কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট তালিকা

কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট

শহুরে জীবনের ব্যস্ততার একঘেয়েমি কাটাতে মন প্রায় সই ব্যাকুল হয় আর তখন ইচ্ছে থাকলেও সময়ের অজুহাতে দূরে কোথাও যাওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে ঢাকার আশেপাশের রিসোর্ট থেকে পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে মধ্যবিত্তরা কম বাজেটের সেরা রিসোর্টগুলো থেকে ঘুরে আসতে চান।

রিসোর্টগুলো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গুগলের রেটিং, বিভিন্ন ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রিভিউ, খরচ, সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে আলোচনা করব কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট সম্পর্কে।

ঢাকার আশেপাশের সেরা ১০ টি রিসোর্ট

এই পর্যায়ে আমরা কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট তালিকা প্রকাশ করবো। এখানে কোন রকম প্রোমোশনাল কন্টেন্ট নেই। অর্থাৎ সবগুলো রিসোর্ট নিরপেক্ষভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে।

১. ছুটি রিসোর্ট

ছুটি রিসোর্টটি গাজীপুরের সুকুন্দী গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘা জমির উপরে গড়ে তোলা হয়েছে। রিসোর্টটি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান সংলগ্নে তৈরি। এই রিসোর্টটিতে রয়েছে নৌ ভ্রমণ এবং সংরক্ষিত বৃক্ষের বনে তাবু টানানোর ব্যবস্থা। ছুটি রিসোর্টে আবাসনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ২১ টি এসি ও নন এসি কটেজ।

এছাড়াও রয়েছে মাছ ধরার ব্যবস্থা, ছনের তৈরি ঘর, কটেজ, ফল, সবজি ও ফুলের বাগান, আধুনিক রেস্টুরেন্ট, পিকনিক স্পট, গ্রামীন পিঠার ব্যবস্থা, বার্ড হাউজ, ভেষজ গার্ডেন, দুটি খেলার মাঠ এবং কিডস জোন।

ছুটি রিসোর্টে পাখির কলরব, শিয়ালের হাক, বাদুঁড়, ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন ও জোনাকি আলো আপনাকে প্রতিমুহূর্তে গ্রামের রাতের কথাই মনে করিয়ে দিবে। ছুটি রিসোর্টে আগত অতিথিদের বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল উপহার দেয়া হয় সকালের নাস্তার আয়োজনে চালের পিঠা, চিতই পিঠা, সবজি, কাল ভুনা ও মুরগির মাংস পরিবেশন করা হয়।

২. পদ্মা রিসোর্ট

ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কি.মি. দূরে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর পাড়ে গোড়ে তোলা হয়েছে নয়ানাভিরাম পদ্মা রিসোর্ট। রিসোর্টটির মোট ডুপ্লেক্স কমপ্লেক্স রয়েছে ১৬ টি। প্রতিটি কটেজ একটি বড় ড্রয়িং রুম, একটি বড় বেডরুম এবং দুটি সিঙ্গেল বেড রুমের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একটি বাথরুম ও দুটি সুন্দর ব্যালকনি।

বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি রিসোর্টের প্রতি কটেজে আটজন করে অনায়াসেই থাকতে পারবেন। রিসোর্টের কটেজগুলো বেশ সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। রিসোর্টের ১২ টি কটেজের নাম দেয়া হয়েছে বাংলা মাসের নামে এবং বাকি চার টি কটেজের নাম দেয়া হয়েছে ঋতুর নামে। পদ্মা রিসোর্টে নৌকা ভ্রমণ করতে চাইলে বিভিন্ন ছোট বড় নৌকার ব্যবস্থা রয়েছ। কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

৩. মাওয়া রিসোর্ট

রাজধানী শহর ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কি.মি. দূরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামে নির্মিত এই মাওয়া রিসোর্টটিকে ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। মাওয়া ১নং ফেরিঘাট থেকে মাত্র ৫০০ কি.মি. দূরে মাওয়া – ভাগ্যকূল সড়কের পাশে এই মাওয়া রিসোর্টটি প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।

সবুজে মোরা এই মাওয়া রিসোর্টের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে সারি সারি সুপারি ও নারিকেল গাছে ঘেরা একটি দিঘী রয়েছে। রয়েছে আধুনিক বোটে দীঘির শান্ত জলে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা।

দীঘির পূর্ব পারে রয়েছে ১৮ টি সাড়িবদ্ধ কটেজ ও দীঘির এক প্রান্তে রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া। আর কটেজে যাওয়া আসার জন্য রয়েছে সুন্দর দৃষ্টি নন্দন কাঠের সেতু যা কটেজের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

৪. যমুনা রিসোর্ট

বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর কাছে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার মাঝামাঝি স্থানে এই থ্রি স্টার মানের যমুনা রিসোর্টটির অবস্থান। যমুনা রিসোর্ট রয়েছে সুইমিংপুল, জিম, হেলথ ক্লাব, বেকারি, স্যুভেনির শপ এবং ফরেন মানি এক্সচেঞ্জ।

খেলাধুলার সুবিধা হিসেবে এখানে রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, হকি ও দাবা খেলার ব্যবস্থা। থাকার জন্য যমুনা রিসোর্টে রয়েল সুইট, ২ ও ৩ বেডরুমের কটেজ, ডিলাক্স এক্সিকিউটিভ সুইট, ডরবিটরি এবং একটা বেড এর সুবিধা রয়েছে।

ভিতরটিতে ১৫০ জন একসাথে বসে খাওয়ার জন্য একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নামে ২০০ জন মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি হল রুম রয়েছে। এছাড়াও রিসোর্টিতে নৌকা ভ্রমণ এবং রিসোর্ট এর সাইট ভ্রমণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

৫. সোহাগ পল্লী

সোহাগ পল্লী রিসোর্টটি ১১ একর সবুজে ঘেরা জমিতে নির্মিত হয়েছে। সোহাগ পল্লী রিসোর্টের ঝুলন্ত সাঁকো বেলকনিতে খোদাই করা বিভিন্ন কারুকাজ দর্শনার্থীদের বেশি আকৃষ্ট করে। সোহাগ পল্লী রিসোর্টের কটেজগুলোকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন এটি তাদের কোন সাজানো গ্রামের প্রতিচ্ছবি।

সোহাগ পল্লী রিসোর্টের কটেজগুলোর সামনে দিয়ে বয়ে গেছে লেক। সোহাগ পল্লীর এই কৃত্রিম রিসোর্টে সারা বছর পানি থাকে, আর লেকের পানিতে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিচরণ। এখানে রয়েছে কনফারেন্সের জন্য হলরুম ও সুইমিং পুল।

সোহাগ পল্লীতে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। রিসোর্টিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এখানে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর রিসোর্টটিতে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিকৃতি।

৬. আনন্দ রিসোর্ট

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের একটি পরিচিত নাম আনন্দ পার্ক রিসোর্ট বা আনন্দ রিসোর্ট। ৪২ বিঘা জায়গার উপর বিনোদনের বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে গড়ে ওঠা আনন্দ রিসোর্টস নামের যথার্থতা লক্ষ্য করা যায়। কালিয়াকৈরের সিনাবহের তালতিলি এলাকায় এই আনন্দ রিসোর্টটি অবস্থিত।

এই রিসোর্টে বিভিন্ন রাইডের পাশাপাশি সরাসরি বিল থেকে মাছ ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। আনন্দ পার্ক রিসোর্টে কার পার্কিং সহ ২৪ ঘন্টা রুম সার্ভিস ব্যবস্থা সম্বলিত রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে ৬ টি এসি, নন – এসি কটেজ।

আনন্দ রিসোর্টে রয়েছে সুইমিং পুল ও বিভিন্ন ফলজ গাছ ও ফুলের বাগান এছাড়া রয়েছে ছোট বাচ্চাদের খেলার বিভিন্ন উপকরণ ও রাইড। কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট গুলোর মধ্যে এটি থেকে আপনি ঘুরে আসতে পারেন।

৭. স্প্রিং ভ্যালি রিসোর্ট

নগর জীবনের ব্যস্ততা থেকে অবসাদ পেতে রাজধানী ঢাকার কাছে গাজীপুরের সালনাতে গড়ে ওঠা স্প্রিং ভ্যালি রিসোর্ট একটি আদর্শ স্থান। পরিবার, প্রিয়জন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে পিকনিক অথবা হ্যাংআউট করার উদ্দেশ্যে যে কোন দিন চলে আসতে পারেন গাজীপুরের রিসোর্টে।

১২ বিঘা জমির উপর গ্রামীন আবহে নির্মিত এই স্প্রিং ভ্যালি রিসোর্টটি ট্রিপসিলো নামক একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। এই রিসোর্টে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা, সুইমিং পুল এবং পুকুর।

এই রিসোর্টে আগত অতিথিরা চাইলে পুকুরে মাছ ধরা ও নৌকায় ভেসে বেড়াতে পারেন। ঢাকার বেশ কাছাকাছি দূরত্বে কম খরচে চিত্তবিনোদনের জন্য রিসোর্টটির দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তাই ছুটির দিনের জন্য অগ্রিম বুকিং দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

৮. নক্ষত্র বাড়ি রিসোর্ট

নাট্য অভিনেতা, পরিচালক, স্থপতি তৌকির আহমেদ এবং অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে এই নক্ষত্র বাড়ি রিসোর্টিটিস প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রায় ২৫ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই রিসোর্টে রয়েছে দীঘি, কৃত্রিম ঝর্ণা, সুইমিং পুল, কনফারেন্স হল, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক ভবন বা বিল্ডিং কটেজ এবং বাঁশ, কাঠ এবং ছনের তৈরি ১১ টি শীতাতপ নিয়োন্ত্রিত কটেজ।

এখানে আছে শুটিং স্পট, লাইব্রেরী, মুভি থিয়েটার, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, নৌকায় ঘুরে বেড়ানো ও মাছ ধরার ব্যবস্থা। বলতে গেলে অবসর কাটানোর জন্য সকল ধরনের আনন্দ আয়োজন নিয়ে প্রস্তুত নক্ষত্র বাড়ি রিসোর্ট।

৯. জল ও জঙ্গলের কাব্য

জল ও জঙ্গলের কাব্য বা পাইলট বাড়ি খ্যাত রিসোর্টটি গাজীপুর জেলাস্থ টংগীর পূবাইলে ৯০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকৃতিকে অবিকৃত রেখে বাঁশ ও পাটখড়ি দিয়ে সুনিপুণভাবে সাজানো হয়েছে এই রিসোর্টটিকে।

রাজধানী ঢাকার কাছে অল্প সময়ে ও অল্প খরচে থাকার জন্য জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টটি চমৎকার স্থান। ঢাকার বেশ কাছে হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। পাটখড়ির বেড়া, বাঁশ, ছনের ছাউনি আর দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি জন্ম দিয়েছে এক গ্রামীন ছোঁয়া।

জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে নিজস্বভাবে চাষ করা ধান, শাকসবজি এবং বিলের মাছ পরিবেশন করা হয়। পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া এই রিসোর্টটি একদিনের ছুটির অবসরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য দিন দিন বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

১০. রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট

রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে শাল বনের ভিতরে প্রায় ৮০ বিঘা জমির উপর যৌথ মালিকানায় গড়ে তোলা হয়েছে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট। বনের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে অক্ষুন্ন রাখতে পরিকল্পিতভাবে এখানে আরো বানায়ন করা হয়েছে। রিসোর্টটিতে ২৬ টি কটেজ পার্ক ছাড়াও রয়েছে মাটির ঘর।

এখানে আগত অতিথিরা চাইলে রিসোর্টের লেকে মাছ ধরা, নৌকা ও সাইকেল চালানো কিংবা তাদের ফার্ম ও শাকসবজি ঘুরে দেখতে পারেন। তাদের রিকো পারতে আরো রয়েছে ম্যাসেজ পার্লার, সুইমিং পুল ও ক্যাফেটেরিয়া।

ঘন অরন্যের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা চার তলা ভবনের উপরে পাখির চোখে পর্যবেক্ষণ করার জন্য রয়েছে অবজারভেশন টাওয়ার। তাই শহরের বেশ কাছে ঝুল বারান্দায় বন্য প্রকৃতি ও সবুজের স্বাদ নিতে চলে আসতে পারেন রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টে। কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট

মন্তব্য

ইজি টিচিং এর কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট সম্পর্কে এই ব্লগে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আপনাদের কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন অতি দ্রুতই রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করা হবে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের হেল্পফুল হবে আশা করছি। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply