন একটি বস্তু যা অনেকের কাছেই অপরিচিত। এটি দেখতে কিছুটা মরিচের মত শক্ত। চোখ পরিষ্কার করার জন্য শায়েনি অনেক উপকারী।

চোখ পরিষ্কার রাখা- চোখে এলার্জি হলে প্রথম শর্ত হচ্ছে চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে। চোখ পরিষ্কার না থাকলে এলার্জির কারণে চুল্কাবে ও জ্বলবে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন- সাধারণত চোখের এলার্জি হলে উল্লেখিত চোখের এলার্জির ড্রপের নাম ব্যবহার করলে চোখের এলার্জি চলে যায়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় চোখের এলার্জির অনেক মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাহলে বাসায় বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অবশ্যই হসপিটালে যাওয়া উচিত।

চোখে এলার্জি হলে কি কি খাবেন না

অনেকেই চিন্তিত থাকেন চোখে এলার্জি হলে কোন কোন খাবার খাবেন বা কোন কোন খাবার পরিহার করবেন। চোখে এলার্জি হলে আপনার যে খাবারে বাজে বস্তুর এলার্জি তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বিভিন্ন এলার্জি যুক্ত খাবার যেমন

  • বেগুন
  • হাঁসের মাংস
  • গরুর মাংস
  • হাসের ডিম
  • চিংড়ি মাছ
  • ইলিশ মাছ

মন্তব্য

আজকে আমরা চোখের এলার্জির ড্রপের নাম ও চোখের এলার্জি হলে ঘরোয়া কিছু সমাধান সহ চোখে এলার্জি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগবে।

চোখের এলার্জির ড্রপের নাম

আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন-

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply