বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধের নাম
পেট ফাঁপা বাচ্চাদের খুবই কমন একটি সমস্যা। সাধারণত খাদ্যের সমস্যার কারণে এই সমস্যা হয় এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হলে পেট ফেঁপে থাকে। বিশেষ করে নবজাতকের এই পেট ফাঁপার সমস্যা বেশি হয়। কিন্তু শুরু থেকেই বাচ্চাদের খাবার নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আজকে আমরা বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও ঘরোয়া কিছু টোটকা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
আরো পড়ুন – বাচ্চাদের জ্বরের সাপোজিটরি নাম ও ব্যবহারের নিয়ম
বাচ্চাদের পেট ফাঁপার কারণ
বাচ্চাদের পেট ফাঁপা বা বদহজমের মূল কারণ হচ্ছে পেটে গ্যাস জমে থাকা। মূলত এই গ্যাস থেকে শিশুর বদহজম হয়। বাচ্চাদের বদহজম হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো-
- খাবার খাওয়ার ভুল পদ্ধতি
- বদহজমের কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হলে
- পেটে থাকা খাবার ঠিকভাবে হজম না হলে
- অনেকগুলো প্রোটিন বা ভিটামিন যুক্ত খাবার একসাথে খেলে
- খিচুড়িতে অনেক রকম শাকসবজি বা মাছ মাংস ডিম দিলে
- প্রচুর পরিমাণে শাক খাওয়ার ফলে
- বেশি শক্ত খাবার খেলে
- পানির কম খেলে
পেট ফাঁপার লক্ষণ
বাচ্চাদের পেট ফাপার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো জানা থাকলে সহজে রোগ নির্ণয় করা যায়। এবং প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়। বাচ্চাদের পেট ফাঁপার লক্ষণগুলো হলো-
- পেট ফুলে যাওয়া
- এবং পেট ফুলে শক্ত হওয়া
- বাচ্চাদের ঠিকভাবে পায়খানা না হওয়া
- ঘন ঘন বমি হওয়া
- প্রচুর পরিমাণে কান্নাকাটি করা
- গায়ে জ্বর জ্বর ভাব থাকা
- অনেক বেশি মোচড়ানো
- অনেক বেশি বায়ু নির্গত হওয়া
বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধ এর নাম
বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধ পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ বাচ্চাদের সেবন করানো উচিত নয়। তবে বাজারে কিছু ভালো ওষুধের নাম হল-
১। নওনেহাল- বাচ্চাদের পেট ফাঁপা রোগের ওষুধ গুলোর মধ্যে ননিহাল অন্যতম তবে পেট ফাঁপার উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা অন্য ওষুধ সাজেস্ট করতে পারেন। নওনেহাল বাচ্চাদের পেট ফাঁপা সহ বদহজম পেটের গ্যাস দূর করতেও সাহায্য করে। তাদেরকে এবং বড়দের জন্য এই মনিহার আলাদাভাবে বাজারে পাওয়া যায়।বাজারে এই ঔষধের দাম –৬০ টাকা।
২। ফ্লাকোল- বাচ্চাদের পেট ফাপার জন্য এই ফ্লাকোল ঔষধ ওনেক কার্জকরী। বিশেষ করে নবজাতকের জন্য খুবই উপকারি। ফ্লাকোল সিরাপটি পেট ফাঁপার সমস্যার সাথে সাথে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।এই সিরাপ এর বর্তমান বাজার মূল্য ৩৫ টাকা।
৩। অমিডন- অমিডন বাচ্চাদের পেটের সমস্যার জন্য অনেক উপকারি একটি ঔষধ। এটি সঠিকভাবে খাবার হজমে সহায়তা করে। বাজারে এই সিরাপ ৪০ টাকা।
নবজাতকের পেট ফাঁপা হলে করণীয়
বাচ্চাদের বেশিরভাগ সময় খাবারের ত্রুটির কারণেই পেট ফাঁপা রোগ হয়ে থাকে।তবে পেট ফাপা হলে যত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় তত তাড়াতাড়ি বাচ্চাকে সুস্থ করা যায়।
১। অনেক সময় ফিডারে করে দুধ খেতে গিয়ে ঢুকে বাতাস ঢুকে পেটে গ্যাস হয় এই পেটে গ্যাস হওয়া থেকে পেট ফেপে যায়। তাই শিশুর খাবার খাওয়ার পর ডান পাশে নিয়ে শিশুর পিঠের উপর থেকে নিচের দিকে হাত বুলিয়ে দিতে হবে।
২। শিশুকে একসঙ্গে অনেক খাবার দেওয়া যাবে না।
৩। একই খাবারের অনেক ধরনের শাকসবজি মাছ মাংস দেওয়া যাবে না।
৪। শিশুর হজমে সমস্যা হয় এমন কোন খাবার দেওয়া যাবে না।
৫। শিশুকে বেশি খিচুড়ি জাতিয় খাবার দেয়া যাবে না।
৬। ডাল যুক্ত খাবার কম খাওয়াতে হবে
৭। খাবারে পাকা পেঁপের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে
৮। ফলমূল নরম টুকরো করে দিতে হবে অথবা জুস করে খাওয়াতে হবে
৯। হজমের সুবিধা হয় এমন সব খাবার দিতে হবে
কোন খাবার খেলে শিশুর পেট ফাঁপা হতে পারে
যেহেতু শিশুর খাবারের অনিয়মের ফলেই শিশুর পেট ফাঁপা বা বদহজম হয়। তাই শিশুর খাবারের তালিকা হতে হবে শিশুর বয়স উপযোগি। যা শিশু সহজেই হজম করতে পারে এমন খাবারই সব সময় দেওয়া উচিত। কোন কোন খাবার খেলে পেট ফাঁপা হতে পারে তা অবশ্যই জেনে রাখা দরকার।
- অনেক বেশি শাক খেলে
- শক্ত খাবার খেলে
- অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাবার খেলে
- ফুলকপি
- বাঁধাকপি
- লাল শাক
- ব্রুকলি
- ডিম
- জুস ড্রিংক
- অস্বাস্থ্যকর জাঙ্ক ফুড
- অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার
বাচ্চার পেট ফেঁপে গেলে কোন খাবার খাওয়া উচিত
কিছু খাবার আছে যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চাদের বদহজম দূর হয়ে যায় বা পেট ফাঁপা রোগ ভালো হয়ে যায়। এগুলো হলো-
- আদার রস
- টমেটো
- শসা
- দই
- পেঁপে
- ঠান্ডা দুধ
- কলা
- কাঁচা হলুদ
- দারুচিনি
- জিরা
- লবঙ্গ
- রসুন
- এলাচ/এলাচের গুড়া
- পুদিনা পাতার পানি
- মউরির পানি
- আলু
- প্রচুর পরিমান পানি
বাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঘরোয়া সমাধান
অনেক সময় বাচ্চার বদহজম বা পেট ফেপে গেলে শিশু বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই হুট করে কোন ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে ঘরোয়া ভাবে এই পেট ফাঁপা দূর করতে পারলে চিন্তা থাকেনা।
পেটের গ্যাস বের করা- নবজাতক শিশুর পেটের গ্যাস বের করার জন্য খাওয়ানোর পর পর পেট থেকে বাতাস বের করে দিতে হবে। দুধ খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে ফিডারের নিপল অথবা তনবৃন্ত যেন শিশুর মুখের সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করে। মুখের ভেতর যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। দুধ খাওয়ানোর পর শিশুর পিঠে হালকা হাত বুলিয়ে দিতে হবে এতে পেটের গ্যাস বের হয়ে যাবে।
ব্যায়াম করা- শিশুর পা দুটি সাইকেলের মত সামনে ও পিছনে আনলে শিশুর পেটে চাপ সৃষ্টি করবে। এবং পেটের গ্যাস বের হতে সাহায্য করে। দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর এটি করতে হবে। এছাড়া শিশুর পেটে হালকা ম্যাসাজ করতে হবে।
সরিষার তেল- সরিষার তেলে এক কোয়া রসুন দিয়ে কিছুক্ষণ জাল দেওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে গোসল করানো অবস্থায় তিনটি শিশুর পেটে মাসাজ করতে হবে। সরিষার তেল পেটে রক্ত চলাচল সচল রাখে এবং পেটের গ্যাস ও ব্যথা কমিয়ে দেয়।
গরম তোয়ালের সেক- একটি তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। তোয়ালে থেকে ভালো করে পানি বের করে এটি শিশুর পেটের উপরে রাখতে হবে। এটি শিশুর বদ হজম জনিত ব্যথা দূর করে দেয়।
আদা লেবু এবং মধুর মিশ্রণ- শিশুর বয়স দুই বছরের উপরে হলে ২ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে আদার রস এবং মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে এটি শিশুকে পান করালে সহজেই বদহজমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
প্রচুর পানি পান করা- খাবারের হজমের সমস্যার কারণে পেটে গ্যাস জমা হয়। এই গ্যাস জমলে পেট ফাঁপা সমস্যার সৃষ্টি হয়। পানি খাবার হজমে সাহায্য করে তাই শক্ত খাবার খাওয়ার পর শিশুকে অবশ্যই প্রতিদিন অনেক পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
মৌরির পানি- মৌরি পেটের ফাঁপা ভাব দূর করার জন্য অনেক উপকারী একমুঠো মউরি পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এই পানি শিশুকে বারবার খাওয়ালে শিশুর পেটের ফাঁপা ভাব দূর হয়ে যাবে। এটা অবশ্যই ছয় মাসের উপরের বয়সের শিশুদের জন্য প্রযোজ্য।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবার নয়- ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেক বেশি খাওয়া হজমের সমস্যার তৈরি করে। এটি অনেক সময় পেট ব্যথার কারণ হিসেবেও দেখা যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ আগে বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
পেট ফাঁপার দোয়া
হাদিসে আছে- উসমান ইবনে আবুল আস আস-সাকাফি (রা.) একবার রাসুল (সা.) এর কাছে পেটের ব্যথার কথা জানান। তিনি বলেন, ব্যথা আমাকে অস্থির করে তুলেছে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার ব্যথার স্থানে ডান হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলো অতপর এই দুয়া পাঠ কর-
أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ
উচ্চারণ : ‘আউজু বি ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।
অর্থ- আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
মন্তব্য
আজকে আমরাবাচ্চাদের পেট ফাঁপার ঔষধের নাম সম্পর্কে আপনাদের সাথে আর্টিকেল শেয়ার করেছি। যা দৈনন্দিন জীবনে এটি আপনাদের অনেক উপকারে লাগবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য বা মতামত থাকে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। সুস্থ থাকুন সুন্দর থাকুন।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চাদের জ্বরের সাপোজিটরি নাম ও ব্যবহারের নিয়ম
- বাচ্চাদের চোখ ওঠার ড্রপ, শিশুর চোখে কেতুর হলে করণীয়
- বাচ্চাদের ফর্সা হওয়ার ক্রিম – বাচ্চাদের স্কিন কেয়ার